লাল পিরান
জামাল উদ্দিন জীবন


মাগো মা ওমা মা কই তুই কই গেলি
আমারে লাল পিরান কিনা দিবি না
তুই না কইছ এইবার মেলায় দিবি
আমি না তোর বুকে সাত রাজার ধন।


লক্ষ কোটি মানিক রতন সোনা মনি চোখে
সবাই তো লাল পিরান পড়ছে ঘুরতে যায়
আমি চাইলে তুই খালি বলিস এখন না
পরে দিবে মা কি হলো তোর কোথায়?।


মেলা তো আইসা পড়ছে আর কয় দিন বাঁকি
আমার পিরান কিনার তুই কি করলি বল দেখি
ও পাস ফিরে থাকলে কি আর হবে এবার কিন্তু
আমায় তোমার পিরান খানা কিনে দিতে হবে।


গতবছর দিয়েছো ফাঁকি ভেজালে মোর দুটি আঁখি
তোরে আমি বিশ্বাস করি কতো ভালোবাসি না বল
কেন করিস আমার সাথে মাগো মন ভুলানো ছল
বাজান আমার কবে গেছে ছেড়ে মনে পড়ে নারে।


ঝুপড়ি ঘরে হলাম বড় কাজ করে দ্বারে দ্বারে
অর্ধ হারে অনাহারে দিন যে যায় মাগো কেটে
গরীব হয়ে জন্ম নিলাম আসা টাই ছিল ভুল
সমাজ বলে কুলটা সারাজীবন করবে আমায় খুন।


ধূলি বালি ময়লা আবর্জনা মাঝে কেউ ডাকে না
আদর করে ভালোবেসে দুটি গাল টিপে দেয় না
নেয় না আপন করে কোলে, বল না মা আমায়
আমি গরীব বলে সকলে মোরে অবহেলা টাই শুধু করে।


আসলে ঝড়ো বাণ উড়িয়ে নিয়ে যায় মোর ঘরের চালা
অঝর ধারায় প্রবাহিত হয় ভাঙ্গা গৃহে পানির অকুল ধারা
ভেসে যায় বেঁচে থাকার শেষ সম্বল খানি
ওহে প্রভু তুমিও কি আজ নিরুপায় হলে!


মানবতা ভুলে দেখাও স্বরূপ খানি দানবের চোখে
মাগো মা ওমা মা, তুই কান্দিস না
চোখের জল ফেলে আর ভাসাস না
আমি তোর ছোট খোকা বড় হয়েছি এবার দেখ না চেয়ে।

সব ঠিক করে দিব আপন কিছুটা সময় যদি মিলে
পান সুপারি ঔষধ পত্র সক লই এনেছি মা তোর জন্য
আরো আনলাম তরমুজ আম কলা মিষ্টি খই চিঁড়া মুড়ি কমলা
ইলিশ পান্তা খাবো মোরা আনন্দ যে সয় না।

দেখবে সকলে চেয়ে অপলক নয়নে
পড়বি তুই নতুন শাড়ী তোরে নিয়ে আনবো লাল পিরান খানি
করবো মেলায় ঘোরা ঘুরি কিনবো মিঠাই মণ্ডা মুড়কি চুড়ি
দেখবো কতো খেলা, সকলে মেলায় এসে জনে জনে দল বেঁধে।

বৈশাখী ঐ প্রচণ্ড রোদে পুড়ে দেহ খানা হলো বুঝি কান্ত শ্রান্ত
পিপাসায় কণ্ঠ শুকিয়ে কাঠ হয়েছে বুক ফাটা আত্ম চিৎকার
প্রাণ খানি যাবে চলে প্রশান্তির পরশ বুলাতে দেওয়া ডাকে গগনে
বৈশাখী ঝড়ের জলে লাল পিরান খানা অঙ্গে হলো রঙে ধোয়া কুর্তি।