আমি স্বাধীনতা দেখিনি
যখন দেখি বাতাসের তোড়ে একটি পতাকা দিগ্বিদিক উড়ে বেড়ায় নির্মাল্যে
তখন মনে হয় স্বাধীনতা আছে,
যখন ফসলের সবুজে চারপাশ দৈব হয়ে ওঠে
তখন মনে হয় স্বাধীনতা আছে ।।

আর যখন দেখি বখাটের আতঙ্কে স্কুল-পড়ুয়া মেয়েটি নিজেকে বন্দী করে রাখে
প্রতিবাদ করতে পারে না বদ্ধ সভ্যতার বেপরোয়া কষাঘাতে;
যখন দুমুঠো চালের জন্য রিকশাচালক হতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের,
তখন ছেদ করি মাটি, চিৎকার করে খুঁজে ফিরি
কোথায় স্বাধীনতা ? কোথায় ওড়ে স্বাধীন পতাকা ?

আমি বিজয়ের গান শুনিনি
যখন রাজপথে উল্লাস দেখি, আনন্দ মিছিল দেখি
মনে হয় বিজয় আছে,
যখন এভারেস্ট পর্বতে পদ-রেখা আঁকা হয় গৌরবের
মনে হয় বিজয় আছে ।।

কিন্তু যখন ন্যায্য বেতনের জন্যে শিক্ষকেরা অনশন করে
তাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়া হয় বিষাক্ত মরিচের গুঁড়ো;
রাজাকারের জায়গা হয় মন্ত্রী পরিষদে
আর ক্ষুধার তাড়নায় মারা যায় অর্ধশত শহিদ পরিবার;
তখন ছেদ করি মাটি, ইচ্ছে করে মুক্তিযোদ্ধাদের টেনে বের করে বলি,
"কোথায় বিজয় ? এই দেশের জন্য এতগুলো লোক প্রাণ দিয়েছিলেন ? এই বিজয়ের জন্য ?"

আমি সার্বভৌমত্বের গল্প শুনিনি
যখন দেখি সংবিধানের বুকে শত শত আইন প্রণীত হয়
মনে হয় সার্বভৌমত্ব আছে,
যখন বইয়ের পাতায় পড়ি,"বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম"
মনে হয় সার্বভৌমত্ব আছে ।।

প্রতিমুহূর্তে যখন সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানির লাশ
ছোট্ট শিশুটির ছোট্ট হৃদয়ে লেগে থাকে বেজন্মা বুলেট;
ধর্ষিত কিশোরীর মুখে সমাজ একে দেয় পতিতার কালিমা
রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়ে অর্ধ-নগ্ন কোন মা,
তখন ছেদ করি মাটি, বুক ছিরে তন্নতন্ন করি
কোথায় সার্বভৌমত্ব ? কোথায় মাথা গোঁজার ঠাই ? কোথায় ?

আমি ভাষার রূপকথা শুনিনি
যখন দেখি কোন শিশু "মা" বলে ডেকে ওঠে আশ্রয়ের খোঁজে
যখন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে কেউ;
বাংলায় আবৃত্তি হয়, গান-কবিতা হয়
মনে হয় ভাষা আছে ।।

আর যখন দেখি সেই ভাষা বিকৃত কেউ কথা বলে আবাল ভঙ্গিতে
অথবা নিমিষেই গেয়ে ফেলে কোন হিন্দি গালের কলি,
অথচ জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম দশটি লাইনও গাইতে পারে না
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের কথা শুনে তাকিয়ে থাকে ভ্যাবলা চোখে,
তখন ছেদ করি মাটি, বইয়ের পাতায় খুঁজে বেড়াই শব্দ
কোথায় ভাষা ? কোথায় বর্ণমালা ? কোথায় ?

আশাহত হই, মনে হয় পুঁতে ফেলি নিজেকে মাটির ভেতর
তাঁদের গিয়ে বলি, "আমি পারিনি, আমরা পারিনি ! তোমরা আবার আসো ।
আমাকে স্বাধীনতা এনে দাও, বিজয় দাও, সার্বভৌমত্ব দাও !
কথা বলার জন্য আবার ভাষা দাও । আমি ব্যর্থ । আমরা ব্যর্থ ।
তোমরা ফিরে এসো, ফিরে এসো ।।"

তখন পরম আদরে রুদ্র কণ্ঠের আওয়াজ শুনি
কে যেন বলে,
"খোকা ! আজ ঘুমিয়ে যা বাবা !
কাল সকালে দেখিস নতুন সূর্য উঠবেই । আমরা সবাই আছি তোদের ভেতর ।
পাগলামো করিস না বাবা ! আজ ঘুমিয়ে যা ।"

ঘুমিয়ে যাই !
জানিনা তাঁর সেই "নতুন সূর্য" কবে দেখবো,
তবু লালন করি তাঁদের, অস্তিত্বের ভেতর
এক জোড়া ভেজা চোখ বুকের মাঝে আগলে রাখে অবিনাশী সত্ত্বা ।।



- জিহান আল হামাদী
৩০শে জানুয়ারি'২০১৩