"ঙঙঙঙঙঙঙঙঙঙঙঙ!!!!!!
এটা একটা আধুনিক কবিতা!!!
কেউ কি বুঝছ????
আমাকে বলবে ভাই??" ( ৮-ই জানুয়ারি ২০১৮ তাঁর ফেসবুকের পাতায় সুবীর সেন, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, সুন্দরবন মহাবিদ্যালয় মহাশয়ের প্রশ্ন)


সুবীর সেনের পোস্ট এর উত্তরে তাঁর পাতায় আমার মন্তব্য :


"হ্যাঁ বুঝেছি l কবিতাটি অসাধারণ হয়েছে l আধুনিক কবিতা হিসাবে একটি সার্থক রচনা l কবি এখানে অনেক কিছুই বলতে চেয়েছেন, যেমনটা আজকাল আধুনিক কবিতাগুলিতে বলা হয় l একটু গভীর মনোযোগ দিয়ে কবিতাটি পাঠ করলে তা বোঝা যায় l
আমার ক্ষুদ্র বিদ্যায় সুন্দর ছোট্ট কবিতাটির পাঠোদ্ধারের প্রয়াস করবো l
ঙ হলো ব্যঞ্জনবর্ণের প্রথম বর্গের শেষ বর্ণ l এখানে বর্ণমালা বলতে মানুষের সমগ্র জীবন বুঝতে হবে l স্বরবর্ণ দিয়ে জীবনের শুরু l শিশুকাল l প্রাপ্তবয়স্ক হলে ব্যঞ্জনবর্ণে পা l জীবনে এগিয়ে চলার পথে যেমন যেমন সফলতা আসে তেমন তেমন স্বরবর্ণ থেকে ক্রমে ব্যঞ্জনবর্ণের দিকে যাত্রা l ব্যঞ্জনবর্ণ যতো এগোয়, ততো বেশি সফলতা l ব্যঞ্জনবর্ণের প্রথম বর্গ মানে সফলতার প্রথম ধাপ l তার শেষ বর্ণ l অর্থাৎ প্রথম প্রয়াসে, প্রাপ্তবয়সের প্রথম উদ্যোগে সফল l জীবনে সবাই সমান সফল যেমন হয় না, তেমনি কেউ আবার প্রথম সফলতার পর আর এগুতে পারে না l তখন সারাটা জীবন ঐ প্রথম সফলতার পুঁজিকেই ভাঙিয়ে খায় l যেমনটা এই কবিতায় দেখি l ঙ তে এসেই জীবনের অগ্রগতি থেমে গেছে l ঐটুকু সাফল্যই পুঁজি l ওটা ভাঙিয়ে, ওটা দেখিয়ে, ওটা আউড়েই সারাটা জীবন চলতে হবে l তাই ঙঙঙঙঙঙঙঙঙঙ...."


সুবীর সেনের উত্তর :


"ধন্যবাদ।
আসলে, বেশ কিছু দিন ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমিয়ে আধুনিক কবিতার চর্চা চলছে।
আজ অংশুমানের ও পবিত্র সরকারের বক্তব্য  শুনছিলাম। হঠাৎ আমার এক অধ্যাপক ছাত্রের একটি পেপারের কথা মনে পড়লো। কবিতায় দুর্বোধ্যতা বলে কিছুই নেই। সবটুকুই অর্থ বহ। আর সেই বিশ্বাস থেকে, পংক্তি গুলির উদ্ভব।
আপনার বিশ্লেষণ, বেশ লাগলো।"


আলোচনাসভায় অধ্যাপক সুবীর সেন paper পড়েছেন l তার ১২ মিনিটের একটা ভিডিও আমাকে পোস্ট করেছেন এবং কমেন্ট করতে বলেছেন l
সেই ভিডিও যে পাতায় আছে তার লিঙ্ক :


https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=894725880694342&id=100004708145583


"আমার কবিতা ভাবনার 12 মিনিট। কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়।
আপনার একটা কমেন্ট চাই স্যার!"


আমার কমেন্ট :


"কবিতাভাবনার ১২ মিনিট দেখলাম, শুনলাম l আধুনিক কবিতাকে ঘিরে অনেকগুলি বিষয় এসেছে l এসেছে নির্দিষ্ট কবিভিত্তিক কিছু কথা l আধুনিক কবি ও কবিতার সততা ও শঠতা প্রসঙ্গ খোলামেলাভাবে এসেছে l যুগোপযোগী কিছু বাস্তবতাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ আছে l
প্রথম পর্যবেক্ষণ, কিছু আধুনিক কবি কবিতাকে তার নিজস্বতায় রক্ষা করে বাঁচাতে চান না, কবিতাকে বেচতে চান l ফলে বুদ্ধদেব বসুর হাতে কবিতা হলো  মিক্সড প্যাকেজ l কবিতায় সব এল l melodrama l কবিতা যেন নেশার মতো l সেই নেশায় দু লাইন কবিতা লিখে কবি নিজেকে ঈশ্বর ভাবলেন l ভাবলেন, যা লিখবেন, পাবলিক তাই খাবে l খেল না l কবিতার জীবনসংশয় হলো l কবিতা বেচতে গিয়ে কবিতার বাঁচাটা অনিশ্চিত হয়ে গেল l মার্কেট এ কবিতা নিল না l মার্কেটকে অস্বীকার করলে শিল্প বাঁচে না l  পাবলিক কবিতা না খেলে কবিতাও বাঁচবে না l
কবিদের মেরুদন্ড আছে কি না, সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে l সত্যিই তো, কবি যদি রাজাকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাঁর পরণে কাপড় নেই কেন, তবে পাঠকই বা কবিকে প্রশ্ন করতে পারবেন না কেন, তাঁর মেরুদন্ড নেই কেন l
সঠিক বলেছেন, কবিতা বিমানের মতো l তার ওড়ার জন্য রানওয়ে চায় l কবিরা তাই নিজেদের বিকশিত করতে যুগোপযোগী রানওয়ে বেছে নেন - বামপন্থা, ডানপন্থা l বিষ্ণু দে বামপন্থা বেছে নিলেন l সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দারুণ খেলোয়াড় l দুই পন্থাতেই ওস্তাদ l কেউ কেউ চরমপন্থী l অতিবাম l আবার ডিগবাজি খেয়ে অতিডান l যেমন কবি সুবোধ সরকার l এই শ্রেণীর কবিগণ যখন অতি বামপন্থার মৌতাতে আবিষ্ট ছিলেন, তখন তাদের  মন্ত্র ছিল, "কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" l ডিগবাজি খেয়ে যখন অতি ডানপন্থার ভেক ধরলেন, তখন মন্ত্র বদলে হলো, "গরু আমাদের ভিত্তি, গোবর আমাদের ভবিষ্যৎ" l শুধু কবিতার শক্তিতে আত্মরক্ষা করা যায় না, তাই কবিদের নানা ভেক ধরতে হয় l রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করতে হয় l কবিতায় কন্ডোম পড়াতে হয় এক্সট্রা মাইলেজ পাবার জন্য l এটা কবিতার মৃত্যু নাকি নবজাগরণ বলা দুষ্কর l
যারা কবিতায় স্বাধীনতার কথা বলেন, আদর্শের কথা বলেন, তাঁরাই যখন একজন কবিকে তাঁর স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য রাজ্যচ্যুত করা হয়েছিল, তখন চুপ করে ছিলেন l
কবিরা এক একজন ভালো খেলোয়ার বটে l কখন বল কোন্ দিকে পাশ করতে হবে, ভালো বোঝেন l শুধু কবিতা নয়, কবিতার বাইরের বহু বিষয় তাঁদের হ্যান্ডেল করতে হয় l
বলেছেন কবি বিনয় মজুমদারের কথা l কবিতার ক্ষেত্রে সততার নিদর্শন l কবিতায় চিরকাল এক নীতি ও আদর্শের কথা বলে গেছেন l এখনকার বহু কবির মতো মতবদলু বা দলবদলু হন নি l
আরো আছে অনেক প্রসঙ্গ l আধুনিক কবিতার দুর্বোধ্যতা প্রসঙ্গ l কবিতার automatic writing প্রসঙ্গ l কবিতাই যাই লেখা হোক, তার নাকি গভীর থেকে গভীরতর অর্থ থাকে l আর কবিতা যে কোনো প্রসঙ্গে automatically লেখা সম্ভব l ভালো বলেছেন, তাহলে এটিও একটি আধুনিক কবিতা,
"বউটা যদি মোবাইল হতো
পকেটমারে নিয়ে যেত
ডায়রি করে বলে দিতাম
ফেরত পেলে নিব না l"
যেটা উল্লেখযোগ্য, কবিতাচর্চা নিয়ে কিছু সত্যকথা বলা হয়েছে l অপ্রিয় বলে সেগুলি এড়িয়ে যাওয়া হয় নি l কবির নাম ধরে ধরে কিছু বিষয় বলা হয়েছে l এটাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসাবে না ধরে, বিষয়কে উদাহরণসহ সৎভাবে তুলে ধরার প্রয়াস হিসাবে দেখতে হবে l
অধ্যাপক সুবীর সেনকে ধন্যবাদ জানাই তিনি অত্যন্ত সরলতার সঙ্গে অকপটভাবে আধুনিক কবি ও কবিতার অনেক গলিঘুঁজি, অনেক অন্ধকারময় দিক সরসভাবে তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন l কবিরা ঈশ্বর নন l মানুষ l মানবিক গুণদোষের শিকার l নিজেদের বাঁচাতে কবিতাকে, কবিতার আদর্শকে বলি দিতে প্রস্তুত l"


আমার কমেন্ট এর উত্তরে সুবীর সেনের প্রতিক্রিয়া :


"ড. অমিতাভ বিশ্বাস ( wbsu) লিখেছেন,


আজ ০৫.০১.২০১৮, সুবীর তাঁর presentation -এ আমাদের অনেককে চমকে দিয়েছেন।  অনাবিল সমালোচনা করেছেন। আমি জানি তাঁর অনেক প্রিয় কবিতার স্রষ্টা কবিদের নিয়েও কাঁটাছেঁড়া করলেন। অকপটে। কোনওরকম পক্ষপাত না দেখিয়ে, নির্ভয়ে। তাতে কারোপরে এতটুকু দুর্বলতা দেখাননি। প্রকৃত প্রস্তাবে এইটিই খাঁটি সমালোচনা। সত্যি এবং যথার্থ। আমার মনেহয় এই পদ্ধতিটাই প্রকৃত এবং খাঁটি। এর একটা নামকরণ হওয়া প্রয়োজন। পদ্ধতিটার নাম আমার মতে "নিরপেক্ষ পদ্ধতি", ইংরেজিতে বলা চলে "independent  theory" । বন্ধুরা কী বলেন?"


"যাদব বাবু , আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
আজ সুবোধ সরকারের সাথে আমার একচোট হয়েছে। ভদ্রলোক রেগে আগুন। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় এটা ছাপাবে।"