শারীরবৃত্তীয় একটি সাধারণ সমস্যা ও তার চিকিৎসাশাস্ত্রীয় সমাধানের সঙ্গে আধুনিক নাগরিক জীবনের একটি সমস্যা ও তার আধুনিক সমাধানের মধ্যে সুন্দর তুলনার মধ্যে দিয়ে কবি অসীম সাহা 'এনজিওগ্রাম' কবিতাটি রচনা করেছেন । নিজের শরীরেই কবি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং হাসপাতালে যখন আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার কল্যানে তাঁর এই সমস্যা নিরসনের প্রয়াস চলছে তখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই তিনি এই তুলনামূলক বিষয়টি অনুভব করেছেন ।


কবিতার শিরোনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে একটি মেডিক্যাল টার্ম, চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত একটি শব্দ - এনজিওগ্রাম । এক্সরের মাধ্যমে শরীরের ধমনী গুলোকে দেখাকে এনজিওগ্রাম বলে। এ জন্য ধমনীর মধ্যে এক ধরনের ডাই (রঞ্জক পদার্থ বা কন্ট্রাস্ট মিডিয়া) প্রবেশ করানো হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এনজিওগ্রাম করা হয় যেমন পায়ে পিএজি বা পেরিফেরাল এনজিওগ্রাম, মস্তিস্কের ক্ষেত্রে সেরিব্রাল এনজিওগ্রাম, কিডনিতে রেনাল এনজিওগ্রাম , হার্টে করনারী এনজিওগ্রাম ।


করনারী এনজিওগ্রাম হলো হার্টের রোগ নির্নয়ের একটি পরীক্ষা । হার্টে করনারী আরটারি ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ হলে করনারী এনজিওগ্রাম পরীক্ষাটি করানো হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে করনারী আরটারির মধ্যে কতগুলা ব্লক আছে বা ব্লকগুলোর অবস্থান কোথায় বা কত পারসেন্ট ব্লক আছে।  এই  ব্লকের পারসেন্টেজ ৭০ % এর বেশি হলে সেখানে এনজিও প্লাস্টি বা বেলুনিং এর মাধ্যমে স্টেনবারিং প্রতিস্থাপন করে ধমনীর ভেতরের রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক করা হয়।
যদি দেখা যায় ব্লকের সংখ্যা তিন বা তিন এর বেশি এবং ব্লকের পারসেন্টেজ কোথাও ১০০% এবং সেখানে এনজিও প্লাস্টি বা বেলুনিং এর মাধ্যমে স্টেন বা রিং প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয় অথবা রক্তনালীর অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে আছে তখন সেখানে বাইপাস অপারেশান বা করনারী আরটারী বাইপাস গ্রাফটিং করা হয়, যা সাধারণত বাইপাস সার্জারি নামেই বেশি পরিচিত। এই অপারেশান এর প্রধান উদ্দেশ্য হল রক্তনালী বন্ধ হবার কারণে হার্টের যে অংশে রক্ত চলাচল কমে গিয়েছে অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই অংশে রক্তের যোগান নিশ্চিত করা। এই বাইপাস করার জন্য সাধারণত রোগীর নিজের পা, হাত, অথবা বুকের রক্তনালি ব্যবহার করা হয়।


কবি তাঁর নিজের শরীরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন । যখন রক্তনালী কোনো অংশে বন্ধ হবার কারণে কবির হৃদয়ের কোনো অংশে রক্তের যোগান কমে গেছে, কবি অনুভব করেছেন কোনো ভিন্ন পথে যেন সেখানে রক্ত পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে, যেমন করে আধুনিক নগরগুলোতে ভিড় জ্যাম এড়িয়ে বাইপাস তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল করে রাখা হয় ।


কবিকে আংশিক অজ্ঞান করে তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে । জ্ঞান ফেরার পর তিনি অপারেশনের আগের অনুভব এবং অপারেশনের পরের অনুভবের মধ্যে তুলনা করে বুঝেছেন কি ভাবে রক্তকণিকার জমাটবাঁধা কিছু কেয়াকাঁটার ঝাড় অপসারিত করে তাঁর হৃদয়ে রক্তের প্রবাহকে স্বাভাবিক করা হয়েছে । যেন সশস্ত্র পুলিসবাহিনীর মতো দ্রুতবেগে ছুটে গেছে স্প্রিংয়ের কেমিক্যালসজ্জিত কিছু স্বয়ংক্রিয় তার ।
কোলাহলমুখরিত হৃদয়ের আন্তরপ্রদেশে অভ্যুত্থান ঘটে গেছে । ব্যারিকেড ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হয়েছে ।


অন্ধকার রাত্রির বাইপাস পার হয়ে অবদমিত হৃদয় ছুটে গেছে মাধবীলতার বনে, অসংবৃত সুন্দরের কাছে । যেন বেসরকারি গ্রামে গ্রামে আগুনের হলকায় সরে গেছে মৃত্যুর বাইপাসে ধাবমান আর একখানি তরল হৃদয় ।


সূত্র : বিকাশপিডিয়া স্বাস্থ্যতথ্য