একদিকে বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতি । নতুন নতুন জিনিস আবিস্কার । অপরদিকে মানুষের জীবনযাপনে আচরণগত পরিবর্তন । ভালোর দিকে এবং মন্দের দিকে । কোন্ টি ভালো, কোন্ টি মন্দ - সেটা অবশ্যই বিতর্কের বিষয় । ব্যক্তিভেদে, জাতিভেদে, দেশভেদে, সময়ভেদে ভালো মন্দ সম্বন্ধে ধ্যান ধারণা পাল্টে যেতে থাকে । এভাবেই চলছে ।
মোবাইল প্রযুক্তি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সাম্প্রতিক আবিস্কার । দূর বলে এখন আর কিছু নেই । মোবাইলের ব্যবহারের দ্বারা মানুষ এখন পরস্পরকে কাছে পায় । এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কতো যে সুবিধা আছে তা গুনে শেষ করা যায় না । আবার মোবাইল ব্যবহারের যে কিছু কুফল রয়েছে, সেটাও ঠিক । যিনি মোবাইল ব্যবহার করছেন, তাঁর ওপরে বিষয়টি নির্ভর করে যে তিনি কোন্ কাজে এবং কিভাবে মোবাইলটিকে ব্যবহার করছেন । এর জন্য ঐ যন্ত্রটিকে দোষ দেয়া সমীচীন নয়, পুরো দায়িত্ব সেই ব্যবহারকারীর ।


"প্রণয় যবনিকা" শীর্ষক রচনায় কবি এম কে চৌধুরী রানা তাঁর নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারের কুফল বর্ননা করেছেন একটি বিশেষ প্রসঙ্গে । তিনি লক্ষ্য করেছেন মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার নরনারীর সম্পর্কে একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে । প্রকৃত প্রেম হারিয়ে গেছে । ডিজিটাল প্রেমের উদয় হয়েছে । প্রতিমুহূর্তে মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে তারা প্রেমালাপ করে চলেছে । এ এক অদ্ভুত প্রেমপর্ব ! দিনেরাতে যার কোনো বিরাম নেই । পথে চলতে চলতেও তারা মোবাইলে কথা বলে চলে । যেন কথা শেষ হয় না কখনো । ফলে পথে দুর্ঘটনাও ঘটে যায় ।


নারীপুরুষ উভয়েই মোবাইল এর অপব্যবহার করছেন । যে কোনো সময় তাঁরা মোবাইলের মাধ্যমে পরস্পরকে ডেকে নিয়ে যে কোনো স্থানে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে মিলিত হচ্ছেন । প্রেম ভালোবাসার যে একটা মাধুর্য আছে, সেটা যেন নষ্ট হয়ে গেছে । পার্ক কিংবা সমুদ্র তীরে, দিনের আলোয় তারা শারীরিক সম্বন্ধ স্থাপন করছে, যেটা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু । তারা ভাবছে এর ফলে তাদের জীবন সার্থক হলো । কিন্তু আসলে তারা নিজেদের এবং সমাজকে এক অধঃপতনের পথে নিয়ে যাচ্ছে ।
নিজেদের দেহকে সুন্দরতর করে সাজিয়ে নারী পুরুষকে আকৃষ্ট করছে, পুরুষ আকৃষ্ট হচ্ছে, ফলে যে সম্পর্ক বিয়ের পরে হবার কথা ছিলো, তা সংঘটিত হয়ে জীবনের বাঁধন, জীবনের মাধুর্য হারিয়ে যাচ্ছে । মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারই আজ পুরুষ ও নারীকে পরস্পরের কাছে এতটা সুলভ করে তুলেছে ।


এইভাবে পুরুষ এবং নারী উভয়েই নিজেদের জীবনকে পঙ্কিল করে তুলছে । ছোটো ছোটো দেনা পাওনার হিসাবের মধ্যে নিজেদের জড়িয়ে জীবনকে অসুন্দর করে তুলেছে ।


বিষয়টি যদিও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়, সার্বজনীন নয়, তবু সমাজের বুকে ঘটে চলা একটি মন্দ দিকের প্রতি আলোকপাত করে কবি সমাজকে সচেতন করতে চেয়েছেন ।
কবিকে জানাই শুভকামনা ।