ফিরে এলাম আমার পুরানো শহরে
ফিরে এলাম চল্লিশ বছর পরে
কবে কোন্ কালে ঢাকা প্যারিস লণ্ডন হয়ে ওয়াশিংটন
আজ নাড়ির টানে জন্মভূমির টানে
চলে এলাম বারাসাতে আমার প্রাণের শহরে
যেখানে আমার শৈশব কৈশোর যৌবন
যেখানে আমার দামালপনা জীবনের অনেককটা বছর
কাটিয়েছি রাখাল আসমত অভিষেক ঈপ্সিতার সাথে ।
আজ যখন হাঁটতে হাঁটতে আমার যৌবনের কলেজে যাচ্ছি
ভীড়ে পাশ কাটাতে পারিনে , তখন ছিল ফাঁকা
কলেজ তখন ছিল একটা বাড়ি , কয়েকটা ক্লাসরুম
এখন কত বিল্ডিং , কত রুম কে জানে !
কলেজ পেরিয়ে শেঠপুকুর , জগৎ শেঠদের পুকুর
সেখানে পুরুষ নারী নাইতে আসতো
এখন বোধ হয় সবাই বাড়িতে স্নান করে ।
হাতিপুকুরের কাছে এসে তো চিনতেই পারিনি
যে-পুকুর একদিন সিরাজ উদ্ দৌলার হাতিদের জল খাওয়াতে তৈরি হয়েছিল ,
আজ চেনাই যায় না এখন বিশাল বড় পার্ক ,
অবশ্য নবাবের নামেই নামকরণ;
হরিতলায় যে হরিদার দোকানে চা খেতাম
সেটা দেখলাম না , সেখানে সারি সারি দোকান
কত কিসিমের ; কনকদার বইখাতার দোকানটা আছে
তবে অন্য গেট আপে । সেই ছায়াবাণী সিনেমা হলটাও নেই
নেই সেই বিধান সিনেমা যেখানে পঁচাত্তর পয়সার টিকিটে
কত ছবি দেখতাম । হরিতলা থেকে চাঁপাডালি ছিল ফাঁকা
গুটিকয়েক দোকান ছাড়া , ছিল পোস্ট অফিস
ছিল আই টি সির সিগারেটের দোকান
এখন সেখানে ফ্লাইওভারের নিচে দুসারিতে অজস্র দোকান
আগে সন্ধের পরে শিয়াল ডাকতো যেখানসেখানে
আজ বড় বড় ফ্লাট বড় বড় কমপ্লেক্স
সবকিছুই এখন অতীত ।
হেস্টিংস সাহেবের বাড়ি পেরিয়ে খ্রিস্টান গোরস্থান ,
মুসলিম কবরখোলা পেরিয়ে যেখানে ছিল আমাদের
টালির ঘর সেখানে এখন চারতলা ফ্লাট ।
পাশেই বহুতল নার্সিং হোম , কাছাকাছি আরো দুটো ,
বারাসাত আমার শহর যে শহরে সাহিত্য সম্রাট
বঙ্কিমচন্দ্র এসেছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে
সে-শহর আজ চেনা যায় না
এ-শহরে আজ পা ফেলার জায়গা নেই ।
কাছারিমাঠে ফুটবল খেলার দিন মনে পড়ে
মনে পড়ে সুভাষ মাঠে আমাদের ক্লাবের সাথে ময়নার
ফুটবল ম্যাচ , মনে পড়ে হাটখোলায় সাপ্তাহিক হাট ;
কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলের সামনে তখনো ভীড় , এখনো ভীড়
ছেলেদের । শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে
এখন হেঁটে যাওয়া যায় না ; তখন ছিল গুটিকয়েক ওয়ার্ড
এখন শুনেছি ত্রিশ বত্রিশ । তবু কেন জানিনা
এই শহরের নতুন ছবি বুকে নিয়ে পরশু চলে যাব ওয়াশিংটন ।