একুশে বিয়ে আমার , তেইশে হই বিধবা
দুঃখের কথা কাকেই কী আর বলি বা
দুবছর ভেসেছিনু সুখের প্লাবনে
সে-সব কথা আজও আছে মনে !
নিয়তির পরিহাস সইলো না সুখ বেশিদিন
সহসা এট মারণ রোগে তারে ধরিল যেদিন
আমা ছাড়ি চলে গেল বহু দূরে অমরলোকে
হায়না শকুনের দল ফাঁকা পেলে ধরে আমাকে
মেয়ে হয়ে জন্মেছি , থাকি বিধবা মাকে নিয়ে
ছাত্র কিংবা ছাত্রী পড়াই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ।
সেদিন ছিল না ঘরে মা , আমি ছিলাম একা
মদ-মাতালে এক কাকা এলো করতে দেখা
যত বলি , 'মা ঘরে নেই কাকু , তুমি পরে এসো'
কাকা বলে ,' কথা আছে পাশে এসো , বসো' ।
যত কাছে কাছে আসে আমি দূরে সরে যাই
কোনমতে সেদিন আমি পালিয়ে রেহাই পাই ।
রাস্তাঘাটে একা পেলে কানের কাছে এসে
ভালোবাসার কথা শোনায় আমার কাছে ঘেঁষে ।
শতেক কাকু , হাজার দাদা সমাজ জুড়ে আছে
সুযোগ পেলে শরীর ছুঁতে আনন্দেতে নাচে ।
পুরুষজাতি যুবক বুড়ো সবাই বুঝি এমন
নিজের বধূ কিংবা মেয়ের ভাবেনা কথা তেমন ।
একদিন এক শীতের সাঁঝে পড়াতে গিয়ে দেখি
মেয়ের পিতা একা বাড়ি , আমি বলি এ কী !
ফিরতে যাব অমনি তিনি আমার হাতটি ধরে
মিষ্টি হেসে আমায় নিয়ে বসায় গায়ের জোরে
নানান ছুতোয় আমার দেহে এদিক ওদিক হাত
ভুলতে নারি বিভীষিকার দুর্ঘটনার রাত ।
আর কিছু দিন পরে বুঝি আমার পরিবর্তন
মা শুনে কয় , চাই না মেয়ে পোড়ারমুখী তোর মতন
মর গে গিয়ে যেথা খুশি এবাড়ি নেই ঠাঁই !
ভাবছি তখন কোথায় গেলে সস্তায় ভাড়া পাই
দূরের এক বস্তি গিয়ে মিথ্যা পরিচয়ে
লোকলজ্জায় লুকিয়ে থাকি পরিচিতির ভয়ে ।
বছর যেতে না যেতেই এলো নতুন সোনামুখী
কাটবে আমার সকল ব্যথা রইবো না আর দুখী ।
গতর খেটে মানুষ করি , পড়াই মাঝেসাঝে
ব্যথার প্রদীপ জ্বলে আমার , করুণ বীণা বাজে ।
নষ্ট মেয়ের কষ্টকথা ক'জন সেটা বোঝে
এসব নিয়ে বাঁচতে হবে ঘুনধরা এই সমাজে ।