তুই বেঁচে থাকাকালীন তোর কোন অনুষ্ঠানে না গেলে
তুই এসে আমার কানধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যেতিস
অথচ দ্যাখ আজ দিব্যি ফাঁকি দিলাম
তুই মারা গেলি অথচ তোর মুখটি আমি শেষবারের মতো দেখলাম না !
সেই জন্ম থেকেই তোর সাথে গলায় গলায় ভাব
ছোট থেকেই একসাথে পড়তাম
একসাথে স্কুলে যেতাম
তুই ছিলি আমার সবসময়ের অভিভাবক
কেউ কোনদিন বুঝতেও পারতো না আমি তোর নিজের ভাই নই , তুতোভাই ।
ছোটবেলায় উভয়ে উভয়ের মামাবাড়ি যেতাম
একসাথে খেলতাম , মামাদের লিচুবাগানে বেড়াতাম
দুজনে দুটো ছিপ ফেলে বসে থাকতাম
আমি কথা বললে তুই তোর তর্জনী মুখের সামনে রেখে ইশারা করতিস !
তোর মনে আছে দিদি তোর বিয়ের সময় তুই
বায়না ধরলি আমাকে তোর সাথে যেতে হবে
আমি গেছিলাম , তুই জামাইবাবুকে বলে একেক দিন একেক জায়গায় ঘুরিয়ে আনতে ;
সেই কম বয়সে ব্যারাকপুরের গান্ধীঘাটে তোর আর
জামাইবাবুর সঙ্গে গিয়েছিলাম ।
সেসব অনেক দিন আগের কথা
একেকটা কথা মনে পড়ে আর বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে ।
আজ ফাঁকি দিতাম না দিদি , তুই বিশ্বাস কর
গতকাল পড়ে গিয়ে বড্ড ব্যথা রে শরীরে !
যেবারে জামাইবাবু মারা যায়
সেইবার আমি সবার আগে ছুটে গিয়েছিলাম
সারারাত জামাইবাবুর লাশের পাশে বসে ছিলাম
তুই বলেছিলি দেখিস তোর জামাইবাবুর গায়ে যেন মশা না বসে ;
তোর মন ভালো করার জন্য কয়েকদিন ছিলাম তোর বাড়িতে ।
সেসব দিনের কথা একটা একটা মনে পড়ে
আর বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে
কত স্মৃতি জড়িয়ে তোর সাথে আমার
বাড়ির সবাই যখন আমার পাশ থেকে সরে যায়
তুই ছিলি আমার পাশে
আমার প্রয়োজনেই সব সময় এগিয়ে এসেছিস
আজ তুই নেই , আচমকা চলে গেলি
আমি তোর মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না
এই যন্ত্রণা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে
আমার কাছে তুইই তো কাজলাদিদি ।