http://www.bangla-kobita.com/paramita58/post20170412015303/


নববর্ষ আগতপ্রায় l তাই সময়োপযোগী রচনাটির ওপর যথাসময়ে আলোকপাত করতে মন চাইল l
"স্বাগত নববর্ষ" কবিতায় পেলাম দৃঢ় প্রকাশভঙ্গি, বক্তব্যের স্বচ্ছতা এবং পরিণত কবিতার ভাব l ছোট্ট কবিতাটিতে মানবজীবনের চলার পথে নানা ভুল ভ্রান্তির মধ্যে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, পরবর্তীতে আদর্শ জীবন যাপনের সংকল্প নেবার মতো একটি চরিত্র দেখানো হয়েছে l মানুষকে দেবতা হিসাবে নয়, ভুলভ্রান্তিতে ভরা এক সৎ মানসিকতাসম্পন্ন বাস্তব মানুষ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে l জীবনে চলার পথে মানুষের দোষ ত্রুটি, প্রলোভন থাকে, ভুলভ্রান্তি হয় l সততার সঙ্গে তা স্বীকার করা হয়েছে l কিন্তু নববর্ষের পুণ্য প্রভাতে সংকল্প নেয়া হল আগামীতে এই ভুলগুলি সংশোধন করবার l সেই প্রচেষ্টা যে সর্বাঙ্গে সফল হবে, সঙ্গত কারণেই, বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তার নিশ্চয়তা দেয়া হয় নি l বর্তমান সমাজব্যবস্থায় একা ব্যক্তির পক্ষে নির্মল জীবনযাপন সম্ভব নয় l নানা চাপে, অভাব-অনটন, প্রলোভন - জটিল আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে মানুষকে অনেক সময় অন্যায়ের সঙ্গে, নীতির প্রশ্নে, অথবা চারিত্রিক বিষয়েও আপোষ করে চলতে হয়, জেনে বুঝেও ক্লেদাক্ত জীবন যাপন করতে হয় l
কিন্তু মানবতা, মনুষ্যত্ব, শুভবুদ্ধি হার মানে না l প্রত্যেক নববর্ষে, প্রতিবার নতুন করে শুরু করবার সময় সৎ পথে থাকার, নির্ভুল জীবন যাপনের, নীতির প্রশ্নে অবিচল থাকার সংকল্প সে নেয় l
এখানেই মনুষ্যত্বের জয় l তার অন্তরের ইচ্ছা - শুদ্ধ থাকার সংকল্পের ঘোষণা দিয়ে মানবজাতির স্বকীয়তা বজায় থাকে l
কবিতাটিতে উপমা, রূপক সুন্দর, তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যবহৃত হয়েছে l ভোরের আলো পাপহীন l মানবজীবনের ক্ষেত্রে ভোর শৈশবের প্রতীক l শৈশব সরল, পাপহীন হয় l তারপর যত বেলা বাড়ে, অর্থাৎ মানুষের যত বয়স বাড়ে, পাপ, হিংসা, লোভ, কাম, ক্রোধ, মাৎসর্য প্রভৃতি ষড়রিপু মানবজীবনের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে, ক্লেদাক্ত করে l রাত এখানে পাপ, অনাচারের প্রতীক l যত কলঙ্ক, দুঃস্বপ্ন, অনাচার ঐ রাত্রিকালে l আর ভোর জীবনশুরুর প্রতীক l ঝলমলে পরিচ্ছন্ন পোষাকে নিষ্কলুষ জীবনযাপন করার  সুখস্বপ্নে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যেকে কবির সশ্রদ্ধ কাব্যিক অনুমোদন l
যে কোনো যুগে মানুষের অস্তিত্বের সংকট এবং তার থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টার বার্তা ফুটে উঠেছে কবিতাটির সর্বাঙ্গে l এরকম একটি বাস্তবধর্মী কবিতার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ l


আসরের কবি প্রবীর চ্যাটার্জি লিখিত "পারমিতার জন্য"
কবিতাটি পড়ে উৎসাহিত হয়ে কবি পারমিতার পাতায় গিয়ে কবির লেখা কিছু কবিতা পড়েছি l কবিবন্ধু প্রবীর  চ্যাটার্জি কবি পারমিতা সম্বন্ধে প্রসংশাসূচক যা লিখেছেন, ওনার কিছু কবিতা পাঠ করার পর বলছি, কবি পারমিতা বা অনুরাধা সম্বন্ধে তাঁর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে এই প্রতিবেদক সহমত l কবি পারমিতার আসরে সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি  কবিতায় মন্তব্যও করেছি l কবির কিছু কবিতা পাঠ করে সামগ্রিকভাবে যা মনে হয়েছে, উনি যখন যে বিষয়ের ওপর কবিতা লিখছেন, বিশ্বস্ততার সঙ্গে গোটা কবিতাটিতে সেই বিষয়টির মধ্যেই থাকছেন, অযথা দিগ্বিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন না l ভাব প্রকাশের মধ্যে সুন্দর কথকতার ভঙ্গি আছে l ফলে ওনার কবিতা পড়তে শুরু করলে কবিতাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ না করে থামা যায় না l ভাষা সাবলীল এবং অলঙ্কারময় l উপমাগুলি সুন্দর, সঙ্গতিপূর্ণ এবং কবিতার ভাব বহনক্ষম l প্রকাশভঙ্গি আন্তরিক এবং কবিতার বিষয় চয়ন বৈচিত্র্যপূর্ণ l কবিতার শিরোনামগুলি আকর্ষণীয় এবং কবিতাগুলি শিরোনামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ l এত ঝরঝরে, কাব্যময়, ছন্দময় ভাষা - পাঠের সময় এক অনন্য সুখের অনুভব পাই, কোথাও হোঁচট খাওয়া নেই, মসৃণ পাঠে কবিতার রসাস্বাদন বাধাহীন l
কবি পারমিতার কবিতার আসরে সাম্প্রতিক প্রকাশিত কিছু কবিতা পড়ে আমার যা অনুভব হয়েছে, তা এখানে  সংযোজিত করলাম l নিশ্চয় এই মন্তব্য তাঁর সব কবিতা সম্বন্ধে প্রযোজ্য নয় l কারণ, আমি আসরে প্রকাশিত তাঁর সব কবিতা এখনও পড়ে উঠতে পারি নি l তবে তাঁর কিছু কবিতা পাঠ করে তাঁর কবিতায় যে আগ্রহ জন্মেছে, ধীরে ধীরে তাঁর সব কবিতাই পড়ে ফেলব নিশ্চয় l তার পর তাঁর কবিতা সম্বন্ধে মূল্যায়নের যদি কোনো পরিবর্তন হয়, অনুকূলে বা প্রতিকূলে, তার জন্য আজকের এই মূল্যায়ন মিথ্যা হয়ে যায় না l
আজকের দিনে কবি পারমিতাকে তার অনন্য সুন্দর কবিতাবলীর জন্য অভিনন্দন জানিয়ে এবং কবির সৃজনশীল কর্মের দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করলাম l