আমি যার গর্ভে জন্মেছি তিনি এক নারী
আমার জন্মদাত্রী মা ; তার সমস্ত সত্তা দিয়ে
সকল দুর্যোগ প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করেছে
পাঁচ বছরের ছোট আমার সহোদরাও নারী
যার সাথে আমার শৈশব কৈশোর কাটিয়েছি
আমার নানী , আমার দাদী তাদের আদরে
আমার জীবনের অনেক কটা বছর কেটেছে
তাঁরাও ছিলেন নারী , তাঁদের সাহচর্যে বড় হয়েছি
অথচ আজ দিনকাল পরিবর্তনের সাথে যে-সব
কামার্ত পৈশাচিক ধর্ষক পুরুষদের কথা শুনি
লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায় ; আমি ক্ষমা
চাইছি তাদের হয়ে , আমি ক্ষমা চাইছি সেই-সব
পুরুষদের হয়ে যারা তোমাকে পণ্য করে ,
যারা তোমার সাথে পৈশাচিক ব্যবহার করে
গৃহপালিত পশুর মতো ব্যবহার করে
তোমার জানু জঙ্ঘা বক্ষ নিপীড়ন করে পাশবিক
ক্ষুধা চরিতার্থ করে চলচ্ছক্তি রহিত করে ।
আমি ক্ষমা চাইছি হে নারী সেই-সব পুরুষের হয়ে
যারা তোমাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করে
বারো জন পুরুষ তোমাকে বারযোষিৎ করেছে
তোমাকে ওরা রমণী বলে , ওরা রমণ করে না ?
হে নারী তোমার জীবনযাপন সরল হলেও ওরা
তোমাকে ললনা নামে অভিহিত করে ,
সম্মান দিয়ে মহিলা বলতে চায় না এরা
ওরা তোমাকে বামা , তোমাকে রামা , অঙ্গনা বলে ।
সেই প্রাচীন কাল থেকেই তোমাকে কত নামে ডাকে পুরুষ নামের আত্মস্বার্থসিদ্ধিপরায়ণ নর
সাত বছরের মেয়ে গৌরী , দশ বছরে ডাকে কন্যকা
বড় হলে কামিনী , ভামিনী , কারো কাছে  ভামা ।
এখন আর তুমি কলুর বলদের মতো ঘানি টানো না
এখন তুমি পুরুষের সাথে তাল রেখে  সমান তালে চল
সংসারের অর্ধেক দায়িত্ব এখন তোমার কাঁধে
তুমি প্রদীপ , ঘড়ি  খাট-চেয়ার ,টিভির মতো অপ্রাণীবাচক নও
তুমি জীবন্ত , তোমার অনেক সত্তা , তোমার অপরিসীম গুণ
হে নারী আমার আপত্তি দুহিতা নামে , তুমি কি কেবল
গাভীদোহন কর ! কন্যা মানেও তো যে নারী পতি কামনা করে
পুরুষের অত বিশেষণ নেই যত বিশেষণ তোমাকে দেয়
সুকেশা , সুদতী , রম্ভোরু আরো শত বিশেষণে বিভূষিত করে
হে নারী তুমি সমগ্ৰ পুরুষজাতিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দ্যাখো
নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তারা কত ছলনার আশ্রয় নেয়
ভাবে না নিজের মায়ের কথা , নিজের বোনের কথা।
আমি পরিষ্কার বলছি আমি জন্মেছি যেমন মায়ের গর্ভে
আমি মরতেও চাই আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গী আমার বধূর কোলে মাথা রেখে তার মুখের দিকে করুণ চোখে চেয়ে ।