মানবসভ্যতার ইতিহাস নীতি তৈরির ইতিহাস, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নীতিবিরোধের ইতিহাস, এই বিরোধিতার সূত্র ধরে যুদ্ধ সংগ্রামের ইতিহাস, এবং সেই যুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তাদের বলিদান দেবার ইতিহাস । নীতি নির্ধারক মানুষদের, নীতি প্রয়োগকারী মানুষদের, নীতি প্রচারকারী মানুষদের আচরণের মধ্যে এই যে  অসঙ্গতি - এই বিষয়েই কিছু বলতে চেয়েছেন কবি সৌমেন চক্রবর্ত্তী "শেষের ডাক" শীর্ষক রচনায় ।


যুগ যুগ ধরে দেখা গেছে পৃথিবীতে যতো নীতি আদর্শ মতবাদ এসেছে, সব মানবকল্যাণের কথা বলেছে । মানুষের ভালো করার এই ঘোষিত নীতিগুলির মধ্যে চলেছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই । প্রতিটি ক্ষেত্রে এই লড়াই এর কারণে ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে । মানুষকে ঢাল করে তাঁদের মঙ্গল করার অজুহাতে তাঁদেরই জীবনে বারে বারে আনা হয়েছে সংকট । এই সংকটে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ ঘর হারিয়েছেন, নিজের আবাসস্থল ছেড়ে প্রাণ হাতে করে  তাঁদের চলে যেতে হয়েছে দূরদেশে । সেখানে উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাঁদের । অসীম দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে । জীবনের মূল স্রোত থেকে হারিয়ে গিয়ে উচ্ছিষ্টের মতো জীবন যাপন করতে হয়েছে ।


বিভিন্ন নীতি ও মতবাদের মধ্যে বিরোধের কারণে যুগ যুগ ধরে এভাবেই মানুষের সাধারণ বেঁচে থাকাটা দুর্বিষহ হয়ে গেছে । পরিবেশে এসেছে হিংস্রতা । ক্ষত সৃষ্টি হয়ে চলেছে মানুষের দেহে, মানুষের মনে, সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে । মৃত্যুর মিছিল চলেছে । সবাই বলছেন মানুষের ভালো করার কথা । মানুষের জন্যই তাঁরা ভাবিত । অথচ তাঁদেরই প্রতিষ্ঠার লড়াই এ শেষ পর্যন্ত বলি হচ্ছেন মানুষই । মানুষের মঙ্গল করার নামে তাঁদের গুপ্তহত্যা করে চলা হচ্ছে । এই ইতিহাস ধারাবাহিক । অনর্থক এই রক্তপাত হয়েই চলেছে ।


নীতিনির্ধারক মানুষদের মানুষের মঙ্গল করার এই ভন্ড চেহারার অবসান দেখতে চেয়েছেন কবি । তাঁদের এই মিথ্যে বড়াই, অহংকার সকলকে চিনিয়ে দিতে চেয়েছেন । অসহায় মানুষদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার না করে নিজেদের লড়াই নিজেদের লড়তে আহ্বান করেছেন । চিরটাকাল যেমনটা হয়ে এসেছে তার বদল হয়ে তিনি চেয়েছেন এই লড়াই আড়ালে আবডালে না হয়ে সামনাসামনি হোক । যার লড়াই তিনি লড়ুন এবং এটাই হোক শেষ লড়াই । মানুষের কল্যাণ করার নামে নিজেদের আখের গোছানোর ইতিহাসের অবসান হোক ।


কবি কে জানাই শুভ কামনা ।