জন্ম বৃদ্ধি ও বিনাশ - জীবনের তিন শর্ত । সব নিয়মের খেলা । তবু তার মধ্যে আছে স্বাভাবিকতা এবং অস্বাভাবিকতার মানদন্ড । জন্মের থাকে কারণ, অনেক স্বপ্ন । বৃদ্ধির জন্য কতো পরিকল্পনা । তার সফলতার জন্য অনুশীলন । তারপরে কেউ সফল, কেউ বা ততটা নয়, কেউ বিফল । তারপর জীবনের সব খেলা শেষ করে একদিন সেই চলে যাওয়া ।


কিন্তু সেই চলে যাবারও একটি ব্যাকরণ আছে । চলে যাওয়া বিষয়টির স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতা আছে । জীবন সর্বদা কাঙ্খিত পথে চলে না । হিসাবের অনেক গরমিল হয়ে যায় । এই গরমিল কেউ সয়ে উঠতে পারেন । কেউ পারেন না । যাঁরা পারেন না, তাঁরা জীবনের গতিকে হঠাৎই রুদ্ধ করে দেবার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন । জীবনের ব্যথা সইতে না পেরে মরণের ব্যথাকে আপন করে নেন । তারপরেও থাকে জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু উপহাস, কিছু বিদ্রুপ যখন  জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বা তাকে রক্ষা করার জন্য যেখানে যাওয়া, সেই সামাজিক মাধ্যমগুলি বা প্রতিষ্ঠানগুলি মৃত্যুর সমার্থক হয়ে ওঠে ।


কবি Shyama ghosh 'খেলা' শীর্ষক রচনায় এমনই সব ভাবনা ঘিরে রূপক আকারে জীবনকে উপস্থাপিত করেছেন । জীবন এক মহান দায়িত্বের নাম । এই দায়িত্ব বর্তায় জীবনধারণকারী প্রতিটি ব্যক্তি এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের ওপর । ব্যক্তি তার শিক্ষা, অনুশীলন পরিশ্রমের দ্বারা যেমন জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় তেমনই সমাজ তার ভেতরে গড়ে ওঠা নানা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করে । জীবন কোনো ছেলেখেলার নাম নয় । দায়িত্ব পালনের নাম । কতো স্বপ্ন নিয়ে এক একটি জীবনের পথ চলা শুরু হয় । সেই স্বপ্নকে সাকার করে তোলার দায়িত্ব ব্যক্তি ও সমাজের । সফলতার পারেও এই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না । জীবনকে তার কাঙ্খিত পথে চালনা করা, যে কোনো রকম বিচ্যুতি থেকে তাকে রক্ষা করার বিষয়টি স্থায়ীভাবে থেকে যায় । ব্যক্তি ও সমাজ উভয়কেই সেই দায়িত্ব পালন করে যেতে হয় ।


যখন আকাঙ্খিত সফলতা মেলে না, বা জীবনে আসে কোনো ঘোর বিপর্যয়, বাস্তবিক অথবা নিতান্তই কাল্পনিক - তখনও জীবন মূল্যহীন হয়ে যায় না । তাকে শেষ করে দেবার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত কোনো মানুষ নিতে পারে না । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে যায় । তাঁদের জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, কিছু পরিণতি তাঁদের বিচারে তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে । বুকের মধ্যে জমে থাকা ব্যথার পাহাড়কে তাঁরা আর বইতে পারেন না । সেই ব্যথার থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য জীবনকে শেষ করে ফেলেন । এরকম এক একটি অপঘাত মৃত্যুর পেছনে অনেক অনেক গল্প থাকে, নানা অভিঘাত থাকে, সেগুলিকে নিয়ে গল্প উপন্যাস সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে । কিন্তু যেটা বলার তা হলো নিজের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এই অধিকার মানুষের নেই । জীবনে যদি দুঃখ আছে, সংকট আছে - তবে তার নিদানও মানুষকেই খুঁজে বার করতে হবে । জীবন হেরে যাবার গল্প নয় । নিয়ত সংগ্রাম করে যাবার নামই জীবন ।


বিষয়টা উপহাসের পর্যায়ে চলে যায় তখন, যখন দেখা যায় সমাজ জীবনকে রক্ষার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যুক্ত মানুষজন যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু জীবন অকালেই শেষ হয়ে যায় । দায়িত্বহীনভাবে কিছু চালক যেমন চলাচলের নিয়ম, শর্ত না মেনে আরোহীদের মৃত্যুর কারণ হন, তেমনই নানা চিকিৎসাকেন্দ্রে শোনা যায় বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায় বা নিতান্তই অবহেলার কারণে রুগী মৃত্যুর ঘটনা । জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ব্যক্তিগত দাযি়ত্বহীনতা যেন সমষ্টিগত দায়িত্বহীনতার সঙ্গে এক হয়ে যায় ।


সুন্দর বিষয়ধর্মী দৃঢ় বক্তব্যমূলক রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ! !