ছোটবেলায় মাকে বলতাম পুলিস
আবার পুলিস ডাকলে বা বকলে
পুলিসের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতাম
বাবাকে কম দেখতাম তাই
মাকে ঘিরে ছিল আমাদের দুনিয়া
সংসারের পাহাড়-প্রমাণ কাজ আর
ছয় ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা আমার
এতটুকু বিশ্রাম পেত না
মাকে কোনদিন জোরে হাসতে দেখিনি
চাঁদ যেমন জোরে হাসে না
মায়ের চোখে জলভরা মেঘ দেখেছি
কিন্তু বর্ষণ দেখিনি অঝোর ধারায়
মা ছিল আমার নদীর মতো
কেবল বয়েই চলতো কুল কুল
মা ছিল আমার সর্বংসহা
মাটির পৃথিবীর মতো নীরব নিথর
মা ছিল আমার প্রথম শিক্ষক
উনুনের ধারে আসন পেতে পড়তে বসাতো
কারো গাছে আম কুড়াতে নিষেধ করতো
মিথ্যে বলতে নেই মা-ই শিখিয়েছিল
বড়দের মান্য করার কথা মা বলতো
কারো সাথে ঝগড়া না করে সরে আসতে বলতো
হাতের খাবার ছোটদের দিতে শিখিয়েছিল
পড়ায় ফাঁকি না দিতে মায়ের কাছে শেখা
আমার মা ছিল বড় আমরা ছিলাম ছোট
আর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকে
মাকে দেখলাম একরত্তি শিশু
দাঁড়াতে পারতো না , হাঁটতে পারতো না
দিনরাত কখনো শুয়ে কখনো বসে ,
বসে বসেই নামাজ পড়তো , বই পড়তো
আর যখনতখন আমার নাম ধরে ডাকাডাকি
কাছে গেলে বলতো , তোকে তিনদিন দেখিনি
বলতাম একটু আগেই তো ছিলাম
মা বলতো , মনে থাকে না সবকিছু ভুলে যাই
খেতে পারতো না অথচ এটা-ওটা খাওয়ার জন্য
বায়না ধরতো , মাঝে মাঝে খাইয়ে দিত হতো
মা ছিল আমাদের মাথার উপরে এক ছাতা
মা ছিল আমাদের বিশাল বটবৃক্ষ
মা ছিল আমাদের গঙ্গা পদ্মা যমুনা