আমি এক নিরন্ন বিধবা মায়ের সোমত্ত সন্তান
আমার চেহারা দেখেই বোঝা যায় আমি নারী
যৌবনে পৌঁছেছি অনেক আগে ; লেখাপড়া শিখেও
পাইনি চাকরি , ছাত্র পড়াই বাড়ি বাড়ি গিয়ে
আমার সত্তর ছুঁই ছুঁই মায়ের অক্ষম ন্যুব্জ শরীর
যতদিন মায়ের গতর ছিল পাঁচ বাড়িতে খেটেখুটে
আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে , খাইয়েছে , বড় করেছে
মা এখনো নড়বড়ে শরীরে ঘরবাড়ি তদারকি করে
রাতে দুটো হুড়কো লাগিয়ে দেয় দরজায়
বলে , চারপাশে শকুন -- কবে মরি তার ঠিক নেই
তুই সাবধানে থাকিস বাবা , আশেপাশের জঙ্গলে
হায়েনারা ঘুরে বেড়ায় , শিয়ালেরা ওত পেতে আছে ।
সত্যি কথা বলতে কী ভয় যে পাইনে তা নয়
মনের মধ্যে আশঙ্কার সাপে ডিম পেড়ে যায়
যত হয়েছি বড় তত সে ডিম ফুটে বাচ্চাগুলো
কিলবিল করে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়
যখন থেকে হয়েছি আর্তবা তখন থেকেই পেয়েছি
বিপদের আঁচ : স্কুলের সহপাঠী , পাড়াতুতো দাদা
পাড়াতুতো মামা , অচেনা আধবুড়ো সবাই
যখন চারিদিকে শত্রু তখন অতর্কিত হানা থেকে
বাঁচার স্বপ্নদেখা মানে আকাশে দুর্গগড়া
যদি আমার দু'বছরের বড় দাদা সাত বছর বয়সে
পুকুরে ডুবে না মরতো তবে হয়তো এতটা বিপন্নবোধ
করতাম না ; যৌতুক দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে
হয়তো পরাশ্রয়ী হয়ে বাঁচতে পারতাম বিয়ের পর
কিন্তু সেই আশাও সুদূর পরাহত ,তাই বাঁচা মানেই স্বপ্ন। ‌