এক অচেনা মেয়ের কাহিনি
                         জামাল ভড়
আমি এক আটপৌরে শাড়ি ও নারী
আমাকে তোমরা চেনো না
দূরের এক জেলার অখ্যাত এক গ্রামের
কাছের স্কুলে পড়ে আবাল্য বিনা টিউটরে পড়ে
মাধ্যমিক পাশ ; চোখে অনেক স্বপ্ন ;
এগারো বারোতে ছিল বিজ্ঞান
একমাস ফিজিক্স পড়ে যখন তিনশো টাকা যায় বলে
আর টিউটর নিতে পারিনি
বাড়ির কাউকে দোষ দিতে পারিনে
আমরা অনেক ভাইবোন
সবার অন্নবস্ত্রের জোগান দিতেই হিমসিম ।
তবু স্কুলের প্রধানশিক্ষকের পরামর্শে
কলকাতা এলুম চলে
এক অচেনা অজানা শহর
এখানে কেউ কাউকে চেনে না
নিষ্প্রাণ নগর ইটপাথরের
ভয় এবং দ্বন্দ্ব আমাকে ঘিরে
আকাশ ছুঁতে পারবো কি না
স্বপ্ন ঘিরে রেখছে তখনো আমায়
ঢাকুরিয়া থেকে হেস্টিংস
হেস্টিংস থেকে ঢাকুরিয়া
হেঁটেই করতাম যাতায়াত
কোন কোনদিন দুবেলাই না খেয়ে থেকেছি
কলেজে টিফিন বলতে দু'টাকার টাইগার ।
আমাকে বাঁচার আশা দেখালো ধ্রুবতারা
গড়িয়ার সেই স্বপ্নমেদুর
আমার আকাশের ধ্রুবতারা
ভিক্টোরিয়া গড়ের মাঠ আউটরাম চিনিয়েছিল
যে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল
বলেছিল হারমানার নাম জীবন নয়
তখন কে জানতো ধ্রুবতারা স্বয়ং
নিভে যাবে -- এক সড়ক দুর্ঘটনায় !
জীবনের মানে গেল হারিয়ে
চার বছর পরে পড়াশোনা শেষ করে
আবার সেই কসবা অচেনা অখ্যাত এক গ্রাম
স্বপ্ন ছিল শিক্ষয়িত্রী হবার
এস এস সি পাস করেও  পারলাম না
মামা কাকার জোর ছিল না বলে ।
অবশেষে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়
'পেয়ে গেলাম একপাটি মোজা'
কোর্টের এক মাছিমারা কেরানি
সেটাকেই ছেঁটেছুটে জীবননির্বাহ করছি এখন ।