"Full many a gem of purest ray serene
The dark unfathom'd caves of ocean bear:
Full many a flower is born to blush unseen,
And waste its sweetness on the desert air."


Thomas Gray, An Elegy Written In A Country Churchyard


যেমন প্রকৃতি, তেমন মানুষ সৃষ্টিশীল । প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির সর্বত্র কিছু না কিছু সৃজন হয়েই চলেছে । যেমন মানুষের মন, কখনো নিস্ক্রিয় নয় । সর্বদাই সে কিছু না কিছু কথা, কিছু ভাবনা ভেবেই চলে । কিন্তু যা কিছু সৃষ্টি হয় প্রকৃতিতে, মানুষ প্রতি মুহূর্তে এত যে ভেবে চলে, এত যে কথা বলে - সব কি তার উদ্দিষ্ট অর্জন করে । এত যে ফুল ফোটে, লোকালয়ে, বনে বনাঞ্চলে - তার সব কি দেবতার পায়ে অর্পিত হয় ? তার অনেকটাই কি লোকচক্ষুর আড়ালে ঝরে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় না ? সমুদ্রের গভীর তলায় কতো মণি মানিক্য, হীরা জহরত এখনও পড়ে আছে । তার কতোটুকু মানুষ উদ্ধার করতে পেরেছে ? কতোটুকু মানুষের প্রয়োজনে এসেছে ? মানুষ কি কোনোদিন পারবে এই সব মণি মানিক্য উদ্ধার করতে ? মানুষের মনের গভীরে এত যে ভাবনা, প্রতি মুহূর্তে মনের মধ্যে এত যে উথাল পাথাল তার সবটা কি সে কথায় আনতে পারে ? তার সব কথাকে সৃজনশীল সৃষ্টি রূপে মানুষের দরবারে হাজির করতে পারে ? এত অপচয় মেনেও যে সকল সৃষ্টি আলোর মুখ দেখে তার সবটা কি মানুষ গ্রহণ করে ? তার পূর্ন রসাস্বাদন করে ? তার অনেকটাই কি শেষ পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালে উপেক্ষা, অবহেলার শিকার হয় না ?


"যেমন কথারা" শীর্ষক রচনায় কবি স্বপন বিশ্বাস গোটা বিশ্বকে দেখেছেন একটি ফুলের বাগান হিসাবে । প্রতিদিন এই বাগানে কত ফুল ফোটে । কিন্তু তার সব ফুল উপযুক্ত কাজে ব্যবহৃত হয় না । কতো ফুল ঠিকমতো প্রস্ফুটিতই হয় না । উপযুক্ত পরিবেশ, পরিচর্যার অভাবে কলি অবস্থাতেই ঝরে পড়ে । কতো কতো সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যায় । কত ফুল প্রস্ফুটিত হয়েও উপযুক্ত মর্যাদা পায় না । অনাদরে ঝরে পড়ে ।
বনের ফুলের এই বিষয়টিকে কবি অতি সুন্দরভাবে মিলিয়েছেন মানুষের দ্বারা উচ্চারিত কথার সঙ্গে ।মানুষ কতো কিছু ভাবে । সেই ভাবনাগুলি কথা হয়ে উচ্চারিত হয়। কিন্তু তার সব কথা মূল্য পায় না । সব কথাকে সৃজনশীল রূপ দিয়ে সে মানুষের দরবারে উপস্থাপিত করতে পারে না । যেমন শীতের আক্রমণে ফুলের কলি ঝরে পড়ে, তেমনই উপেক্ষা অনাদরের শীতলতায় মানুষের অনেক কথা হারিয়ে যায় । ঠিকমতো প্রকাশিত হয় না । প্রকাশিত হয়েও কদর পায় না ।
অনেক ব্যথা, যা উপযুক্ত আনুকূল্য পেলে কথাসাহিত্য আকারে প্রকাশিত হতে পারতো, তা অনাগ্রহের ঘন কুয়াশায় পথ হারায় । মানুষের দরবারে উপস্থাপিত না হয়ে আকাশের গায়ে অর্থাৎ মহাশূন্যে হারিয়ে যায় । অধরা তারা হয়ে যেন অন্ধকারে মিলিয়ে যায় । দূরে অনেক দূরে সীমার বাইরে চলে যায় । যে সৃজনক্ষমতা মানুষের আয়ত্তের মধ্যে ছিলো, উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায় । কখনো কখনো তার ঝলকমাত্র আমরা দেখি, কেঁপে কেঁপে যেন আলো বিতরণ করে, কিন্তু সেই প্রতিভার পূর্ন বিকাশ পৃথিবীর সমাজে গিয়ে পৌঁছায় না ।


অনেক অনেক সৃষ্টি আমরা দেখতে পাই । তার রসাস্বাদন করি । কিন্তু অনেক সৃষ্টি সম্ভাবনা বিনষ্টও হয়ে যায় । যখন সৃজনক্ষমতা থাকে, তখন উপযুক্ত আদর, চর্চা না পেয়ে অনেক প্রতিভা বিনষ্ট হয়ে যায় । ক্রমে প্রতিভার যে তেজ, তার দীপ্ত আলোর আভা কমে আসে । লোকচক্ষুর আড়ালে, অন্ধকারে কথা শেষ হয়ে যায় । দিশাহীন, মূল্যহীন হয়ে খসে পড়া তারার মতোই প্রতিভা ঝরে পড়ে ।


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ! !