ফারিয়া ফিরে এসেছে
         জামাল ভড়
আমাদের পাশের গ্রামেই বাড়ি  ফারিয়ার
মাঝে ছোট  মাঠের মধ্যে পদ্মপুকুর
দু'দিকে বাঁশের মাচার ঘাট
দু' গ্রামের সবাই আসতো , নাইতো
আমিও যেতাম তবে কোনদিন দেখিনি
ফারিয়াকে , কখন আসতো কে জানে !
ফারিয়াকে দেখতাম স্কুলের পথে
আমাদের এক স্কুল , একই ক্লাস
ওর মনেই ছিল আমার বাস
দীঘল ঘন চুল , কোনদিন একটা বেণী
কোনদিন বা দুটো বেণী ছন্দে ছন্দে দুলে দুলে
আমার মনে শিহরণ জাগাতো
হাসলে শুভ্র দাঁতের মুক্তা ঝরে পড়তো
মনে মনে মুক্তা কুড়াতাম
নীরব দৃষ্টি ফেলে নিঃশব্দে চলে যেত
পাশ কাটিয়ে পাশাপাশি হলে
কথা যা বলতাম তা আপন মনে কল্পনায়
ফারিয়াকে দেখতাম পরীক্ষার আগে সিরিয়াস হতে
অন্য সময়ে ওর বন্ধুদের সাথে যখন গল্প করতো
তখন দেখতাম সবাই জমে গেছে
ফারিয়ার চোখ ছিল গভীর সাগরের মতো
অতলে কী আছে বুঝতে পারিনি
চোখের কোণে কাজল দেখে মনে হতো
মেঘ করেছে বুঝি বা
ফারিয়ার আব্বুকে চিনতাম রাশভারী মেজাজের
ইলেভেনের পরীক্ষার পর আর দেখতাম না
তবে মাইকে বিলমিল্লাহ খানের সানাই ভেসে আসতে শুনে
আমার মন কেমন কেমন করেছিল
ওদের গ্রামের আমার বন্ধু আসমত বলেছিল
ফারিয়া নাকি ওর আব্বুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করেছিল , কিছু হয়নি
মা কাকিমার হাত ধরেও কেঁদেছিল
বলেছিল পাশের বাড়ির বিলকিস আপার মতো
স্কুলের দিদিমণি হতে চায় , শেষ পর্যন্ত
পূর্ণিমার চাঁদ এঁদো ডোবায় পড়েছিল
সেখানে প্রতিবিম্বিত হতে পারেনি
আমার বীণার তার ছিন্ন হয়ে গেল
এরপর আমরা যে যার জগতে
তবু হাওয়ায় ভেসে আসে দুঃসংবাদ
কয়েক বছর যেতে না যেতেই নাকি
লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা , কঠিন জীবনযাত্রা
মুখ বুজে সহ্য করে কাজের মধ্যে ডুবে থাকা
সন্তানের মুখ না দেখার বেদনা তার তো কম ছিল না
তবুও সব ব্যর্থতার দায় ওকে নিতে হবে কেন
ডাক্তার কবিরাজ দোয়া-তাবিজেও কিছু হয়নি
চলতে ফিরতে সারাক্ষণ খোঁটায়
ফারিয়ার জীবন ক্যাকটাসের মতো
এক অন্তর্দ্বন্দ্বে জ্বলেপুড়ে ক্ষার
শ্বশুর শাশুড়ির কথা বাদ দিলেও
স্বামী তো পাশে থাকেনি
নিরুত্তাপ নিস্পৃহ
ক্রমশঃ অতল জলে তলিয়ে যেতে যেতে
একদিন অমাবস্যার রাতে
বাড়ির পাশের বকুল গাছের ডালে
মুক্তির স্বাদ নিতে জাত্যভিমান
আত্মাভিমান সব একাকার করে দেয়
সেই ফারিয়া আজ ফিরে এসেছে বেনেবৌ হয়ে
কালো-হলুদের রঙে মিশে
আমার বাগানের গাছে ।