'কবিকথা' রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলাকেন্দ্রিক কবি তথা লেখকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ l ১২ ই মার্চ, ২০১৮ ডিজিটালাইজড রূপে জন্মগ্রহণ করে 'কবিকথা' l রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাহিত্যপ্রেমী মানুষদের মধ্যে যোগাযোগের এটি এক সাধারণ সেতু l


আবির্ভাবের ঠিক দুই মাসের মাথায় 'কবিকথা'  প্রথম প্রকাশ্য অনুষ্ঠান করে ২৬ বৈশাখ বৃহস্পতিবার (ইংরাজি ১০ মে) সন্ধ্যায় দেবীনগর সমাজ কল্যাণ বিভাগ এর অনুষ্ঠান ভবনে l  রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার বহু কবি সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন l উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের  আধিকারিক অরুণাভ মিত্র মহাশয় l সভাপতি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে বিশিষ্ট সমাজসেবী সৌর্য্যেন্দ্র কুমার ধর ও নীরদ রায়।  


স্বরচিত কবিতা, গান, নাচ, আবৃত্তি, গীতি-আলেখ্য  সহযোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মনোজ্ঞ হয়ে ওঠে । রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করেন উপস্থিত সকলে l উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী  প্রবীর সাহা l শিশুশিল্পী স্নেহা পোদ্দার “নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ” আবৃত্তি পরিবেশন করেন । সঙ্গীতশিল্পী তমা দাস এর তিনটি গান “তুমি রবে নীরবে—”, “ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি---”এবং শেষে “আমার পরান যাহা চায়—” সকলের হৃদয়ে আনে মুগ্ধতা। গান ও কবিতার কোলাজ পরিবেশন করেন রাখি সাহা ও প্রবীর কুমার সাহা। কবি এনাক্ষী আচার্য, কবি তুহিন চন্দ ও শুভব্রত লাহিড়ীর কবিতাকে ভাষ্য করে সুনন্দ বসু ও কৌশিক সেন “রবি কিরণে” নামে একটি অসাধারণ গীতি-আলেখ্য উপস্থাপন করেন।


“কবি প্রণাম” শিরোনামে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন চৈতালী দাস ও সুমনা পাল মুখার্জী। হিমাংশু দাস “শ্রদ্ধা” শীর্ষক কবিতাপাঠ করেন । “অসময়” এর কথা উঠে আসে কবি শুভব্রত লাহিড়ীর স্বরচিত কবিতায়। কবি তপন রায় তাঁর “থাকতে যদি” কবিতায় কবিকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাইলেন আজকের সার্বিক অবক্ষয়ের কথা।  কবি অমিত পালের স্বরচিত কবিতা “মুখগুলি”। তাঁর কবিতায় রবিকবির নারী চরিত্রগুলি যেমন চারু, নিরুপমা, বিনোদিনী প্রমুখ ফুটে ওঠে l


কবি শর্মিষ্ঠা ঘোষের “সুন্দর” কবিতায় পাওয়া গেলো রবি মৃত্যুর পরে রূপকের মাধ্যমে এক রবি ভ্রমণ।  তিনি  লিখছেন --          
“--বৌঠানের শাসনে এক বিস্ময় বালক
................রূপ থেকে রূপান্তরে
কাল থেকে কালান্তরে ........
উঠে দাঁড়াচ্ছে জাতি মঙ্গল বারতায়
সত্য সুন্দরে বিরাজিত।”


কবি অরুন চক্রবর্তী তাঁর “ বিশ্বকবি তোমাকে” কবিতায় বর্তমান ধর্মীয়- রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মুল্যবোধের অভাবের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন --
“ নেমে এসো কবি দাঁড়াও সামনে নির্ভয়ে
অনেক দিন ঘুমায়নি তোমার নিষ্পাপ সন্তানেরা। ”


বিমল দে তাঁর “ আমার কবি প্রনাম” এর মাধ্যমে রবি শ্রদ্ধা জানান। সাহিদা খাতুন “এখনো ত্রাস” পাঠ করেন । কবি দীপা চৌধুরী "কথার মালা” তে জীবনের প্রতিটি স্তরে রবি কবির উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। কবি শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর নিজস্ব ভাবনা ও অনুভূতি “হে গুরুদেব” কবিতায় ব্যঞ্জনাময় করে প্রকাশ করেন। কবি তুহিন শংকর চন্দ “ আজকে আমার রবীন্দ্রনাথ” কবিতায় আজ ১৫৭ বছর পরে বিশ্বকবিকে আমরা কিভাবে দেখছি তা কাব্যিকরূপে প্রকাশ করেন l


'নাইট' উপাধির মোহ ত্যাগ করে রবীন্দ্রনাথ যেমন অত্যাচারী ইংরেজ শাসনের নিন্দা করে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, 'আহ্বান' রচনায় কবি যাদব চৌধুরী তেমনই আজকের দিনের কবিদের 'রবীন্দ্রনাথ' বলে সম্বোধন করেছেন এবং এই সঙ্কটের দিনে শাসকের তোষণ না করে, রাজ পুরস্কারের মোহ ত্যাগ করে প্রতিবাদী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন l


'আমার রবীন্দ্রনাথ' কবিতায় কবি বিনয় লাহা  লিখেছেন 'আমি তো আর সন্ন্যাসী নই তাই সবার সাথেই থাকতে চাইছি ।' রবীন্দ্রনাথ আজও প্রাসঙ্গিক । তাই আবার লিখলেন  - ‘যতবার আমি ফেরত চাইছি ততবার তুমি রবীন্দ্রনাথ ’। নিবারণ দাস তাঁর “রবি বাবু” কবিতায় বললেন রবির সৃষ্টি করা চরিত্র আজ আর নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে !


সঞ্চালিকা পুস্পিতা মজুমদার স্বরচিত কবিতা পাঠের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুন্দর পরিচালনা করেন l