একদিন দেখি, এক মাতাল--
বউয়ের চুলের মুঠি ধরে বলছে,
আর ক্যা ক্যা, ঘ্যা ঘ্যা করবি?
এই বলে দুম-দাম করে তার পিঠে
গোটা চারেক কিল বসিয়ে দিল।
বধুটির ঘাড় বেকে আছে,
চোখ দুটিতে ভীতা হরিণীর মতো দৃষ্টি,
যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি নেই ওই মাতালের।
সুমুখ দিয়ে যাচ্ছিলাম।
বধূটি বাঁকা হয়ে নিরবে
আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।‌
করুন বেদনার্ত ভঙ্গিতে,
চোখের ইশারায় সাহায্যের আবেদন করে।
মাতালের কোন ব্যাপারে নাক গলানো ঠিক নয়।
তবু যন্ত্রণাকাতর নারীটিকে
সাহায্য করতে মন চাইল।
আরে আরে কি করছো! মরে যাবে তো!
ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও না ভাই; বলে--
জোর করেই মেয়েটিকে ছাড়িয়ে দিলাম।
মরে যাক! ওর মরে যাওয়াই ভালো!
কেন? কি হয়েছে ভাই?
প্রতিদিন শুধু ঘ্যান ঘ্যান করবে--
চাল কই? ডাল কই?
ছেলে-মেয়ে দু'টো না খেয়ে ঘুমিয়ে আছে,
ইত্যাদি, ইত্যাদি।
কাহাতক সহ্য হয় বলুন তো?
একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না!
তাই দিলাম দু'ঘা বসিয়ে। হে.. হে.. হে..
ভুল কিছু তো বলেনি!
ওদের প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে না?
আমার কি কোন অভাব আছে?
বাজারে সবকিছু আছে।
চাল, ডাল, তরকারি, সব।
ও হারামজাদির শুধু তামাশা।
তাছাড়া, এ জগতে কে কার?
বউ, ছেলে-মেয়ে? কেউ আমার নয়।
কিছুই আমার নয়। সবই মায়া!
মদ না খেয়ে পার না?
আমি তো মদ খাইনি; খেয়েছি সঞ্জীবনী সুধা।
মনে হয় মেঘের উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছি।
আপনাকে দেখে তো খুব ছোট মনে হয়।
আমার কোন কষ্ট নেই, কোন দুঃখ নেই,
সংসারের কোন যন্ত্রণা নেই।
আ...,কি শান্তি!
এই বলে সে ধপাস করে
মেঝেতে শুয়ে পড়ল।
ধুলো-ময়লা কাপড়চোপড় পরনে,
চটি জোড়া এখনো দু'পায়ে।
শুয়েই নাক ডাকতে শুরু করল।
করুনভাবে তাকিয়ে বউটি বলল,
না খেতে পেয়ে ছেলে মেয়ে দুটি
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঘরে একটি টাকাও নেই।
কেন যে আমার মরণ হয় না!
তার হাতে এক'শ টাকা দিয়ে বললাম,
আজকের মত চালিয়ে নাও, ভাই।
ধার শোধ করবো কি করে?
রোজই তো মাতাল হয়ে এভাবে বাড়ি ফিরে।
দিতে হবে না।
মনে কর তোমার দাদা দিয়েছে।
বলে হনহনিয়ে চলে গেলাম।
পরদিন সকালে দেখি,
সেজেগুজে বাবু বের হচ্ছে।
কোথায় যাচ্ছ?
কেন? কাজে যাচ্ছি।
তুমি তো বললে,
তোমার কোন অভাব নেই।
তাহলে কাজে যাচ্ছ কেন?
সলজ্জ হেসে বলল,
কাজে না গেলে ছেলে-মেয়েগুলো খাবে কি?
তাছাড়া, আপনার একশ টাকাও তো দিতে হবে।
তাই না?
মনে হল গতকালের ঘটনার জন্য একটু অনুতপ্ত।
কিন্তু কতক্ষণ....?


১১/০৬/২০২০ ইং