ময়না কাটার বুকে চর
জামাল উদ্দিন জীবন


প্রসিদ্ধ ও ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া ময়না কাটা নদীকে অবলম্বন করে ময়না কাটার বুকে চর উপন্যাস শুরু করছি। আবেগ অনুভূতি ছোট বেলা হতে নদীর বুকে হেসে খেলে বড় হওয়া নৌকা চড়ে মাছ ধরা,পান কৌড়ি বালি হাসের সাথে দস্যিপনা মেতে থাকা। স্বপ্ন ঘেরা সৌন্দর্য ও মায়াবী মায়া ঘেরা পরাণ আকুল করা প্রিয় নদী। নদীর বুকে ভেসে ভেসে হারিয়েছি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চেনা ঘাট থেকে অচেনা অজানা কত ঘাট, দেশ দেশান্তর। বুকের মাঝে পরম মমতায় যত্ন করে রেখেছে হাজারো সন্তান মা তাঁর সন্তানকে যেমন করে বুকে ধরে রাখে।পান করেছি মিঠা পানি গেয়েছি কত শত গান নদীর বুকে ছোট হতে বড় হওয়া আমার। শাপলা শালুক ঢ্যাপের খই তুলছি দল বেঁধে হায়েনার মতো দলে দলে। নদীকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠেছে জন জীবন। লোক মুখে গল্প শুনে শুনে দেখে অনবদ্য জানার আগ্রহ হতে ময়না কাটাকে নিয়ে লেখার আগ্রহ ও সকলের মাঝে নদীর কথা জানাতে বেশ ইচ্ছে করছে। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত বাসনাকে বাস্তবে রুপদান করতে হাতে তুলে নিলাম জীবন চলার পথে সব সময়ের সঙ্গী কলম। সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ও নদীর তখনকার ও বর্তমান সময়ের প্রেখ্যাপট সম্বন্ধে কিছু তথ্য সকলের সামনে তুলে ধরবো বলে। “ময়না কাটার বুকে চর গ্রন্থ খানি আপনাদের সামনে তুলে ধরার ক্ষুদ্র চেষ্টা আমার”। অনেক দিন আগের কথা আমার আগমন ঘটেনি ধরণীতে। বড় দের মুখে গল্প শুনে শুনে নদীর প্রতি কৌতূহল বেড়েছে ছোট বেলা থেকে। খুব প্রসিদ্ধ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া খরস্রোতা এই ময়না কাটা নদী। কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান। কামার কুমার তাঁতী সূত্রধর মুচি ঋষি ও অন্যান্য শ্রেণি পেশার মানুষের বসবাস। মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার নলগোড়া গ্রামের মধ্য বিন্দু হয়ে পাঁচটি উপজেলাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে নদীটি। মৎস শিকার, কৃষি কাজ,কাঠের কাজ,হস্ত শিল্প ও জাল বুনার কাজে বেশ পারদর্শী এখানকার মানুষ। কৃষি ও মৎস শিকার এখানকার মানুষের প্রধান পেশা এছাড়া অন্য পেশোর কাজ করেও অনেকে তাদের জীবনও জীবিকা নির্বাহ করে। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ছায়া ঘেরা মায়া ভরা গ্রামের নাম নলগোড়া। বৃহত্তর ফরিদপুর মহাকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমানে মাদারীপুর জেলার শিবচর মহাকুমার অন্তর্গত। জনপদের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান,শতকরা পাঁচ ভাগ হবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করলেও একে অন্যের বিপদে আপদে এগিয়ে আসে। প্রত্যেকেই অনুষ্ঠান ও পার্বণে এক সাথে মিলিত হয় যেন সকলে এক আত্মা এক প্রাণ। হিন্দু, মুসলিম, ধর্মের ও বর্ণের কোন ভেদা ভেদ নেই সকলে সকলের তরে নিবেদিত প্রাণ। নদীটি বেশ খরশ্রতা গভীর সকলে প্রতিটি মুহূর্তে ভয়ে থাকতো এই খবর এলো নতুন করে কুমির কাউকে খেয়েছে। প্রতিনিয়ত ভয়ে ভয়ে থাকতো নদীতে কুমির উৎপাত ছিলো অনেক। মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে নদীটি জড়িয়ে আছে উতোপ্রতো ভাবে। অনেক চেষ্টা করেও এর কোন সমাধান হয়নি। বাঁচার তাগিদে যার যা সম্বল তাই নিয়ে প্রতি দিন সকলে মৎশ ও অন্যান্য জিনিস আহরণে যায়। গৃহস্থালি ও গোসলের জন্য অনেক উঁচুতে মাচা বা টং বানিয়ে ব্যবহার করতো। পানি উঠানোর কাজে ব্যবহার করা হতো বড় রকমের কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি পালকি মত এক ধরনের দোয়াইর। চলছে জীবন গ্রাম বাসির জীবনে একটু সস্তি ফিরে পেতে বিভিন্ন উপায় খুঁজতে থাকে। যে যেটা করতে বলে তাই করে কত তাবিজ কবজ মানত কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। হাটে মাঠে ঘাটে চায়ের দোকানে এটা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। কি? করে পরিত্রাণ মিলবে সকল গ্রাম বাসির। এক পাগল সব শুনে হাসছে বলে তোদের মুক্তি মিলবে পূর্নবান লোক নিয়ে আয়। বলে সেই লোক সেখান হতে নিরুদ্দেশ হয়। সকল ধর্মের প্রধানদের কাছে কথাটি বলা হয় কেউ তেমন একটা আমলে নেয়নি। দবির মাতবর তার চোদ্দ পুরুষের পেশা মাছ ধরা সেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আইনউদ্দি মাতবর তার চাচাতো ভাই হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা নদীতে যায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটে উৎকণ্ঠা আতঙ্কে। মৃত্যুকে সাথী করেই প্রতিনিয়ত প্রহর কাটে। মৃত্যুর সাথে আমরণ বাজী ধরেই চলে তাদের জীবনের গতি পথ। ”যেখানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের কি মৃত্যুকে ভয় পেলে চলে” জীবন একটা মৃত্যুই হবে এক বার তবে কেন? তার ভয়ে ভীতু হও মানুষ বার বার। অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যায় পাগল শিরাজ কে আবার একদিন নদীর ঘাটে দেখতে পেয়ে অনেকে ভিড় জমায়। শুয়ে আছে পাগল অনেক অনেক কিছু নিয়ে এসেছে তার জন্য কারো খাবারই ছুঁয়ে দেখেনি সে। ধীরে ধীরে কোলাহল ভিড় বাড়ছে। আইন উদ্দিন মাঝির নৌকা ঘাটে ভিড়ছে দেখে শিরাজ উঠে সামনে দাঁড়ায় সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। হাতের ইশারায় নদীতে যেতে বলে জহের লাফ দিয়ে উঠে বেশ কিছুটা দুরে এসে গোসল করে। পাগলার কর্ম দেখে ওরা ভয়ে অস্থির হয়ে যায়। তার উপর কুমীরের উৎপাত নিত্য সঙ্গী। এক ঝাঁক গজার মাছ নৌকার সামনে দিয়ে যাচ্ছে জহের জাল মারতে গেলে শিরাজ ধমক দেয় দুজনে ভয়ে কাঁপতে থাকে। বেশ গভীরে চলছে ওদের দুজনার মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে সারা রাত জেগে মাছ ধরেছে অনেক ক্লান্ত শ্রান্ত ও পরিশ্রান্ত। কিছু শাপলা শালুক তুলে ফিরছে তখন প্রবল স্রোতে নৌকা বিপরীত মুখে ছুটে চলে। ভাসতে ভাসতে হাজী শরিয়ত উল্লাহর বর্জার কাছে এসে থামে। যা যা বলে পাগল সেই যে গেলো কোন খবর নেই। হারুনকে বলে দেখো নৌকায় কারা আছে? বলে হুজুর দুজন জেলে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে। কয়েক জনে ধরা ধরি করে ওদের বাহাদুর পুর নদীর তীরে উঠায়। বর্জা ছুটে চলে আপন গতিতে। হাসেম বলে হুজুর কোন দিকে যাবেন দেখ পাল কোন দিকে হাওয়া বয় অনেকটা দূর এসে তারা থামে হিজল দীঘির গাঁয়ে। নদীর এই দিকটা বেশ শান্ত মনেই হয় না নদীর কোন বিরূপ চিত্র আছে। মোহন গোসল করছে হঠাৎ কি? যেন পায়ের কাছে কামড়ে ধরেছে। পানির নিচে কি আছে সেটা দেখতে যায় ডুব দিয়ে যা দেখে একটা চিৎকার দিয়ে উপরে উঠে জ্ঞান হারায়। মারিয়া প্রতিবেশী পানির জন্য ঘাটে আসে তাকে পরে থাকতে দেখে গিয়ে সকলকে খবর দেয় সেই হতে মোহন বিছানায় আর উঠে দেখেনি। কতো ফকির ডাক্তার ওঝা পীরের দরগায় মানত করেছে কোন লাভ হয়নি। শীতলা দেবীর পূজা করতে আসে নিরাঞ্জন ঠাকুর বেশ পরোউপকারি বলে সকলে যানে। রিতা যায় ঠাকুরের হাত ধরে রিতার কান্না আমার ছেলেকে ভালো করে দাও। তোমাকে নতুন থান দিব পূজা করতে সোয়া পাঁচ আনা পয়সা দিব। শোন বেটি একাজ আমার নয় কালি নিজে করছে। তাকে খুশি করতে পারলে তোর ছেলে ঠিক হয়ে যাবে। তোকে একটা লোকের কথা বলে দেই ঠাকুর বাজারে প্রতি রবি বার কালি পূজা হয় সেখানে গিয়ে দেখ মা যদি দয়া করে তোকে। যতিন মণ্ডপের কর্ণধার লোক জনের আনা গোনা বেড়েই চলেছে। রিতা ছেলেকে নিয়ে যতিনদের পূজায় আসে লোক জন ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই পারছে না। গোকুল দেখে চিনতে পারে মোহন ওর বন্ধু বেশ কিছু দিন হয় কোন খবর পাচ্ছে না। ভিড় কিছুটা কমেছে তখন নিতাই শাশ্রের পণ্ডিত বলে দেখ বাপু এর চিকিৎসা আমি করতে পারবো না। রিতা অঝরে কান্না করে বাড়ি ফিরে আসার জন্য ভ্যান খুঁজছে। কিছুটা পথ আসার পরে শিরাজ পাগলকে দেখে রিতা পায়ে পরে যায়। পাগল বলে দেখিতো কি যেন বিড় বিড় করে কানে বলে মোহন কথা বলে। পুটলি হতে গাছের শিকরের মতো কি একটা দেয় বলে যা নিয়ে খাওয়াবি তিন দিন বলেই হাওয়া হয়ে গেলো। হালিমা খাতুন বেশ চিন্তায় আছে আইন উদ্দিন আজ বাড়ি ফেরেনি। অদিতি বার বার জানতে চায় বাবার কথা কি বলবে মেয়েকে ভেবে পাচ্ছে না। ফেরার রাস্তায় এসে বসে আছে যত দূর চোখ যায় কাউকে দেখছে না। জহের করেহ বরশি দিয়ে মাছ ধরছে বেশ বড় কালো কি? একটা যেতে দেখে দুজনে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে ঘরে চলে আসে। হনুফা বেগম জানতে চায় কি হয়েছে? ওরা চুপ হয়ে আছে কোন কথা বলছে না। দবির মাতবর বিকেলে বাড়ি ফিরলে সব কথা খুলে বলে সব শুনে বলে দেখি কি করা যায়। দিন দিন সব দিকের অবস্থা কেমন যেন হয়ে উঠছে। ‘’ হায়রে মানব জনম ভুবনে শুধুই কি মিছে করেছি কি কর্ম খানি। যাবার বেলায় শূন্য হাতে নিবো বিদায় কি? করলাম ধরায় এসে” পরাণ পাখি কয়না কথা মান করেছে ভারি অভিমানে আমার সঙ্গে আড়ি। অব্যক্ত কথা তুমি বুঝলে না কর্ণ কুহরে শুনলে না মনের গহীনের ভাষা। আমি বলতে কুণ্ঠিত তোমার সনে বুঝে নিয়ো মনে প্রাণে ভালোবাসি তোমাকে একাকী নীরবে। পাপিয়া জাহান অদিতি বন্ধুর প্রেম বিরহে লিখছে মনের আকুলতা সঙ্গোপনে। নদীর প্রবাহ মান জলের ধারার দিকে তাকিয়ে আঁখি জলে বোবা ভাষায়।
পুষ্প হলে থাকতাম মালা হয়ে বন্ধুর গলাতে
সৌরভে মাতোয়ারা করা ভুবন দেখবে লোকে
পাখি হলে গগনে উড়তাম ডানায় ভর করে
মনের কথা প্রাণের কথা কইতাম বন্ধুর সনে।
আমি মৎস্য হলে জলের সাথে গড়তাম মিতালী
প্রাণের সাথীরে নিশিতে প্রভাতে কোথায় হারালি?
বাঁশি হলে শখার সনে বাজতাম কতো না সুমধুর
পাগল হয়ে খুঁজতে আমায় দিবা নিশি জগত ভরে।
ভোমর হলে গুন গুন করতাম চারি দিক গুঞ্জনে
শুনতে আমার মনের ব্যাকুলতা কান পেতে নির্জনে
তরু হলে ছায়া দিব প্রশান্তিতে ভরে যায় মন প্রাণ
আমায় আরো কাছে পেতে করো নানা আয়োজন।
হিয়ার মাঝে আঁকা ছবিটা ঝাপসা ভুলেই গেলে
নিষ্ঠুর মায়া হীন মনের মন্দিরে পরে না ছায়া
দু,চোখে স্বপ্ন দিয়ে চলে যাবে আমায় ফেলে
যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি বাজে সর্বদা মোর অন্তরে।পারভেজ মারুফ অনীক দুষ্টর শেরোমনি টংকার রাজা। সারা দিনে বিচার আচার আসে পরিবারের কাছে সবিতা হাজার বাড়ন করলেও কথা শুনে না। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি সিকিম পুরে চলে আসে। মাজাহারুল অনীক বাজার হতে বাড়িতে ফিরে সবিতাকে ডাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে কিছুটা চিন্তায় পরে যায়। কোথায় যেতে পারে? শেফালি বলে দাদা ভাবিত তার বাবার বাড়ি গেছে। অনীককে নিয়ে মানুষ দিন রাত এত বিচার দেয় ওকে বললেও শুনে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল অনীক পেটের খুদায় বেশ কষ্ট পাচ্ছে মা মা বলে ডাকে কোন সারা শব্দ নেই। বাবাও নেই সবাই গেলো কোথায়? আমাকে একা রেখে। সন্ধ্যার দিকে আমেনা বেগমের কাছে চুপ করে বসে আছে। কিরে কি হয়েছে দাদী মা বাবা কোথায় গেছে বলতে পারো? নারে ভাই। তোর খুদা পেয়েছে না আয় আমি খেতে দিচ্ছি। রাতে রাজন এসে ডাকে কিরে অনীক ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি নাতো চল যাবি না।ঘোষ বাড়িতে কৃত্তন শুনতে গোবিন্দ বিমল মিন্টু সবাই এসেছে। চল যাই বলে সকলে এক সাথে হাঁটছে। পথে কানাইদের আম বাগান পড়ে বলে বাবাতো বাড়িতে নেই টাকা পয়সা কিছু নেই। কয়টা আম পাড়লে কেমন হয় রাতে খাওয়া যাবে। বিমল বলে ভালো কথা এখন গাছে উঠবে কে? রাজন ও গোবিন্দ গাছের কাছে আসতেই কি যেন ফোঁস করে উঠে। কি? সেটা দেখার জন্য সকলে আবার যায় দেখে সাপ বলে চল জান নিয়ে পালাই আম খেতে হবে না। জেরে দৌড় সকলে। শ্যামা ও রতন হাট হতে ফিরছে ওদের এভাবে যেতে দেখে বলে কি হয়েছে ওরা বলে কাকা ওখানে দুটো কালো সাপ আমাদের তারা করছে। পাশেই মন্দির বুঝতে বাকি থাকে না মন্দিরের সাপ তোমরা বাড়ি যাও আমরা দেখছি। যা যা সময় মত দুধ কলা পেয়ে যাবি সাপ দুটো কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে পরে চলে যায়। আমেনা বেগম ঘুমিয়ে আছে মধ্যরাতে কিসের সোরগোল শুনে বাহিরে এসে বুঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে। ছিদামকে বাড়ির উপর দিয়ে যেতে দেখ জানতে চায় কি হয়েছে? গরু চোর এসেছে কাদের কাদের গরু চুরি করে পালিয়ে এদিকে আসছে সকলে তাই বলছে। অনীক ডাকে দাদী ও দাদী ঘুমিয়েছ নাকি আমাকে খেতে দাও। আমেনা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে। তুই কোথ হতে এলিরে বলো না কিত্তন শুনতে গেছিলা। আসুক তারা বাড়ি সব বলে দিব আয় ভাত খাবি। বাতেন কামরান ও সবুজ বসে আড্ডা দিচ্ছে চায়ের দোকানে বলে চল নদীর ধারে যাই।  মোহন ও মারিয়া ঘাটে বসে কথা বলছে পড়ন্ত বিকেল। চারিদিকে প্রশান্তির হাওয়া বইছে নীল আকাশে সাদা মেঘগুলো ভেসে বেড়ায়। দেখে বেশ আনন্দ হচ্ছে দুজনার। প্রতিবেশী দুজনে বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অন্যের সহযোগী।  চল ফেরা যাক। তখনি বাতেনদের দেখতে পায় বলে এদেরতো চিনলাম না এর আগে কখনও দেখেছি বলে মনে হয় না। বেড়াতে এসেছে হয়তো তাড়া তাড়ি যেতে হবে সন্ধ্যা হলে মা বকবে আচ্ছা পরে দেখছি ওদের। সবিতাকে নিয়ে সকালে মাজাহারুল বাড়িতে ফিরে দেখে অনীক তখনও বিছানায় শুয়ে আছে। আমেনা বেগম বলে তোমাদের  কি বুদ্ধি বলো ছেলেকে একা রেখে। দুজনে কোথায় ছিলে ওর খাওয়া দাওয়া লাগে না। সবিতা পরিবেশটা তার প্রতিকূলে দেখে বলে মা তুমি ওর হয়ে কথা বলো না। একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার ভবিষ্যতে আর করবে না। তোমরা এটা ঠিক করোনি ছোট মানুষ ওর বয়সে তোমরা আরো বেশি করেছো বড় হলে আর করবে না। যাও ঘরে যাও হাত মুখ ধুয়ে  কিছু মুখে দাও। গোকুল বাজার সেরে বিকেলে একবার হিজলদিঘির গাঁয়ে যাবে প্রয়োজনে সাথে টাকা ও কাপুড় রয়েছে। ভাবছে মাতবর হাট যাবে না সময়টা ভালো যাচ্ছে না। সময়ের স্রোত ধারায় কালের বিবর্তনে সব কিছুর পরিবর্তন ঘটে এটাই স্বাভাবিক। ময়না কাটার জীবনেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগবে মনে হচ্ছে। তবে সেটা কতটা কল্যাণ কর ও মঙ্গল জনক হয়েছে মানুষের জীবনে সেটাই দেখার বিষয়। নিরাঞ্জন গভীর রাতে আরাধনায় ব্যস্ত হঠাৎ করে একটা স্বপ্ন দেখে তার ভিতরে কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে। রাতে ঘুমোতে পারেনি ভাবছে কখন সকাল হবে। নগেন সব সময় নিরাঞ্জনের সাথে থাকে ও কিছু বুঝতে পারছে না কখনও তাকে এমন দেখেনি। মনে মনে ভাবে কি? হয়েছে জানতে চাইবে। আবার ভাবে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলে বিপদ হতে পারে দরকার নেই আমার। যতিন খবর দিয়েছে মণ্ডপে দুটো পূজা আছে ঠাকুর যেন একবার আসে। নগেনকে নিয়ে দুপুরে আসে অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরবে কিছুটা পথ আসতেই সিরাজের সাথে দেখা। কিরে কত দিন চলবে এভাবে গ্রামের লোকের জন্য কিছু একটা কর নয়তো ভালো হবে না বলেই পাগল উধাও। ঠাকুর মনে মনে চিন্তা করে কি হচ্ছে আমার সাথে মা কিসের ইঙ্গিত করছে বুঝতে পারছি না। নদীর মাঝ পথে আসার পরেই শুরু হলো প্রচণ্ড ঝড় নৌকায় একটা ধাক্কায় উল্টে যায়। নগেন যে কোথায় গেলো ঠাকুর পেল না। হাবু ডুবো খাচ্ছে পানিতে স্রোত বইছে প্রচণ্ড বেগে কি? করি এখন কে যেন তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হাতটা ছাড়াতে প্রাণ পণ চেষ্টা করে কোন লাভ হয় না। দেখে একটা মন্দিরের সামনে পড়ে আছে অনেকে শীতলা দেবীর পূজা করছে। মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে কোনটার উত্তর মিলে না। গোকুল ভর দুপুরে বাজার হতে ফিরছে মাঝির হাটে গিয়েছে কাপুড় বিক্রি করতে। বেশ গরম পড়েছে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপ মাত্রাও বেশ বেড়েছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বট গাছের নীচে বসেছে বিশ্রাম নিতে। নগেন বলে কিরে তুই এখানে কেন? আমি যাযা বর মানুষ তোর মত ঠিকানা নেইতো তুই কোথা হতে এলি। তাকে সব কথা খুলে বলে বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার। ঠাকুর হারিয়ে গেলেতো অনেকর ক্ষতি হয়ে যাবে চল ফেরা যাক। সপ্তাহ খানেক হয়ে গেছে ঠাকুরের কোন খবর মিলেনি সকলে ভাবছে সে মরে গেছে। তিন কুলে কেউ নেই কে নিবে তার খবর। এক/দুই করে অনেকরে কাছে খবরটি পৌঁছে গেছে। তিন চার গ্রামের লোক আজ বসেছে বড় রাস্তার ধারে মহশীন ক্লাবের কাছে। আমরা প্রতি নিয়োতো প্রিয় জনদের হারাচ্ছি নদীতে এখন সহজে কেউ যেতে চায় না। জেলেদের কথা নয় বাদ দিলাম কৃষক কামার তাঁতী কাঠমিস্ত্রিী এরা সকলে নদী পথে গঞ্জে রাত বিরাত যাতায়াত করে। কন দেহী এখন উপায় কি করি। রহিম ব্যাপারী বলে আমার এক জন লোক আছে মাঝির হাটে তারা মিয়া নাম দেখি কথা বলে কোন সমাধান হয় নাকি। বেশ কিছু খরচা পাতি লাগবে জিগাও সকলে দিব নাকি। কথাটা মন্দ কও নাই মিয়া আপনারা হগ্গলে আছেন রহিম মিয়া এক খান কথা কইছে কে কি বলেন। গ্রামের মুরুব্বিরা মিলে যেটা ভালো মনে করে সেটাই করবে এতে আমাগো কোন আপত্তি নাই এক বাক্যে সবাই শিকার করে। মাস পেরিয়ে যায় সময়তো থেমে থাকে না। জীবন চলে জীবনের নিয়মে। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলতে হয় মৃত্যুর সাথে যেন আমরণ সন্ধি করে। সিরাজকে আবার দেখো গেছে হিজল দীঘির গাঁয়ে। কত লোক তার পিছু পরে আছে নাওয়া খাওয়া নেই কাজ কাম সব যেন বন্ধ সকলের। অদিতিকে লেখা পড়া করতে নদী পেরিয়ে আসতে হয় অনেক পথ সদরপুরে। অনীক ধীরে ধীরে সব পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে। গঞ্জে বাবার কাপড়ের দোকান মাঝে মাঝে বাবার সাথে দোকোনে গিয়ে বসে। অদিতির পরিবার প্রতিবেশীদের জালাতন ও নদীর ধারে বসত বাড়ি প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্ক  থাকে। পরিবারকে রক্ষা করার জন্য কিছু চাষের জমি রেখে বাকিটা বিক্রি করে বাহাদুরপুর এসে নতুন বাড়ি করে। তেমন একটা লাভ হয়েছে বলা যায় না তবে রাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারে। কিছুটা হলেও শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে অদিতি দের পরিবারে। হায়রে জীবন কেন এমন ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদ্‌লায়। হাজী শরিয়ত উল্লাহ তার লোকদের নিয়ে নদীর মাঝ পথে বসে আছে। হারুন বলে হুজুর  আমরা একটু অন্যদিকে যাই জানতে চায় কেন?কি সমস্যা সে বলে এদিকে কেমন  যেন  গা হিম হিম লাগছে। কিছুটা ভয় করছে। এরই মধ্যে হারুন চিৎকার দিয়ে উঠে আল্লারে এটা কি দেখলাম বলেই  জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বর্জার অন্যরা ধরা ধরি করে তাকে শুইয়ে দেয় ডাকা ডাকি করে কোন লাভ হয় না। কি ভয় পেলো সেটাই বুঝতে চায়? সকলে কি করছো একটু দোয়া দুরুদ পড়ে ফুঁ দাও দেখ কিছু হয় নাকি। হাজী সাহেব এসে বলে তোমরা যার যার কাজে মনোযোগ দাও আমি দেখছি কি? করা যায়। আইন উদ্দিন নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে ধরতে এদিকে আসে। লোক জনের কথা শুনে জানতে চায় সমস্যা কি? তখনি বিকট একটা শব্দ করে ওর নৌকাটা বেশ দূরে চলে যায়। লালচে ও কালো রঙের একটা জন্তুকে যেতে দেখে ওরা সকলে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে বোবা হয়ে যায়। পরিচিত আরো কিছু নৌকা আশে পাশে মাছ ধরছে তারা জানতে চায় কি হইছে বায়ে কথা কও না কেন। কবির লাল সালু কাপুড় মাথায় বেঁধে নৌকা হতে পাটাতনের উপরে এসে বলে। ইয়া আল্লাহু সব তার ইচ্ছে চলছে সব সকলের মনে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। বাতাসের টানে নৌকা কখন দিক পরিবর্তন করেছে সেটা কেউ খেয়াল করেনি। জায়গাটা বেশ শান্ত প্রকৃতির পুবের হাওয়া বইছে সারাদিনের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেলো। কে যেন হাঁক ছাড়ছে গায়ে নতুন লোক দেখছি সকলে আস দেখোতো চিনতে পারো নাহি। রহমান মোল্লা কারা বাহে কোথা হতে আইলা। বদর গাজী সুর ধরেছে ’’ আমার আল্লাহ মালেক সাই তোমার নাম ভরসা মনে পারে যেতে চাই”। তুফান উঠেছে নদীতে ত্রিশ/পঁয়ত্রিশ বছর কাটিয়ে দিলো নদীর বুকে জন্মেও এমন তুফান কেউ দেখেছে বলে মনে পরে না। সকলে আল্লার নাম জপ করছে ভয়ে আতঙ্কে ধর ধর হয়ে কাঁপছে। চোখের সামনে কত কি ঘটে গেলো সেটা ভাষায় বর্ণনা করতে পারছে না কেউ। বেশ সময় অতিবাহিত হলো এমনি করে। নিরাঞ্জন ঠাকুর ও সিরাজ পাগল এদিকে আসছে ধীরে ধীরে তুফান কমে আসছে। সকলে যেন নতুন জীবন ফিরে পেলো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বাড়ির পথ ধরে। বড় রাস্তার পাশ দিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে তারা মিয়া হাঁটছে। অনেকটা পথ পায়ে হেঁটেছে এখন পা চলছে না। শরৎ জানতে চায় কোথা হতে এলেন দাদা? বলিস না কাসিমপুর গেছিলাম মেলায় বেচা বিক্রি কিছু হলো। কয় দিন থাকবো? সামনের হাটবার শেষ হবে আল্লার রহমতে হইছে কিছু বৃষ্টি না হলে আরেকটু ভালো হতো। আবার যাবো কবে সকালেই যামুগা। তোমার ভাবি ছাব খবর কইছে ঘরে আনাস নাই চারিদিকে পানি থৈ থৈ করে তারা না খেয়ে মরবে নাকি।মাতবর হাটে গিয়াছিলাম এক হাঁটু পানি ভেঙ্গে যাইয়া দেহী সবাই খাবারের জন্য হাহাকার করছে । গ্রামের মেম্বার ও চেয়ারম্যান কেউ আসেনি সাহায্য নিয়ে তাই চলে আসছি। তয় তুমি অহন বাড়ি যাও আমি ভাটি বেলায় আমুনে তোমাগো বাড়ি কোথাও যাইয়ো না। হাঁটু পানি পার হয়ে কলায় ভেলা নিয়ে তারা মিয়া বাড়ির দিকে আসছে। রেণু হামিদাকে ডেকে বলে দেখতো আমাগো বাড়ির দিকে ভেলা তর পোলার মত কে যেন আসছে। হামিদা বলে তোমার যে কথা বাজান মেলায় গেছে জিনিস বিক্রি করতে। সেটা শেষ কইরা শহরে নিয়া যাইব তার পরে বাজান বাড়ি ফিরত আইবো। হামিদা ভালো করে তাকিয়ে দেখে তার বাবাই বাড়িতে আসছে বলে মা মা কই গেলা সত্যিই বাজান আসছে। রেণু স্বামীকে আসতে দেখে কল হতে পানি আরে গামছা এনে রাখে। তুমি আইছো বাজান মেলা কেমন হইছে সব জিনিস বিক্রি হইছে। রেণু মেয়েকে একটু রাগের সুরে বলে তুই চুপ কর মানুষটা রৌদ্র দিয়া আসছে। হাত মুখ ধুয়ে গায়ে একটু বাতাস লাগতেদে আগে। না বাপরে পাইয়া আহ্লাদে গদ গদ হইয়া হাজারটা কথা জিগাইতে হয় আহনের লগে লগে।’’পুবালি বাতাস শরীর খানা জুড়িয়ে আসে কত দিন যাইনি আমার গাঁয়ের কাছে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি যানস বউ মনে হয় আমার মায়ের কোলে শান্তিতে আছি। রহিমন চাচী কিরে বাজান মার জন্য মনটা বেশ উতলা মনে হয়। ঠিক কথা কইছ চাচী আমারে ছোট ধুইয়া মায় কবে মইরা গেছে তার মুখটা ঝাপসা ঝাপসা মনে আছে। কই গেলা রেণু তারারে খাইতে দাও কত দূর পথ এসেছে দেই চাচী। তুমি আবার কোথায় যাও দেহ দেহী পোলার কথা। আমার কি বইসা থাকলে চলে পোটার বউটা পোয়াতি আমারে খবর দিছে তোর গলা শুনলাম বলে দেখতে আইলাম। তোমাগো বউ পানতা ভাত কাঁচামরিচ পেঁয়াজ আলুর বর্তা বানাচ্ছে চাইডা খাইয়া যাও। নারে বাজান তোর চাচার শরীরটা বেশি ভালো না। হারাডা রাইয়ত কাশে বিহানে আবার জাল লইয়া গেছে। বয়স হইছে এখন কি এত খাটনি তার সয়। কি করম আমার পোরা কপাল নইলে দুই দিনের কালা জ্বরে পোলা আমার মরবো ক্যান। বুকের মাঝে কষ্ট নিয়ে মুখটা আঁচলে ঢেকে পোটার বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। কানাই নৌকায় করে দক্ষিণ পাড়া হয়ে ভাবছে একবার সদরপুর আসবে। বর্ষার এই সময়ে তার সারা বছরের আয় রোজগার করে রাখতে হয়। কাঠের কাজ করে সংসার চালায় শুক্ন মৌসুমে নৌকার গাহেক বেশি পাওয়া যায় না। দিন রাত সব এক করে কাজ করে। রামু বাজান দেখছ কত শাপলা ফুটছে শালুক আছে কিছু চিংড়ি পাই ছিলাম ঘাডায়। কয়টা বাড়িতে নেই মায় কইছে দুপুরে ভাত খাওয়ার কিছু নাই। তিনটা কামলা আছে রিপন একা কয় দিক সামাল দিব বলতো। কতাডা মন্দ কছ নাই যাবার পথে নিমুনে এখন জলদি হাত চালা। তাড়া তাড়ি মাঝির হাট যাওয়া লাগবো ওনাগো না পাইলে  টাকা পামু কই। টাকা না দিলে মহাজন গাছ দিব না কইছে। রামু হ বাজান আমার লগে তুমিও হাত চালাও। কানাই ঘাডায় থাকতেই ডাক ছাড়ে তারা দা বাড়ি আছোনি ও তাড়া দা তাড়া দা ও তাড়া দা। তাড়া ঘরের মাচায় বসে আয়াস করে তামুক টানছে। দেখতো মা কে ডাকছে আমাকে আসতে বলো। হামিদা এগিয়ে গিয়ে বলে কেন ডাকেন বাজানরে। মা বলো আমার নাম কানাই ঠাকুর বাজার হতে এসেছি জরুরী দরকার। হালিমা গিয়ে সব কথা বলে তারা তামুক হাতে বাঁশের টংগে এসে বসে আসো কানাই দা। কি ?মনে করে আসলে মেলা দিনতো আসো না ভুইলা গেলা নাহি। রামু বাজান বেলা ভাটির দিকে যায় জলদি কথা শেষ করো। রেণু কিছু মুড়ি ও গুড় নিয়া আসে কি খবর ভাই জান গ্রামের সকলে ভালো আছেনি। আছে বর্ষা কাল বুঝইতো আমাগো অবস্থা কেমন। এই মাস শেষে টাকা দিব বলেই তারা কানাই কে বিদায় করছে। সাথে নতুন কিছু মাল নিবে মানুষ এখন পুরান জিনিস বেশি ঘরে রাখে না। জমির ব্যাপারী মহাজন কে বলতে হবে আরো কিছু মাল বাঁকিতে দিতে। নইলে না খাইয়া মরণের যোগাড় হইব। কানাই মুখটা ভার করে গোলইতে বসে রামু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে গরীব গরে জন্ম তাদের সাধ আছে সাধ্য নেই। চল বাজান  ফিইরা চল। কানাইরা বিদায় না হতেই শরৎ ডাকছে তরা দা তারা পিছন ফিরে দেখে। শরৎকে বলে আস দেখি তোমার কি দরকার। শরৎ তার মেলায় মেলায় ও গ্রাম গঞ্জে মালা মাল বিক্রি করতে চায়। দাদা তোমার অনেক দিন হইছে কাম কর আমার জন্য কিছু করো বর্ষা মৌসুমে চোখে কোন পথ দেখি না শুধু অন্ধকার দেখি। বউ পোলা পান নিয়ে মরণের যোগাড় মহাজন বেশ কিছু টাকা পায়। খেত বাড়ির জমি অনেক আগেই বন্ধক দিছি মতবরের কাছে। কোন দিন জানি পথে বসতে হয়ে সবাইকে নিয়া। তারা মনে মনে ভাবে সবাই মনে করে আমি অনেক সুখে আছি কত রাস্তা কত ঘাট অঘাট পেরিয়ে সংসার চালাই একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানে। ঠিক আছে বিহানে বড় রাস্তায় এসো পাট নিয়ে হাটে যাব তুমিও কিছু জিনিস নিয়ে আস আরেক জন আছে হাটেই থাকবো। হাট শেষ করে কথা বলবো আমরা তিন জনে মিলে ভালো কিছু করা যাবে ইনশাআল্লাহ। রহিমন বেগম রাতে পোটার বাড়ি হতে ফিরছে। পোটার একটি ফুট ফুটে মেয়ে হয়েছে বর্ষার মধ্যে জন্মাল ওর নাম রাখছে বর্ষা রাণী।
’’আইলোরে বর্ষা রাণী নয়া পানিতে
চাঁদের আলো ঝলমল করে পোটার বাড়িতে
বসল সবাই নতুন ধানের পিঠা কুটিতে
পিঠা পুলি পায়েশ রাঁধে নতুন হাড়িতে
আনন্দ আজ ঝরে পরে ছনের বাড়িতে
বাবা মায়ের মুখে হাসি আত্ম হারায়
ঘুচল তাদের দুঃখ পেয়ে চন্দ্র তারা
পান সুপারি মুখে দিয়ে গায় আনন্দে গীত ওরা
আউশ আমন ধানের মিষ্টি চিঁড়া কোটার বাহার
গরীব ঘরে আসলো ফিরে আনন্দের জোয়ার
শাপলা শালুক বিলে ফুটেছে দেখতে সুন্দর
বর্ষা রাণীর মুখে হাসি লাগে বড়ই চমৎকার আইলোরে”
কিছু শাপলা শালুক তুলে কানাই ও রামু বাড়ির দিকে নৌকা বাইছে। রহিমন চাচী বাড়ি ফিরে এসে দেখে বুড়া খুক খুক কাশছে। কাশির জন্য সারা রাত ঘুমাইতে পারে না। ও তারা রেণু  তোরা কি ঘুমাইয়া গেছো না চাচী কি হলো বলেই রেণু বাহিরে আসে। তারা কই আর বলো না মেয়ে বলেছে মাছ দিয়ে ভাত খাবে তাই ফুল কুচি আর তিন ব্যাটারি লাইট নিয়া বিল পারে গেছে ।ওদিকে পানি একটু কম মাছ ধরতে। সোনছো পোটার মেয়ে হইছে দেখতে একেবারে চান্দের লাহন। মুখ দেইকা কেউ কইবো না গরীব ঘরের মেয়ে সবাই কইবো কোন বড় ঘরের মেয়ে। যাও অনেক রাত হইছে মাইয়াডা একলা ঘরে তুমিও ঘরে যাও। কুপিটা একটু দিয়া যাইয়ো তোমার চাচার বুকে একটু রসুন তেল মালিশ করমু দেখি কাশটা কমেনি। নইলে বিহানে মোন্তা ফকিরের বাড়ি যামু। নছিরন আইজ তিন দিন হইছে বাপের বাড়ি নাইয়র আইছে। হিজল দীঘির গাঁ বাতেন কাজের চাপে নিতে আসতে পারে নাই। মোবারককে পাঠাইছে নিতে বাতেন আসে নাই দেখে নছিরন বেশ গাল ফুলিয়েছে। মোবারককে বলে তোর বাপের কাজ টাই বেশি হইলো আমারে নিতে তোরে পাঠাইছে কেন? নিজে আইতে পারলো না। মার যে কথা তেনার কি অত সময় আছেনি আমারে পাঠাইছে এটাই ঢের। কইছে তোমারে জলদি কইরা আমার লগে যাইতে। যামু না আমি আর কোন দিন যামু না আমার লাইগা কোন সময় নাই। সব বেডাগো আমার দেখা হইছে দুই দিন চোখের আড়াল হইলেই মনে অন্য জনার চিন্তা আসে। তালেব মোল্লা বাজার হতে এসে শুনে মেয়ে কার সাথে যেন রাগা রাগি করছে। কিরে মা তোর আবার কি হইলো? ভালা পোলা দেইখা বিয়া দিছো না। তার আমারে নিতে আহনের সময় হয় নাই। তাই মোবারক যে নানা কখন আইছে তুমি। আইছিতো মেলা সময় হইছে তোমারে কিছু খাইতে দিছে? আর খাওয়েনের কাম নাই। বাজানের নামে মায় যা কইল তাতে আমার পেটের ক্ষুধা মইরা গেছে। তুহুরা বেগম নাইতে গেছে ফিরে মোবারককে দেখে বলে তুমি কখন আইলা ভাই। বলি তুমি কোথায় আছিলা তাড়া তাড়ি ওগো খাইতে দাও জামাই নিতে পাঠাইছে। তুমিও নাইয়া আস এক সাথে সবার জন্য ভাত বাড়ি। খাওয়া দাওয়া শেষে তহুরা বেগম মেয়েকে বুঝায় মারে সব সময় পাগলামি করিস না। এখন কাজের সময় তাছাড়া বাড়িতে তিন জন পুরুষ মানুষ তোর শ্বাশুরীর বয়স হইছে। সে চোখে দেখে না কি কি করে এই কয় দিন পার করছে আল্লাহ মালুম। তুই অমত করিস না তৈরি হইয়া যা অহন রহওনা দিলে সন্ধ্যার অগে যাইয়া বাড়িতে উঠবি। জমির ব্যাপারী বেশ চিন্তা যুক্ত মনে বসে আছে সকাল হতে দোকানে কোন ক্রেতা নেই। পাইকারী মালা মাল নিতে প্রতি দিন বিশ/ পঁচিশ জন লোক আসে। তিনটা কর্মচারী দিন রাত মিলে কাজ করেও কাজ শেষ করতে পারে না। নিজের কথা নয় বাদ দিলাম। কিছু লোক জন আছে দেখে দাম শুনে চলে যায় কিনার লোক নাই। সখিনা ও শরীফা শিবচর দোকানের সামনে এসে নামে। জমির স্ত্রী ও মেয়েকে দোকানে আসতে দেখে দ্রুত বেগে ছুটে যায় কি? ব্যাপার তোমরা বাজানরে একা রাইখা শিবচরে আইছো কেন। আসছি কি আর সাধে তুমি সকালে কয়টা পান্তা মুখে দিয়া বের হইছো দুপুরে আইলা না। এখনতো সন্ধ্যা হওয়েনের সময় হইছে সরা দিন বাড়ির কোন খবর লাগে না। কি হইছে বাবার অবস্থা হটাত খারাপ হইয়া গেছে। জহের বাজারে আসবো শুনে তারে বলছিলাম তোমারে যেন খবরটা দেয়। সারা দিন বইসা থাইক্কা হেদায়েতের ভ্যানে তারে নিয়ো ডাক্তারের কাছে আইছি। লালু এই লালু জহের কোন খবর দিছিলো আমার কাছে। আমিতো কাউকে আসতে দেহী নাই দোকানে তয় কাদের বলতে পারবে কাদের হারাম জাদা কই। দুপুরে খাওয়ার পর শুনছি বাবনা তলায় যাইব আপনে নাকি কালকে বলছেন কি আনতে যাইতে। চলো বেশি কথা বলা দরকার নাই শরিফা বলে দাদা আর হেদায়েত আছে ডাক্তারের কাছে জলদি চলো। শোন আমি ওদিক দিয়ে বাড়িতে চলে যাব তুই কাদের আসলে দুজনে সুন্দর করে দোকান গুছিয়ে বন্ধ করে চাবি আমার বাড়িতে দিয়ে আসবি। লালু ঠিক আছে আপনে যান চিন্তা কইরেন না। রাশিদা জাহান বায়না ধরেছে নানা বাড়ি বন্দর খোলা যাবে বর্ষার দিনে ঘরে বসে থেকে থেকে আর কিছুই ভালো লাগছে না। মানিকে দিয়ে অদিতি ও রাশিদাকে নানা বাড়িতে পাঠায় আইন উদ্দিন মাতবর। মেহের আলী ও হোসনে আরা বসে আছে বাড়ির আঙিনায়। মানিক সালাম দিয়ে সমাচার জানতে চায় পিছনে রাশিদা ও অদিতিকে দেখে তারা অবাক হয়ে যায়। দুজনে উঠে জানতে চায় কি হয়েছে কোন খারাপ সংবাদ। রাশিদা আরে নাগা বুড়ি তোমাদের দেখতে আসলাম বাড়ির সবাই ভালো আছে। অদিতি আছে সবাই ভালো আছে। আয় ঘরের ভিতরে আয় দুপুর যায় যায় এমন সময় ওদের খাবার দিয়ে। রতন কই গেলিরে বাইরের ঘরে মেহমান আছে তারে খাইতেদে। জি আম্মা আইতেছি। রহমান মোল্লা জহুরাকে নিয়ে পাঁচ্চর শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে। সকাল সকাল রওনা দিয়েছে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা পথ আসতেই বেশ রোদ উঠেছে প্রচণ্ড গরমে অস্থির হয়ে গেছে। বিশ্রাম নিতে তাই সদর পুর এসে তাদের ভ্যান থামে। শরৎ ও তারা মিলে বিভিন্ন জায়গায় মাল বিক্রি করে তারাও এসে সদর পুরে বসে। টং দোকানে সবাই বসেছে রোদটা একটু কমলে যাত্রা শুরু করবে। কালা ভাই না কেমন আছো আরে শরৎ তুমি কোথা হতে এলে? লগে কেডা ভাবিছাবনি। হয় তোমাগো ভাবি সাব যাও কোথায়? পাঁচ্চর যামু। ময়না মা ওমা কোথায় গেলা দেখো বুবু আর ভাই ছাব আইছে। হাসিনা বেগম কোথায় তুমি মেয়ে জামাই আইছে বাজারে যাওয়া লাগবো জলদি আহ। পরাণ কেমন আছো বুবু আমি ভালা আছি কাকা কাকী কেমন আছে ভালাই আছে। পরাণ দেখতো বাজান পোলায় কই? কি হইছে আমারে কও। জামাই আইছে ঘরে তেমন বাজর নাই তুমি চিন্তা কারো না আমি জালে বগ পাইছি কিছু মাছ আছে অহন এই গুলি দিয়ে চালিয়ে নাও। চেয়ারম্যান মনির খাঁ লোক মারফত চৌকিদার তুহিনকে খবর দিছে। গ্রামের লোক জনের অবস্থার খবরা খবর নিতে। নদীর পানি দিন দিন বেড়েই চলেছে অনেকের ঘর বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। কেউবা রাস্তার উপর কেউবা গাছের ডালে ঘরের চালে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। রাস্তায়, গরু,মানুষ, কুকুর, সাপ, ব্যাঙ, যার যা সম্বল অবশিষ্ট ছিলো তাই নিয়ে একত্রে বসবাস করছে। বেশির ভাগ মানুষের আশ্রয় মিলেছে রাস্তায়। অনীক নৌকা দিয়ে বন্ধু দের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে কয়েক গ্রাম পার হয়ে চলে এসেছে। বেশ মাছ ধরেছে বলেছে শুনলাম রাস্তায় নাকি অনেক লোক না খেয়ে আছে। চল আমরা দেখে আসি। আমাদের কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে তাদের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো হবে। এরাতো দূর হতে কেউ আসেনি আমাদের কারো আত্মীয় স্বজন। বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে আত্মীয়তার বন্ধন থেকে কি লাভ। ওরা কয়েক জনে মিলে সাত/আট জনের একটি দল গঠন করলো। তার প্রধান করা হলো মাজাহারুল আনীক,দবির মাতবর,আইন উদ্দিন মাতবর,নিরাঞ্জন ঠাকুর সহ ওদের মতো যুবক ছেলেরা। সকাল কিছু লোক মাছ ধরে,শাপলা শালুক তুলে, মানুষের বাড়ি গিয়ে সাহায্য তুলে সব মিলিয়ে দুপুরে খিচুড়ি খেতে দেয়। সাহায্য হিসাবে যে সকল জিনিস পত্র পায় যাদের যা প্রয়োজন হয় তাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। অনীকদের কাজে প্রথমে তেমন কেউ সারা না দিলেও ধীরে ধীরে লোক বল ও সহযোগিতার হাত অনেকে বাড়িয়ে দেয়। গ্রাম বাসিরা তাদের এই কাজের জন্য বাহবা দেয়। অদিতি একা নৌকা নিয়ে বেড়িয়েছে ওর বেশ শখ মাছ ধরা ও পানিতে ঘুরে বেড়ানো। নদীর পানি এতোটাই বেড়েছে এখন প্রতিটি মুহূর্তে  বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। গ্রাম বাসিদের ত্রাণ বিতরণ করে একাই বাড়িতে ফিরছে অনীক। পানির স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলে তাকে ফিরতে হবে অন্যথা হলেই মহা বিপদ। উজানের টানে অদিতি অনেকটা দূরে চলে এসেছে এখান হতে বাড়িতে ফেরা তার জন্য দূর সাধ্য কাজ। তার সাথে বেশ বাতাশ বইছে সে কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। বাঁচার জন্য এখন একটাই পথ বাতাসের গতিবেগ বুঝে তার সাথে তাল মিলিয়ে বৈঠা ধরে রাখা। খানকান্দি এসে অদিতি হাল ছেড়ে দিয়েছে তার শরীরের সকল শক্তি শেষ কিছুই ধরে রাখতে পারছে না। অনীক হিজল গাছের সাথে নৌকাটা বেঁধে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে তখনি বাতাসের গতি বেগ বেড়ে যায়। ভাসতে ভাসতে অনেকটা গভীরের দিকে আসতে থাকে। তখনি অদিতি বলে উঠে আমাকে বাঁচান দয়া করে। অনীক দেখে কিছু লোক এদিকে আসছে ওদের মুখে কাপুর বাঁধা বুঝতে বাকি থাকে না এরাই ডাকাতি করে।অনীক বলে আপনি চুপ করে বসে থাকুন পাটাতনে গিয়ে বসুন আমি দেখছি কি করা যায়। ভাগ্য ভালো লোক গুলো অতটা কাছে আসেনি তারা টলার দিয়ে ঐ দিকে চলে গেছে। অনেক কষ্ট করে অদিতিকে নিয়ে দুজনে পারে আসে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে। কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে তারা দুজনার পরিচয় জানতে চায়। অদিতি নিজের পরিচয় দেয় অনীক বলে রাস্তা ধরে গেলে সময় বেশি লাগবে না। দুটি নৌকা এক সাথে কি করে নিব। মানিক সহ তার পরিবারের লোক জন অদিতিকে চারি দিকে খোঁজ করছে। মেয়েকে কোথাও দেখতে না পেয়ে হালিমা বেগম বেশ চিন্তিত হয়ে পরেছেন। মানিক আইন উদ্দিন মাতবরকে খবরটা জানাতে রাস্তা ধরে সামনের দিকে আসছে। বেশ কিছু পথ আসার পরে অদিতিকে দেখতে পায় সাথে একটা ছেলে আছে। কি বিষয় জানতে হবে দ্রুত বেগে তাদের কাছে গিয়ে সব জানতে চায়। অনীককে দেখে মানিক চিনতে পারে আরে আনীক ভাই। তুমি না কখন বাড়িতে যাবে বলে সকলের কাছ হতে চলে আসল। অদিতি বলছে শোন আমি বলছি সব কথা তবে বাবাকে কিছু বলতে পারবি না। তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটোনা খুলে বলে মানিককে। মানিক বলে সব বুঝতে পারছি ভিজা শরীর নিয়ে আর সামনে আসার কাম নাই। তুমি বাড়ি যাও আমি এদিকটা দেখছি। বাসায় ফিরে কাপুড় পরিবর্তন করে ঘরের মেঝেতে বসে আছে অদিতি। তখনি রাশিদা জানায় মা তুমি চিন্তা করো না বুবু ফিরে এসেছে। রান্নার ঘর হতে হাতে খুন্তি নিয়ে কোথায় থাকো এত জ্বালাতন করেও তোমাদের সাধ মিটে না। আমি কবরে গেলে বুঝবে দুনিয়া কত কঠিন। ডিঙ্গি মেয়ে কোন বুদ্ধি হলো না। আ্ল্লায় এত মানুষ নিয়ে যায় আমারে তার চোখে পরে না। অদিতি মায়ের কাছে এসে গলা ধরে বলে মা ওমা। তুমি অমন করে বলো না তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো। মানিককে এদিকে আসতে দেখে ইশারা করে যেন না আসে। রাশেদা বলে তোমারা মা মেয়েতে কি করছো। বাবা বাজার দিয়ে লোক পাঠিয়েছে সেই দিকে কোন খেয়াল আছে তোমাদের। বাজার না তুলতেই শোরগোল শুনা গেলো আমার ছেলেটারে নিয়ে গেলোগো কে কোথায় আছ তারে বাঁচাও। কার বিলাপের সুর কানে ভেসে এলো? এটা করিমনের গলার আওয়াজ না। ভালো করে শুনে মানিক বলে কাতরাটা দাওতো বুজান। শালাগো রক্ত দিয়া আমার সাঁঝের জম ক্ষতম করবো। ভেবে ছিলো দুই /একটা হবে পরে লক্ষ করে দেখে সাত/আট টি কুমির এক সাথে আছে। পানির মধ্যে ওদের রাজত্ব জোর বেশি তার একার পক্ষ্যে কোন কিছু করা সম্ভব হবে না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া। আইন উদ্দিন মাতবর আজ দ্রুত বাড়িতে ফিরছে কালকে থানার বড় বাবু সোবাহান সাহেব আসবে। গ্রামের অনেকে থাকবে তাকেও থাকতে বলা হয়েছে। রাতের খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে গামছায় মুছবে। তখনি তুহিন এসে হাঁক ছাড়ে মাতবর সাব বাড়ি আছেন মাতবর সাব। অদিতি মানিককে বলে দেখতো কে বাবাকে ডাকছে। মানিক ওপাশ হতে কেহে বাহে ডাকো কেনে? মাতবর সাবরে কও। চেয়ারম্যান সাব রাস্তায় আইছে আরো অনেকে আছে তার থাকতে হইবে। মানিক বলে চাচা জান চলেন চেয়ারম্যান সাব লোক জন নিয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। চলো দেখি কি হলো আবার তোমরা শুয়ে পড়ো। আরিফার স্বামী তিন দিন পরে বাড়িতে ফিরেছে। গাছের কাজ করে কাঠের বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি ও বাঁশের জিনিস বিক্রি করে। মহাজনের কাছ হতে যা মালামাল নিয়েছে সব টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে। অনেক দিন মা মেয়ের জন্য কিছু কেনা হয় না। বউটা আমার সোনার টুকরা বেশি কিছু আবদার করে না অল্প জিনিসেই  খুশি থাকে। এইতো সেই দিনের কথা সবে মাত্র বউ হইয়া বাড়িতে আইছে। বাজান কয় ছোট কালে মা মরছে মুখটা  ঠিক মনে নাই বয়স হইছে চোখে ঝাপসা দেখি। তয় তুমি যে আমার ভাঙ্গা ঘরে আলোর বাতি সেটা বেশ বুঝতে পারতাম। মিয়া ভাই কত জায়গায় মাইয়া দেহাইলো মনে ধরে নাই। শেষে আইসা মনটা বাঁধা পড়ছে বাবনা তলায় মধু গ্রামে। কিছু খাবার ও শাড়ি কিনে অকিল বাড়িতে ফিরে। বড় সাধ জাগে বউডার নাম ধইরা ডাহি আবার শরম করে মুরুব্বিারা কে কি ভাবে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরের দরজায় এসে আরিফার সাথে মাথায় গুঁতা খায়। মানুষের কপালে চোখ নাই দেইখা চলতে পারে না গুঁতা খায় কেন। মাথা উঠাইতে আরিফা দেখে অকিল সামনে দাঁত দিয়ে জিহ্বায় কামুড় দিয়ে বাহিরে চলে যায়। মুখটা লজ্জায় লাল টকে টকে দেখতে ঠিক পাকা মরিচের মতো লাগছে। মা মারিয়া কোথায় গেছো দেহ ঘরে তোমার বাজান আইছে। ফুলজান বলে মিয়ারপো ঘরে ফিরছে কহন আইলা মিয়া। ফিরছি চাচী অহনী আইলাম তোমরা ভালো আছোনি। আছিরে বাপ গরীবের আবার ভালো থাকা। শরিয়ত উল্লাহ ভক্ত বৃন্দকে নিয়ে নিজে বাড়িতে উরশ করবেন সকলে সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে রয়েছে তার অগণিত ভক্ত বৃন্দ সকলেই তাদের কাছে মুরশিদকে পেতে চায়। বরিশাল হতে কিছু ভক্ত বৃন্দ প্রতি বার তাকে নিতে আসে বার বার তাদের ফিরিয়ে দেয়। এবার উরশের শেষে তারা রয়ে যায় তাদের এলাকায় হুজুর একবার পায়ের ধুলো দিবেন। মুদ্ধা কথা তাকে সাথে করে নিয়ে যাবেন। হুজুর বলেছেন তোমরা যাও আমি মাস খানেক পরে আসবো। তোমাদের অঞ্চলে আমার সফর আছে এবার যাব। ভক্ত বৃন্দ বিদায় দিয়ে গভীর রজনীতে আরাধনায় বসেছেন। অন্য সময় তার খেদমতে অনেকে থাকেন আজ হারুন আছে। হারুনের বাবা ছোট বেলায় লাল শালু কাপুড় পরে তাকে নিয়ে এখানে আসে। ছবিরন বিবি মারা গেছে বলতে গেলে ময়নায় তার বউডারে কাইরা নিছে। জাল দিয়ে প্রতি দিনের মত মাছ ধরছে নদীতে নৌকায় করে বউ ভাত নিয়ে আইছে সাথে হারুন কুলে। বলে নাও দুইটা মুখে দাও বিয়ান বেলা এক মুঠ পান্তা নুন কাচা মরিচ দিয়া খাইছো বেলা দুপার হইছে। জালটা উঠিয়ে  ভাতে হাত দিব। নদীর ঘাটেই জাল টানছে হারুনকে রেখে ছবিরনও জাল টানতে যায়। একটু বেশি গভীরে নামে তোতা বলে মনে হয় জালে বড় মাছ পরছে বউ। ঘাটের দিকে আসতে থাকে দেখে একটা কুমীরের বাচ্ছা আর কুমিরটা জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। তোতা বলে ছবিরন উপরে উঠে আস জলদি করো শালারা খুব খারাপ।  একবার মানুষের শরীরের গন্ধ পেলে ওরা রাক্ষস হয়ে উঠে তখন কেউ জানে বাঁচাতে পারে না। এক কামুড়েই নদীর ভিতরে নিয়া যাইব। মুখের কথা শেষ করতে পারে না তোতা শুধু শুনতে পায়। ওগো আমারে ধরে উঠাও কে যেন আমারে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সে আর কাছে গিয়ে সারতে পারে নাই। দেখে ছমিরনের রক্তে রাক্ষসী ময়না লাল হয়ে গেছে। ভাবছিল দা দিয়া কোপাইয়া মারবে কিছু পথ এগিয়ে যায়। তখনি হারুন চিৎকার দিয়ে উঠে শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে। সেদিন কার মত জাল ফেলে ছমিরনকে হারিয়ে হারুনকে নিয়ে। হুজুরের বাড়ির গাডায় এসে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সেই দিন হতে ওরা দুজনে হুজুরেদের বাড়িতেই থাকে।মনির খাঁ শহর হতে ফিরেছেন একটু আগে সাফিয়া ছানি দেখতো আবার কে এলো বলবি তোর বাবা বাড়ি নেই। দরজা খুলতেই দেখে তার বাবা বলে মা বাবা এসেছে। তোমার আসার কি? দরকার শহরেই থাকো চারি দিকে পানি থৈ থৈ করছে। এখনি তাকে শহরে যেতে হবে আমরা তিনটা মানুষ এত বড় বাড়িতে। একা কি করে থাকি সে দিকে কোন খেয়াল আছে। আলেপ বলে কি হয়েছে বৌমা কার সাথে রাগা রাগি করো। বাবা সাধে কি এসব করি আপনার গুণধর পুত্র তিন দিন পরে বাড়িতে ফিরেছে। জিজ্ঞাসা করুন কোণ রাজ কার্য উদ্ধার করে ঘরে ফিরলো। নয়তো আমার দুচোখ যেদিকে চায় চলে যাব। হাফিজ এই হারাম জাদা হাফিজ কোথায় থাকিস সারা দিন। কাজের সময় তোকে কাছে পাওয়া যায় না। সারা দিন কি কাজ করে বেড়াস। আসার পর হতেই তোমার বক বকানি শুনে কানটা পচে গেলো। এবার থামবে নয়তো ভালো হবে না বলে দিলাম। এক কথায় /দু কথায় দুজনার মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেধে যায়। ছনিয়া অনেক সময় হলো স্কুল হতে ফিরেনি ছানি তার দাদার সাথে কথা বলছিলো। হাফিজ এসে খবর দেয় ছনিয়া বাড়িতে ফেরার পথে পানিতে পরে যায়। তার অবস্থা খারাপ দেখে নিরাঞ্জন ও ছিদাম মিলে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তাড়া তাড়ি যেতে বলেছে। সবার সব কথা বন্ধ হয়ে যায় ছানিয়ার খবরটা শুনে সকলে হাসপাতালের দিক চলে। আমির খাঁ ও মবিন খাঁ খাবার শেষ  না করে মাঝামাঝি বলে পেট শান্তিতো দুনিয়া শান্তি। চলো এবার নলগোড়া শিবচরে চলো তার পরে একে একে অন্য দিকে যাওয়া যাবে। কালাচান বলে ভাই জান একটা কথা কইতাম চাই? কি কথা কইয়া ফেলো শুনি। যাবার সময় বৈকালে একটু কাদীরপুর হয়ে যেতে চাই। ছোট কালে বাজান মরণের পর ছোট বইনডারে বিয়া দিছি। তেমন নাইয়র নিতে পারি নাই আমার অবস্থা আপনে জানেন। যদি একবার বইনডারে নাইয়র নিতে দিতেন। আচ্ছা দেখা যাইব অহন জলদি নৌকা চালাত। সব দিক হয়ে কি? এক দিনে কাজ শেষ করা যায় দশ বারোটা গ্রাম দুই দিন সময় নিয়া বেড় হলেই হয়। না তা হবে না শালারা জন্মের কিপটা হাতের ফাঁকা দিয়া পানি পরে না। কইলাম বোইনডারে নাইয়র নিমু সেই দিকে কোন খেয়াল আছে কান পইতা শুনল। মুখ দিয়া একটা কথাও কইলো না খাঁরপো খাঁরা। জমির ব্যাপারী গঞ্জের কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে ফিরছে মাঝ পথে মবিন খাঁয়ের সাথে দেখা। কি ব্যাপারী সাব কোথায় গেছিলেন ভালো আছেন? খাাঁরপো ভালো আছি। কাজে গেছিলাম বাড়িতে যামু তোমরা কই যাও। আর কইয়েন না কিছু মাল লাগবো তাই মিস্ত্রী ও সুতার বাড়ি ঘোরা ঘুড়ি করছি সাথে বর্ষাটাও দেখছি। বর্ষার জ্বল কিছুটা কমেছে চারিদিকে মাছ ধরার হিড়িক পরেছে। নদী নালা খাল বিল পুকুর সব জায়গায় বেশ মাছ পরেছে এবার। জেলেদের মনে আনন্দ আর ধরে না পাট চাষিরা বেশ খুশি। অনেক বছর পরে ভালো ফলন পেয়েছে বর্গা চাষীরা। ভাবছে এবার মহাজনের ধারের টাকা শোধ করতে পারবে। সোবাহান সাহেব আজ আবার এসেছেন এলাকার বন্যা পরবর্তী অবস্থা দেখ ভাল করতে। যারা অনেক কিছু হারিয়েছে তাদের কিছু টাকা ও উপযুক্ত পুরুষ মানুষ পরিবারে থাকলে। তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিবেন। এলাকার যুবকদের ভুঁয়শি প্রশংসা করেছেন। গরীব গ্রাম বাসিকে টিন ও কাপুড় দিবে। চেয়ারম্যান মনির খাঁর বাড়িতে আজ বেশ লোকজনের আগমন ঘটেছে। তুহিন সহ অন্য সকলে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের নামের তালিকা করছে। কালাচান সেদিন বইনডারে আনতে যাইতে পারে নাই। মনটা তার ভীশন খারাপ ‘’ খোদা তুমি আমারে কেন পাঠাইছে এই দুনিয়ায় গরীব বলে কেউ দাম দেয় না আমার মন বলতে কিছু নাই। মবিন খাঁ কইরে কালাচান চল মাঝির হাটে যামু। কালাচান কয় আমি যাইতে পারমু না। অন্য কেউরে কন আমার শরীরটা ভালা না। মবিন খাঁ রেগে গিয়ে আমার মুখের উপর কথা বলিস তোর সাহসতো কম না। এখানে সাহসের কি দেখলেন? যাইতে পারমু না খালি হেইডা কইছি। আমির এসে দেখে দুজনার মধ্যে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে। কিরে কালা কি হইছে? কিছু না, আমি আর আপনেগো লগে কাম করুম না আমার টাকা পয়সা দিয়া দেন। মবিন তোর আবার কিসের টাকা প্রতি দিন খাওন আসে কই থেকে। বাড়িতে থাকো যাও যাও তোমার মত মানুষ না হইলে কি কাম করন যাইবে না। কি? আমার গুণধর মানুষরে। বিরদ যখন চরমে উঠেছে আবুল বাজার করে ফিরছে। ও কাকা গরীব মানুষের সাথে ঝগড়া করে কি লাভ। আর কাজ করতে চায় না ভালো কথা ওরে পাওনা টাকা দিয়ে বিদায় করে দাও। বেশ লোক জন জড় হয়েছে বিষয়টা খুব খারাপ হবে। অল্প কয়টা টাকার জন্য মান সম্মান নিয়ে পরে টানা ছেঁচড়া করবে। নেতোর টাকা আর কোন লেন দেন থাকলে বল পরে কিন্তু বলে লাভ নেই। টাকা নিয়ে নৌকা হতে নেমে আসে কালাচান। এখনতো সন্ধ্যা হইয়া গেছে আর জাওয়া হইলো না। রাতে কোথায় থাকবে আগেতো নৌকায় থাকতো। মোহর আলী গঞ্জের থেকে বাড়ি যাবে রাত হয়ে গেছে সাথে অনেক মালা মাল। নৌকা ভর্তি রাহি মালের ব্যবসা করেন। মাঝি দুই জন ছিলো এক জন বৈকালে আসার কথা ছিলো খবর দিছে আসতে পারবো না। এখন বন্দর খোলা যেতে সকাল হয়ে যাবে বিহানে হাট বসবে কি করবে কোন উপায় দেখছ না। গোঁসাইকে বলে কিরে লোক কি পাওয়া যাবে। পাইতে পারেন এটাই শেষ মোকাম কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কালাচান মুখ ভার করে বিড়ি ফুঁকছে ।গয়ানা ভিড়েয়ে তারা কিছু নাস্তা করবে বলে হোস্টেলে গিয়ে বসে। হরিপদ বলে দাদা কি নাস্তা করবেন না চা খাবেন। গোঁসাই বলে নাস্তা দেন দুজনের। খাবারের মাঝ পথে এসে কালাচান প্রবেশ করে বলে হরিদা চারটা ভাত ভর্তা ডাল দাও। গোঁসাই প্রথমে দেখে চিনতে পারেনি পরে বলে কালাদা না। হুম গোঁসাই আছ কেমন এই রাতে কোথা হতে আইলা। মোহর আলী বলে কিরে কার সাথে আলাপ করস বাড়িতে কেমনে যাবি কিছু চিন্তা করছো। কিছুই বুঝতে পারতেছি না কেমনে কি করি। হরি বলে কালাচান কি হইছে এই দূর দিনে কামডা ছাইরা দিলা। মিয়া কি কমু দুঃখের কথা কও? গরীব বলে আমরা কি মানুষ না। আমাগো কি? সাধ আল্লাদ থাকতে নাই। বুঝতে পারছি দেহ কাম কাইজ কবে পাও। গোঁসাই তুমি কাম ছাড়ছো কবে আজই বৈকালে আচ্ছা দেহী কিছু করন যায়নি। আলীকে গিয়ে বলে আলী গয়নায় বসে আয়াস করে হুক্কা টানছে। আচ্ছা ডাকো দেহি কথা বলে মানুষ চড়াইয়া খাই দুই চারটা কথা কইলেন বুঝতে পারবো কেমন লোক। কালাচান আসে গয়নায় মেহের আলী জানতে চায় কি মিয়া বাড়ি কই? জি ঠাকুর বাজার। সংসারে কে কে আছে ছোট একটা বোইন আছিলো বিয়া দিয়া দিছি মা বাব ছোট কালে মইরা গেছে। এখন তিন কূলে কেউ নাই কি? কাম করতে পারো। সব কাম করতে পারি যখন যেইডা পাই। গরীবের পোলার কামের বাজ বিচার করলে চলেনি মিয়া ছাব। গয়না চালাইতে পারেনি কালাচান খুব পারি সেই কাম করতাম। বাবনা তলার আমির খাঁ/ মবিন খাঁগো লগে আজই বাদ দিছি। আমার গয়নায় কাম করবানি জি আপনে দিলে করমু। কতো দিতে অইবো গোঁসাইরে যা দেই তাই পাবা মাসে বিশ টাকা দিমু। খাওয়া পরা সব গয়নায় দেহ মিয়া ভাইবা চিন্তা কও। গোঁসাইয়ের কাছে গিয়া জিগায় মানুষটা কেমন বলে তুমি চিন্তা কইরো না আমি আছি। আমারে দেহ তুমি ছোট বেলা হতে ভালো হবে রাজি হইয়া যাও। ঠিক আছে মিয়া সাব কহন থন কাম করতে হইবো কন। দেরি করনের কাম নাই চলো গয়নায় লগি মারো বন্দর খোলা পৌঁছাইতে হবে। সকালে উতরাইলের মোকামে ধরমু কালাচান গয়নায় বসে গান ধরে বলে তুমিই সব মালিক।
।। মাবুদ তোমার কেমন খেলা
  বুঝি নারে কোন লীলা গো,
  নদীর বুকে জীবন দিলারে
সারা জীবন বাইলাম মানুষের ভেলা
পরের তরী বাইয়া বাইয়া রে দয়াল
ওরে গেছে আমার বেলা বইয়া গো
ঘাটে ঘাটে ঘুরলাম কত শুধু একেলা
বুঝি না তোমার ইশারা মিলাইছো মেলা
আমি সকাল সন্ধ্যায় ঘাটে রইলাম গো
তরী আমি কূল হতে অকূলে বাইলাম  
আমার সঙ্গে নাই কোন সহচারী
ভয়ে কাঁপে হিয়া কখন যেন ডুইবা মরি
মাবুদ আল্লাহ রে তুমি এসে হও কাণ্ডারী
দমে দমে জিকির করি শূন্য খাঁচা থাকবে পরি
নেইকো কোন বাহাদুরি বড়াই করা দাও ছাড়ি
সাদা কাফন সঙ্গে করি মাটির ঘরে থাকবে পরি।।
মনের কষ্টে ও দুঃখের জীবন নিয়ে প্রভুর কাছে তার আকুল মিনতি বেশ ভালো লাগে মধ্য রাতে এসে বন্দর খোলা পৌঁছে। দবির মাতবর বিভিন্ন জায়গায় রায়বারদের বলেছে ভালো মেয়ে থাকলে তাকে জানাতে। ছেলেরা বড় হয়েছে তাদের শাদি দিতে হবে। রায় বার শামীম বৈকালে বাহাদুর পুর হুজুরের বাড়িতে বসে আছে। ছেলেটার বেশ অসুখ করেছে একটু পানি পড়া নিবে। দবির মাতবরকে দেখে বলে মিয়া সাব আদাব কেমন আছেন। দবির ফিরে দেখে শামীমকে বলে আরে মিয়া তুমি কইয়া গেলা হপ্তাহ খানিকের মধ্যে একটা খবর দিবা এখনতো মাস পার কইরা দিলা। রাগ কইরেন না মিয়া সাব মাঝির হাটে শরতের একটা মেয়ে আছে। আপনার পরিবারের লগে যাইব। যেমন তেমন ঘরে কি বিয়া শাদি দেওয়া যায়। তুমি দেখছো মাইয়া দেখতে কেমন নামাজ রোজা করেনি কোর আন পরতে পারে। আল্লাহ রাসুলের ডর ভয় না থাকলে আমি পোলা শাদি করামু না। কথাটা তুমি ভালো করে মাথায় ঢুকাইয়া নাও। জি সেইটা আর বলতে হবে না। কিছু খরচা পাতি তোমাগো নিয়া পারা যায় না পকেট হতে একটা আধুলি বের করে দেয়। জলদি খবর দিবা পানি পরা দিয়ে ভক্ত বৃন্দ দের বিদায় করে। হারুন হাসেম ও কবির সহ বর্জার মাঝিদের বললো আমরা সকালেই সফরের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। তোমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে ঈশার নামাজ শেষ করে তৈরি থেকো। কারো পরিবারে সমস্যা থাকলে পরিবার ইযাযত না দিলে আসার প্রয়োজন নেই। মাদ্রাসা ও এতিম খানার পরিচালনার দায়িত্ব আসাদুল ইসলামকে বুঝিয়ে দিয়ে তারা সফরে বেড়িয়ে পরে। দশ দিন পথ চলার পরে তারা বরিশাল এসে পৌঁছে। খবর পেয়ে ভক্ত বৃন্দ গন সকলে ছুটে আসে। হুজুরের থাকা নিয়ে শুরু হয় বিরাট ঝামেলা সবাই তাদের বাড়িতে রাখতে চায়। ভক্তদের মধ্যে সব থেকে পুরাতন হলে জয়নাল। হুজর বলে তোমরা সকলে মিলে জয়নালের সাথে কথা বলে জানাও নয়তো আমি বর্জরাতে বিশ্রাম নিব। সকলে মিলে ঠিক করে যেহেতু জয়নাল ভাই সবার আগে ওনার কাছে মুরিদ হয়েছে ওনাকেই বলি নিয়ে যাক। সকলে মিলি হুজুর সহ বাকি দের জয়নালের বাসায় নিয়ে গেলো। দেখতে দেখতে জয়নালের বাড়ি ছেরে লোক জন বাড়ি ঘর ছেড়ে মাঠে ঘাটে চলে এলো। বিভিন্ন জন বিভিন্ন সমস্যা ও তদবিরের জন্য এলো। দুপুরের খাবার শেষে একটু বিশ্রাম করছেন। তিন দিন অতিবাহিত হবার পরে কালকে চলে যাবার জন্য হুজুর বলেছেন। আসরের নামাজের আগে সোহেল, লোকমান,মাছুদ,তনয় ও জব্বার মিলে। হুজুরের কেরামতি পরীক্ষা করতে গিয়ে ঘটালো এক মহা কাণ্ড। আলম নামের তাদের এক বন্ধুকে কাফনে মুড়িয়ে হুজুরের নিকট আসে তার জানাজা পরানোর জন্য। হুজুর সেটা বুঝতে পেরে তাদের বলে ছেলেটি তোমাদের কি হয়। তারা বলে আমাদের বন্ধু। জহুরের সময় মারা গেছে। হুজুর বলে তোমরা গিয়ে ওকে ডাক ছেলেটি বেঁচে আছে মরেনি। ওরা নাছর বান্দা বলে মরে গেছে জানাজা পরিয়ে দিন। আবার বলে আমি জানাজা পড়ালে ও কোন দিন তোমাদের মাঝে ফিরে আসবে না। ওরা কোন কথা শুনে না। তিনি বলেও ওর মা বাবাকে ডাকো। গ্রামের চেয়ারম্যান মেম্বার ও থানার লোক ডাকো সকলের সামনেই জানাজা পড়াবো। স্বল্প সময়ের মধ্যে লোক জন চলে আসলো জয়নাল সহ অন্যান্য লোক জন আছে। কি? হতে চলেছে কিছুই বুঝতে পারছে না। জানাজা শেষ করে হুজুর ভক্ত বৃন্দকে বললেন তোমরা বর্জায় গিয়ে বসো ঈশার নামাজের পরে আমরা যাত্রা করবো। আলমের বন্ধুরা গিয়ে আলমকে বার বার ডাকছে উঠার জন্য সে আর ওঠেনি। এই ঘটনাটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। এর পর হতে ঐ এলাকা সহ অন্য এলাকায় তার ভক্ত বৃন্দ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। হপ্তাহ খানেক পরে জহেরর পরিবার মাঝির হাটে শরতের বাড়িতে আসে। জোসনার আসে পাশের প্রতিবেশী ও নিকটের কিছু আত্মীয় ছিলো। মেয়ের কাছে তারা কিছু জানতে চায়? দবির মাতবর বলে বাড়তি কথা বলার কি দরকার তুমি কোরআন পরতে পারো জি পারি। আমাদের একটু শুনাতো জোছনা একটি সুরা পরে শুনায়। জহেরকে বলে কি তোমার পছন্দ হলো নাকি? কহের বলে বাজান আর দেখা লাগবো না উনাকেই আমাদের ভাবি করে নিয়ে চলো। শরতকে বল জি ভাই সাব বলেন আপনাদের কোন কিছু কথা থাকলে বলেন। বলে ভাই সাহেব এটা দু/এক দিনের বিষয় নয় ছেলে মেয়েদের সারা জীবনের ব্যাপার। একটু ভিতর বাড়ি হতে আলাপ করে আসি। সেদিনের মত খাওয়া দাওয়া করে নলগোড়া ফিরে আসে। জমির ব্যাপারী দোকোনে বসে আছে বিভিন্ন দিক হতে লোক জনের আনা গুনা বাড়ছে। আজ হয়তো দোকোনে বেচা কেনা ভালো হবে। লালুকে বলে লাভ কম করবি বেচবি বেশি নতুন মাল উঠাইতে হবে। রহমান মোল্লা তার ছেলে ইয়াছিনকে নিয়ে বাজার করে বাড়ি ফিরছে। মহাজন জমির ব্যাপারীর সাথে দেখা কি মিয়া কোথায় গেছিলা ? জানতে চায়। রহমান বলে একটু বাজার করে বাড়ি যাব সাথে কে আমার ছেলে। কিছুটা পথ আসার পরে তোরাব আলী বলে ব্যাপারী সাহেব কি বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। হুম কেন? যান বৈকালে একটু বাড়িতে আসবো থাকবেন নাকি। আছি আজ কোথাও যাব না তোমার ভাবীর বাপের বাড়ি হতে লোক আসবে। বুঝতেই পারছ ঠিক আছে আমি আসরের নামাজ পরেই আসবো। কালাচান বোন ও বোনজামাইকে নিয়ে নিজ বাড়ি ঠাকুর বাজার আসে। দুপুরে তাদের জন্য ভালো মন্দ খাবারের আয়োজন চলে। পাশের বাড়ির মহিতন চাচীর স্বামী মারা গেছে বিবাহের কিছু দিন পরে ছেলে মেয়ে কেউ নাই। কালাচানের মা বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই ওদের দুই ভাই বোনকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। মহিতন সব কিছু করে দেয় কালাচানের সাথেই থাকে। বেশ কিছু ফসলী জমি আছে বাড়ির চারি পাশে। বিভিন্ন সবজী ও ফলের বাগান আছে ইচ্ছে করলে বসে খেতে পারে। তানা  করে বলে বইসা বইসা খেলে রাজার গোলাও ফুরিয়ে যায়। গরীবের ছেলে কাজ করে খেতে দোষের কিছু নাই।  রিপা ও কাসেম মিলে এবার বিকেলে বসেছে বাড়ির উঠানে। সংসারের বিভিন্ন কথা বলছে এক পর্যায়ে এসে কাসেম বলে চাচী আম্মা মিয়া ভাইরে এবার একটা শাদি দেন। বাজানরে আমি অনেক কইছি কোন কথা শুনো না। আমার বয়স হইছে শরঢীলডায় অসুখ বিসুখ লাগগাই থাকে। কহন যে কি হয় কেডা জানে। রাইতে খাইতে আসলে কথাটা উঠামু তোমরা আমার লগে সায় দিও। আমরা কিন্তু বৈকালে চলে যামু। এইটা কেমন কথা হগো চাচী থাকনের যোগাড় নাই। উত্তর খেতের পাট জাগ দিমু ধান খেতের পানি বাড়ছে। সেটা কাইটা বাড়িতে উঠান লাগবো পরে আবার আমু। শরত সব খবরা খবর নিয়েছে মেয়ের কাছে জানতে চায় কিরে মা বড় গেরস্ত বাড়ি। ছেলেটাও খারাপ না তোমার মনে ধরছেনি। জোছনার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে কিছু না বলে বারান্দা হতে নিজের ঘরে যায়। ভাদ্র মাসের দশ তারিখ জোছনা ও জহেরর শাদির দিন ধার্য করা হয়। বেশ কিছু দিন পরে অনীক গোবিন্দ মিন্টু স্কুলের রাস্তায় পা বাড়িয়েছে। নন্দ কুমার হাই স্কুলের দিকে। অদিতি রাশেদা আজ স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে ঘাটে কোন খেয়া নেই। অনীক বেশি চিন্তা করে না ওর বড় রাস্তা ধরে গেলে চলবে। অনেক দিনের জমানো কথা বলেই চলেছে অনিতা ও অদিতি। সারা বর্ষায় কি কি? করেছে কোথায় কোথায় গিয়েছে। কথার ছলে অদিতি তার নৌকায় হারিয়ে যাওয়ার কথাও বলা শুরু করে। রাশেদা তখন বলে আসলে বিষয়টি এটা আমি আজই বাড়ির সবাইকে বলে দিব। কি বলবি বল যা যা এখনি যা ’’বিচার দিলে আচার পাবি ভাঙ্গা জুতার বাড়ি খাবি ছাই নাড়া খান ব্যবহার পাবি।’’ এমনি দুষ্টামির ছলে পথ চলছে কিছু সময় পরে মানিক নৌকা নিয়ে তাদের বাড়ির পথ ধরে। ব্যাঙ চোরা আসার পরে অনিতাকে তার বাড়ির ঘাডায় নামিয়ে দিয়ে ওরা বাহাদুর পুর পৌঁছে। প্রতি দিন আসা যাওয়ার পথে শাপলা শালুক ও ঢ্যাপ দেখে অদিতির বেশ লোভ হয়। মনে মনে ভাবছে মানিককে বলবে একদিন তুলে দিতে। কখন যে জহরের বিয়ের দিন নিকটে চলে আসছে ভাবতেই পারছে না।আত্মীয় স্বজন সকলকে বলা হয়েছে শরতের মা বলে বাজানরে বুরে বিদায় কইরাই দিবি বেবাক মানুষ জনরে কইছো। শরত মা তুমি এত বেশি চিন্তা করোনা শরীর খারাপ করবে। শুক্রবার সকাল হতেই জহের ও জোসনার পরিবার খুব ব্যস্ত জুম্মা পরেই জহেরেরা মাঝির হাটের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। শামীম লোক মারফত খবর দিয়েছে তাদের আসতে বড় জোড় আধা ক্রোশ বাকি আছে। অনেকটা আনন্দ করে শাদি সম্পন্ন হলো। বেশ কিছু দিন বাহিরের সফর শেষ করে হাজী শরিয়ত উল্লাহ সন্ধ্যায় বাহাদুর পুরে এসেছেন। নিরাঞ্জন বলে কিরে জ্ঞান অর্জন করলেই চলবে মানুষের উপকারে কিছু বিতরণ করতে হবে। তখনি বাতাসের একটা ঝাপটা এত শক্তি নিয়ে পাড়ের বুকে আঁচড়ে পরে। এতে করে ছোট নৌকা গুলি প্রায় ডুবো ডুবো ও লোক জন এদিক সেদিক গিয়ে ছিটকে পরে। সকলেই হতবাক হয়ে যায়। কি হলো বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে লোক জন বলা বলি শুরু করলো। হুজুর দেখেন এক ঝাঁক গজার মাছ, ও ঠাকুর দেখো ঐ দিকে কালো মস্ত বড় ওটা কি জন্তু। টলার আসছে ঘটের দিকে কালাচান ও গয়না দিয়ে এদিকে আসছে। হঠাৎ করে তিন ঘাটের মিলন স্থলে একটা গোল্লার মত সৃষ্টি হলো। আসে পাশের হাত পাঁচেকের মধ্যে যা ছিলো সব তার গহ্বরে নিমজ্জিত হয়। পরিবেশটা কিছুটা শান্ত হলে ঠাকুর ও হুজুর সহ উপস্থিত সকলকে বলে। আগামী কালকে যোহরের পরে আসরের আগে এই সময়টাতে গ্রামবাসী পুরুষদের সবাইকে থাকতে। আলেফ ও অনীক ভ্যানে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। রাস্তায় এত লোকের জটলা দেখে বলে চলতো গিয়ে দেখি কি সমস্যা। ভ্যান ভাড়া পেয়ে অন্য দিকে চলে যায়। মোহন ও রিতা ডাক্তার দেখানোর জন্য নদী পার হয়ে গঞ্জে যায়। ফেরার পথে অনীকের দোকানে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেয়। কিছু কাপুড় কিনে বলে এবার পায়ে হেটে বাড়ি যাব। কি বলো অনেকটা পথ বেশ সময় লাগবে। কালাচান মেহের আলীকে বলে মিয়া ছাব একটা কথা কইতে চাই? কি কথা। আমার মা বাবা কেউ নাই বুড়া চাচী আছে তার বেশ শরীর খারাপ। অনেক দিন থেকে শাদির কথা কয় আপনি যদি একটু দেখতেন। গোঁসাই কই গেলিরে তুই এত দিনে তোর বন্ধু একটা  ভালো কথা কইছে। ঠিক আছে আমি খবর নিয়া দেহী কি করা যায়। সকালে নদীর ঘাটে আজ কেউ নদী পারাপার হয়নি। প্রতি দিনের মত দুজন লোক নাইতে গেছে তাদের কেউ আগে এখানে দেখেনি। দুই ঘাটে দুজন লাশ হয়ে পরে আছে। এক জনকে চিনতে পেরেছে সে মুসলিম অন্য জনকে কেউ চিনতে পরছে না। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কোন জন্তু তাদের পায়ে ও ঘাড়ে আক্রমণ করেছে। খবরটা চার/পাঁচ গ্রাম ছড়িয়ে গেছে দুজন কেই ধরা ধরি করে নদীর পারে রাস্তার ধারে এনে রাখা হয়েছে। আসা যাওয়ার পথে তাদের কোন আত্মীয় স্বজন। তাদের মুখ দেখে চিনতে পারলে শেষ কার্য সম্পন্ন করা যায়। সদর আলী বলে দেখি দেখি আহারে এইতো বাবনা তলার পরেশ বড় ভালো লোক ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পরশের আপন বলতে কেউ নেই। ছোট বেলায় বানে ভেসে বাবনা তলায় এসে পরে। এর পরে হিন্দু সম্প্রদায়কে অনুসরন করে জীবন যাপন করতে থাকে। বেশির ভাগ সময় সে পূজা অর্চণা করেই কাটিয়ে দিছে। দুজনের শেষ কাজ করে সবাই এসে হুজুরকে ধরেছে আপুনি এর একটা বিহিত করেনে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এভাবে থাকতে পারছি না তা না হলে অন্যত্র চলে যাব।পড়ন্ত বিকালে প্রকৃতির নীবির ছায়ায় বন্ধুদের নিয়ে নৌকা ভাসিয়ে দিয়ে মনের সুখে গান করছে অনীক গোবিন্দ সহ আরো অনেকে। কি সুন্দর আপরুপ সব দৃশ্য দেখে যেন মন ভরে না চোখ অপলক চেয়ে থাকে। নিরাঞ্জন নৌকায় বসে আছে দেখে দুটি নৌকা তাদের দিকে ভেসে আসছে। নগেনকে বলে দেখতো কারা আছে নগেন অনীকদের দেখতে পায়। নগেনকে দেখে বলে কি নগনে দা কোথায় যাও। তখনি ঠাকুর বলে উঠে তোরা এদিকে কেনোরে? কথা বলা শেষ আর হলো না। এবার সবার সামনে যেটা দেখলো তাতে সকলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শুধু ঠাকুর ছাড়া। দেবীর মত একজন মেয়ে তার রুপের কোন বর্ণনা দেওয়া চলে না। সে নদীতে তাদের থেকে কিছুটা দূরে পায়ে হেটে চলেছে। ঠাকুরও বেশি সময় নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। এর পর হতে তিন দিন পার হয়ে যায় কারো কোন খবর নেই। চার দিনের দিন হুজুর সমগ্র জেলে মাঝিদের নিয়ে কিছু নিদৃষ্ট এলাকা খুঁজে বেড়ায় কোন সন্ধ্যান কেউ করতে পারে না। গভীর রাতে কালাচন ও গোঁসাই গয়না নিয়ে মাঝির হাট হতে বাবনা তলায় যায়। কিছু মাল পত্র নামিয়ে তারা সদরপুরে নোঙ্গর করে দুই জনে বলে চলে কিছু খেয়ে নেই বেশ খুদা পেয়েছে। গোঁসাই হাত মুখ ধুয়ে মাঝা হতে গামছা খুলে মুখ মুছার জন্য তখনি দেখে সামনে একটা ডিঙ্গি নৌকা ভাসতেছে। বলে কালা দেখতো সামনে ওটা কি পাঁচ ব্যাটারির লাইট মারে। কালা কয় আরে বেটা সারা জীবন নদীর বুকে জীবন কাটাইতেছো এখনও চিন না ওটা নৌকা। তখনি হাঁক ছাড়ে কেডা বাহে যাও কোন দিক। অনীক ও মিন্টু হাত ইশারা করে তাদের নিকটে যেতে বলে তারা বুঝতে পারে ওরা বিপদে পরেছে।চলো দোস্ত মানুষের উপকার করলে আল্লাহ খুশি হয়। ওরা গিয়ে অনীক ও মিন্টুকে উদ্ধার করে তাদের সাথে নিয়ে আসে। অনীক কালা ভাই কি সমস্যা হয়েছে বলোতো কোথায় ছিলা তোমরা। ফুপা লোক মারফত খবর নিলো আমাদের ওখানে আবার থানা পুলিশ করছে শুনলাম। দুজনে বেশ ক্লান্ত বলে আমাদের কিছু খেতে দাও আগে পরে সব কথা বলছি। তোমরা আগে গোসল দিয়া লও ভয় পাইয়ো না আমরা আছি তোমাগো ডিঙ্গি আমার গয়নার সাথে বাধা আছে। ওরা সকলে মিলে হিজল দিঘির গাঁয়ে আসে। চার পাঁচ গ্রামের লোক বিকালে বাহাদুর পুর হতে শুরু করে ও দিকে নলগোড়া ও রহমত গঞ্জ পর্যন্ত একত্রিত হয়েছে। হুজুর আজ নদীতে কিছু একটা ব্যবস্হা দিবেন যাতে সাধারণ মানুষের উপর নদীতে থাকা। জীব জন্তু,দেব দেবীদের উৎপাত হতে যাতে তারা রক্ষা পায়। বাবনা তলা ও বন্ধর খোলা হয়ে গয়ানা এখন পাঁচচরে আছে। তোরাব আলী ও পরাণ ভ্যান না পেয় পায়ে হেটেই রওনা করেছে। বলতে গেলে হাতাগুনা কিছু লোক ছাড়া সকলেই নদীর পারে ভির করছে। গয়না হতে নেমেছে ওরা কিছুটা পথ আসার পরে দেখে নিরাঞ্জন ঠাকুর অচেতন হয়ে পরে আছে। তার পাশে আরো একজন অচেনা মানুষ তাকে প্রথম কেউ গ্রামে দেখলো। গোকুল ও যতিন অনেক দিন হতে ঠাকুরের খোঁজ না পেয়ে অস্হির হয়ে উঠেছে। পরিচিত সকল জায়গাতেই খবর নিয়েছে কোন সন্ধ্যন মেলেনি। হতাশ হয়ে তার পাঁচচর দিয়ে বাড়ির পথে ফিরছে। অনীক বলে ধরো ধরো দেখি ঠাকুর বেঁচে আছে নাকি ধরে কোলাহল মুক্ত জায়গায় আনা হলো। ওদের দেখে নগেন ও গোকুল তাদের কাছে আসে। তারা একটি ভ্যানে উঠিয়ে দুজনকে সদপ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বেশ কিছু দিন এলাকা শান্তিতে ছিলো। মাস খানেক চিকিৎসা করার পরে ঠাকুর সুস্হ হয় কিন্তু নতুন লোকটিকে কেউ দেখতে আসেনি। গ্রামে এত ঘটোনা ঘটে গেলো শিরাজ পাগলার কোন দেখা মিলেনি অনেক দিন হয়। তাকে দেখা গেলো সেই লোকটির কাছে কি যেন বলছে ফিস ফিস করে। নিতাই চোখ মেলে তাকায় দেখে শিরাজকে তাকে আলিঙ্গন করতে চায। সিরাজ বুঝতে পারে কোন একটা বড় ঘটোনা ঘটেছে নয়তো নিতাইয়ের এই হাল হতে পারে না। ছিদাম হঠাৎ করে একটা দূর ঘটোনার শিকাড় হয় এতে করে তার একটি পায়ে সমস্যা হয়। ছোট একটা দোকান আছে নিজের ভ্যান আছে মাঝে মাঝে নিজে চালায় ও লোককে দেয় চালাতে। বুকের ব্যথাটা বেশ বেড়েছে ডাক্তার বলেছে বেশি চিন্তা ভাবনা না করতে কে শুনে কার কথা। রোকাইয়া দিন দিন বড় হচ্ছে আবুলটা ছোট। ছালমা আবুলকে নিয়ে পিরের বাড়িতে যায় একটু তেল পড়া ও পানি পরিয়ে আনতে। এতে যদি একটু অসুখটা কমে। রোকাইয়া বাবার মাথার কাছে বসে বসে বলছে বাজান তুমি আমারে নিয়া বেশি চিন্তা কইরো না। তোমার কিছু হলে আমাগো কে দেখবো তুমি ছাড়া আমাগো আর কেউ নাই বাজান। মেয়ের চোখের জ্বল গড়িয়ে ছিদামের বুকের উপর পরছে। দেখ মেয়ের কান্ড আমার কিছুই হবে না। আমার মায় কান্দে কেন? আবুল ও ছালমা ফিরে আসে বাড়িতে। তুহিন পিছু পিছুই ছিদামের বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে জানতে চায়।ছিদাম ও ছিদাম বাড়ি আছোনি। ঘর হতে বাহিরে এসে বলে চৌকিদার সাব যে কি মনে করে গরীবের বাড়িতে। তোমার জন্য একটা সুখবর নিয়া আইছি কি কইতাছেন আপনি আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। ঠাকুর বাজার হতে তোমার মেয়ের শাদীর জন্য একখানা পয়গাম আছে। বাবনা তলায় আমার আত্নীয় আছে আমিন খাঁ। ছেলের বাবা মা নাই ছোট একটা বোন ছিলো তারেও শাদী দিয়া দিছে। ছেলের এক চাচী আছে ঠাকুর বাজার থাকে। আচ্ছা আমি পরিবারের সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো। তোমারে কই ছিলাম উত্তর পারার জমিটার কথা সেটা নিয়ে কিছুইতো বললে না। সব কথাই জানামু তোমায় ঠিক আছে কথাটা যেন মনে থাকে। যতিন শিবচর হতে নলগোড়া ইকবাল ক্লাবের সামনে হাফিজের সাথে কথা বলছে মোবারক জালে গাব দিবে কিছু গাব কিনে রাখছিলো সেটা নিতেই অনিকের সাথে কথা বলছেন। গোবিন্দ বলে দোস্ত আজ ঠাকুর বাজার শেষ কিত্তন হবে তোর কিন্তু আমাগো লগে জাইতে হবে। যাইতে পারমু কিনা জানি না বাজান শহরে গেছে মা একলা বাড়িতে থাকবো। বাজার হতে কখন ফিরি তার ঠিক নাই। একে একে সবাই আসে বেশি কথা বলে লাভ নেই তোমার যাইতে হবে এটাই শেষ কথা। বাজার হতে তাড়াতাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে মাকে বলে যতিনদের মন্ডপে যায় বন্ধুরা মিলে। মধ্যরাতে  চা বিস্কুট খেতে বাহিরে যায়। মানিক ওদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে অনীক বলে আরে মানিক দা তুমি কি করো এখানে। গান শুনতে আইছি সারা দিন কাজ করে মনেওতো একটু আনন্দ চায় বলো। রিতা বেশ কিছু দিন হতে খেয়াল করছে মোহনটা কেমন যেন বদলে গেছে। আগের মত নেই  সময় মতো নাওয়া খাওয়া নেই সারাক্ষণ কি যেন ভাবে। এক মাত্র ছেলেকে বুকে ধরে তিনি বেঁচে আছেন। স্বামী মোহনের বয়স যখন পঁচ বছর তখন পক্ষাঘাতে মারা গেছেন। যুয়ান বয়স অনেক বলে ছিলো আবার নিকা করতে সে সবাইকে এক বাক্যে নিষেধ করে দিছে। বলে স্বামীর সুখ কপালে থাকলে তিনি কেন আমাদের ছেড়ে যাবেন। বিধি যদি সুখ কপালে লিখতো তবে কে আছে দুঃখ দেয়। কিছু  চাষের জমি একটা বাগান ও দুইটা মাছ চাষের ঘের আছে সব দিয়ে দুজনার সংসার বেশ ভালো ভাবেই কোটে যায়। মারিয়া নৌকা নিয়ে ঘাটে বসে আছে দুপুর বেলা এই ভর দুপুরে গাঙ্গে কি করছে ভুত পেতনিতে ধরবো। চুল খোলা জয়তুন নানী বলেছে আলো মাগী তোমার আর ভাতারের সংসার করন লাগবো না। মারিয়া তাতে কি আমার ভাতারের লগে তোমারে নিকা দিমু। তুমি সারা দিন রান্না বরা করবা আমি পায়ের উপর পা তুলে শুধু খাবো বুঝলা বুড়ি। সব সময় আমার পিছনে লাগে তোমার কাম নাই কামে যাও বলে নৌকাটা অন্য দিকে নিয়ে যায় এলো মেলো ভাবে। মোহন জমিতে পানি দিচ্ছে দেখে মারিয়া এ দিকে আসছে সে একটা সংকেত দেয় সেটা বুঝতে পেরে। তাকে তুলে নিয়ে দুজনে বহু দুর চলে যায়। কিগো মুখটা ভার কেন বাড়িতে কিছু হয়েছে। আর বলো না নানী সব সময় পিছু লেগে থাকে। বাদ দাওতো চলো ওখানে গিয়ে বসি চারি দিকটা কেমন গুছানো বেশ বড় বড় কিছূ গাছে ঘেরা। এটা একটা নতুন জায়গা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে গো তুমি কি বলো। মোহন বেশ নীরব আজ অন্য দিনের সাথে আজেকে তাকে মিলাতে পারছে না মারিয়। তুমি কি কিছু ভাবছো হুম নাতো মানে কি কোন সমস্যা আরে না থ্যাৎ ।এই জায়গার একটা নাম দেওয়া দরকার কি বলো কেনেগো আমরা প্রথমে আবিস্কার করলাম বলে। দুজনে সুপারি পাতায় বসে বলে কি হয়েছে তোমার বলো। তোমার  জন্য বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে তাই বুঝি তা কবে হতে লাগে। সব সময় লাগে কখনও বলোনিতো বলিনি আগে মেয়েদের মনের কথা জানতে হয়ে পরে বলতে হয়। তোমার মনের খবরই পেলাম না নিজের কথা বলি কি করে। তোমার মনে দিন রাতে নামের বাশি কার নামে সুর তুলে। কি ফুলে তুমি সাজাও তারে রেখেছো হৃদয়ের মন্দিরে। ভালোবাসার ঘরে জীবন জুড়ে। সে তোমায় বুঝবে চোখের আড়াল হলে নীভৃতে নির্জনে একাকী খুঁজবে বলো। মারিয়া বুঝতে পারে মোহন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে নিজের অজান্তেই সে কিছুই বলে না।
তোমার মনের ঘরে কে বসত করে নন্দিনী
শুনতে কি পাও তার কন্ঠেরস্বর চুপি সারে?
বলো না তুমি সে কি হিয়ার মাঝে বসত করে
প্রিয়তমা বুঝতে পার কি তার হৃদয়ের স্পন্দন?
নীরবে নিভৃতে চুপিসারে তুমি মনটা করলে চুরি
মন হারিয়ে হয়ে গেছি তোমার জন্য আজ ফেরারী
বুকের জমিনে লিখেছি নাম রেখেছো অন্তর মাঝে
কেউ জানে না সে কথা বুঝে নিও তুমি মৌও নীরবতা
চোখের ভাষায় মনের কথা হয় সাথী কেন তুমি বুঝ না?
সব কথার ভাষা মুখে হয় না কিছু কিছু থাকে অজনা
হাজার লোকের মাঝে চিনে নিও আমাকে কভু ভুলো না
তোমার সাথে আজীবন বাধা রবো কখনও বাঁধন খুলবে না।
দেখি তোমার হাতটা কেন? দেখি না বলেই বলে বুঝতে পেরেছি সব। চিন্তা করো না আমি চাচীকে সব বুঝিয়ে বলবো কি বলবা যেটা তুমি চাও। তোমার কথার মাথা মণ্ড কিছুই বুঝলাম না আমি। চলে ফেরা যাক কই নাম দিলে না হুম বলো মোহনীয়ার চর। বেশতো সুন্দর হইছে নামটা। কালাচান ও গোঁসাই মাঝির হাটে গয়নার মালামাল নামিয়ে বাতাসে শরীরটা জুড়ায়। হেদায়েত লালুকে নিয়ে হাটে আসছে হাট বার লোক জনের অনেক আনা গোনা। জমির ব্যাপারী ও মেহের আলীর মধ্যে বেশ ভালো খাতির কাজ কাম ও লোক মারফত তাদের সব সময় খবরা খবর আনা নেওয়া আছে। কি খবর কালা ভাই শুনতেছি তুমি নাহি শাদীর জন্য মেয়ে দেখতাছো। কথাটা কি সত্যনি হুম সত্যই পাইছোনি নারে দাদা। শোন নলগোড়া ছিদামের একটা মেয়ে আছে দেখতে শুনতে ভালো। একটা ছোট ভাই আছে মা বাবা দেখো খোঁজ নিয়ে তোমার চলবোনি। গোঁসাই বলে আমিও লোক মারফত তাগোর কাছে খবর দিছি তারা কইছে দুই/এক দিনের মধ্যে জানাইবো। কালাচান তোমরা সবাই আমার পিছে লাগছো কেন? আমারে কি কুরবানির হাটে উঠাইছো বিক্রি করন লাগবো। সদর আলী বলে দাদারা কখন যাবে কেন দুদু আমারে একটা নিয়ো যাইয়ো দাদা ভাইয়েরা। সদর আলী বলে তোমরা কোন দিকে যাত্রা শুরু করবে বলে সদরপুর মাঝির হাট ও নলগোড়ায়। আমারে কাদীরপুর নামাই দিয়ো। নিতাই কাজে মাঝির হাটে এসেছে। নতুন নতুন কত মানুষের সাথে তার পিরিচয় জানাশুনা। ভাবছে মনের মত একটা কাজ পেলেই আমার হয়ে যাবে একলা মানুষ।কাম কাইজের মধ্যে থাকলে সময় পার হয়ে যাবে। মহিতন চাচী  রিপা ও কাসেম তুহিন সহ আসে ছিদামের বাড়িতে। রোকাইয়া বাহির বাড়িতে ধান গোলায় ভরতে ছিলো আবুল বাড়ির বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে আছে। তুহিন বলে তোমার বাবায় বাড়ি আছে বলে নাতো খেতে গেছে গরু নিয়া। কে আছে বাড়িতে মা আর বুজান আছে তোমার মায়রে কয় বাড়িতে মেহমান আসছে জলদি যাও। বুজান বুজান জলদি বাড়িতে আস মেহমান আসছে মার কাছে কইতে হইবো। ছালমা এসে দেখে মেম্বার ও আরো অনেকে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় বাহির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।  সালাম দিয়ে তাদের বসতে বলে ছালমা। আবুলকে বলে তোমার পোলারে কও জলদি বাড়িতে আইতে বুজানরে দেখতে লোক আইছে। ছিদাম আবুলের মুখে সব শুনে কিছু খাবর কিনে বাড়িতে আসে। তাড়া রিপা বলেন তাড়া তাড়ি মেয়েটারে দেখাইতে আমাগো আবার ফিরন লাগবো বেলা যে যেতে বইছে। রোকাইয়াকে নিয়ে ছিদাম আসে তার পিছে সালমা। রিপা ধরে কেদারায় বসায় কিছু প্রশ্ন করে তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। ছালমা বলে দেখো আমাদেরও ছেলের সম্পর্কে খবর নিতে হবে। তারা আমাগো না বলে আসছে আমরাও না জানিয়ে সব খবরা খবর নিব। তাদের বলো আমরা তুহিন ভাইয়ের কাছে সব জানাই দিমু। ফেরার পথে অনীকের সাথে কালাচানের দেখা। এদিকে মানিক বাজারে এসে বলে গেছে একবার দেখা করতে। কালা দা কোথায় গেছিলা তুমি?ছিদামের বাড়িতে। কেন রোকাইয়কে দেখতে বুঝলাম তুমি আমাগো এলাকার জামাই হইতেছো। চলো আমার বাড়িতে নারে দাদা আরেক দিন যাব। তা হবে না দাদা অনেক মেহমান আছে আজকে তোমাদের কোন রকমে ছাড় দিচ্ছি না। এই শ্যমাদা মেহমান নিয়া আমার বাড়িতে রেখে আস। আমি এখানে আছি তোমারে নিয়া বাজারে যাব। শ্যামকে বলে দাদা একটু দাঁড়াও ধারে কাছে কোন মিষ্টির দোকান আছে। প্রথম কারো বাড়িতে যাচ্ছি খালি হাতে কি করে যাই। জয়তুন রিপা ও কাসেমকে নিয়ে শ্যামা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই আমেনা বেগম তাদের কাছে আসে। মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে যেন বহু জনমের চেনা। জয়তুন ও আমেনাকে দেখে চিনতে পারে এযে তার প্রাণের সই। দুজনে কতটা সময় ধরে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ছিলো তার কোন হিসাবে নেই। জয়তুন বলে তুই আমেনা কাদির পুর স্কুলে পড়া লেখা করছো। বলে হুম তুই জয়তু যাক চিনতে পারছো তাহলে বলে এটাই আমার শ্বশুর বাড়ি। শেফালি বলে ওমা তুমি কি  দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে মেহমানদের বসতে দাও। চল ঘরে চল বাকি কথা ওখানে গিয়ে হবে। অনেক কথা হয় পুরোনো দিনের স্মৃতির সাগরে ভাসতে থাকে দুই জনের পরিবার। দু দিন বেড়িয়ে ঠাকুর বাজার ফিরে যায়। অদিতি ও অনিতা স্কুল হতে ফিরছে অনীক বন্ধুদের সাথে নিয়ে বাজার হতে ফিরছে। বেশ কিছুটা পথ পায়ে হেটে আসে বলে তোরা বাড়ি চলে যা। আমার একটা কাজ আছে সেটা সেরে ফিরতে সময় লাগবে। শ্যামা দা বাবাকে বলো আজ বিকালে বাজারে যাব না। বেশ গরম লাগছে দুজনে বলে চল বসে কিছুটা সময় বিশ্রাম নেই। রাস্তার পাশ দিয়ে চলে গেছে একটা ধান খেত এর শেষে আছে। বিলের মত একটা জায়গা সেখানে গিয়ে দুজনে বসে। চারি দিকে নির্মল শান্ত বায়ু পাশেই ফুটেছে শাপলা। চারিদিকে কাশ ফুল কেওড়ার বন এ যেন বিধাতার স্বর্গের এক টুকরা ভুমি। পাখি ডাকছে ফড়িং ও ঘাস পোকা গুলি উড়ছে। পানির কূল কূল স্রোত প্রবাহিত হয়ে আচড়ে পড়ছে  সোনাতলার বিলে। অনিতা বলে আমি বেশ কিছু দিন হতে লক্ষ করছি তুই বেশ উদাশ থাকিস। কি নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা মগ্ন বলতো আমাকে। নারে তেমন কিছু না তুই বললেইতে হবে না। তোমার লক্ষনে বলছে তোমার মনের ঘরে কোন চোর ডুকেছে। সে তোমার মনের সাথে প্রাণটাকেও নিয়ে গেছে। তাকে ছাড়া তোমার দিন রজনী এখন কাটেনা দু আঁখিতে তাকে নিয়ে স্বপ্ন বিভর হয়ে থাকো। শোন তুই প্রেমে পরেছিস কার জন্য ব্যকুল থাকিস আমাকে অন্তত বল। কথা দিলাম অন্য কেউ জানবে না হয়েছে তোমার ডং দেখলে। গায়ে জ্বলা ধরে যার বিয়া তার খবর নেই পাড়া পড়শির ঘুম নেই। বললিনাতেকা মনে রাখিস আমাকেই তোমার প্রয়োজন হবে বেশি কথাটা বলে রাখছি। হাসু মোল্লা জাল দিয়ে মাছ ধরছে বিলে ইয়াছিন বলে দাদা জান বাজান কেন এমন করে। সারা দিন কেট কেটানি কার ভালো লাগো বলতো। দাদারে তোমার বাজানের মনটা বেশ খারাপ। সোনাই মুড়ির বিলে কিছু জায়গা ছিলো এখন সেখানেও নাকি জীবন জন্তুর অত্যাচার বেড়ে গেছে। জালে আগের মত মাছ পরে না নদীতেও যেতে পারে না। কুমির আরো কত কি অপেক্ষা করে থাকে আমাগো খাইতে। সংসারটা কেমনে চলবো ভাই অনেক বেলা হইছে চলো বাড়ি ফিরে যাই। চলরে ভাই ফয়জরওয়াক্তে বের হইছি অহন দুপার হইছে চল জাল উঠা। তামাকটা দেতে দুইডা খিইচ্ছা টান মারি।শরীলডা ঠান্ডা হয়ে এলো। গরম করন লাগবো নাও তামাক বানাও নৌকা আড়া আড়ি পারি ধরো হক্কালে যামু বাড়ি। সদর পুর যেতে সময় লাগবে বেশ। অনীক বিলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে উদ্দেশ্য ছোট বেলায় নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তার সাথে এক জনের জানা শুনা হয়। আজকের দিনে সেই জায়গায় গিয়ে কিছুটা সময় কাটাবে। তার জন্য অপেক্ষা করবে তাকে মনে রেখেছে কিনা সেটা দেখতে। কেওড়া বনের ধার পার হয়ে হিজল তলায় আসতেই দেখে দুটি মেয়ে বসে আসে। তার মনে পরে এইটা অদিতি সেতার মানুষটাকে চিনতে পারছে না। অনীককে আসতে দেখে অদিতি ও অনিতা বাড়ির পথে পা বাড়ায়। অনীক বলে কি মানুষরে বাপু বিপদে পড়লে চিনে আর পরিত্রাণ পেলে তাকে না চেনার ভান করে চলে যায়। ধরনীর বুকে মানুষ হলো সবচেয়ে আজব ও বিচিত্র প্রাণী। নারী সেতো আরো বহুরুপী বিচিত্র প্রাণী যাকে স্রষ্টা সৃষ্টি করে মন বুঝেনি। তাকে বুজতে গেলে আমার উদ্দেশ্যটাই নৎসাত হবে। এক মাঘে কি শীত যায় প্রতি শীতে মাঘ মাস আছে। বাংলার ললেনা এটা তুমি ভুল করেও ভুলে যেয়ো না। নদীতে লোক জনের আনাগুনা বেশ বেড়েছে সামনে শীতের মৌসুম এই সময়ে নদীর পানি অনেকট শুকিয়ে যায়। জেলেদের জালে মাছ ধরা পরে অনেকে মাছ শুটকি করে বাজরে বিক্রি করে। আবার কেউ নিজেদের খাবারের জন্য গোলা ভরে রাখে। জমির ব্যাপরী পরিবার সহ গঞ্জ হতে কেনা কাটা করে ফিরছে। শরিফা বলে বাবা তোমার একটা আত্নীয় বাড়ি আছে নলগোড়া কোন দিন বেড়তে নিলে না। ফজর ব্যাপারী বলে চল দাদা ভাই আমার বন্ধুর বাড়ি আছে সামনে সেখানে বেড়াতে যাব। সখিনা বলে বেশ ভালোই হয় ঘরে বসে বসে কেমন যেন সব কিছু আর ভালো লাগে না। বেড়াতে গেলে ভালো হবে তুমি চুপ করবা মেয়ে দিন দিন সেয়ানা হচ্ছে সে দিকে কোন খেয়াল আছে। বিভিন্ন জন দিন রাত কত কথা বলে বেড়ায় মেয়ের শাদি হলে বলতে পরবে না। মানুষের বাড়িতে বেশি বেড়ানো ভালো না। আমাদের ভালো অনেকেই দেখতে পারে না সেটা বুঝেতে হবে। বিভিন্ন কথার ছলে গাড়ি চলছে। নলগোড়া আসার পরে তাদের গাড়ি থেমেছে পাশই মেলা হচ্ছে। বলে চলো মেলা হতে ঘুরে আসি আমরা। ভ্যান ছেড়ে দিয়ে কিছুটা পথ হাটতেই কানাই  সামনে এসে বলে। ব্যাপারী  সাব স্বপরিবারে কোথায় গেছিলেন। এ পথে কি মনে করে বলে কাজে গেছিলাম কানাই। চলেন সামনেই আমার বাড়ি বেড়াতে আসেন। শরিফা সখিনা মেলায় ঘোড়া ঘুড়ি করছে তাদের কিছু জিনিস পছন্দ কয়েছে বাড়ির জন্য। কানাই সাথে থেকে দেখে শুনে কিনে দিয় জিনিস গুলো নিজের বাসায় ফিরে আসে। নরেশ ও নিতাই  জমির রাস্তা ধরে হাটছে রাত হয়েছে বেশ জোছনা রাত। শিরাজের কি খবর কিছু জানো নাতো কেন কি হয়েছে। তখনি দেখে এক দল লোক কালো মুখোশ পরে রাস্তার অন্য প্রান্ত দিয়ে এদিকেই আসছে। নরেশ কথা বলতে যাবে নিতাই তার মুখ চেপে ধরে বনের আড়ালে লুকিয়ে যায়। কারা সেটা দেখা গেলো না কি হচ্ছে আমাদের সাথে। বলতে পার নদীর সমস্যা ডাঙ্গায় সমস্যা জীবন জুড়ে হাজারো সমস্যা বিরাজমান। অনেটা পথ আসার পরে ময়নার হাটে এসে তারা থেমে যায়। আর পা চলে না চলো একটু জিরিয়ে নেই।  যতিন, গোকুল, নগেন সবাই আছে সোনাতলি ময়নারহাটে। নরেশ ও নিতাই দেখে অনেক আছে তাদের সাথের আজ অনেক দিন পরে ময়নার হাটের মন্দিরে। মায়ে নামে পূজা হবে বেশ আয়োজন হয়েছে। সারা রাত কিত্তন আরো বড় অনুষ্ঠান আছে। সকলেই এক দুই করে মন্দিরের ভিতরে বাহিরে আসন দখল করছে। ওরা মনে মনে নিরাঞ্জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। নিতাই আসার পথে তার সাথে যে ঘটেনাটি ঘটে সেটা কাউকে বলেনি। মধ্য রাতে ঠাকুর আসে মন্দিরে তখন কেবল মাত্র একটা আসর শেষ হয়েছে। আলেপ খাঁ ফজরের নামাজ শেষ করে নদীর পার দিয়ে হাঁটছে চারি দিকে হালকা অন্ধকার। ভোরের আলো তখন কেবল ফুটতে শুরু করেছে। পূব গগনে আলোর রশ্নি হালকা হালকা দেখা যাচ্ছে। এটা কি এত লম্বা হালকা ধূসর ও কালো রংয়ের এত দিন এ পথে হাটেন কোন দিন কিছু তার দৃষ্টিগোচর হয়নি। একটু কাছে হতে দেখার বাসনা হতে সামনে এগিয়ে যায় তখনি দেখে দুচোখ হতে আগুনের মত কি বেরিয়ে আসে। সেটা দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান নদীর ঘাটে। এদিকে হাট বার বিভিন্ন জায়গা হতে মালামাল সহ কত লোক ঘাটে আসছে নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে। সানি নামাজ শেষে সব সময় দাদার সাথে চা মুড়ি খায়। প্রতি দিনের মত আজকেও তার জন্য চা নিয়ে গিয়ে দেখে সেখানে তিনি নেই। বাড়ির সব জায়গায় তন্য তন্য করে খুঁজে কোথাও না পেয়ে বাবাকে নিয়ে নদীর ঘাটের দিকে পা বাড়ায়। তখনি ছিদাম দৌড়ে এসে খবর দেয় তার বাবা নদীর ঘাটে পড়ে আছে। দ্রুত ধরা ধরি করে বাড়িতে নিয়ে আসে কিন্তু কোন পরিবর্তন না দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা চলছে কোন উন্নিতি হচ্ছে না। সকালে সকলে ফিরে আসে মযনার হাট হতে। অনীক দোকান হতে ফিরছে পথেই ছিদামের সাথে দেখা। বলে কি খবর কাকু বলে ভোলো তোমার সাথে একটু রকার ছিলো তা বলো না কি বলবে। শোন তুমি আমার পরিবারের অবস্হা সবি জানো। ঠাকুর বাজার হতে কালাচান এসেছিলো রোকাইয়াকে দেখতে তার শাদির জন্য। আমরা একটু খবরা খবর নিতে চাই এই কথা। শোন কালাচানরা আমাদের আত্নীয় হয়। তোমাকেতো বলাই হয়নি সেদিন তোমাদের বাড়ি হতে বেড় হয়ে। ওরা বাড়িতে যাবার জন্য ভ্যান খুঁজছিলো পরে আমার সাথে দেখা। কালাচান আমাকে একদিন নদীতে বাঁচিয়েছিলো তার পরিবারকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই। পরে দেখি আমার দাদী ও কালাচানের চাচী এক সাথে লেখা পড়া করেছে একই স্কুলে তারা সই। আমাদের বাড়িতে দুদিন বেড়িয়ে গেছে পরিবারকে আমার খারাপ মনে হয়নি। আচ্ছা ঠিক আছে রোকাইয়াতো আমার বোন আমি সব খবর নিয়ে তোমাকে খুব দ্রুত জানিয়ে দিব। আমি তাদের কাছ হতে হপ্তাহ খানেক সময় নিয়েছি এর মধ্যে জানাতে হবে। কাকে বলবো খবর নিতে পরে মনে পড়ে মানিকের কথা। বিকেলেই মিন্টুকে সাথে নিয়ে দুই বন্ধু দ্বিচক্র জানে চেপে বাহাদুর পুর যায়। সেখানে কাজ শেষ করে মানিককে সব কথা বুঝিয়ে বলে। মানিক বলে এটা কোন কাজ হলো এতো আমার বাহতের খেল। তুমি বাড়ি যাও কালকেই বাজারে কথা হবে। মিন্টু বলে চল একটু পাঁচ্চর যাব ওখানে সন্ধ্যায় মেলা হবে ।বেশি সময় বাকি নেই ঘুরে দেখে যাই। বিকালে পড়া শেষ করে আগেই চলে আসে বলে চল মেলায় যাই। ওরাও মেলায় আসে। সারা মেলা ঘুড়ে ফিরে তেমন কিছুই পছন্দ হয়নি বলে চল ফিরে যাই। অনিতা বের হয়েছে মিন্টুও বের হলে অনীক কোথায় বলে না ওকে নিয়ে পারি না। যেখানে যায় জিক্কার আঠার মত লেগে থাকে। অদিতি অন্যমনস্ক হয়ে বের হবে অনীককে টানতে টানতে এদিকে নিয়ে আসে। তখনি অদিতির সাথে ধাক্কা লগে। সাপের মত ফোস করে বলে এদের কপালে কি চোখ নাই। অনীক ঘুরে তাকিয়ে দেখে অদিতিকে তার পিছোনেই অনিতা আসে কিরে এখনেও ঝগড়া করছিস তুই। মিন্টু বলে কিরে অনিতা এখানে কি করিস ওতোর কি হয়। অনিতা বলে আমার বান্ধবী তোর সাথের ছেলেটা কেরে আমার বন্ধু অনীক। হয়েছে চল বাড়ি ফেরা লাগবে।আজকে যাইরে পরে কথা হবে। অদিতি যাবার বেলায় বার বার অনীকের দিকে তাকায় মনে মনে ভাবে ওর সাথে কেন আমার বিভিন্ন জায়গায় দেখা হয়। ছেলেটাকি আমার জীবনের সুখ শান্তি সব কেড়ে নিবে। সাত/পাাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ফিরে। মানিক এসে কালাচানের পরিবারও তার সম্পর্কে সব জানায় বলে আমিও বাড়ি ফিরবো একটু বসো দোকানটা বন্ধ করি। বাতেন বলে বাজান চলো আমরা একবার নদীতে হারিয়ে যাওয়া জমি গুলার খবর নেই। শুনছি নদীতে এইবার বড় চর জাগছে হিজল দিঘির গাঁয়ে/ বাবনা তলায় মাঝির হাট ও নলগোড়া। দাদার বসত ভিটা নদীর পেটে তুমি অল্প একটু জায়গা নিছো মাজাহারুল ভাইয়ের কাছ থিকা। আচ্ছা ঠিক আছে কাল একবার মাজাহারুলের কাছে যাবানে সকালে। মানিক খবর নিয়ে আসে বলে ভাই ছেলে মাশআল্লাহ সোনার টুকরা পরিবারে কোন ঝামেলা নেই এখানে শাদি দিলে সুখেই থাকবো রোকাইয়া। আবুল বাবার সাথে রাস্তায় দোকোনে আসে তখনি তারা শুনতে পায় অনীক কার যেন নিকার কথা বলছে। একটু এগিয়ে গিয়ে বলে কি খবর বাবা ভালো আছো। অনীক বুঝতে পারে তাকেই বলছে কথাটা বলে চাচা জান বসেন। আপনার সাথে জরুরী কথাটা সেরে নেই। মানিক পুনরায় ছিদামকে সব বলে এটাও বলে শাদির পরে কালাচান নিজেই ছোট কইরা ব্যবসা করবো। তোমরা যখন বলছো তাহলে আমি মেয়ের শাদি নিশ্চিন্তে দিতে পারি। আমি পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের আসতে বলে দিব। মাস খানেকের মধ্যেই রোকাইয়ার শাদি হয়ে যায়। মাজাহারুরল দোকানে যাবে বাসা হতে বেড়িয়েছে মাত্র তখনি বাতেন ও তার বাবা আসে তার কাছে। বাতেনকে দেখে মাজাহারুল বলে বলে চাচা কেমন আছেন। জি ভালো বাবা তোমার সাথে একটু কথা ছিলো জি বলেন। শুনলাম নদীতে চর জাগছে দেখি আমাদের কোন জমি উঠছে নাকি। আজতো সময় নাই বাতেন ভাই তুমি সময় করে একবার দোকোনে এসো। আমিও শুনছি নদীর বুকে চর জাগছে এটা নিয়ে লোকজন বেশ দৌড় ঝাপ করছে। আমি নোকুলকে আসতে বলছি দাগ নম্বর মিলিয়ে নিলেই হবে। অনেক দিন পরে অনীক স্কুলে গেছে অদিতি আসছে এখন ওদের স্কুল পাশা পাশি হয়ে গেছে। স্যারের কাছে পড়া বুঝে নিয়ে অদিতি বাসার জন্য পা বাড়ায়। অনীক একটু আগেই বের হয়েছে বাবা তাকে আগে যেতে বলেছে। জমি নিয়ে কাদের সাথে বসবে। কিছুটা পথ আসতেই বেশ বৃষ্টি শুরু হলো অদিতি বলে আজকে একা বৃষ্টিই সঙ্গী হবে আরেকটু এগিয়ে আসে। একচালা টিনের ঘর দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেক লোক ছোট একটা চায়ের দোকান। মেয়ে মানুষ এখানেও বেশি সময় থাকার অবস্থা নেই। বের হলো তখনি অনীকের সাথে আবার দেখা। সে দেখেও না দেখার ভান করে সমনে এগোতে থাকে। চারি দিকে অন্ধকার নেমে আসছে কিছুই দেখা যায় না। কি হবে এখন বিদ্যুৎ চমকানোর বিকট শব্দে অদিতি পথ ভুল করে অন্য দিকে নদীর ধারে চলে যাচ্ছে। সেটা দেখে অনীক তার হাত ধরে টেনে তুলে। অদিতি চিৎকার করলে অনীক বলে আমি অনীক ভয় পাবার কিছু নেই। আমার বিপদে আপনি বার বার কেন আসেন বলনেতো? বিধাতা হয়তো এটাই লিখে রেখেছেন। আমি খুব লজ্জিত ও দুঃখিত আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। আপনার কোন দোষ নেই ধরায় কিছু মানুষের জন্ম হয় খারাপ কিছু পাওয়ার জন্য। আমাকে ক্ষমা করা যায় না? সেকি কথা আপনিতো কোন অপরাধ করেন নাই ক্ষমার প্রশ্ন আসে কোথা হতে। এখনও রাগটা পুষে রেখেছেন। নাতো  তাহলে নাম ধরে বলুন। তার জন্য অধিকার লাগে আচ্ছা তাই  ঠিক আছে দিলাম এবার ডাকুন।ঠিক আছে বন্ধুতো হতে পারি সেটা পারি আজ হতে আমরা বন্ধু। বৃষ্টি কমলে চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার ওমা আমি বাড়ি যাব কি করে। সেটাইতো যে ভাবে চারিদিকে আঁধারে ডুবেছে এসেছে দিনের আলো হারিয়ে গেছে। অনীক বাধ্য হয়ে বললো চলুন সামনের দিকে পা বাড়াই সেতো যাব। চিনতে পারছেন এই জায়গাটা সোনাই মুড়িব বিল সামনে। সব দেখি মনে আছে হুম মনে রাখতে হয়ে ভুলতে নেই। আচ্ছা আমার সব কথাই মনে আছে আছেতো তখনি একটি সাপ। অদিতির পায়ের কাছ দিয়ে ফোঁস করে উঠে। সে ভয় পেয়ে অনীকের বুকে নিজেকে লুকায়। ঠিক আছেনতো কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো ভিজে শরীর ঠাণ্ডা লাগছে বেশ। অদিতি তার বুকে পড়াতে অন্য রকম একটা শিহরন অনুভূত হলো। এমন লাগছে কেন কখনও এমনটা হয়নি। উঠো এইতো ভালো ছেলে তুমি বলতে এত সময় নিলে হয় সামনে চলো। একটু আসতেই বাড়ির দরজা দেখা যায়। অনীক বলে আমি আসি তাকি করে হয় ভিতরে চলো অন্তত  ছাতা নিয়ে যাও না লাগবে না। ভিজেই গেছি বৃষ্টি কমেছে শুধু বইগুলো রক্ষা হলো না। জোছনা জামাইকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসে। জাহানা বেগম মেয়ে জামাইকে দেখে বেজায় খুশি অনেক দিন পরে এসেছে। শরৎ বাজারে গিয়ে মাংস আনে বাড়িতে খোয়ারের মুরগি জবাই করা হয়। ওদের উছিলায় আজ ভালো মন্দ খাবে সকলে। দুপুরের খাবার শেষে আকলিমা বলে জামাইকে নিয়ে বিন্নার খেতে গিয়ে দেখ। তোদের জন্য নতুন করে কুশল লাগাইছে। নদীর তাজা মাছ আনছে এইবার কয়দিন থাইক্কা যাবি বুঝলিরে মা। কহের জোসনাকে পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের কোন জালাতন করে না। জোসনার সাথে তার খুব ভাব মনের সকল কথা তাকে বলে। দুদিন পার হয়ে গেলো তারা বাড়িতে ফেরেনি। মাতবর হাট হতে ভাবীর জন্য নতুন কিছু জিনিস কিনে আনছে কহের। সারা বাড়ি ঘুরে কোথাও জোসনাকে না পেয়ে হনুফা খাতুনকে বলছে। বাড়ির বউ কত দিন বাহিরে থাকে সেদিকে কারো খেয়াল আছে। কি হলো এত তোল পাড় কেন করছিস বলি তোমারা কি করো সারাদিন। আমি বিকালেই যাব তাদের আনতে। রতন বোনকে নিয়ে গঞ্জ হতে বাড়ি ফিরছে হিজল দীঘির গাঁয়ে এসে অপেক্ষা করছে। মাঝির জন্য সকালে বের হয়েছে এখন বিকেল শেষ প্রান্তে। কহের একই স্থানে বসে আছে। সকলে একই নৌকায় কিছুটা আসার পরে নৌকা আর সামনের দিকে চলছে না। কি হলো দেখার জন্য মাঝি জলের দিকে তাকাতেই দেখে তার নৌকা একটা টিলার সাথে বাঁধা আছে। সবাই বলে কি হলে যাও না কেন?সে নিজেও বুঝতে পারছে না কি হতে কি হলো। বসেন দেখছি বলতেই স্বজোরে কিসের ধাক্কায় উল্টে গেলো সকলে। পানির মধ্যে পড়ে আল্লাহকে ডাকছে বলছে তুমি বিনে মহা বিপদ হতে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। হালিমা শাড়ি পরা থাকায় তার জন্য সাঁতার কাটা বেশ কঠিন। রতন কোথায় গেলো। সকলের কান্নায় যেন আকাশ বাতাস সব ভাড়ি হয়ে উঠছে। কহের অনেকটা কষ্ট করে কিছুটা কিনারায় আসে রতন দেখে হালিমার দিকে একটি কুমির তেড়ে আসছে। বুবু সরে যাও বলে চিৎকার করলে কহের দেখতে পায় হালিমাকে। তাকে বাঁচাতে আবার পানিতে ঝাপ দেয়। পাশ দিয়ে কিছু ডিঙ্গি যাচ্ছে একটি দাঁড়িয়ে রতনকে তুলে নেয় আরও অনেকে সেখানে আশ্রয় পায়। অনেকটা কষ্ট করে হালিমাকে নিয়ে তীরে ফিরে। তাদের পিছু তাড়া করে কুমিরাও এদিকে আসে। উপায় অন্ত না দেখে ডিঙ্গির মাঝিরা কাতরা ও টোটা দিয়ে তাকে হত্যা করে। জীবনের বড় বাঁচা বেঁচে গেছি দুজনে হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। রতন এসে তাদের সাথে যোগ দেয় পরে জানতে চায় কোথায় যাবে বলে বন্দ খোলা। সেতো বেশ দূরের পথ কি করে যাবেন এতটা পথ দেখি কি করা যায়। তাছাড়া এই ভিজা কাপড়ে বেশি ক্ষণ থাকলে অসুখ করবে সেটা বুঝলাম কিছুই করার নেই। হালিমা বলে আপনার কাছে আমি সারাজীবনের জন্য ঋণী হয়ে গেলাম। এই  উপকারের কথা কোন দিন ভুলবো না। মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসবে এটাই  মানবতা। আজকে অপনার বিপদে আমি এগিয়ে এসেছি কালকে আমার বিপদে অন্য জন আসবে। আপনি চুপ করুনতো আপনার সাথে কথায় পারা যাবে না। শুধু বক বক করে যাবেন না নাম পরিচয় কিছু দিবেন। ঠিক বলেছেন দেখ দেখি কাণ্ড আমি কহের বাবার নাম দবির মাতবর নলগেোড়া থাকি। এদিকে কোথায় এসেছিলেন আমার ভাই আর ভাবীকে আনতে। কোথায়? মাঝির হাট আপনার পরিচয় রতন বলে ওবুবু বলো না।  কিছু পরে দেখা যাবে তোমার পিছু পিছু আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। নারে লোকটা আমার এত বড় উপকার করলো সে অন্তত আমার কোন ক্ষতি করবে না। সেই বিশ্বাস আমার আছে। হালিমা খাতুন বাবার নাম মেহের আলী কোথায় যাব সেটা শুনেছেন অবশ্যই।  আমি একটা কথা বলি চলুন মাঝির হাট ওখান হতে পরিচিত গাড়ি নৈাকা একটা ব্যবস্থা করা যাবে। এই মাঝ পথে থেকে কি? করবেন একটা ভ্যান নিয়ে ওরা মাঝির হাটে আসে। রতন বলে এই বাড়িতে আপনার ভাই বিয়া করছে হুম কেন না এটাতো আমার খালার বাড়ি। কহের বলে তাহলে ভালই  হবে আত্মীয়ের কাছেই এসেছে। জাহানা বেগম বলে কিরে জোসনা কই গেলি দেখতো উঠানে কারা আইলো। কারা আবার আইবো আমি দেখতাছি দাদী দরজায় এসে দেখে। কহের রতন ও হালিমা এক সাথে ভিজা কাপুড়ে দাড়িয়ে আছে। বলে তুমি কোন খারাপ খবর আছে না নাই। মুনুষতো আমারে ভুইলা গেছে থাক থাক অহন আর জিগান লাগবো না।  মেলায় গিয়া কিছু জিনিস আনছিলাম। বুঝতে পারছে বেশ অভিমান হয়েছে দেবরের। আচ্ছা তুমি বস তোরা কোথা হতে এই ভিজা শরীর কেন আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। তোদের সাথে ওর দেখা হইলো কেমন করে তোরা কি আগে থিকা দুজন দুজকে চিনস নাকি। কহের বলে একটু থাম তুমি যে ভাবে কথা বলছো দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। আগে শুকনা কাপড় দাও পরে সব বলছি। সব কথা শুনে বলে যাক ভালই করেছিস ভাই আমার তানাহলে কি হতো আজ আল্লাহ জানে। শোন বুবু আজকেই বাড়িতে ফিরতে হবে মা বাবা চিন্তায় আছে এতক্ষণে কি করছে আল্লাহ মালুম। আচ্ছা আমি তারা কাকাকে বলে দিচ্ছি সেও যাবে বন্দর খোলা তার নৌকায় তোদের নিয়ে দিয়ে আসবে। সমস্যার সমাধান হলো চলো তাহলে রওনা হওয়া যাক। কহেরকে বলে এখন আত্মীয় হলেন আশি আসবেন বেড়াতে ঠিক আছে ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ। রতনদের বিদায় দিয়ে কহেরকে নিয়ে জোসনা বসেছে কেন এত অভিমান তোর। আমি কি একটু বেড়াতেও পারবো না কহের মর্মাহত হয়। বুঝতে পারে তার ভাবী বেশ বদলে গেছে। তবে কি কারণ সেটা জানতে হবে ভাইটা কোথায় আসর পর হতে তাকে দেখলাম না। বিষয়টি অন্য রকম লাগছে তার কাছে কাউকে কিছু না বলে সে তায়ে তায়ে ভাইকে খুঁজতে থাকে। রাতে খাবার পটিতে জোছনা কথাটি তোলে। বলে মা জান আমাগো কহের মস্ত একখান কাম করছে। আজ আকলিমা কি করছেরে মা। শোন বলছি হোসনে আরা খালার মেয়ে হালিমা আর রতন গঞ্জের থিকা ফেরার পথে নদীতে পড়ে যায়। কহের তার নিজের জীবন খান বাজি রাইখা তাদের বাঁচায়। এটাতো বড় সোয়াবের কাম ভালো কাজ করছো বাজান জীবন বাঁচানো ফরজ কাজ। তখনি শরৎ ঘরে ঠুকে বলে মা মেয়েতে মিলে কার জীবন বাঁচাও শুনি। আরে পুত্রা বাবাজি যে কেমন আছে জি ভালো আছি আপনি ভালোতো। জহের ঘরের পিছনে ছিলো তুমি একাই যে জামাই কই? তারে আনো নাই। সেতো আমার সাথেই আসলো দেখে হয়তো বৈঠক খানায় গেছে। তুমি খাবার বন্ধ করে আছো কেন বাবা খাও। কহেরের বুক হতে যেন বিশাল একটা পাথর নেমে গেলো ভাইকে দেখতে পেয়ে। সকালেই তারা নলগোড়া ফিরে আসে। জমির ব্যাপারী দোকোনে বসে আছে তার বাবার শরীরটা বেশ খারাপ হাসপাতালে ভর্তি আছে। মনটা বেশ খারাপ ডাক্তার সব ধরনের চিকিৎসা করছে কোন উন্নতির লক্ষণ নেই। হেদায়েতকে সব সময়ের জন্য হাসপাতালে রাখে হয়েছে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে। রাতে ফিরার পথে হাসপাতালে যাবে ভাবছে লালুকে বলছে দোকান বন্ধ কর। পিছনে দেখে সখিনা ও শরিফা দাঁড়িয়ে আছে কি ব্যাপার তোমরা এই সময়ে দোকানে। সখিনা বলে তোমার দোকান বন্ধ হয়েছে হুম চলো কোথায় হাসপাতালে কেন? হেদায়েত যেতে বলেছে। কার কাছে ওর পরিচিত একজনের কাছে যত দ্রুত পারি যেন আমরা পৌঁছাই। লালু হারামজাদা তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি নিয়ে চল। হাসপাতালে গিয়ে দেখে হেদায়েত কাঁদছে বাহিরে কিরে কি? হয়েছে কিছু বলছিস না কেন। সিস্টার এসে বলে এই লাশের লোক আছে নাকি আমরা ডুম ঘরে রেখে দিতে বলবো। জমীরের তখন বুঝতে বাকি নেই তার বাবা পৃথিবীর কাছ হতে বিদায় নিয়েছে। বাবার কাছে গিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে। জমির কে বলবে সেও বাবা হয়েছে স্ত্রী সন্তান আছে যেন বাচ্চা হয়েছে। বাবাকে হারিয়ে শোকে অনেকটা অন্য মানুষে পরিণত সে কেমন অচেনা লাগে তাকে দেখে। অনিতা বেশ কিছু দিন হতে পড়তে আসে না স্কুলেও দেখতে না পেয়ে ভাবছে। আজ বাসায় ফেরার পথে তার বাড়িতে যাবে। অনীকটার হাব ভাব কেমন জানি সন্দেহ জনক লাগছে। শেফালি খাতুন বেশ আদড় করে ওকে প্রথম দিকে মনে করেছে হয়তো মন খারাপ নয়তো শরীর খারাপ কিছু বলেনি। তিনি বেশ লক্ষ করছেন ছেলের দিকে দিন দিন কেমন অন্য মানুষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন দাদীর কাছে যায় না সে আজ দাদী সোবার সময় ইচ্ছা কৃত একটু কাশে। বলে দেখতো ফুফু দাদীর কি হলো? শেফালি বলে বাপ তুই একটু দেখ আমার হাতে অনেক কাজ। ভাবীকে কাজে একটু সাহায্য করছি। কালকে আামাদের বাড়িতে মেহমান আসবে। তোমার বিকেলে কোথাও যাওয়া চলবে না বাড়িতে থাকবে বলে দিলাম। দুষ্টামির ছলে বলে কে আসবেগো আমার নতুন ফুফা নাকি। শেফালি বলে দাড়া তুই বেশ দুষ্ট হয়েছিস না। বলেই ভৌ দৌড় দিয়ে দাদীর ঘরে গিয়ে দরজায় খিল লাগিয়ে দেয়। অদিতি অনিতার বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখে সে বাড়িতে নেই। লিয়াকত বলে মা দেখোতো কে যেন অনিতারে খোঁজ করছে। মোমেনা খাতুন বলে তুমি কে মা তোমাকেতো চিলনেত পারলাম না। অদিতি বলে আন্টি আমি অনিতার বান্ধবী ও বেশ কিছু দিন হলো পড়তে আসে না। বলেই খবর নিতে এলাম কোন সমস্যা হলো নাকি। তুমি বাহিরে কেন? বসো ও পাশের বাড়িতে গেছে এখনি চলে আসবে। আমি অন্য দিন আসবো ওকে বলবেন অদিতি আসছিলো তাহলেই হবে। দাদী কি? বিষয় আজ কালতো অন্য জনার পিছনে ঘুরা হয়। আমাকে বাদ দিয়ে ব্যপারটা কি ছোট সাহেব। আমেনা বেগমের মুখে এই কথা শুনে অনীকতো তাজ্জব বনে গেলো। তুমি কি বলছো দাদী কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। বুঝিয়ে দিচ্ছি আয় আমার কাছে বস বলে কান ধরে টেনে তার পাশে বসালো। কিরে দাদু তুই যে আমার খবর নেওয়া বাদ দিলি সেটা না হয় বুঝলাম। আমার জায়গায় নতুন কাকে বসালি সেটতো বললি না। শোন আমি সব জানি তুমি কারো প্রেমে হাবু ডুবো খাচ্ছ। এখন বলোতো তার পরিচয় দেখি কে সে। না দাদী তেমন কিছু না তবে কি? আমি সব জানতে পারবো। ভাই যাই করিস আমাকে সাথে রাখিস তোর লাভ হবে ক্ষতি হবে না। মিন্টু যা বদ হয়েছে না কাজের বেলায় কখনও পাওয়া যাবে না ওকে। কবে হতে বলছি হিজল দীঘির গাঁয়ে যাব ওখানে নতুন চর জেগেছে। একটা আমরা দখল করবো সেই দিকে কোন খেয়াল নেই। একবার হাতের কাছে পেলে হয়। তখন দেখাবো তোকে কেমন মজা। নিতাই নিরাঞ্জন ও গোকুল মন্দিরের ঘাটে বসে আছে।  দুপুর গড়িয়ে বিকালের শুরুর দিক। অনেক দিন হতেই ভাবছে সকলের মঙ্গলের জন্য কিছু করবে। কি ভাবে ও কোন সময়ে করবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। কহের একটা কাজে বন্দর খোলা গেছে দুপুরেই  ফিরার কথা। কাজ শেষ হয়নি এখন বিকাল হয়ে গেছে। এমন একটা জায়গায় আছে আশে পাশে ভালো কোন খাবারও নেই। ক্ষুদায় পেটের নাড়ি ভুরি ছোড়ার উপক্রম। মাঝিকে বলছে দেখোতো সামনে কোন খাবার পাও নাকি। তালেব বলে ওখানে একটা বাড়ি দেখা যায় চলেন গিয়ে দেখি আচ্ছা চলো। ওরা হালিমাদের বাড়ির কাছে এসে নৌকা বাঁধে তালেব বলে বাড়িতে কেউ আছেন। তখন হালিমা ও রতন এক সাথে বের হয়ে আসে। বলে কাকে চান দেখুন আমরা কিছু খাবারের সন্ধান করছি। আশে পাশে কোন খাবারের দোকান পাইনি। নদীর বেশ ভিতরের দিকে বলে জন বসতিও কম। আমাদের একটু সাহায্য করতে পারেন। রতন বলে না পারবো না অন্য দিকে দেখুন কহের তালেবকে বলে কিরে কিছু হলো। মুখটি এদিকে ঘুরাতেই হালিমার চোখে চোখ পরে যায়। রতন বলে বুবু দেখছো তোমাকে বলছিলাম বাড়ির ঠিকানা না দিতে। দেখলে ঠিক এসে হাজির হয়েছে আমাদের বাড়িতে। হালিমা বলে যাও ভাই ওনাকে ভিতরে এসে বসতে বলো। মেহের আলী ফিরেছে দেখে কহের ও তালেব দুজনে বারান্দায় বসে আছে। মেয়েটার জীবনে বুদ্ধি হবে না আমরা বাহিরে অপরিচিত লোককে কেন বাড়ির ভিতরে নিয়ে এলো কারা চলোতো দেখি। হোসনে আরা বলে রতন তোমার বুবুকে ঘরে যেতে বলো বাকিটা আমরা দেখছি। আপনাদের পরিচয় জি আমরা নলগোড়া থাকি এখানে কি? করছেন। তালেব বলে দেখুন আমরা বিপদেপরে আপনাদের এখানে এসেছি একটু পরেই চলে যাব। তখন রতন বলে মা বাবা একটু শোন আমার একটা কথা শোন তার পরে না হয় বেশি কথা বলো। রতন তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটোনা খুলে বলে। হালিমা বেড়িয়ে আসে কহের বলে চলরে তালেব বাড়ি যাই। মেহের আলী বলে বসো বাবা বসো আমরা তোমাদের কাউকে চিনি না। তাছাড়া সেয়েনা মেয়ে একা বাড়িতে গ্রামের লোকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলবে তাই জাতনে চাইলাম। ঠিক আছে সব বুঝতে পেরেছি এখন যেতে দিন। তোমরা আমার আত্নীয় তোমাদের না খাইয়েতো যেতে দিতে পারি না। তাছাড়া আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছো সব দিক হতে আমরা তোমার কাছে ঋণী। মেয়েটা সব সময় বোকাই রয়ে গেলো। এসব কথা আগে বললে কি এত সব ঝামেলা হয়। ঈশার ওয়াক্তে কহের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। হাজী সাহেবর কাছে সব ঘটোনা খুলে বলে মনির খাঁ কি করা যায় সমাধান চায়। গ্রামের মানুষের দুঃখের কথা এত দিন বলে এসেছে। আজ নিজের বাবা দুই মাস হাসপাতালে পরে আছে। কোন কিছুতেই  কিছু করতে পারছে না। আমি একটা তদবির করে দিচ্ছি দেখুন কি হয়। সমস্যা অন্য কোথাও সেটা নজরে রাখবেন। সিরাজ পাগলা নদীর পাশে বসে আছে কত দিন পরে আসলো কেউ বলতে পারবে না। কেমন যেন গম্ভীর একটা ভাব এমনটাতো আগে ছিলো না। দলে দলে লোক তার কাছে আসা শুরু করলো।আমাদের একটা ব্যবস্হা করুন নয়তো সকলে মারা পরবো। এরি মধ্যে খবর এলো আলেপ খাঁ হাসপাতালে মারা গেছে। তার মৃত্যুর রহস্য কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে ডাক্তার বলেছেন। ঠাকুর নিতাই যতিন গোকুল শ্যামাদের বাড়িতে পূজায় বসেছে। পূজা শেষে অনেকে অনেক সমস্যার সমাধানের জন্য আসে। সকলকে ব্যবস্হা পত্র দিয়ে শেষ করবে এমন সময় সিরাজ ও ঠাকুর সেখান হতে উঠে যায় তাকে দেখতে। নরেশকে বলে যায় বাকি কাজটা শেষ করে দেখা করিস পাগলা। দেখে আলেপকে কিছুতে ধরে ছিলো তার হাতে ও পায়ে কালো দাগ আছে। ঠাকুরকে বলে কত দিন জ্বলাবি তোরা বংশ ধরে শেষ করে দিতে বলি। এত ধৈর্য হারা হলে কি চলে কালকে এমুখো হইয়ো কথা আছে। অনীক একাই ভাবছে হিজল দিঘির গাঁয়ে যাবে কালকে দুপুরের পরে। মোহন দুপুরে অনেকের বাড়িতে এসে হাজির। তাকে নিয়ে তাদের পরিচত নতুন দ্বীপ দেখাতে যাবে। অদিতি অনিতাকে অনীক সম্পর্কে  কিছু কথা বলেছে সেও বলেছে।  মিন্টুকে তার পছন্দ যদিও এটা পরিবারের কেউ জানে না। বলে চল কালকে আমাদের হাফ স্কুল হুম স্কুল শেষে একটু নৌকায় করে ঘুড়ে বেড়াবো। কথাটা মন্দ বলিসনি অনেক দিন ঘরে বন্দি সময়ও হয় না। তেমন একটা ঠিক আছে তাহলে ঐ কথাই রইলো কালকে আমরা বেড়াবো। হিজল তলীর গাঁ হয়ে বাবনা তলায় এসে শেষ হবে। ওখান হতে আমরা বাসায় ফিরে যাবো। দুই বন্ধুর কথা শেষে বন্ধুকে বিদায় দিয়ে অনীক বলে কত দিন হয় অদিতির সাথে দেখা হয় না। কেমন একটা শূন্যতা অনুভব হয় আগে এমনটা হয়নি। সারা দিন রাত তাকে ভাবী দাদীর কাছে ধরা পরতে পরতে বেঁচে গেছি। যাক কালকেতো বেড়াবো সব মনের ভুল নাকি কি সব পাগলের মত ভেবে চলেছি ধ্যাৎ তুরিকা। অনেক  দিন পরে ঠাকুর যতিন নরেশ গোকুল সহ আরো কিছু লোক। পাগলের আস্তানার খোঁজ বের করতে মরিয়া হয়ে উঠে। চেয়ারম্যানকে এটা বুঝতে পারে একার পক্ষে কোন কিছুই করা যাবে না। সকলের সম্লিত চেষ্টায় কিছু করতে হবে। নরেশ বলে এটা দেওয়ের কাজ ছিলো আরো কিছু ছিলো সাথে যেটা বুঝা যায় না। অমর একটা বৈঠক দিয়ে দেখা দরকার আপনে সেই মতে কাজ করেন। পরাণ মাকে বলে গেছে কোন কাজ পেলে বাড়ি ফিরবে নয়তো না। শেফালি অনেক দিন পরে বাড়ি হতে বের হয়ে ভাবছে রিপার কাছে আসবে। ভ্যানে উঠে বসে কিছুটা পথ আসার পর মনে হয় সেতো একা নেই। ঘর সংসার হয়েছে এসব ভাবতে ভাবতে ভ্যান হতে নদীর কিনারা পরে যায়। পরাণ নদীর ঘাটে বসে ভাবছে কি করে তার জীবন চলবে। তখনি দেখে একটা মেয়েকে গড়িয়ে পানিতে পরে যেতে। কাল বিলম্ব না করে তাকে উঠাতে নদীতে ঝাপ দেয়। দুজনে নদীর তীরে উঠতে  প্রাণ পন চষ্টা করে যায়। শেফালিকে উঠাতে সে সহযোগিতা করে তার নিজের পা কিসের সাথে আটকে আছে মনে হয়। কিছু একটা পাটাকে পেচানোর চেষ্টা করছে। সে দোয়া দুরুদ পরতে শুরু করে ও মনেমনে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। নিতাই ও পথে ফিরছে বলে নিতাই দা কিরে পরাণ। আমাকে একটু উপরে তুলো পাটা আটকে যাচ্ছে। তখনি নরেশ এসে হাজির হয় বলে ওখানে থাক আমি দেখছি ।আজ ওদের এক দিন কি আমার একদিন। বলেই সে নদীতে নেমে পরে কি কি মুখে বলে সেটা কেউ শুনতে পায়নি। হাত দিয়ে দেখে চুলের মত বেশ লম্ব গুছা করা। তখন বুঝতে বাকি থাকে না কি ছিলো এখানে। শেফালিকে ভ্যানে করে তার বাড়ির দিকে নিয়ে আস পথে অনীক দেখতে পায়। এসে বলে কি হয়েছে তোমার বলো। পরাণ বলে সব কথা ঠিক আছে চলো বাড়িতে চলো। পরাণ সহ তারা বড়িতে যায়। মাজাহারুল ও আমেনা বেগম শেফালিকেই নিয়ে কথা বলছিলো। অনীক বলে বাবা দাদী জলদি আস ফুফুর বিপদ হয়েছে। অনীকের গলার আওয়াজ পেয়ে তারা বাড়ির বাহিরে আসে। ভিতরে নিয়ে বসতে দেয় পরাণকে কিছু খাবার পাঠায় বৈঠক খানায়। অমেনা বেগমকে সবিতা বলে আপনি যান মা অমি দেখছি কি হয়েছে। মাজাহারুল ও আমেনা বেগম আসে বৈঠক খানায় পরাণের কাছে। সব কিছু জানতে চায় পরাণ সম্নধ্যে সব বলে। সে বাড়ি হতে রাগ করে কাজের সন্ধানে বের হয়েছে সেটা জানতে পেরে বলে কি কাজ করতে পারো তুমি। বলে যে কোন কাজ পেলেই করবো আগেতো কাজ পাই। ঠিক আছে তুমি আমার সাথে বাজারে চলো। দেখি তোমার একটা কাজের ব্যবস্হা করতে পারি নাকি। নিজেদের দোকানটা দেখিয়ে বলে এখানে কাজ করতে পারবে বলে খুব পারবো। আচ্ছা তোমার জামা কাপুড় নিয়ে আসো বাকিটা আমি দেখছি। অনীকের সাথে পরাণের বেশ কথা হয়। সে ভাবে তার সাথে একটু খাতির করে মাঝে মধ্যে অদিতির খবর নিতে পারবে। চলো আমার সাথে কোথায় পাঁচ্চর কেন? আমার বাড়িতে দেখ আসবে ঘুরাও হবে তোমার। বিমল ও রাজন বলে দোস্ত চলে আজকে আমাদের ক্লাবের সাথে পাঁচ্চরের ফুটবল খেলা আছে গরু বজি খেলা। তোমাকে ছাড়া খেলা কেমনে চলে বলে সেটা কি করে হয় তোরা আগে কিছু বলিসনি ক্যান। আমরাই জানছি দুপুরের পরে ভাবলাম তুমি নিজের লোক যাওয়ার সময় তোমায় নিয়া যাব।  চলো এই ভ্যান টান দাওতো। শোন প্যান্ট গেঞ্জি কিছুই আনি নাই কিছু লাগবে না সব আছে। পরাণ বলে চলো ভালই হলো আসার একজন সাথী পাওয়া গেলো। মিন্টু অনিতার বাসায় গিয়েছে আত্নীয়র বাড়ি এক সাথে লোখা পড়া করে ওরা। কালকে বেড়াতে যাবে মোহনিয়ার চরে সেটা বলতেই আসা। অনিতা বলে অদিতিকে সাথে নিলে কেমন হয় বলে মন্দ না। বেশি সময় থাকা যাবে না দুপুরের পরেই চলে আসবো আমরা। ঠিক আছে কালকে সকালে দেখা হবে। হালিমার ভিতরে কেমন উথাল পাতাল করছে। মানুষটার সাথে পরের বার দেখা হলো তেমন কথা হলো না। কিছু বলতে চাইছিলো মনে হয় আমিও ব্যকুল হয়ে ছিলাম। কিছু শুনবো কিছু বলবো সব মাটি করে দিলো বাবা এসে। তোমার কেন? এই সময়ে আসতে হলো। একটু পরে আসলে কি ক্ষতি হতো। মুখটা বেশ ভার করে লাউ তলায় বসে আছে। দেখে মন হয় চাঁদের বুকে গ্রহন লেগেছে। রতন সারা বাড়ি খুঁজে কোথাও তোকে না পেয়ে লাউ তলায় যেয়ে দেখে বুবু বসে আছে। কিরে তোর আবার কি হলো তাকে মনে পরছে বুজি মন খারাপ করে আছো। এতই যদি খারাপ লাগে তখন বাজানের সামনে দাঁড়িয়ে কেন? বললিনা সব কথা। শুনছি জোছনাবু আমাগো বাড়ি আসবো। তখন তারে বলতে পারো তয় আমাকে কিন্তু খাওয়ান লাগবো। নয় আমি বাজানরে সব কথা কইয়া দিমু। পরাণ বাড়ি হতে প্রয়োজনয়ি কাপুড় নিয়ে খেলার মাঠে চলে আসে। অনীক খেলা শেষ করে দেখে মিন্টু ও অনিতা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে। পরাণকে বলে তুমি যাও আমি অসছি। অনীক বেশ বুঝতে পাারে তাদের দুজনার মধ্যে সম্পর্কটা। বলে চলো আমরা এবার বাড়ি যাই। মাঝির হাটের কাছে আসতেই দেখে মোহনকে কিরে তুই এখানে। কোথায় যাবি? যাবতো তোদের ওখানে তোকে পেয়েছি আর যাব না। সাকালে এখানেই থাকিস সবাই এখন হতে তালেব মাঝির নৌকায় করে যাব মোহনিয়ার চরে। মিন্টু বলে এই কথা অনিতা আমার সাথে কালকে যাবে ও বলছিলো অদিতিকে সাথে নিবে। বুঝতেই পারছো নয়তো একা অনিতাকে যেতে দিবে না। কারো কোন সমস্যা? অনীক বলে না কোন সমস্যা নেই। সকল বন্ধু মিলে বেড়ালে ভালো লাগবে সমস্যার কথা কে বলে।আমি তাহলে যাই তোমরা সময় মত চলে এসো। পরাণ পরের দিন এসে মাজাহারুলের সাথে দেখা করে। পারাণকে মাজাহারুল বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে সেটা সে বুঝতেও পারে না। অপিরিচিত লোক বোনকে বিপদ হতে রক্ষা করেছে কথাটি লোক মুখে অনেকে জেনেছে। তার একটা সমাধান করতে চায় সে। স্বাভাব চরিত্র খারাপ না তার সকল পরীক্ষায় পাশ করেছে। বাহির বাড়িতে পরাণকে থাকতে দেয়। শেফালি চুপি চুপি যখনি সময় পায় তার সাথে দেখা করে এটা সেটা দেয়। বিষয়টি বেশ কয়েকবার আমেনা বেগমের চোখে পরে তিনি ওকে বেশ বকা ঝকা করেন। গত রাতে সবিতার কাছে হাতে নাতে ধরা খায় শেফালি। তিনি কিছু না বলে শুধু বলেন ভিতরে যাও বাকিটা আমি দেখছি। শেফালি সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। পরাণের অবস্থা আরো খারাপ খুব চিন্তায় আছে কি? হবে তাদের। আমার যা হবার হউক আল্লাহ তুমি তাকে রক্ষা করো সকল বিপদ হতে। জোসনা বেশ কিছু দিন হতে দেখছে কহের কেমন জানি বদলে গেছে। আগের মত তার সাথে কথা বলে না দুষ্টামি করে না গাছাড়া গাছাড়া ভাব। প্রয়োজন হলে কিছু কথা বলে নয়তো সার দিন কি যেন ভাবে। খাবার দাবারের প্রতিও তেমন খেয়াল নেই তার। মনে মনে ভাবে কিছু বলবে কি সব ভেবে আবার বলে না। মোমেনা খাতুন অনিতাকে বলে দেখো তুমি দিন দিন বড় হচ্ছো সামনে তোমাকে বিয়ে শাদি দিতে হবে এটা মাথায় রেখো। এমন কিছু করো না তোমার বাবা যে নেই সেটা নিয়ে মানুষ কথা বলতে পারে। তুমি কোন চিন্তা করো না কথাটা সব সময় মনে থাকে আমার। নৌকা বেশ গতি নিয়ে চলছে হিজল দীঘির গাঁয়ের মোহানয়ার চরের দিকে। শান্ত নদীর নির্মল বায়ুতে মন প্রাণ সব জুড়িয়ে যায়। বক বালি হাসের মাতা মাতি,বিভিন্ন মাঝি দের ছুটে চলার দৃশ্য। গয়না বোঝাই করে হরেক রকম জিনিস নিয়ে তাদের ছুটে চলা। বেশ কিছুটা পথ আসার পরে ওরা থামে কেইলার টেকে। নদীর মাঝে যেতে যেতে বিভিন্ন দৃশ্যপট অবলোকন করে সকলে। ঘন্টাখানেক সময় পার হয়ে তারা এসে পৌঁছে গন্তব্যে। জায়গাটা সকলের বেশ পছন্দ হয় অনীক একা একা হাঁটছে। অদিতি দেখে ওরা বন্ধুরা মিলে এদিক সেদিক ঘোড়া ঘুড়ি করে আনন্দ করে সময়টা কাটায়। অদিতি এসে বলে কি তোমার কি মন খারাপ বলে নাতো কেমন মন মরা হয়ে আছো। ঐ দিকটায় চলো একটু দেখে আসি সেখানে গিয়ে খুঁজে পায় সুন্দর একটি ছোট বসতি। এর চারি ধারে পানি এক ধারে কাশ বন অন্য দিকে ভেন্না পাতার ছাউনি। আরো কাছে গিয়ে দেখে বিভিন্ন রকমের ফুল ফুটেছে। এমনি সময় যদি প্রিয়া থাকে কাছে। হারিয়েছে যাব দূর বহু দূর তার হিয়ার মাঝে। ফিরবো না একাকী জীবনের বালুকা বেলায় একলা নীড়ে। অদিতি কিছু বলতে চায় অনীককে অনীকও কিছু বলতে চায় কেন জানি পারছে না। এমন সময় কি চুপটি করে থাকা যায়। অনিতা,মারিয়া, মোহন,মিন্টু, এসে বলে বন্ধুরা কেউ যদি গান কবিতা শোনাতে বেশ ভালো কাটতো সময়টা। সকলে এসে ধরে অনীককে বন্ধু তুমি অন্তত একটা কিছু শোনাও। অনীক কবিতা পড়া শুরু করে বলে শোন তাহলে।
বর্ষার প্রলেপ হাওয়া বয়ে যায় দূর বনে
মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ে মোর সোনা অঙ্গে
ঝর্ণার মত কল কল প্রতিধ্বনি শুনিও কানে
প্রভাতের স্নিগ্ধ সৌরভে ফুটেছে গোলাপ।
শিশির ভেজা ঘাসের উপর পড়ে চন্দ্রের
ঝিকিমিকি আলো প্রিয়তমা ভালোবাসো
আজ বড় বেশি মনে পড়ে সেই তোমাকে
যাকে না দেখলে দিন টাই শুভ হতো না।
যার আঁখিতে আঁখি না রাখলে অন্ধকার
যার মুখের বাক্য শোনার জন্য অস্থির
আমার কর্ণ কুহর সেই তুমি কোথায়?
আমি জানি পাগলের মত ভালোবাসতে।
তোমার উদ্যম প্রেমের দ্যুতি আমায়
প্রতিনিয়ত ভিতর বাহির অস্তিত্বে
মজ্জায় মিশে আজও আমাকে ভাবায়
হৃদয়ে বাজে তোমার কথা সাথী বারে বার।
অনীক ও মিন্টু দুজনে অনিতা ও অদিতি কে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যায়। অনিতা বিদায় দিলেও অদিতি কিছু বলতে চায় অনীককে। অনিতা ছোট এক খণ্ড কাগজ দিয়ে বলে বাড়িতে গিয়ে দেখবে। তোমার কবিতা অনেক সুন্দর ছিলো আজ আসি। জীবনের খুব সুন্দর একটা সময় অতিবাহিত করে সকলে বাড়িতে ফিরে। লিয়াকত ছোট একটা দোকান করে কোন রকমে চলে তার। দিন দিন বোনের খরচ বেড়ে চলেছে সংসারটাও গুছানো লাগবে। কত জায়গা হতে অনিতার জন্য শাদির ঘর আসে কিন্তু বাড়ির অবস্থা দেখে সেটা আর সামনে বাড়ে না। বড় ভাই একটা চিন্তাতো আছে। মায়ের বয়স হয়েছে তার শরীরে এবার বিশ্রাম নেবার পালা তবুও দিন রাত খেটে মরে। নজরুল এক নম্বরের গোঁয়ার ছোট বেলাতে তার ভাই মারা যাবার পরে।  পারিবারিক ভাবে মোমেনা খাতুনের সাথে পুনরায় বিবাহ হলেও সে সংসারের প্রতি বেশ উদাসীন। মোমেনা খাতুন তার কাছে কোন দিন কখনও কোন অভিযোগ করেনি। মনে হলে তাদের জন্য কিছু করেছে নয়তো না। কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো যে কখনও মন হতে আমাকে মেনে নেয়নি। থাক না আমার সন্তানরাই আমার সব তারা আমার দুঃখ বুঝলেই হবে। চাইনা কারো করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকতে। আর মাত্র কিছু দিন আমিও পাড়ি জমাবো ওপারে। সে ভুলে গেছে অতীতের কথা আমার কাছেই সব আবদার ছিলো বেশি। নিজের অজান্তেই  দু নয়নের জ্বল গড়িয়ে বুক ভেসে পরছে। অনিতা বসে আছে লিয়াকত এসে ডাকে মা অনিতা বলে কি হলো আবার বলতো। শোন জালটা দাও এখানে কিছু আনাছ আছে কিছু মাছ ধরে আনি আজকের দিনটাকে চালিয়ে দিব। মাজাহারুল সব কথা শুনে কাউকে কিছু না বলে নিজেই অনেকটা সময় নিয়ে ভাবছে কি করা উত্তম হবে। ঘরের বিষয় নিজের বোন মান ইজ্জত নিজেদের যাবে। গ্রামের লোক একবার জানতে পারলে কোন দিন ওকে শাদি দিতে পারবো না। কোন উপায় অন্ত না দেখে হাজী সাহেবের কাছে পরামর্শ চায়। তিনি বলেন এটার একটা সমাধান করার আগে তুমি ছেলে ও মেয়ের মতামত নিয়ে দেখো। তারা কি একে অপরকেও শাদি করতে রাজি হয় নাকি। রাজি হলে হবে উত্তম সমাধান নয়তো অন্য পথ বাতলে দিচ্ছি। অন্য কারো সাথে এটা নিয়ে আলোচনা না করাই উত্তম হবে। বাড়িতে ফিরে মাজাহারুল তার বোনকে রুমে আসতে বলে। রাতের খাবার শেষ করে শেফালি আসে। বলে দাদা কিছু বলবে আমাকে তোমার ভাবি একটা কথা আমাকে বলেছে। সেটার বিষয়ে জানতে চাই তুমি কি পরাণকে নিকা করতে রাজি আছো। তোমার ভাবি যা বলেছে সত্য বলেছে। শেফালি বলে তোমরা যেটা ভালো মনে করো তাই করো। আমার তাকে শাদি করতে কোন আপত্তি নেই। দোকান হতে ফেরার পথে পরাণকে বলে তুমি কালকে আমার সাথে একটু দেখা করবে জরুরী দরকার আছে। আরো জানতে চান পরিবারে কে কে আছে পরাণ বলে দুই বোন মা বাবা। বাবা কি করে তার ছোট একটা দোকান আছে সদর পুরে কিছু ফসলী জমি ও দুইটা পুকুর আছে। এ হতে অর্ধ বৎসরের খরচ চলে আমাদের। দোকান ও অন্য দিক মিলিয়ে চলে সংসার। তোমার সংসার হলে চলবে কি করে। জি আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দিবেন কাজ করে খাবো কোন কাজই ছোট নয়। পরিবারে কে কি করে দিবে সেটা কোন সমস্যা নয় আমি কি করতে পার সেটাই বড় বিষয়। আমার অবস্থান দেখে কেউ শাদি করতে রাজি হলে তাকেই জীবন সাথী হিসাবে গ্রহণ করবো। সব কথা শোনার পরে মাজাহারুল বলে তোমার বাবাকে আমার সাথে দেখা করতে বলো। জি ভাইয়া আমি বাবার সাথে রাগ করে তার বাড়ি ছেড়েছি। নিজের বাড়ি না হলে তার কাছে কোন দিন যাব না। তোমার চাকরি কেমন চলছে জি আলহামদুলিল্লাহ। সামনে হয়তো কিছু টাকা বাড়তি ময়না পরবে। এক দিন ছুটি নিয়ে পরাণ মায়ের কাছে আসে। বোনরাও দূর হতে ভাইকে দেখতে পেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বুক ভাসায়। তোরাব আলী খুব অসুস্থ ময়না সে কথা জানায় পরাণকে। রহিম চাচা বলে কিরে বেটা বাড়ি আইছো বুড়া বাপটারে না দেখে চলে যাবে। বলেন আমি কি কোন দিন সবাইকে পর করে দূরে রাখছি। বাজান তার বাড়ি হতে আমারে বের করে দিছে। জোর করে কেমনে থাকি। তোরাব ডাকে জহুরা তোর ভাই  কি আজও বাড়ি আসে নাই। চাচায় বলে যাও তুমি বাপের কাছে যাও। বাপ মায়ে রাগ কইরা অনেক কথা কয় তার লাগি তাগরে রাইখা দূরে থাকতে হয় না। ময়না কিছু ফল কেটে নিয়ে যায় বাবার কাছে কে আনছে কেডা আইছে বাড়িতে। ময়না বলে ভাই জান আইছে বাগানে রহিম চাচার সাথে কথা কয় তারতো বাড়িতে আসা বারণ। যা তোরা সব নিয়া যা খামু না কিছু। আমার কাউরে চাই না। রহিম এসে বলে মিয়া ভাই কেমন আছেন আর থাকা মরণ হলে ভালো হইত। ছিঃ  ছিঃ কি কন এমন কথা কেন দেখ না পোলা গেছে মেয়েরা যার যার পথে। আমার বাঁচা মরা সব সমান কথা। কেউ কোথায় যায় নাই আপনে ডাকেন সবাই ফিইরা আসবে। হাসিনা কই গেলা কন কি কইবেন তোমার পোলা আইছে না আমার পোলা আপনার কি কন। নীরব হয়ে থাকে রহিম ডাকে বাবা পরাণ আস বাবার কাছে আস। সে রাগের মাথায় দুইটা কথা কইছে তার জন্য রাগ করে বাড়ি ঘর ছেড়ে নাকি কোথায় থাক। তোমার বাপের বয়স হইছে তারে এখন বিশ্রাম দাও তুমি সব দেখা শুনা করো। বাবার কাছে আসে কিছুই বলতে পারছে না মুখে। নয়নেয় জ্বলে শুধু বক্ষই ভাসে। পরের দিন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। মাজাহারুল খবর পায় পরাণ বাবাকে নিয়ে এসছে। সে লোক পাঠায় তাদেরকে বাড়িতে আসার জন্য। শেফালি কাপড় নিয়ে পুকুরে যাবে দাদার সাথে মেহমান আসতে দেখে ভিতরে গিয়ে সবিতাকে বলে। দেখ ভাবি দাদা কারে নিয়ে বাড়িতে আসছে। পিছনে পরাণ আসছে সেটা দেখার সময় তার হয়নি। নাস্তা খাওয়া শেষে মাজাহারুল তাকে বলেন দেখেন চাচা জি পরাণ ছোট মানুষ। একটা ভুল করে ফেলেছে ওকে ক্ষমা করে দিবেন। আমার দোকানেই চাকরি করতো এখন পাশের দোকানে করে সেটাও আমাদের দোকান। আপনি মুরুব্বি মানুষ আপনাকে বাদ দিয়ে কোন কাজ করতে চাই না। পরাণ ও শেফালির মধ্যে ঘটে যাওয়া সকল কথা খুলে বলেন। তাদের পরিবারের ইচ্ছা জানিয়ে তার পরিবারের মতামত জানতে চায়। বলে বাবারে আমি বাড়িতে যাই তোমার চাচী আছে সবার সাথে কথা বলে তোমাদের খু্ব শিগ্রই জানিয়ে দিবে। আজ কিন্তু আপনাকে থাকতে হবে বলে সেটা কি করে হয় বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ নেই। ইশারতে শেফালিকে সালাম করতে বলে। তিনি কিছু বুঝে উঠার আগেই তার পায়ে হাত দিয়ে শেফালি সালাম করে। মা তোমাকে কি দিয়ে আশিরবাদ করি বলোত নাও এটা রাখ। এখন তাহলে আশি  আমেনা বেগম বলেন । ভাই সাহেব আবার আসবেন আল্লাহ হাফেজ। হালিমাকে তার বুবু খবর দিয়েছে তার শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যেতে। দুলা ভাই নাকি এটা নিয়ে জোসনার সাথে রেগেছে। তার একমাত্র শালির কথা বলেনি শ্বাশুরি আছে সেটাও বলেনি বলে। জমির কি কাগজের জন্য তহসিল অফিসে এসে ছিলো। হালিমা ও রতন মেহের আলী হঠাৎ করে গঞ্জে গেছে মেম্বর ও তারা দিচ্ছে তাদের আসতে হয়। এখানে কাজ সারতে সন্ধ্যা হয়ে যায় জহেরের সাথে বাজারে দেখা। কি বড় কুটুম যে অবেলাতে এখানে কেন? তহসিল অফিসের কাজে আসছিলাম। এখন বাড়িতে ফিরবো সেটা হচ্ছে না আমার সাথে বাড়ি চলো। লোকমানকে পাঠাবো বন্দর খোলা কাঠের জন্য ও খবর দিবে বাসায় চিন্তার কারণ নেই। জোর করেই তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে জহের। রাস্তায় নেমেছে দবির বলে এখনি চলো তোমার চাচার অবস্থা ভালো না। কহের মাঠ হতে ফিরছে কহেরকে দেখে বলে তুমি মেহমান নিয়ে বাড়ি যাও। জহের কিছু টাকা দেয় বাবাকে না দেখিয়ে। বলে গিয়ে দেখ কি আছে বাড়িতে নয়তো কিছু বাজার নিস। কহের মনে মনে খুশিই হয় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। চলেন যাওয়া যাক তোমরা যাও কোন চিন্তা করো না আমি আছি। জোসনা হালিমা ও রতনকে দেখে অবাক! এই রাতে তোরা কোন বিপদ আপদ হয়নি কেমনি আসলি। রতন বলে দুলা ভাই বাজার হতে ধরে আনলো সে কোথায়। তার চাচার বাড়িতে গেছে। তোরা কার সাথে আইছো কহের বলে কেন? তোমার জামাই ছাড়া দুনিয়াতে আর মানুষ নাই। বলে ওরে তাইতো বলি কান ধরতে যাবে হনুফা বেগম বলে কার সাথে কথা কউ বউ ঘরে আস। মা খেতে দাও বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। কহের বলে মা বাড়িতে মেহমান আইছে সে কথা আগে বলবি না শুধু নিজির চিন্তা করিস। বউকে বল সবাইরে নিয়া ঘরে আসতে। রাতে পরিবারের সকলে বসেছে হাসিনাকে তোরাব আলী সব কথাই বলে। হসিনা বলে দেখো তুমি যেটা ভাল মনে করো। ময়না ও জহুরা বলে বাজান আমরা আগে না জানিয়ে তাদের বাড়িতে যাব। আমাদের কেমন আদর যত্ন করে সেটার সাথে পরিবারের লোকগুলি কেমন সেটা দেখবো। কথাটা মন্দ না তাহলে রহিম চাচাকে আমরা সাথে নিয়ে যাব কালকে নলগোড়া। পরাণ দোকানে বসে আছে  দুপুরের পরে রহমান। ময়না ও জহুরাকে নিয়ে হাজির হয় মাজাহারুলদের বাসার কাছে। অনীক বাসার সামনে তার কাছে জানতে চায় মাজাহারুল সাহেবদের বাড়ি কোনটা। আপনারা কোথা হতে এসেছেন। বলে পাঁচ্চর হতে আসনে আমার সাথে আসেন। বৈঠক খানায় বসতে দিয়ে বাড়িতে এসে বলে সব কথা। তাদের কিছু নাস্তা পানি দাও তোমার বাবা চলে আসার সময় হয়েছে। কানাই গোকুল নিতাই ঠাকুর বসে আছে গ্রাম বাসিরাও এসেছে। হাজী সাহেব সফরে যাবেন দেখতে দেখতে অনেক লোক আসছে। ঠাকুর বলে কত দিন লাগবে এবার বলে সেটা বলতে পারছি না। সব দেখে রেখো সামনে মহা বিপদ আসতে চলেছে। সকলে বিদায় নিলো নিতাই বেশ কিছুটা পথ আসে গয়নার পাশা পাশি। সেদিন মন্দির হতে ফেরার পথে নদীর পারে কিসের আলামত ঠিক বুঝতে পারছে না। মা কি কিছুর ইঙ্গিত করছে ভাবতেই দেখে মাঝির হাটে। রাতে কহের বাহিরে বাঁশি নিয়ে বের হয় ছোট বেলার অভ্যাস। বাঁশ ও হিজল গাছের মাঝামাঝি স্হান চারি দিকটা ছোট গাছে ঘেরা। তার বসার জন্য বেশ বাহির হতে কেউ  দেখতে পায় না তাকে সে সকলকে দেখে। হালিমার স্কুলে পড়ার সময় হতে বাঁশির সুরের প্রতি দুর্বলতা আছে। রাতে কে সুর তুলছে সেটা দেখার জন্য ঘর হতে বাহিরে আসে। ভয় সংশয় নিয়ে পা বাড়ায় কহেরর পানে। কোন মানুষ না দেখে ভিতরের দিকে যায়। ছায়া দেখে কহের দেখার চেষ্টা করে কে আসছে। হালিমা ফিরে যেতে পা বাড়ালে তার হাত ধরে। কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তাকিয়ে দেখে কহের। কিছুটা সময় নীরব থেকে অমন করে কেন বাজাও। ঘরে থাকা দায় বলে তা নাহলে কি মনের মানুষকে। চিনে নিতে এতটা  সময় পার হয়। ছাড় ছাড় যাবো আমি ঘরে নয়তো কলঙ্কের দাগ লাগিবে মোর গায়ে। সখি প্রেমের কালিমা না মাখিলে গায়ে তবে কি প্রেম খাঁটি হয়। হিয়ার মাঝে লাগে বড় ভয় সখা যদি দূরে চলে যায়। জন্ম জন্মান্তরের তরে তোমার হয়েছি দিলাম আজ এ কথা। ভুল করেও কভু প্রাণেতে দিয়ো না ব্যথা। সহস্র জনম যদি তোমাকে পাই সে অনেক কম জীবনে মরেনে তুমিই আপন জন। চলো ফেরা যাক কেউ দেখে নিলে সর্বনাশ হবে। দুদিন বেড়িয়ে কহেরকে বলে তাদের বন্দর খোলা দিয়ে আসতে। বাড়িতে আসার পথে তাদের বেশ কথা হয় রতন সব শুনছে কিছু বলে না। মাঝ পথে নেমে কিছু খাবার খেয়ে পথ চলছে। রতন বলে তোমরা কি সারা দুনিয়ার কথা নিয়ে বসেছে। বাড়িতে এসে বাবাকে বলে বুবুকে তার সাথে শাদি দিতে। কেন এই কথা বললা মনে হয় বুবুকে তার মনে ধরেছে। তাদের দিয়েই চলে আসতে চায় কহের হালিমা বলে সেটা কি করে হয়। কালকে যাবেন না বাড়িতে কাজ আছে থাক এক রাতে কিছু হবে না। না মনে হয় শেষ রক্ষা করতে পারলাম না। গ্রাম বাসির মধ্যে বেশ হাউ মাউ কান্না শুনতে পায় সকলে। তিন/ চার দনি হয় গ্রামের পুরুষ মানুষ গুলি ঘরে ফিরছে না। হাটের জন্য গবাদি পশু নিয়ে অনেকে হাটে গিয়ে পৌঁছায়নি। বেশ ঝড় ঝাপটা ও নদীর ভিতরে তর্জন গর্জন চলছে। এত বছর ধরে এরুপে কেউ দেখেনি ময়নাকে। নিতাই বুঝতে পারে তাকে কিছু করতে হবে। সকলের মঙ্গলের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে হবে। গোকুল,নগেন,ঠাকুর, কানাই, মন্দিরের মাঝে শুয়ে আছে। সারা রাত বেশ খাটনি গেছে তাদের। সকালে পূজা শেষে নিতাই নিজের বাড়ি হতে বের হয়। সামনে কিছু লোকপরে তাদের বলে তোমরা বাড়িতেই থেকো। নদীর পারে কাউকে আসতে দিবে না বলে সে হন হন করে চলে যায়। নদীর উপর দিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে যায়। দশ হাত গড়িয়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এক দুই করে মন্দিরে তাদের কাছে কথাটি চলে আসে। সিরাজ নদীর ধারে যাবে ঠাকুর ডাকে দাঁড়াও চলো এক সাথে যাই। দুজনে গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। অন্যত্র নিয়ে যায় পাগল বলে ঠাকুর কিছু করো আমি বাকি কাজটা সেরে আসি। ধীরে ধীরে নদীর রঙ রুপ পরিবর্তন হতে থাকে। মারিয়া নদীর ঘাটে বসে বসে মাছ তুলছে রীতা কোথা হতে এসে বসে। কিরে তোর কিছু হইছে নাকি বলে নাগো চাচী। তোরে একটা কথা কই মোহনরে দেখছো। সকাল হতে এক বারও চোখে পরে নাই। তোর সাথে কথা হয় বলতো আমারে কি সমস্যা ওর। চাচী তোমার ছেলে বড় হইছে তারে বিয়া করাও দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে। কথাটা মন্দ কস নাই দেখি মেয়ে কোথায় পাই। মোহন ইশারা দেয় সেটা সে বুঝতে পেরে বলে তুমি বাড়ি যাও আমি ওদিকে যাব। বলে নৌকায় উঠে মোহনিয়ার চরে যায়। শিহাব বাবাকে বলে কিছু টাকা দাও ঠাকুর বাজার যাব কেন কি কাজ দরকার আছে দাওতো। দিনে দিনে নদী শুকিয়ে যায় অনেকটাই মাঝে মাঝে যে ক্ষতি সাধিত হয়। সেটা সকলের দৃষ্টিতে আসে না যার যায় তার কিছুই থাকে না। রাশিদা বসে আছে বারান্দায় জহের ও কহের গিয়ে জানতে চায় চাচাজান কোথায় বলে গঞ্জে। আসলে বলো বাজান জাইতে কইছে চরে জমি উঠছে কি দরকার আছে। হালিমা ওদের দেখে বলে কি খবর বাজানরা কি মনে করে আসলা সব কথা বলে। তাকেও চারচার সাথে বাড়িতে যেতে বলে। মাজাহারুলদের বাড়ি হতে ফিরে পরাণের পরিবার অলোচনা করছে। রহিম চাচা বলে সব দিকে মিলিয়ে ভালো হবে। তোমাদের চেয়ে উচু ঘর তাদের। আচার ব্যবহার ভালো এই সম্নধ্য হাত ছাড়া কইরো না। অগ্রাহায়ন মাসের দশ তারিখে পরাণের সাথে শেফালির শাদি হয়ে যায়। পারাণ মানুষের দোকোনে কাজ করে ব্যবসা শিখে নিজে ছোট করে দোকান দিছে। মাজাহারুল তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল নেয়নি। পরে শেফালির কাছে কিছু টাকা দিয়ে দেয়। শেফালি অনেক পরে ব্যবসাটা বড় করার জন্য তাকে টাকাটা লোন হিসাবে দেয়। পরাণ বলে আমি দুই বছর পরে ফেরত দিব। আবুল একটা ছোট কাজ করছে বাজারে। বাবার আয়ে সংসার চলে না লেখা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে করে। অনীক অদিতির লেখা পরে সারাক্ষণ ভাবতে থাকে কি লিখে। তাকে দিবে মাথায় কিছুই আসেছে না। হেদায়েত লালু দুজনে মিলে একটা ভ্যান কিনেছে সারা দিন রাত পরিশ্রম করে। তাদের আরেকটা গাড়ি করতে চায়।একজন সকাল হতে বিকাল অন্য জন বিকাল হতে সকাল এভাবে চলে তাদের গাড়ি চালানোর কাজ। হারুনটা বেশ কাজের ছেলে তাকে সব সময় পাশে রাখে হুজুরের বাড়িতে। অনেকে বলা বলি করছে হারুনের শাদি দেবার দরকার এটা হুজুরকে বলতে হবে কে বলবে। বিকালে বিশ্রামালয়ে বসে আছেন অনেকে আসছে হাজী সাহবের কাছে। তোরাব অনেকটা সময় বসে আছে তার সাথে কথা বলার জন্য। সবাই চলে গেলে বলে হুজুর একটা কথা ছিলো বলো কি বিষয়ে। আপনি জানেন আমার অবস্হা মেয়ে দুইটার  শাদির কিছু করতে পারলাম না। শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বয়স হয়েছে কখন কি হয়ে যায় আল্লাহ জানেন। তাই বেশ পেরেশানিতে আছি বেশ চিন্তর বিষয় মেয়েরা নামাজ রোজা করেতো। জি করে কোরান পরে জি তাও পরে। কেমন পাত্র চাও জি মেয়েরা সুখে থাকলে আমি খুশি। ডাল ভাত মোটা কাপড় পরে জীবন কাটাইতে পারলে হয়। আচ্ছা আমার হারুনকেতো চিন জি তারে চিনি তার শাদির জন্য মেয়ের দরকার। তাকে তোমার পরিবারের পছন্দ হলে আমার সাথে পরে কথা বলো জি ঠিক আছে। আমি পড়াতে যাব অসি এখন। রিতা বেগম এবার একটা বিষয় খেয়াল করছন বেশ মনোযোগ দিয়ে। অকিল বাড়িতে এসে বলে বাহুজ বাড়ি আছোনি কে আকিল ভাই আছিলাম। আস ভিতরে আসো গাছের পেয়ারা ও পেঁপে সামনে দেয় বল ভাই  কি মনে করে আসলা। কি কমু মেয়ার শাদি দিতে চাই তুমিতো জান একমাত্র মেয়ে। চোখের আড়াল করতে চাই না। তুমি ভালো কথা বলছে ভাই ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদের শাদি দেওয়া আমাগো দায়িত্ব হয়ে ঘাড়ে পরে। ছেলেটার কথা কি কমু সারা দিন কই কই  থাকে কি করে নাওয়া খাওযার ঠিক নাই ভাই। তোমারে একটা কথা কই এর আগেও দুই/এক জন আমারে কইছে শুনি নাই। আমি ওগো দুই জনকে দেখছি ঘাটে বসে কথা বলতে তুমি ছোট থেকে দুইটারে মানুষ করছো। ওর মা মরার পরে তোমার কাছেই মানুষ একবার শুনে দেখতো ওদের কাছে। তুমি ভালো কথা বলছো এটাতো ভেবে দেখেনি আমি। চিন্তা করো না তুমি কাজে যাও। কথা বলে দেখি কি করা যায় গ্রামের লোক ভালো না কত রকমের কথা হয়। কি হলোরে  কিসের শোরগল হচ্ছে বেড়িয়ে দেখে মোহন নদীতে মারিয়াকে কুমিরে তাড়া করছে। মোহন বলে তুমি চিন্তা করো না আমি এসে গেছি কোন ভয় নেই। অকিল কাতরা নিয়ে পানিতে নেমে পরে মোহনের হাতে দা ছিলো সেটা দিয়ে কোপ দেয় পানি লাল হতে থাকে। রিতা বিলাপ সুরে কান্না করছে বাপরে তুই কই গেলি আমার কেউ রইলো না। কিছু সময় পরে তারা উপরে উঠে আসে দেখে ছোট দুটি কুমির ভেসে উঠে। তার পাশেই ঝাক বেঁধে কুমিরের দল এসেছে। হঠাৎ করে খুব কালো বিশ্রিরি দেও উঠে আসে। সেটা দেখে অনেকে ভয়ে ভিতরে চলে যায়। সেদিনের বিপদ দেখে কাজে জায়নি অকিল। কিরনী বলে বাজান তোমার কিছু হয় নাই। বুবু তুমি কথা কও ও বুবু বলে কান্না করছে কিরনী। মোহনের হাতে হালকা কামড়ের দাগ আছে তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে। রক্ত ঝরছে ব্যথায় হাতটা অবস হয়ে আসছে। মারিয়ার জ্ঞান ফিরছে না দেখে দুজনেকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যায়। নগেন ও ঠাকুর বাড়ি ফিরছে পথে দেখে জানতে চায় কি হয়েছে। জয়তুন বলে বড় বিপদ ঘটে গেছে ঠাকুর এখন কথা বলার সয় নেই পরে বলবো। নগেনকে তাদের সাথে যেতে বলে ঠাকুর হিজল দিঘির ঘাটে আসে তখনি লোক মুখে সব কথা শুনতে পায়। গঞ্জে এসেছে মিন্টু বাড়ি ফেরার পথে হাসপাতালের সামনে লোকোর ভীড় দেখে এগিয়ে যায়। দেখে মোহনকে পরে সব কথা জানতে পারে। বাড়ি ফেরার পথে দেখে অনীক দোকানে বসে আছে তাকে ডেকে সব কথা বলে। অনীক বলে বিকালে ফুফুকে দেখতে যাব তুই  যাবি নাকি পাঁচ্চর। ঠিক আছে যাওয়ার সময় ডাকিস আমাকে। কহের মন মরা হয়ে বসে আছে জোসনা দেখে বেশ কিছু দিনে হতেই ভাবছে কি হলো ওর। কতটা উচ্ছল দুরন্ত ছিলোি এমন শান্ত হয়ে গেছে কেন। বিকালে নিজের ঘরে বসে আছে জোসনা কহের বাহির থেকে এসে তার ঘরে যায়। বলে আসবো ভাবি আস আমার একটা কাজ করে দিতে হবে তোমাকে। সেটা বুঝলাম কি কাজ শুনি আগে। তার হাত দুটি ধরে বলে বলো করে দিবে আচ্ছা বলবাতো কি করতে হবে। সে হালিমার কথা বলে তাকে শাদি করেতে চায় তার ব্যবস্হা করতে বলে। বুঝলাম আসল ব্যপার তাহলে এটা। আমার বোনের জন্য তুমি দেওয়না হয়েছো। আমাকে কি দিবে তোমার কাজ করে দিলে সেটা আগে বলো। তুমি কি চাও বলো আচ্ছা সেটা পরে বলি দেখি তোমাদের জন্য কি করতে পারি। রাতে খেতে বসেছে সকলে তখন জোসনা তার শ্বাশুরিকে বলে। বাবা একটা কথা বলতে চাই কোন বিষয়ে কহেরকে নিয়ে। কি কথা কও ওর বিয়া শাদি দিতে হয় দিনতো  চলে যাচ্ছে। এই কথা সেটা তোমরা দেখো এত বাড় বাড়ি। মা আমি দুই জন মানুষ বাড়িটা ফাঁকা লাগে।  কিছু দিন হতে কেমন জানি হয়ে গেছে কহেরটা আচ্ছা রায়বার শামীমকে আসতে বলবো আমি। জহেরকে রাতে বিছানায় শুয়ে বলে দেখ একটা কথা বলার ছিলো। বলো কহের হালিমাকে পছন্দ করে সেও তাকে চায়। বিষয়টা নিয়ে তুমি একটু কথা বলে দেখ। এই জন্য ভাই আমার দূরে দূরে থাকে। সাহিদা বায়না ধরেছে বাপের বাড়ি যাবে উজান পুর। ছোট বোন লিলিমা মা বাপের জন্য মনটা বেশ কাঁদে। শিহাব বড় হয়ে গেছে কতটুক দেখেছে তোবারক। নরেশ বাদাম তলীর হাটে বসে আছে। সিহাব মাকে নিয়ে উজান তলী দিয়ে যাচ্ছে শামীম পরে আসবে। ঠায় দুপুর বেলা জহেরের সাথে কথা বলতে আসছে শামীম। কি ব্যাপার কি মনে করে খবর দিলা বড় মিয়া। চাচা একটা দরকার ছিলো আপনাকে বন্দর খোলা যেতে হবে। মেহের আলীর কন্যা হালিমা খাতুনের শাদির পয়গাম নিয়ে। পাত্র কে আমার ভাই কহের তাদের সাথে ওর শাদির কথা বলে দেখেন তারা কি বলে। বাড়ির আমি দেখছি বাবা মাকে রাজি করানো লাগবে। তাকে দুই টাকা দেয় খুশি হয়ে বন্দর খোলো গিয়ে সব কথা বলে শীমীম। হোসনে আরা বেগম কে রতন বলে মা লোকটা কি বলে গেলো। বাবা তোমার বুবুর শাদির জন্য ছেলে দেখেছে সেটা বলতে এসেছে। নাস্তা পানি খেয়ে বিদায় হয় শামীম ফেরার পথে লিয়াকতের সাথে কথা হয়। কেমন আছো কাহা আছি ভালো তোমরা কেমন আছ। কইওনারে কাহা গরীব হয়ে জন্ম নেওয়া টাই আজন্ম পাপ জগতে। কেন এমন কথা কও কেন? দেখে গরীব বলে বোন টার শাদি দিতে পারি নাই। বুঝিরে বাপ দেখি তেমন পাত্রের খবর পেলে জানাবো। কালু দুইটা চাদে নাও কাহা চা খাও একখান বিস্কুট দাও। ভর দুপুরে শিহাবকে নিয়ে বাবার বাড়িতে উঠে সাহিদ। লিলিমা বোনকে দেখে বলে মা দেখ বুবু আর শিহাব আসছে। যেই গরম পরছে বোরখাটা খুলে বস জামিলা কয় জামাই  কই। লিলিমা বলে ভাই সাব আসে নাই বুবু। তোবারক বাজার নিয়ে ফিরে ডাকছে কইরে লিলিমা কই গেলি। সাহিদা বেড়িয়ে এসে বলে বাজান তুমি ভালো আছো আরে মায় যে কখন আইলা। নানায় দেহি বড় হয়ে গেছে কিরে মা জামাই আসে নাই। লিলিমা বলে বুবুকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে। শিহাব বলে নাতো ভুলি নাই চলতো তোমার ফুল বাগান দেখে আসি। কিছু আমা পারে সেটাতে ভর্তা বানায় গরমে বেশ লাগছে খেতে। জমীর ব্যাপারীর ব্যাবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না বাবা মরার পর হতে। সে ব্যবসায় মনোযোগি হতে পারছে না। শরিফা বড় হয়েছে তার একটা ভালো শাদি দিতে হবে ভালো ঘর দেখেই দিতে হবে। আমার একমাত্র সন্তান এমন একটা ছেলে দরকার। যে আমার পরিবারে থাকে আমার সব কিছুতো  তার হবে। বিভিন্ন চিন্তায় বেশ অস্থির হয়ে পরে সে। হেদায়েত কে দেখে মনে হয় কোন বড় ঘরের সন্তান কিন্তু কাজ দেখে কেমন জানি সন্দেহ হয়। বন্ধুরা মিলে অনেক দিন পরে বের হয়েছে মাছ ধরবে। শ্যামা গোবিন্দ বিমল নেমেছে হরিনার বিলে। অনীক ও মিন্টু মোহনকে দেখে ফিরছে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে তার সেরে উঠতে। অনিতা ও অদিতি বসে আছে বেশ কিছু দিন হতে লক্ষ করছে। অদিতির মাঝে কিসের একটা শূন্যতা বিরাজ করছে। কিরে কি সমস্যা তোর কি হয়েছে বল আমাকে। তুই অনীককে নিয়ে ভাবছিস তাই না। ঠিক ধরেছিস বলতো কি করি আমি তাকে কিছু বলেছিস। হুম চিরকুট দিয়ে ছিলাম তার প্রতিউত্তরে কিছুই বলেনি। চল কইলার টেকে যাই এক দিন। এখনতো দিন ছোট তাড়া তাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যায় ও আসলে বলবো যেতে একদিন। তোরাব তার পরিবার নিয়ে বসেছে রাতে খাবার পরে হাজী সাহেবর দেওয়া প্রস্তাবটির কথা বলে সকলের মতামত জনতে চায়। শেফালি বলে বাবা আপনি আগে জহুরার কাছে জানেন এই শাদীতে তার মত আছে নাকি। ছেলের সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর করে দেখেন। ছেলে খারাপ হবে না হাজী সাহেবের হাতের মানুষ খারাপ হবার কারণ নেই। মা তুমি কি কও দেখ বাজান পরে শাদি করমু এখন না। আমার পড়া লেখা শেষ করে নেই সেইটা ঐ বাড়িতেই করতে পারবা। শেফালি বলে ঠিক আছে বাজান ওরে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দেন আমি দেখছি সব। বাতেন ও সদর আলীর মুখের হাসি এবার দেখে কে। তাদের শুটকির দাম বাজারে বেশ ভালো চাহি দাও আছে।  সদর আলী দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে খুশিতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে দাঁড়ি ভিজে গড়িয়ে পরে। বাজান তুমি কান্দ কেন?আল্লাহ আমাগো মুখের দিকে তাকাইবে। এই বার বন্ধকী জমি গুলা ছাড়ামু তোমার ঘরে একটা নতুন চৌকি আর টিন লাগামু। গরুর ঘরটা বড় করে আরো কিছু গরু কিনমু বাজান। বাজার হতে ফেরার পথে কথা বলছে বাপ বেটায়। সোনা তলি ময়নার হাটে আসা মাত্র নৌকা কেমন দুলতে থাকে। তালেব মাঝি শক্ত হাতে নৌকা বায় চল্লিশ বছর পার করছে ময়নার বুকে এমনতো কোন দিন হয় নাই তার সাথে। ভয় পাইয়েন না মিয়া সাবরা বসেন সবাই পাশের ঘাটের দিকে নৌকা ভিড়ায় তলেব। দেখে সেখান হতে দেও উঠছে সবাই দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে। ময়নারে কত কাল আমাগো জীবন নিয়া খেলা করবি। আমিন খাঁ ও মমিন খাঁ সিরাজ পাগলা এই দিকে আসছে। বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পরে সকলে আবার চলছে। পরের সপ্তাহে জহুরা ও শেফালি জায় হাজীসাহেবদের বাড়িতে। দরজায় আসতেই দেখে বাড়ির সমনে অনেক বড় পাকা এতিম খানা।মক্তব খানা, মসজিদ,ও বিশাল সান ধাঁধানো পুকুর। কবির বলে আপনারা কার কাছে যাবেন বলে ভিতরে যাব। দেখেন কোথা হতে আসছেন কার কাছে যাবেন সেটা না জানলে ভিতরে যেতে দিবে না। হারুন এসে দেখে দুজন মহিলার সাথে কবির কথা বলছে। কি সমস্যা ভাই উনারা কি চায়? দেখো হারুন ভাই আমি বাজারে যাব। শেফালি তখন তার কাছে কিছু কথা জানতে চায়। জি বলুন কি জানতে চান আপনারা বৈঠক খানায় বসুন আমি আসছি। জহুরা বলে ভাবি চলেন যেটা দেখতে আসছিলাম সেটা দেখা হয়েছে বাকি কথা বাড়িতে গিয়ে হবে। অনীক ও মিন্টু শেফালীদের বাসায় গিয়ে দেখে তারা নেই পরে বাহাদুর পুর আসে। অনিতা বেশ খুশি তার জন্য মিন্টু উপহার এনেছে কিছু সময় কথা বলার পরে বলে। চলো একদিন কইলার টেক যাই। ঠিক আছে তুমি একা এসেছো না অনীক আছে কই সে। জান অদিতি অনীককে বেশ পছন্দ করে ওর কাছ হতে কোন সারা পায়নি। বিষয়টা জানলাম দেখেছি বেশ নীরব হয়ে গেছে ও কি যেন একটা হারিয়ে ফেলেছে। অনীক বলে কিরে তোদের হলো ফেরা লাগবে বাড়ি। অদিতি রাশিদাকে নিয়ে খালার বাড়ি হতে ফিরছে বলে আপু দেখ কত সুন্দর কাশফুল কিছুটা তুলে দিবে আমাকে। চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে কালকে দিব এখন বাড়ি চল। একটু কাছে আসতেই দেখে ওরা তিন জন কথা বলছে ।অনীককে এখানে আশা করেনি দেখি মেঘ না চাইতে বৃষ্টির জ্বল প্রবাহের অপেক্ষা। রাশিদা বলে তুমি থাক আমি কিছু ফুল তুলে আনছি। কিরে তুই কোথা হতে এলি আসতে বাড়ন সেটা হবে কেন।অনীক জানতে চায় কেমন আছে এটা অপ্রত্যাশিত ছিলো। এক দুই করে কিছু কথা হয় চল ফেরা যাক রাশিদা চলে আসছে। মিন্টু বলে তোমরা আগাও আমি আসছি অদিতিরা দাঁড়িয়ে আছে। আসার পথে অনীক ইশারা করে সেটা বুঝতে পারে না পরে পড়তে এসে জানতে চায় কি বলে ছিলো। তখনি স্যার চলে আসে কথাটি শুনা হয়ে ওঠেনি। শামীম রায়বার আজ কহেরদের বাড়িতে এসেছে। তখন জহের তাকে বন্দর খোলা যেতে বলে সেটা জানায়। দবির মাতবর ও হনুফা বেগমকে সব কথা খুলে বলে শামীম। কহেরর পছন্দের কথাও জানায় তাদের। কহেরের কাছে জানতে চায় সে বলে সব ঠিক আছে। আচ্ছা আমরা চিন্তা ভাবনা করে তোমাকে জানাবো। ধীরে ধীরে মোহন সেরে উঠে পারিবারিক ভাবে তাদের শাদীর ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম দিকে রিতা কিছুটা অমত করেছে পরে ছেলের জীবনের কথা ভেবে মারিয়াকে ছাড়া তার অন্য কাউকে বউ করবে না। বলে ঘর ছাড়া হয়ে যায় মোহন। বন্ধুরা সকলে এসেছে মোহন দের বিয়েতে। আনন্দ ও ফুর্তি করে কাটে অনুষ্ঠান অনীক মিন্টু বলে গেছে দুদিন পরে আসবে। অদিতি বলে অনিতা চল যাওয়া যাক কোথায় যাবি বাড়িতে। পাগল হলি নাকি আমিতো থাকবো পরশু যাব। কি বলিস আমি বলে আসিনি চিন্তা করিস না আমার বাসায় খবর নিলে জানতে পরবে। ফিরিনি বুঝলি আনন্দটা মাটি করতে চাই না। মোহন ওদের নিয়ে ঘুরতে বের হয় মোহনিয়ার চরে অনিতা মারিয়া ওদের নিয়ে সুন্দর জায়গা দেখে কথা বলছে। অনীক অনেক পথ একা ছাঁটছে তার সাথে কেউ নেই একটা গাছের নীচে বসেছে।  ঝিকর গাছের পার ধরে কলমী ও হিজল ফুল ফুটেছে। তার মৌ মৌ গন্ধে মনটা কোথায় হারিয়ে গেছে বলতে পারে না। অদিতি এসে পাশে বসেছে কিছু কথা বলতে চায় তাকে তখনি দেখে এক দল লোক। মুখোশ পরে তাদের পাশ দিয়ে উচ্চ স্বরে চলে যাচ্ছে অদিতি কিছুটা ভয় পেয়েছে। তাদের হাতে অস্ত্র দেখে। অনীক তাকে বুকের কাছে লুকিয়ে নিয়ে চুপ থাকতে বলে। দেখে পিছনে আরো কিছু লোক গরু ছাগল ফসলের বস্তা মাথায় নিয়ে আসছে। বলে ভয় পেয়েছ হুম তোমার বুকে মাথা রেখে সারাটি জীবন সকল ভয়কে জয় করতে চাই।
আমি কি দিয়ে রাখিব তোমারে যতন করে
আমার হিয়ার মাঝে থেকো তুমি এমনি করে
সাক্ষি থেকো আকাশ বাতাস ধরার মাঝে
জীবন জুড়ে আনন্দ সুখ প্রাণেতে বাজে গো
স্বর্গের সুখ চাইনা প্রিয় চাই তোমার সাথী হতে
জীবনে মরণে রেখো মোরে এমনি করে সাথে
শন শন বায়ু বহে মিষ্টি সুরে ডাকে পাখি গুলি
হাতে হাতে রেখে সখা চলো প্রেমের পদ্ম তুলি
পরাবো গলাতে কুসুম কলি ছাড় ছাড় হস্ত যুগল
আঁখি পানে দেখি তোমার বদন খানি কভু না ভুলি
জীবনে মরণে সঙ্গী দুজনে সুরে সুরে সে কথা বলি
রাখিব তোমারে বুকের মাজাড়ে যাব না ওগো ভুলি
দুজনে শপথ করে সারা জীবন এক সাথে থাকবে। জীবনে চলার পথে যত ঝড় ঝঞ্জার বাধা বিপত্তি আসুক না কেন কখনও আলাদা হবে না। তারা জায়গার নাম দেয় বন্ধন দ্বীপ। অনেক সময় পরে তারা ফিরে আসে বলে চল বিকালেই ফিরে যাই। আসার পথে দেখে ওরা যেখানে ছিলো সেটার নাম অভয় নগর চলো এবার কইলার টেক যাব।  সেখানে গিয়ে দেখে অনেক লোক ভীড় করে আছে কি হয়েছে সেটা জানতে চায়। নদীর এই পারে ভাঙ্গন ধরেছে অনেক ঘর বাড়ি দেখতে দেখতে তলিয়ে গেছে। সকলে জীবন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বলে মাঝি ভাই চলো দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হবে নয়তো বিপদ বাড়বে। কিছুটা পথ আসার পরে নদীর চির চেনা রূপের পরিবর্তন দেখা দেয়। প্রবল স্রোত ও গর্জন শুরু হয়েছে নদীতে। আকাশে ভাড়ি মেঘ করেছে সেটা দেখে ওদের সকলের মুখ শুকিয়ে গেছে। মোহন ও মারিয়ার কাছ হতে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে ওরা মাঝা মাঝি অবস্থান কিনাড়ার দেখা মিলা ভাঁড়। অদিতি ও অনিতা দুজনে ওদের দুজনকে শক্ত করে ধরে আছে। এ যেন বেঁচে থাকার আমরণ পণ মরতে হলে এক সাথে। মরবে নয়ত একাকী বেঁচে ফিরবে না কেউ। গয়নার সাথে নৌকা এসে ধাক্কা খায় মাঝি কোথায় গেলো চোখে দেখা মিলে না। কালাচান গয়না নিয়ে যাচ্ছে কানে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে বলে দাঁড়াও। দেখো দেখি ডিঙ্গাতে লোক আছে নাকি বলে দাদা চার জন আছে ওদের বয়স বেশি না। চলো চলে দেখতো বিপদে মানুষকে সাহায্য করতে হয় তারা ওদের গয় নায় উঠিয়ে নেয়। অনীক ও মিন্টুকে দেখে বলে তোমরা কোথা হতে এলে ঝড় বাদলার দিনে। কালাচান বুঝতে পারছে ওরা বেশ ভয় পেয়েছে। বলে তোমরা আমার সাথে আস ওদের নিয়ে ভিতরে তার থাকার জায়গায় বিশ্রাম করতে বলে। ধীরে ধীরে পরিবেশটা শান্ত হয় ওদের চোখে মুখে এখনও ভয় আতঙ্কের রেশ বেশ বুঝতে পারে। পরাণ মাঝি বলে দাদা মেহমানরা কোথায় যাবে কিছু বললে নাতো। কালাচান কয় অনীক দা আমরা বন্দর খোলায় আসিতেছি তোমরা কোথায় যাবা। বলে আমাদের একটু হাটে নামিয়ে দিও তাহলে হবে। কালাচান কে বলে তোমার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ দাদা আমাকে তুমি বাঁচিয়ে দিলে। তাকে টাকা দিতে গিয়ে বলে তুমি এটা রাখ আমরা খুশি হবো। কালাচান কিছু বলতে যাবে তখনি পরাণ বলে সাবধান সামনে দেখ। দেখে ওদের বলে তাড়া তাড়ি চলে যাও সময়টা খারাপ বলেই তারা যাত্রা করে। সোনাই মুড়ির বিলের কাছে ভ্যান হতে নামে ওরা। তখনও স্বাভাবিক হতে পারছে না। কিছুটা সময় বসে নিজে দর মধ্যে কথা বলে সব ধরনের বিপদে সাহস রাখতে হবে। ওদের দিয়ে বাড়ি ফিরছে তোরাব আলীকে কুশল বিনিময় করে। সে তাদের আসতে বলে অন্য দিন আসবে আজ না। বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে হালিমাদের কোন খবর নেই। কহের কেমন জানি হয়ে গেছে সব উল্টা পাল্টা লাগছে। হারুন বাজারে এসেছে তখন পরাণের দোকানে যায় কথায় কথায় উঠে কোথা হতে এসেছে তখন বলে হুজুরের বাড়ি হতে। রেণু বেগম তারা মিয়াকে বলে তোমার আয় রোজগার বন্ধ নাকি। বেশ কিছু দিন হতে বাড়িতে আছো। লিয়াকত ও নজরুল বাহির হতে ফিরছে। বাড়ির দিকে রাস্তায় একটা লোককে পরে থাকতে দেখে কাছে যায়। তাকে আগে কখনও দেখেনি বলে চিনতে পারছে না। নজরুল বলে একটু পানি দাওতো দেখি জ্ঞান ফিরে আসে নাকি। অনেকটা সময় পরে চোখ মেলে তাকায় নরেশ বলে কারা আপনারা। লিয়াকত বলে কোথায় যাবেন এখানে কি করে এলেন? যাবতো বাহাদুর পুর। কোথায় গেছিলেন উতরাইল ঠিক আছে। সামনের রাস্তায় গিয়ে গাড়ি পাবেন দেখে শুনে যাবেন। পেরিয়ে যায় একটি বছর কেমন জানি সব কিছুতেই নিষেধ জারি করে বাড়ি হতে। অদিতিকে আগের মত যেখানে সেখানে যেতে দেয় না। অনীক হাঁপিয়ে উঠেছে তাকে দেখতে না পেয়ে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে পড়া লেখা নেই দুই মাস হয় কি করবে এখন। ওদিকে অনিতার সাথে মিন্টুর সম্পর্কের বিষয় ফাঁস হয়ে যায়। বেশ কিছু দিন ওদের দেখা সাক্ষাৎ কথা বলাও বন্ধ ছিলো। মোমেনা বেশ বকা ঝকা করেছে অনিতাকে অদিতি আসতে পারছে না এখন উপায়। রোকাইয়া কালাচানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। বিকেলে অনীকের সাথে দেখা বলে কি দাদা মুখশ্রী র এই দশা কেন কোন সমস্যা নাকি। অনীক বলে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে কি কাজ। একটু খবর লাগবে বুঝতে পারছি কি করা যায়। সব দিক চিন্তা করে হারুনের সাথে জহুরার শাদীর পাকা কথা বলে আসছে আজকে তোরাব আলী। হাজী সাহেব তাকে কিছু জমি দিয়েছেন এখন তার পরিবার হবে তার দায়িত্ব ভিতরের দিকে। যা যা দরকার ও মাদ্রাসা ও মসজিদের দেখ ভাল করা। মানিক দেখে অদিতির অবস্থা বেশ খারাপ। যে কোন উপায়ে অনীকের সাথে তার দেখা করানো লাগবে। নয়তো বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়ে যাবে। মোহন ও মারিয়া বেড়াতে এসেছে অনীকদের বাসায়। শেফালি কি কাজে বাজারে এসেছে মাজাহারুল তাকে দেখে পরাণকে বলেছে দুপুরে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যেতে। অনেক দিন পরে বন্ধুদের কাছে পেয়ে আনন্দ করে কাটে তাদের সময় সকলে বসে আছে বৈঠক খানায়। সন্ধ্যার আগে মানিক এসে ছিদাম কাছে জানতে চায় অনিকদের বাড়ি কোনটা সে  দেখায়। মানিক এসে গেটের কাছে জানতে চায় অনীক বাড়িতে আছে নাকি। অনীক বেড়িয়ে এসে দেখে মানিককে বলে কি ব্যাপার মানিক ভাই কোন সমস্যা। তুমি ভিতরে আস বসো এখানে সব কথা খুলে বলে অনীককে। শেফালি কখন তাদের পিছনে গিয়ে শুনছে সেটা খেয়াল করেনি। তুমি যাপার দ্রুত করো নয়তো তাকে বাঁচানো কঠিন হবে। শেফালি ডাকে কি হয়েছে অনীক আমাকে বল কিছু না তুমি ভিতরে যাও। হুম সব শুনেছি আমি আমাকে সত্য কথা বল উপকার হবে। আকলিমার কাছে কানাই জানতে চায় শরৎ কোথায় গেছে। বলে ভাই সেতো সকালে গেছে এখনও ফিরে নাই। আসলে বলো আমার সাথে দেখা করতে ঠিক আছে বলবো। দেখতে দেখতে হারুন ও জুহুরার শাদীর দিন ঘনিয়ে এলো শুক্রবার তাদের শাদি হয়ে যায়। হালিমার বেশ অসুখ করেছে তাকে গঞ্জ বড় হাসপাতালে নিয়ে গেছে। কোন কিছুতেই  কিছু হচ্ছে না। দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। কহেরর সাথে বাবা মা দুজনার বেশ কথা কাটা কাটি হয়েছে। তারা অন্যত্র পাত্রী দেখতে বলেছে এটা নিয়েই মন মালিন্য বাড়িতে। জহেরটা পরিবারের মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করে পারেনি সে জোসনাকে নিয়ে ভাবছে আলাদা থাকবে। চার মাস ঘর ছাড়া কহের কোথায় আছে কেউ জানে না। সিরাজ পাগল তাকে দেখতে পায় তার ভক্ত দের বলে ওকে নিয়ে যাও বাকি কথা পরে বলবো। লোক মুখে দবির মাতবর জহেরর বাড়ি ছাড়ার কথা শুনতে পেয়েছে। ওদিকে কহেরটাও নিখোঁজ। কহের বন্দর খোলা গিয়ে খবর নিয়ে হালিমার সব অবস্হা সে জেনেছে রতন বলে দিয়েছে সব কথা। ডাক্তার বলেছে গঞ্জে শেষ বারের মত চেষ্টা করবে নয়তো ঢাকায় নিয়ে যাবে। শরিফা কেনা কাটা সেরে বাড়ির দিকে ফিরছে। হালকা বৃষ্টি  হচ্ছে গাড়িও পাচ্ছে না। হেঁটে বাড়ি ফিরছে কিছুটা পথ আসার পরে হঠাৎ করেই চারি দিক অন্ধকার হয়ে আসে। সামনে আসতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে গড়িয়ে পরে যায় পানিতে। হেদায়েত নদীর ঘাটে বসে কি দেখছে তখনি পানির ঝাপটা এসে লাগে তার মুখে। দেখে একটা মেয়ে মানুষ ডুবে যাচ্ছে এক লাফ দিয়ে পানিতে নেমে তাকে উপরে তুলে আনে। তাকিয়ে দেখে শরিফা জমীর ব্যাপারির মেয়ে। এই শরিফই ছোট বেলার খেলার সাথী তার বাবাকে কারা শত্রুতা করে খুন করেছে। মা ছোট বেলাতে মারা গেছে সে এখন চাকরি করে গোয়েন্দা বিভাগে। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকৃত খুনিকে বের করার ও খুনের কারন জানতে। লালুও তার সহযোগী সেটা গ্রামের কেউ জানে না তারা ছদ্ম বেশে এখানে কাজ করে যাচ্ছে। জ্ঞান ফেরার পর দেখে একটা বাড়িতে শুয়ে আছে বলে এখানে কি করে এলাম। হেদায়েত সকল কথা খুলে বলে কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলে। ইশারায় তার কাপুড় ভিজা দেখায়। শরিফার কিছু সময় পরে উঠে টেবিলে রাখা কাগজ দেখতে গিয়ে একটা পুরাতন ছবির এলবাম পায়। তার সাথে হেদায়েতের ছোট বেলার ছবি দেখে ওর বাবা মায়ের ছবি আসে। বুঝার বাকি থকে না হেদায়েত কে। কিছু খাবার নিয়ে ফিরে আসে লালু বলে তুমি এখানে কি করে এলে। বাঁশির হুইছেল কানে আসে এর মানে লালুকে এখনি যেতে হবে নয়তো সমস্যায় পড়বে। তুহিন ও হাফিজ শরাব পান করছে সাথে আরো অনেকে আছে তার শাদীর পরে স্ত্রী হনুফা তাকে ছেড়ে চলে যায় তাদের ছোট একটি ছেলে ছিলো তর কোন খবর সে কখনও নেয়নি। হনুফার অন্যত্র শাদি হয়ে যায় তার বিভিন্ন অপকর্মের কথা জেনে তার কাছে কেউ আর কোন মেয়েকে শাদি দেয়নি। হাফিজকে বাজার হতে ফেরার পথে পানিতে পরে থাকতে দেখে তালেব মাঝিকে দিয়ে উঠিয়ে নিজের সাথে রেখে দেয়। তার একটি গোপন বাহিনী আছে তারা বিভিন্ন গ্রামে লুট তারাজ ডাকাতি ও চুরি করে বেড়ায়। অনেকে শুনেছে তাকে হাতে নাতে কেউ ধরতে পারেনি বলে কোন বিচার করতে পারেনি। মনির খাঁ পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছে ডাক্তার দেখাতে বাড়িতে আলেপ ও ছানি। রাতের খাবার শেষ করে দুজনে বসে বসে গল্প করছে। মাঝ রাত বলে দাদু ঘুমিয়ে পরো কিছু লাগলে বলো আমি তোমার পাশেই আছি। সকালে জরিনা এসে কান্না কাটি শুরু করেছে বাড়ির সকল জিনিস পত্র কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে। তার কান্নায় বিছানা ছেড়ে উঠে আসে আলেপ জানতে চায় কি হয়েছে। সব শুনে বলে বিকেলে দেখি কি করা যায়। আইন উদ্দিন মাতবর ব্যবসার স্থান পরিবর্তন করে শিবচরে দোকান নিবে। আগের জায়গায় দিন দিন বেচা বিক্রি কমে আসছে। সে দোকানের খোঁজে বরহামগঞ্জ স্কুলের সামনে বসে কথা বলছে। বিভিন্ন রকমের মানুষ তাকে বিভিন্ন ফন্দি ফিকিরের কথা বলে। এটা সেটা করে দিবে কাজের কাজ কিছু হয় না। ছোট মেয়েটাকে কিছু বাজে ছেলে জালাতন করে। সে মাঝে মাঝে দোকানে যেত। মানিক টার সাথে একটু রাগা রাগি করে ওকে বলেছে চলে যেতে। পরে দেখেছে মানুষের কথা শুনে অন্যায় করেছে। মাজাহারুল দোকানের মেহমান নিয়ে হোস্টেলে খাবার খেতে বসেছে। তখন আইন উদ্দিন এসে পাশে বসে। তিনিও ব্যবসার জন্য কথা বলছেন বলে ভাই সাহেব। আপনার পাশে যদি একটা জায়গা দেন তাহলে ভালো হয়। দেখুন ভাই  আমার আত্মীয় পাঠিয়েছে কিন্তু এখানে দোকান খালি নেই। আপনাকে কিছুটা দূরে দেখে নিতে হবে আমি বলে দিব। অদিতি ও অনিতা স্কুলে এসেছে অনেক দিন পরে। অনীক পড়ার বেঞ্চ বসে আছে স্যার আসেনি। এখানে সে অংক ও ইংরেজি প্রাইভেট পড়বে বলে ঠিক করেছে। মানিক অনেক কষ্টে দুঃখে বাজারের পথে হাঁটছে বেশ খুদা পেয়েছে কি করি। শরৎ কানাই মিলে তাদের ব্যবসার জন্য বিসস্ত লোক খুঁজছে। এখন তাদের মৌসম মানুষের জিনিস পত্রের চাহিদা অনেক। দোকান বন্ধ রেখে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ালে বেশি বিক্রি হবে। শরৎ ও কানাই বসে চা বিস্কুট খাচ্ছে  তখন দেখে মানিককে। কিরে মানিক কোথা হতে এলি? রাস্তার মানুষ রাস্তা হতে এলাম দাদা। কিরে কি হয়েছে তোর মুখটা শুকনো খাসনি কিছু। না দাদা কাজ দিও থাকলে একটা ক্যান তোর কামের কি হইছে। বলো না ছেড়ে দিছি বুঝতে পারছি এখন মানুষের দিন ঘুরছে তো তাই তোর দরকার শেষ হইছে। ওরেও খাবার দাও শরৎ বলে আমাগো দোকানে কাজ করবে। জি করমু তয় বিকেলে এসো গঞ্জের পাশে বাবনা তলায় দোকান আমাগো। এতো বেশ দূরে হয় মিয়া দূরে করলে কও এখনি। ঠিক আছে আমি আসবো মানিক উঠে যাবে তখনি অনীককে দেখে বলে দাদা ভালো আছো। মানিকদা তুমি তোমারে কত জায়গায় খোঁজ করছি কেন সব শুনছি আমি। চলো আমার লগে সব কথা যাইতে যাইতে কমু। হালিমা বেশ রাগ করেছে মাতবরের সাথে। তুমি সারা জীবন মানুষের কথা শুনে সংসারে অশান্তি করো। বাইরের লোক তোমার আপন ঘরের মানুষ পর। তুমি মেয়েদের প্রতি অবিচার করছো বলে দিলাম। মানুষের কথা শুনে  নিজের চোখে দেখে কথা বলবে। তুমি নয়তো মেয়েদের নিয়ে অন্যত্র চলে যাব তখন থেকো মহা সুখে। অনীক সব কথা শুনে বলে আমি বাবার সাথে কথা বলে কি করতে পারি দেখি অপততো কিছু করো। কিছু দিন হতে সবার চোখে একটা জিনিস বেশ লাগছে। ময়না কাটা যেন শুকিয়ে শুকিয়ে আসছে চারি ধার হতে। অনেক বসতি আসে পাশে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকার হর্তা কর্তারাও বসে নেই তারাও লোক জন নিয়ে চর দখল বাণিজ্য নেমেছে। পড়া শেষে অনিতা ও অদিতি সোনা তলার বিলে গিয়ে বসেছে। দুজনার মনের মধ্যে ঝড় উঠেছে প্রিয় জন দের সাথে দেখা নেই। অনীক অনেক চেষ্টা করেছে অদিতির সাথে দেখা করতে পারেনি। আজ এসেছে বিমলকে নিয়ে বিলে। অনিতাদের থেকে কিছুটা দূরে গাছের নিচে বসে সব কথা বলছে ওরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে বাড়ি ফিরতে মরিয়া চল ফেরা যাক।  বিমল বেশ সুন্দরতো সব দিক হতে গুছানো। সিম সাম পরিবেশ প্রকৃতি নিবিড় ভাবে আপন মনে খেলা করে যায়। এক দিন সারাটা বিকাল কাটাবো এখানে কত মানুষের আগমন হয়।
এখন প্রিয়ার দেখা হয়না দু আঁখি পানে
ওগো তুমি আছো কেমন সুন্দর ভুবনে
জানতে চায় অবুঝ এই মন হিয়ার মাঝে
ঝড় উঠেছে বুকে দিবা নিশি হয় রক্ত ক্ষরণ।
যায় না নয়ন মেলে দেখা থাকি একা একা
ভাবি সারাক্ষণ সাথী কাছে এসো পাশে বসো
করে নিও আমায় তোমার চির আপন জন
বিরহ যাতনা প্রাণেতে সহে না করি বলো এখন।
নিঃসঙ্গ ভুবন নিত্য হয় কত আয়োজন বিবর্ণ মন
গন্ধ হীন নাসিকায় তব বাজে নূপুর দুচরণ ছন্দে
পত্র যুগলের ক্রন্দন বিজন বনে পাখিদের গুঞ্জন
থেমে গেছে কুসুম কলির হাসি বন্ধ হৃদয়ের দ্বার।
কর্ণ কুহরে পৌঁছে না তার মনের নীরব বোবা ভাষা
করি আসা পথে পানে চেয়ে থাকি দেখার অপেক্ষায়
যদি সে আসে মোর হৃদয় নাও ভাসে অকূল দরিয়ায়
মোহ মায়ার জ্বলে আবদ্ধ প্রেমের টানে গৃহ ছাড়া একাকী।
নাই পাই তারে অন্তর জুড়ে ব্যথার ঢেউ দোলা দিয়ে যায়
মরমে মরেছি প্রেমেতে ডুবেছি নিষ্ঠুর নিয়তি ভোলায় গতি
জীবন চলার পথ থমকে গেছে কলঙ্ক লাগলো জনে জনে কয়
কেহ না শুধায় দেখে চলে যায় কি ব্যথা বুকে নিয়ে বয়ে বেড়াই ।
ভুবন মাঝে নয়তো কারো আপন বক্ষ ভাষে দেখ নীরব কান্নায়
সুখের লাগি কান্দোরে মন সুখ হলো সোনার হরিণ যায় না ধরা
প্রেম করিয়া সুখী হতে চাও তোমার জীবন দেখো জীবন্ত মরা
যা দেখেছি আপন নয়নে ভুলা কি যায় তারে গুরুর বচনে শুধায়।
দরদিয়া মানে না হিয়া তার পানে ছুটে ছুটে বেড়ায় অবুঝ হৃদয়
কি? করি হায় ভাবিয়া হই ব্যাকুল হারালো বুঝি জীবনের সব কুল?
অবেলা ঝড়ে গেলো প্রেমের মুকুল হয়নি মালা গাথা বাসি ফুলে
পড়াবে কেমনে বন্ধুর গলাতে নেই পাশে থাকে অজা না পরবাসে।
অনীকের মুখের দিকে তাকানো যায় না। কি হারিয়েছে জীবন হতে যার কারণে জীবনের গতিহীন আঁকা বাঁকা। ভুল সীমানায় তরী নোঙ্গর করছে। বিমল জানতে চায় কি হয়েছে। তোর শরীরের কি হাল হয়েছে দেখেছিস একবার। নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখবি বুঝলি। সব বুঝলাম চল দেখি কি/ করা যায় ভিতরের রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরবে বলে দুজনে পথ চলছে। বাগান বাড়ি সুপারি গাছ ঝাউ ও শেওড়া গাছের কাছে আসতেই দেখে অনেকে। দুজনে আড়ালে সরে যায় কি হচ্ছে সেটাবুঝার জন্য। বেশ কিছু লোকের আগমন ঘটে সকলে একটি ঘরে। গিয়ে বসে মুখ লাল কাপুড় দিয়ে ঢাকা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় সেটা শোনার ইচ্ছে জাগে। বিমল বলে জাসনে বিপদ হবে। দেখে তুহিন হাফিজ ও আরো কিছু লোক এসেছে বিষয়টা তাদের কাছে খটকা লাগে। এরাই কি? চর দখল চুরি ডাকাতির সাথে জড়িত। হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুর পাক খায় কোন উত্তর মিলে না। মোবারক ও সদর আলী সহ অনেকেই বসে আছে সদর পুর কাজের জন্য ছুটে বেড়ায়। মোবারক  আয় রোজগার ভালো না। ইয়াছিন গঞ্জের জমীর ব্যাপারি দোকানে কাজ নেয়। রহমান মোল্লা ছেলেকে দিয়ে কাজ করাতে চায় না সংসারটা বড়। বাবাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করতে যখন যে কাজ পায় করে। অনেক দিন হয় তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে কোন অবস্থা মিলাতে পারছে না। গরীব হলে যা হয় ময়নার সাথে তার আলাপ হয়। বিভিন্ন সময়ে কাজ কামে যাওয়া আসার পথে। পারিবারিক খবরা খবর নেয় দুজনে। তোরাব আলী সদর পুরে গিয়ে হঠাৎ করে রাস্তায় পড়ে যায়। লোক জন ধরা ধরি করে রহমান দের বাড়ির সামনে গাছের নিচে বসায়। অনেকে দেখে তাকে চিনতে পারে না। রহমান বাড়ির সামনে লোক জনের ভীড় দেখে এগিয়ে যায়। দেখি দেখি কি? হয়েছে বলে দেখতো লোকটা রাস্তায় পরে ছিলো কেউ চিনতে পারে না। বিশ্রাম শেষে চোখ মেলে রহমানকে দেখে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তোরাব। ভাই আমারে চিনতে পারছ তুমি রহমান বাহাদুর পুরে দোকান করতে। রহমানের মনে পরে যায় বলে তোরাব ভাই কত দিন পরে দেখা আস ভিতরে আস। বিকেলে তোরাব রহমানকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আসে তাদের অনেক কথা হয়। পরে ছেলের সাথে দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠায়। ময়না বলে তুমি এখানে কেন বাবার কি হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে হারানো সম্পর্কের আবার পূর্ণ মিলন ঘটে। ছোট বেলাতেই দুই বন্ধুর মধ্যে কথা হয়েছে তাদের ছেলে মেয়ে হলে দূরে যেতে দিবে না। মাস খানেক পরে স্বপরিবারে পাঁচ্চর বেড়াতে আসে রহমান মোল্লা। তখন ইয়াছিন ও ময়নাকে দেখে একে অপরের মুখের পানে তাকিয়ে থাকে। হাসু মোল্লা বলে তোমাদের মাঝের ঘটনাটি এখন বলতে হবে নয়তো দেরি হয়ে যাবে। এবার দুজনে মাটিতে নেমে আসে কি বলতে হবে দাদু। চলো ভিতরে যাই সেখানে গিয়ে বলবো। তোমরা সকলে এখানে আছো আমি মুরব্বি ও দাদা। হিসাবে তোমাদের মাঝে একটা প্রস্তাব রাখছি। তোমরা সকলে মিলে ওদের চার হাত এক করে দাও এতে মঙ্গল হবে। সেটা বুঝতে পারছি তবে কিছু সময় লাগবে আরে ভাই সময় দিয়ে হবে কি শোন কালকে শুক্রবার। বাদ জুম্মা ওদের শাদি হবে এখন তোমরা কি করবে ভেবে দেখো।পরাণ রাতে বাড়ি আসলে তাকে নলগোড়া পাঠানো হয় শেফালীদের সকলকে আসতে বলে। খবরটা সকালে গিয়ে আইনউদ্দিনের সামনে মাজাহারুলকে বলে। ঠিক আছে ভাই সাহেবকে বলো তার পরিবার সহ আসতে। বিভিন্ন সময়ে অসময়ে আমারা পাশা পশি থাকি। ঠিক আছে দাদ ভাই আপনি উনার পরিবার সহ দুপুরের মধ্যে পাঁচ্চর হাজিরি হবেন। আপনারা না আসলে বিবাহের কাজ শুরু করতে পারছি না। বলে পরাণের পরিচিত কিছু লোককে দাওয়াত করে। অনেক দিন পরে অনীকের সাথে অদিতিকে পরিচয় করিয়ে দেয় আইন উদ্দিন। রাশিদা অদিতেকে বলে দেখছ আপু ছেলেটা বেশ সুন্দর না হুম কম কথা বলো। বাবা দেখলে খবর আছে। স্বল্প সময়ের জন্য অনীক অদিতির কথা বলার সুযোগ করে দেয় শেফালি। দুটি প্রাণ ভাষা হীন বোবা হয়ে গেছে। অঝর নয়নে অশ্রু গড়িয়ে পরছে ঝর্ণার ধারায়। কত দিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে বলতে বাক রুদ্ধ দুজনে। কি? বলবে কি? করবে ভেবে পাচ্ছে না কিছুই। অনীক শুধু বলে তোমার জন্য সারাটি অপেক্ষায় থাকবো। অদিতি কিছু বলতে যাবে তখনি শেফালি এসে বলে দ্রুত যাও অদিতি। তোমার পরিবার তৈরি হয়েছে বাড়ি ফিরবে। ময়নাকে নিয়ে ইয়াছিনের পরিবার বাড়ি ফিরছে পথেই চিৎকার শুনতে পায়। বাঁচাও বাঁচাও ডাকাত পরেছে বাড়িতে। ওদিকে নদীর দিকেও কারা যেন ছুটা ছুটি করছে। দেখে শুনে সাবধানে বাড়ি ফিরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। মনির খাঁ বাড়িতে ফিরলে ছানি সকল কথা বলে বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি কারো কাছে। সে বলে ঠিক আছে আমি দ্রুত এর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কহের অনেক দিন পরে সিরাজের ওখান হতে ফিরেছে নদীর ধার দিয়ে হাঁটছে। দেখে এক জন মহিলা বসে আছে পিছন হতে দেখতে হনুফা খাতুনের মত। সে কাছে গিয়ে দেখ সত্যি তার মা। মাকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরে হনুফা তাকায় বলে বাজন আইছো তুমি। আইছি মা বাড়ির সকলে কই গেছে বাজানের কথা শুন নদীর পারে বসে কি বাড়ির খবর হয়। চলো বাড়ি চলো না মা ওখানে আমার মন টিকে না। আমার হালিমার খবর না পেলে কোন দিন বাড়িতে যাব না। চলে যায় কহের শহরের লোক জনের সাথে কথা বলে ভালো ডাক্তার দেখায়। অনেক দিন চিকিৎসা করানো হয় তেমন পরিবর্তন হয়নি। পরিবারের সকলের মন খারাপ তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। রাশিদাও বড় হয়েছে অদিতিকে কয়েকবার বলেছে বিয়ের কথা ও এখন বিয়ে করতে চায় না। আইন উদ্দিন ধীরে ধীরে বুঝতে পারে তার বয়স হয়েছে। মেয়েরা বড় হয়েছে  তাদের শাদি দিতে হবে। আমার কিছু হলে কি হবে সকলের এসব ভেবে ভেবে হঠাৎ করে চেয়ার হতে পরে যান। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় লোক জন ধরা ধরি করে। আমিন খাঁ /মমিন খাঁর ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে ।নদীর মাঝে অনেক বার দেখা হয়ে কালাচানের সাথে। মোহন ও মারিয়া বেড়াতে যায় ময়নার হাটে ওখানে বিমলকে দেখতে পায়। তেমন কথা বলেনি ওদের মত ঘুরে ফিরে। একবার অনিতাদের বাড়িতে যাবে ভাবছে। অনেক দিন হয় ওদের খবর নেওয়া হয় না এতিম মেয়েটা কেমন আছে। পরিবার হতে ওর বিবাহের জন্য অনেক চেষ্টা করে কিছু টাকা ও গয়না না দিলে হয় না। মোহন অনিতাদের বাড়িতে এসে জানতে চায় সে বাড়িতে আছে নাকি। মোমেনা খাতুন বেড়িয়ে আসে বলে কে আপনারা কারা চিনতে পারলাম নাতো। অনিতা আছে ওর শরীর ভালো না শুয়ে আছে আমরা ওর বন্ধু বলেন হিজল দীঘির গাঁ হতে এসেছি। আসেন কে এসেছে জানতে চায় লিয়াকত। লিয়াকত এসে দেখে মোহন ও মারিয়াকে আস আস মোহন কে চিনে। হিজল তলীতে প্রাই যায় মালা মাল আনতে। অনিতার মাথার পাশে বসে দুজন কি হয়েছে তোরা কেমন হয়ে গেছিস। মিন্টুর কোন খবর নেই কত দিন জানিস কোথায় আছে সে। বেশ সময় কথা বলে ওরা লিয়াকত বলে মা ওদের বলো খেয়ে যেতে। গরীবের বাড়িতে আসছে দুপুর বেলা না খেয়ে কি করে যায়। অনীক চুপি চুপি  অদিতিদের বাসাটা দেখ আসে। বাজারে দোকানে গেলে প্রাই দেখা হয় আইন উদ্দিনের সাথে। অনেক অনুরাধা করে অনিতাকে নিয়ে আসে হিজল দিঘিতে। তিন দিন অদিতি ফ্যাশন হাউস বন্ধ দেখে মাজাহারুল সাহেব খবর নিয়ে জানতে পারেন তিনি অসুস্থ। বৈকালে শহরে যাবেন অনীককে বলেছেন তাকে দেখে আসতে। কিছু ফল পিঠা নিয়ে অনীক আসে অদিতি দের বাড়িতে। বাড়ির সামনে এসে জানতে চায় আইন উদ্দিন মাতবর বাড়িতে আছে নাকি। রাশিদা এসে দরজা খুলে দিলে বলে তার বাবার কথা বলে। বাবা বেশ অসুস্থ ভিতরে আসতে বলে। অদিতি রান্নার কাজে মাকে সাহায্য করছে জানতে চায় কে এসেছে। বলে তুমি দেখ কে। অনীককে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক! হয়। বাড়ির সকলে আছে দেখে তার কাজে ফিরে যায়। সালাম বিনিময় করে তার খোঁজ খবর নেয় অনীক তার আসার কারণ বলে। উঠে বসে তিনি বলে ভাই সাহেব খুব ভালো মানুষ তার পরিবারের খবর জানতে চায়। আলহামদুলিল্লাহ সকলে ভালো আছেন হালিমা বেগম অদিতিকে ডাকেন। কিছু ফল ও মিষ্টি দিতে বল অনীককে। বাবাজি তোমার আসার কারণটা বললে না। জি আপনার সাথে বাবার মনে কিছু জায়গা জমি নিয়ে আলাপ হয়ে ছিলো। জি নিতাই পালের একটা ঘর আছে বাজারে সে বিক্রি করবে। সেটা নিয়ে কথা হয়েছে আপনার মতামত জানতে চেয়েছে। বাবা শহরে গেছে নয়তো তিনিই আসতেন তার খুব টাকার দরকার। সে ভারতে চলে যাবে। ঠিক আছে আমি কালকে ভাই সাহেবের সাথে দেখা করবো আজ আমি আসি। তাকি করে হয় বাবাজি  দুপুরে খাবার না খেয়ে তোমাকে ছাড়তে পারি না। অদিতির ইচ্ছে ছিলো কথা বলার সে সুযোগা করতে পারেনি। জাবর বেলায় দরজা লাগিয়ে দিতে এসে বলে। কালকে পড়া শেষ করে যেন দেখা করে অনিতাদের বাগানে পুকুর পারে। জমির ব্যাপারির আড়তে কিছু অপরিচিত লোককে দেখে সন্দেহ লাগে। লালুটা আজ সকাল হতেই আমার পাশে রয়েছে রাতে বাড়ি ফিরে আসে। রাস্তায় গা সম সম করে এমনটা আগে হয়নি কখনও। হেদায়েত তার সাথের কিছু লোক জন নিয়ে পাশের বাঁশ বাগানে হতে এদিক আসছে। সবাইকে চুপ হতে বলে দেখে দল বেঁধে কারা যেন এই দিকেই আসছে। সকলে আড়ালে চলে যায় পনেরো জনের একটা দল হাতে কিছু অস্র পাতি সহ চলছে। বলা বলি করছে যে আসবে বাধা দিতে তাকে বালিশ ছাড়া শুইয়ে দিবি। ব্যাপারীর ভিতরে ভয় অনেক নতুন মালামাল ক্রয় করেছে শহর হতে কিছু মাল আসবে। সেদিন কোন রকমে বাড়িতে আসে তার বেশ জ্বর। সখিনা বলে তোমার কোন সমস্যা হয়েছে নাকি। শরিফার মনে একটি প্রশ্ন হাজার বার ঘুর পাক খায় কোণ উত্তর মিলে না। হেদায়েত কি তাকে চিনতে পারেনি নাকি নিজেকে দূরে রেখে আমায় পরীক্ষা করছে। ওর বাবা মাকে করা খুন করছে সেটা জানতেও পারেনি। বাবা বেশ চেষ্টা করেছে পরে কি মনে করে থেমে যায় বুঝিনি। 17/18 বছর পরে এসে তাকে বেশ অচেনা লাগছে আমার কাছে। দুপুরে একটি চিরকুট নিয়ে লালু আসে রাশিদার কাছে তাকে হেদায়েত দেখা করতে বলেছে জরুরী ভাবে। সে সাজনার বিলে কাশ বনে থাকবে। ডাক্তার এসে ব্যাপারি কে দেখে যায় বলে চিন্তার কিছু নেই। কিছু ঔষধ দিচ্ছি নিয়ম মত খেতে হবে। গোসলটা একটা সময় করতে বলবেন। লালু চলে যেতেই ঔষধের ফর্দটা নিয়ে শরিফা বেড়িয়ে যায় মাকে বলে আমার ফিররেত দেরি হবে। হেদায়েতের লোক বাড়ির পাশেই ছিলো ইশারা দিতেই শরিফা চলে আসে। বাজার হতে বাবার প্রয়োজনীয় সকল জিনিস আনে পরে বসে দুজনে। জানতে চায় কেমন আছে তাকে চিনতে পেরেছি কিনা। শরিফা বলে হুম পেরেছে এর পর শুরু হয় দুজনার জীবনে জমানো সকল কথা যেন হাজারো জনমের অপেক্ষার ফল। অতৃপ্ত আত্মাকে তৃপ্ত করতে বসেছে শীতল করতে চায় অশান্ত মনকে। নীল আকাশের নিচে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যায় ছুঁই ছুঁই করেও ছুঁতে পারে না জমিনকে। কাশ ফুলের গন্ধে পাখি ফুল ফড়িংরা দুষ্টুমিতে মেতেছে। চুঙ্গা তুলে খায় এটা আখের মত আকাড়ে চিকন ও বেশ লম্বা। এই উদ্ভিদ বেশ মিষ্টি ও নরম প্রকৃতির। বিলের পানিতে পা ডুবিয়ে দুজনে মনের হরষে জীবন সাজানো গল্প বুনে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে বাড়ি ফিরতে হবে চলে তোমাকে দিয়ে আসি। মিন্টুর খবর তখনও অজানা। মিন্টু হারানোর রহস্য সকলের কাছে কেমন একটা বিপদের পূর্বাভাস মনে হয়। অনীকের মনটা বেশ খারাপ প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে কেমন জানি হয়ে গেছে। অদিতি তাকে দেখো করতে বলেছে সেটা বেমালুম ভুলে গেছে। কি মনে করে বিমলের দ্বিচক্র যানে চরে বলে। আমাকে এখনি পাঁচ্চর দিয়ে আয় নয়তো বড় সমস্যায় পরে যাব। খুব দ্রুত আসতে গিয়ে কাচা রাস্তায় ঠিক ভাবে চলে না। ভিতর দিয়ে চলতো বন্ধু। অল্প কিছু পথ অতিক্রমের বাকি তখনি দুজনে পরে যায় ধান খেতে। অনীকের হাতটা বেশ কোটে যায় ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে বিমল ব্যথা পেয়েছে। বাওই লতা ও দূর্বা ঘাস চিবিয়ে সেখানে লাগিয়ে ধীরে পায়ে আসে পুকুর পারে। অদিতি অনেকটা সময়ে বসে থেকে যাবার জন্য পা বাড়ায় তখনি দেখে অনীককে দেখা যায়। বিমল অনীককে বলে সে চলে যাবে তার কাজ আছে। অনেক অভিমান ছিলো যখন দেখে হাত হতে রক্ত ঝরছে তখন নিজেই কেমন গলে পানি হয়ে গেলো। দেখ আমি থাকতে পারছি না তুমি কিছু করো। এতটা অবুঝ হলে চলে আমাদের পরীক্ষা শেষ করতে দাও। এখনও দুজনে পড়ছি নিজেদের গুছিয়ে নিতে হবে। না চাকরী বাকরি কিছু করতে হবে। বাবা প্রাই বিয়ের কথা বলে তুমি তাকে বলে দিবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাও মানুষ হয়ে তবেই বিয়ে করবে। মিন্টুকে কেউ দেখেছে বলে ধুয়াসা একটা খবর পায় মোহনিয়ার চরে। অনিতাকে বাড়িতে দিতে যাবে তখনি মোহন কথাটি শুনতে পায়। তালেব,নগেন,ঠাকুর ডিঙ্গিতে কোথা হতে আসছে বলে কোথায় যাও। মোহন বলে একটু পাঁচ্চর যাব ঠিক আছে আমাদের নৌকাতে আস। আমরা বাহাদুর পুর যাব। পরে তুমি যেও কথাটি শেষ না হতেই দেখে বিশাল কালো এক জন্তু তাদের ধাক্কা দেয়। অন্য দিক হতে কালাচান গয়নাটি দ্রুত চালিয়ে আসছে ।বলে তোমরা নদীর মাঝ হতে সরে যাও। ওদিকে দেও উঠছে অবস্থা খুব খারাপ হতে যাচ্ছে। বেশ কিছু নৌকা এলো মেলো ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই সব রূপ রেখা পাল্টে যায়। আল্লাহর নাম স্মরণ করে আসে বাহাদুর পুর। সেখানে ঘটে যায় এক সর্বনাশ কাণ্ড। জরিনরা বাড়িতে কারা সব নিয়ে গেছে এক দিনে। অনেক বাড়িতে দিন দুপুরে ডাকাতি হয়েছে। লোক জোনকে বেঁধে রেখে ও পূজার দেব দেবীর মূর্তির গায়ের গয়না উধাও। খবর গুলি এক দুই করে সকলের কাছে পৈৗছে গেছে। কত জন মিলে এ কাজ করছে কেউ দেখেছে কিনা সেটা জানতে বলেছ সকলকে। পরাণ মাঝি হুক্কা টানছে এখন কাজ নেই অবসর পেলে তামাক খায়। নৌকাটা ছেড়ে দিয়ে মনের সুখে চলে সে। ভাসতে ভাসতে কোথায় যাও মোবারক ডাকে মাঝি পার করে দাও কড়ি দিব। মোবারকের ডাকে ফিরে তাকালে কিছু গজার মাছের ঝাঁক দেখতে পায় পরাণ। অনিতা অদিতিকে বলেছে চল একবার কইলার টেক ঘুরে আসি। কেন মনে হচ্ছে ও খনে মিন্টু আছে। কি সব কথা বলিস তুই দেখ মন বলছে ওখানে আছে। নজরুল নদীর তীরে বসে আজ বেশ মাছ ধরছে মোমেনা অনেক দিন পর বাড়ির বের হয়েছে সেও ঘাটে আসে। নজরুল তাকে দেখতে পেয়ে বলে বস নৌকায়। এত দিন পরে বের হতে মন চাইলো মমেনা। না থাক মাছ ধরো তোমারে নিয়া আমি গুরে বেড়াবো। বন্দর খোলা রহমত গঞ্জ বাবনা তলায় কি হলো আজ এত প্রেম আগে ছিলো না। নারে বউ ছিলো অভাবের সংসারে খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাই। ভালোবাসা কোথায় রাখি কও। তোমার প্রতি বেশ অন্যায় হয়ে গেছে সেটা অনিচ্ছাকৃত অভাব অনাটনের কারণে। অনীক অদিতি রাজন বিমল অনিতা সকলে মিলে মিন্টুকে পরিচিত সকল জায়গায় খোঁজ করে। হিজল দীঘির গাঁয়ে মোহনরা আসে তোরা যে সব জায়গায় বেড়াতে যায় সবটাই দেখে। মোহনিয়ার চরে একটা দল ও বন্ধন দ্বীপে অন্য দল সারাটা এলাকা চষে বেড়ায়। না কোন সন্ধান মিলে না। ফেরার পথে সকলে কইলার টেকে যায়। পরিচিত সমতল ভূমির সবটাই দেখে বেশ খানিকটা দূরে। একটী কুঁড়ে ঘর দেখতে পায় বনের আড়ালে। বিমল গোবিন্দ রাজন একসাথে ঘরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রতন অনীক ও অদিতি বসে অপেক্ষা করছে। কিছুটা কাছে আসতেই দেখে কিছু লোক আসে পাশে পাহারা দিচ্ছে। ওদের সন্দেহে আরো ঘনীভূত হয়। মোহন তার এলাকার কিছু লোক নিয়ে অন্য পথে সেখানে আসে। অনেককে এদিকে আসতে দেখে লোক গুলো গুলি ছোড়ে। এখন বুঝতে বাকি থাকে না এখানে এমন কিছু আছে যেটা অনেকেই জানে না। অবস্হা বেগতিক দেখে ওরা কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে। পরে সেখানে গিয়ে দেখে অপরিচিত অনেক লোক আছে। সবার শেষে মিন্টুকে দেখতে পায় তাদের উদ্ধার করে। ওদের দুজনকে বেঁধে নিয়ে আসে বাকিরা পালিয়ে যায়। নদীর মাজা মাঝি পথে আসতেই  ডাকাত দলের সদস্যদের আরেকটি নৌকা দেখে। কিছু বলতে যাবে ওরা তাদের পাটাতনে মুখ বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়। সবার  প্রচেষ্টায় বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে সকলে। হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ হতে প্রাই দুমাস সময় লাগে। প্রতিদিনের ওদের কাজের বর্ণনা দিয়ে চলেছে। সকলে ওর কথা শুনে অবাক ও বোবা বনে গেছে কিছু করার নেই। তাহের আলী ও নাছিমা বেগম ছেলেটিকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। তাদের চোখ মুখে অশ্রু বয়ে চলেছে  অবিরাম ধারায়।
--------------------------------------------------------------হাসিনা একমাত্র ছোট বোন ভাইকে হারিয়ে পাগল প্রায়। আমিন খাঁরা কিছু লোকের সাথে মিশে গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করছে। সাথে মেম্বার ও তার ছেলে পেলেরা আছে। নছিরন জয়নালকে নিয়ে বেড়িয়েছে বাবাকে দুদিন হতে বাড়িতে ফিরছে না। তালেব হালদার বাবনা তলায় গেছে প্রতিদিনের ন্যায়। লোক মুখে শোনা যায় বাবনা তলায় সন্ধ্যার সাথে সাথে কারা যেন নদীতে নেমে আসে। নদীতে মাঝি ও ঘরে ফেরা লোকদের কাছে হতে সব কিছু কেড়ে নেয়। আবার কাউকে তুলে নিয়ে বন্দী করে রাখে। শোনা কথায় বিশ্বাস করতে পারছে না অনেকে। অনিতার পরিবার তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে ছেলে দেখছে নিজেদের মধ্যে সেটা কেউ জানে না। ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদের শাদি দেওয়া সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে পরে। কহের অনেক দিন পরে শিমুল তলীর ঘাটে এসে বসেছে। নিজেকে যখন ভীশন একা লাগে তখনি নিজেকে ফিরে পেতে এখানে আসে। পরিবারের কথা বেশ মনে পড়ছে আজ বেশ অচেনা মনে হয় পরিবারের লোকগুলিকে। জোসনার মুখটা বার  বার কেন সামনে ভেসে উঠছে। নেকের সাথে হালিমার কথাও মনে হয়। বেশ অস্থির দেখায় কহেরকে। নিজের সাথে যুদ্ধ করে যেন পেরে উঠছে না কিছুতেই। নিজের অজান্তেই নৌকায় চেপে বসে হেদায়েত বলে। আরে কহের দোস্ত কোথায় ছিলা কত দিন তোমায় দেখি না। মন খারাপ কথা কও না কেন বলতো কি হয়েছে। চাচারে দেখলাম একা ছিদামের দোকান ঘরে। হুম মনটা খারাপ তয় আমার সাথে তোমার দেখা হইছে কাউরে বলো না। সাজনার বিলে নেমে যায় কহের হেদায়েত ওর হন হন করে চলে যাওয়া দেখে অবাক হয়। হালিমার খবর নিতে একবার বন্দর খোলা যাবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো হরিণার বিলের দিকে যাবে ভাবছে। আবার বলে না বাবনা তলার কাজটা করে আসি। কাজ শেষ করে আসতে রাত হয়ে যায় আন মনেই বন্দর খোলার দিকে হাঁটছে। সারাদিনের খাটুনিতে শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে। পকেটের যা হাল তাতে ভালো কিছু খাওয়া কঠিন হবে। হাটতে হাটতে বাঁশ খালিতে আসে মেহের আলী। তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক জন ফকিরের কাছে এসেছে। রুবেল তাকে দেখে বলে বাবারে তার অসুখ কত দিন হতে বছর খানেক হবে। আমার যতটুকু চেষ্টা আমি করবো একটা বৈঠক দিতে হবে শরীর হতে মনের অসুখ বেশি। চিকিৎসায় বেশ টাক পয়সা খরচ হবে ভেবে দেখো কি করবা। চিকিৎসা করুন তাকে কিছু টাকা দিয়ে যায় সকালে বাড়িতে যাবে রুবেল। কহরে সব কিছু দেখে দূর হতে। তারা চলে যাবার পর রুবেলের কাছ হতে সকল বিষয় জানতে চায়। জোসনা ও মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে চুপিসারে গিয়ে একবার দেখে আসবে ভাবছে। মানুষের জীবনের বিচিত্র রূপ ধারণ করে ক্ষণে ক্ষণে পালটায় গতি পথ। যে কথা সেই কাজ আড়া আড়ি ফসলি খেতের মাঝ দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে কহের। বেশ কিছুটা পথ আসার পরে কাদের যেন ফিস ফিস শব্দ শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়ায়। বেশ নির্জন জায়গাটি চারি ধারে গাছে ঘেরা তার ভিতরে একটি ঘর দেখতে পায়। কাছে গিয়ে দেখতে চায় কারা এখানে বেশ লোক জন আছে বুঝা যাচ্ছে। এখান হতে সব দিকে যাতায়াত করা যায়। নদী পথে খুব সহজে ও সড়ক পথে  কিছু সময় অতিবাহিত করলে হয়। বেড়ার ফাঁক দিয়ে যেটা দেখলো তাতে জ্ঞান হারিয়ে যাবার উপক্রম। নিজেকে কোন রকমে সামলে নিয়ে রাস্তায় উঠে। জায়গাটা ভালো করে চিনে রাখে লোক মুখে শুনতে পায় মীরের চর এটা। মোহন সবজি নিয়ে বাজারে যাবে। রাস্তায় কহেরকে দেখে জানতে জায় কোথা হতে এলো। কহের তার সাথে কথা বলে আবার চলছে দুপুরে বাড়িতে আসে। তালেবকে ভাবি কোথায় বলে তুমি অনেক কিছু জানো না তারা বাড়ি ছেরে চলে গেছে। বাবার সাথে কি নিয়ে ঝগড়া হয়। হনুফা খাতুল জানতে চায় কে এসেছে তালেব বল তিনি বাড়ি নেই। কহের মায়ের কাছে গিয়ে বসে সব খবর জানতে চায়। তিনি সব কথা খুলে বলেন কি কি ঘটেছে। দবির মাতবর বাড়িতে ফিরেছে কই সব। বাড়িতে মানুষ জন নাই নাকি? কহের বেড়িয়ে আসে বলে মা আসি। তালেবকে বলে কেন আসছে আমি মরে গেছি নাকি দেখতে। বলেই তার মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। হনুফা বলে তুমিতো চাও না ছেলেরা তোমার বাড়িতে থাকুক আমাকে দেখতে আসছে। কথা কাটা কাটির এক পর্যায়ে মাতবর অসুস্থ হয়ে যায় তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসায়। কহের বলে আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি তালেব তুমি বাবাকে দেখো। তুমি দেখো রক্ত কি কখনও রক্তের সাথে বেইমানি করতে পারে। ছেলে ঠিকই তোমার জন্য বেরিয়ে গেছে। শোন আমাগো কিসের অভাব বলো আল্লাহ ভালো রাখছে। ছেলে মেয়ের সুখ শান্তিতে আমাগো সুখ আমি বলি কি তুমি হালিমারে বিয়া করতে মত দাও। রাস্তায় খবরটা ছড়িয়ে পড়েছে দবির মাতবর অসুস্থ বাড়িতে লোক জনের আনা গুনা বাড়তে থাকে। জহের জোসনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে হতে ফিরছে। তখন অনীক বলে জহের ভাই শুনলাম চাচার অসুখ পরলে একবার দেখে যাইয়ো বলা যায় না যদি কিছু হয়ে যায়। জোসনা বলে চলো বাবাকে দেখে আসি কিছু ফল কিনে নিজেদের বাসায় আসে। বাড়িতে এসে দেখে অনেক লোক জন কিছুটা ভয় পেয়ে যায় বড় ধরনের কিছু হলো নাকি। জহের ভীড় ঠেলে বাবার কাছে যায় ডাক্তার তাকে দেখছে তার চাচাও এসেছে। জোসনা তার মাথায় হাত রেখে বলে বাবা ও বাবা দেখেন কে এসেছে কি হয়েছে। ডাক্তার কিছু ঔষধ পত্র দিয়ে জহের ও তার চাচাকে বাহিরে আসতে বললেন। দেখুন যা দেখলাম তাতে তার এই বয়সে বেশ খাটুনি শরীরে সহ্য হয় না। তাছাড়া সে কোন বিষয়ে বেশ চিন্তা করছে হার্টের অবস্থা ভালো না। নিয়মিত সকল ঔষধ পত্র খাওয়াবেন। কোন ভাবেই উত্তেজিত হওয়া চলবে না। কহেরকে দেখে জহের বুকে জড়িয়ে নেয় ভাই আমার কত দিন পরে তোকে দেখলাম। সকলে চলে গেলে দুই ভাইকে নিয়ে বসেছে আইন উদ্দিন। দেখ বাবারা তোমরা বড় হয়েছো। তোমার বাপের বয়স হয়েছে  তোমরা ছাড়া কে আছে তার। হয়তো রাগের মাথায় কিছু কথা বলেছে তা ভুলে সবাই বাড়িতে ফিরে আস। জোসনা সবাই কে ডাকে শুনছেন দেখেন বাবা কেমন করছে সকলে তার কাছে আসে। জহের ডাকে বাবা কি হইছে তোমার আমরা ফিরে আইছি তুমি শান্ত হও চোখ মেলে তাকাও। ধরা ধরি করে উঠে বসানো হয় তাকে দুচোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তার চাচাকে রাতে রেখে দেন সকলে মিলে পুনরায় বসবাস শুরু করেন। ছেলেরা বাহিরে চলে গেলে আইন উদ্দিন ভাইকে বুঝায় আমি সব শুনেছি মেয়ে খারাপ না। তারা আমাদের আত্মীয় হয় এটাও জেনেছি কহেরের জন্য সে অসুস্থ হয়ে বিছানা ধরা। বিষয়টা আমার উপর ছেরে দাও যেটা ভাল হয় সেটাই করবো। অনীক ও মিন্টু বসে আছে স্কুল শেষ করে কোচিং করার জন্য। স্যার বলেন আজকে কাজ আছে পড়াবে না। বলে চল হেটে বাড়িতে যাই আসার পথে ওরে যেখানে আটকে রেখেছে সেখানকার কথা বলছে। গাড়িতে চেপে দুজনে অনিতাদের বাড়িতে আসে। লিয়াকত বলে কিরে মিন্টু কেমন আছিস। বাড়ির সকলে ভালো আছে জি ভাই জান ভালো। যা ভিতরে যা অনীক বলে অনিতা আছে নাকি আছে দেখ আমি দোকানে যাব। মোমেনা খাতুনকে দেখে সালাম প্রদান করে ভিতরে প্রবেশ করে ওরা। কিরে তোর এত দিন পরে গরীব মানুষদের কথা মনে হলো। আসছিস যখন আমাদের দেখ যা। আর কবে না কবে দেখতে পাস তার ঠিক নেই। অনিতার কথা শুনে ওদের অবস্থা বেহাল কিরে তুই কি সব বলছিস। আর দেখতে পাবো না মানে কি। মা তোমার একথা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমিতো তোমাদের মাথার উপর বোঝা হয়ে গেছি না। যে হারে ছেলে দেখা শুরু করেছো আমাকে বিদায় করতে পারলেই বেঁচে যাও। শোন আমার লেখা পড়া নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করছি না। এর পরেও তোমরা বাড়া বাড়ি করলে আমার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। কাকী তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না পাগলী একটা। ওর বিয়ের চিন্তা আমার উপর ছেড়ে দাও আমরাতো আছি। পরে আসার কারন জানতে চায় মিন্টুও বুঝতে পারবে কি করে দিন পার করছে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার কাজটা করে দিলো অনিতা। অনীক ওদের সাহস যোগায় এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। সামনে পরীক্ষা সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। ফেরার পথে অনীক ভাবে ওদের দুজনার সংকল্প কতটা দৃঢ়। এক জন তার ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবারের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে চলছে। সালাম এমন ভালোবাসাকে কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন। কি ভাবছিস কই নাতো তেমন কিছু না দ্রুত যেতে হবে।------
তোকে একটা কথা বলি হুম বল অদিতি তোকে পছন্দ করে নারে কে বলেছে তোকে। বুঝি সবি কিছু বলিনা তোমাদের চাল চলনে সব বুঝা যায়। চলতো দোকানি গিয়ে কিছু খাই বেশ খুদা পেয়েছে। দেখ দেখ কি সুন্দর ফুল ফুটেছে বেশতো দেখতে। আমার লোভ হচ্ছে তুলে নিব নাকি কার না কার ফুল বলে ঝামেলা হবে। চলতো দেখি আগে ওমাে এতো অদিতিদের বাসার পাশের জমি। দেখ যদি তার সনে তোর দেখা হয়ে যায় থাক চল দেরি হয়ে যাবে। বাগান দিয়ে চলতো বেশ কিছুটা পথ আসার পরে সেই স্থানটির কাছে এসে থেমে যায়। দেখে লেখা আসলেই মারা যাবি এর আগেও এখানকার চিত্র তার মনে আছে। ময়নার বুকে বহে ব্যথার ঢেউ তার কথা শোনার মত পাশে নেই কেউ আহারে ময়না। দিন দিন তার আকৃতি ছোট হতে থাকে মানুষের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সে। প্রতিনিয়ত তার বুকের জমিন দখল দারদের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। হাসু মোল্লা ছেলেকে নিয়ে সদরপুর বাজারে দোকান দিয়েছে এখন তার পারিবারিক অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। রহিম ব্যাপারী পরিবার নিয়ে বেড়াতে বেড়িয়ে। হেমন্তের এই সময়ে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। পরাণ মাঝিকে নিয়ে তারা শীমূল তলীর ঘাটে আসে। বিভিন্ন জিনিস পত্র কিনে ফেরার পথে বাহাদুর পুরে হুজুরের বাড়ি হয়ে যায়।মনির খাঁ বিভিন্ন জনের কাছে হতে জানতে পেরেছেন গ্রামের কিছু খারাপ লোক চুরি ডাকাতি সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তিন চার জন লোককে রেখেছেন কোথায় কি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেটার সব খবর তাকে দিতে। তাহের আলী নতুন করে ঘর বাড়ি ঠিক করছে বেশ লোক জন নিয়ে দ্রুত কাজটি শেষ করতে চায়। সব দিকে সে ভাবেই তদারকি করছেন সামনে বর্ষা এসে গেলে বেশ কষ্ট হবে। অনীকদের পরীক্ষার ফলা ফল হয়েছে সকলে পাশ করেছে। ভাবছে সকলকে নিয়ে একটা খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করবে বিকেলে বন্ধুদের থাকতে বলেছে। মাজাহারুল ও আইনউদ্দিন দোকানে বসে আছে একটু আগেই মাজাহারুল দোকান বন্ধ করেছে। পরাণ কিছু ফল ও মিষ্টি নিয়ে শ্বশুর বাড়ি আসে তাদের সুখবর দিতে। তাদের ঘরে নতুন মানুষের আগমন ঘটবে সকলের জন্য দোয়া করতে। খবরটা শুনে সকলে বেশ খুশি হয় তার সাথে একটি আবদার নিয়ে এসেছে। অনীককে কিছু দিনের জন্য নিয়ে যেতে বলেছে শেফালি। পরাণের সাথে পাঁচ্চর আসে আসে অনীক। বিকালে ঘুরতে বেড়িয়ে সোনাই মুড়ির বিলে গিয়ে বসে। ভীশন মন খারাপ হয়ে আছে কত দিন অদিতির সাথে দেখা নেই।  প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে একাকী অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এবার অন্য দিকটায় বসেছে অনিতা ও রাশিদা ওকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। কথার ধ্যানে থাকায় কেউ দেখেনি  বসো একটু।  ডাক্তার বলেছে খুব শিগ্রই সেরে উঠবে তুই চিন্তা করিস না। কথার মাঝে বাদাম দিয়ে গেলো ফেরিওয়ালা কে দিছে বাদাম ইশারায় দেখিয়ে বলে উনি। অনিতা দেখে অনীক বসে আছে রাশিদাকে বলে চলতো দেখি কে। অনীককে দেখে বলে কিরে তুই এখানে একা বসে আছিস। হুম সাথী নেই বলেই একা তোরা কোথা হতে এলি। হাসপাতালে গিয়েছিলাম আমার ফুপুর বাড়ি এখানে তাই বেড়াতে এসেছি। তোকে পেয়ে ভালো হলো সন্ধ্যা হয়ে এলো আমাদের একটু বাড়িতে দিয়ে আয়। রাশিদাকে রেখে অনিতাকে নিয়ে সামনে চলছে জানতে চায় কে হাসপাতালে। বলে অদিতি দুদিন হতে ভর্তি আছে পরে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে ।ডাক্তার বলেছে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। অদিতির সব কিছু জেনে নেয় বলে সকালেই তাকে দেখতে যাবে ।চাইলে আসতে পারিস মিন্টু থাকবে। সকাল সকাল দোকেনে অনীককে দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছেন। মাজাহারুল সাহেব কি ব্যাপার বলে ভয়ের কারণ নেই। আমার এক বন্ধু হাসপাতালে ভর্তি তাকে দেখতে যাব কিছু টাকা লাগতো বাবা। শোন কিছু ফল নিয়ে যেয়ো অন্য কিছু নয় তার পাশে বসে দোয়া দুরূদ পড়বে আমি কিন্তু পাঁচ্চরে ফিরবো। অদিতির বেডের কাছে গিয়ে অনীক মাথায় হাত রাখে ও তাকায়। চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পরে কি করে তাকে সান্তনা দিবে ভেবে পায় না অনীক। কত দিনের জমানো কষ্ট কত কথা মনের মাঝে। অনিতা ও মিন্টু বলে আমরা একটু আসছি। অদিতিকে উঠিয়ে বসায় কিছু বলতে যাবে তার বুকে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে। অভিযোগ কেন তাকে দেখতে আসেনি খবর নেয়নি। অনীক বলে এমনটা আর হবে কখনও না। যত কষ্ট হউক তোমার সাথে অমার যোগাযোগ থাকবে। ফল দেয় ডাক্তার বলে অবস্থা অনেক ভালো আগামী কালকেই বাড়িতে যেতে পারবে। জোসনা ও কহেরকে হনুফা বেগম পাঠায় বন্দর খোলা। হালিমাদের বর্তমান অবস্থা দেখে আসতে। কিছু মিষ্টি ও ফল নিয়ে ওরা দুপুরে আসে বন্দর খোলা। রতন উঠানে দাঁড়িয়ে ছিলো হোসনেআরা কে গিয়ে য়ে বলে। মা ওমা মা দেখতো আমাদের বাড়িতে কারা যেন আসছে মনে হয়। ভ্যান হতে নামলো রতন কাছে যায় জোসনাকে দেখে বলে বুবু কেমন আছো। আমি ভালো আছিরে সবাই ভালো আছেনি। কথায় কথায় ভিতরে আসে কহের সালাম দিয়ে সমাচার জানতে চায়। হোসনেআরো বলে আল্লাহ রাখছে বাপু বসো। খালা হালিমা কই ওরে দেখছি নাতো।পাশের ঘরে সুয়ে আছে ওর শরীর ভালো না। কহের যায় জোসনার সাথে হালিমা বোন কেমন আছো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কহের গিয়ে মাথায় হাাত দিয়ে বলে হালিমা আমি আসছি। একবার তাকাও আমার দিকে কহেরর কন্ঠেরস্বর শুনে কেমন জানি করছে। ধরে বসায় অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে কহেরর পানে। জোসনা বলে আমি আছি তোরা কথা বল। হালিমাকে বাহিরে নিয়ে আসে জোসনা জানতে চায় কি বলেছে কবিরাজ। মেহের আলী বাজার হতে সব জিনিস নিয়ে আসে। কবিকালে কবিরাজ বাড়িতে আসে। তাকে কিছু জিনিসে খেতে দেয়ে ও কিছু জিনিসে পরে দেয় শরীরে রাখতে বলে। বলে উনি কি হয় সে আমার কাছে অনেক বিষয়ে। জানতে চেয়েছে আপনাদের রোগীর বিষয়ে। খালা খালুর সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলে সন্দ্যায় বাড়িতে ফিরে দুজনে। তুহিন তার দল বল সহ দিন দিন বিপদ জনক হয়ে উঠছে। অনেকেই তাদের লোক জনেকে দেখেছে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকতে। চেয়ারম্যান সহ আরো অনেকে আসে থানায়। সোবাহান সাহেবের কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সোবাহান সাহেব সব শুনে বলেন অমিও শুনেছি। সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে কাউকে গ্রফতার করতে পারিনি। এবার বিষয়টি খতিয়ে দেখার সময় হয়েছে চিন্তা করবেন না আামি দেখছি বিষয়টি। আইন উদ্দিন লোকমারফত মেহের আলীকে দেখা করতে বলেছেন জরুরী দরকার আছে। শিবচরে বাজারের কাজে এসে তার সাথে দেখা করে যায়। পারিবারের খবরা খবর নেয়। সব শেষে হালিমার কথা জানতে চায়। তিনি বলেন চিকিৎসা চলছে বাকিটা আল্লাহর হাতে। পরে ঢাকায় তার পরিচিত এক জন ডাক্তারের কাছে যেতে বলেন। ওদের বিষয়টি নিয়ে পরে আমারা কথা বলেবো। সকলে মিলে বসেছে চেয়ারম্যান সাহেব মিটিং ডেকেছেন কি নিয়ে আলোচনা কেউ জানে না। অনেক এসেছে তেমন কেউ বাকি নেই তুহিন লালুও আছে ।বড় বাবু ছদ্ম বেশে লোক পাঠিয়েছেন। মানিকের কাছে জানতে চায় মনির খাঁর মিটিং হচ্ছে কোথায়? মানিক লোকদের আগে দেখেছে বলে মনে হয় না। আপনারা কোথা হতে এসেছেন ঠিক চিনতে পারলাম না। আরে ব্যাটা তোর কাছে যা জানতে চাই তাই বল বেশি কথা বলিস কেন। সে বলে আমি অন্য এলাকার লোক তারে চিনি না। লোক গুলি ভিতরে আসতে থাকে পথে শ্যামার সাথে দেখা। তাকে চেয়ারম্যানের বাড়ি কোনটা সে বলে ঐ দিয়ে যান। মানিকের লোকগুলিকে সন্দেহ হয় সে সাইকেল নিয়ে। দ্রুত অনীকদের খবর দেয় তাদের সংগঠনের ছেলে পেলো বের হয়ে যায়। হেদায়েত ও কহের এক সাথে কাজ করে এটা কেউ জানে না। লালুকে আসতে বলে হেদায়েত চলে আসে। কহের অনীকরা তাদের পিছু নিলে লোক গুলি দ্রুত প্রস্থান করে। সকলে কাপুড় দিয়ে মুখ ডেকে নেয় ও নদীর পাশে রাখ ডিঙ্গিতে উঠে। পাশেই গয়না আগে হতে রাখা থাকায় ধরা যায়নি। জরিনাকে আসতে দেখে কহের তার কাছে যায় ও জানতে চায় কি হয়েছে। বলে সব কথা পরে হবে এখন মিটিং চলো। নতুন করে সিদ্ধান্ত হয় গ্রামে পাহারা বসাবে পালা করে সকলে পাহারা দিবে। কোন নতুন লোককে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কাউকে সন্দেহ হলে যারা দায়িত্বে থাকবে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গ্রাম বাসিকে রাতের বেলায় একটু সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। সব শেষে থানার লোক হেদায়েত জরিনা ও কহের আসে। চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে। তুহিন ও লালুকে বলে লোক জন আসছে কিছু চা নাস্তার ব্যবস্হা করো। সকলে যার যার মত করে বাড়ি ফিরছে। অনেক লোক জনের মধ্যে হতে মানিক একটু দূরে গিয়ে বসে পরে। কহের ও অনীক তার সাথী হয় কি সমস্যা বলতো বলে কালকে বলবে। মিন্টু তার মাকে অনিতার কথা বলেছে সে মাঝে মধ্যে তাদের পরিবারকে এসে দেখে যায়। কলেজ হতে ফিরছে রাজন ও বিমল বসে আছে। হাসিনা ও নাছিমা বসে আছে দোকানে হঠাৎ করে নাছিমার শরীরটা খারাপ হয়েছে। ওরা এগিয়ে যায় সমস্যা কি জানার জন্য অদিতি ও অনিতা রিকসা দিয়ে এসে নামে। তাকে ডাক্তার দেখানো লাগবে মিন্টু বাজারে গেছে ফিরতে বিকেল হবে। অনিতা বলে তুই কি যাবি আমার সাথে হাস পাতালে চাচীকে নিয়ে যেতে হবে। হসিনাকে বলে ডয়ারে টাকা আছে নিয়ে আয়। তুই বাড়িতে থাকিস আমরা ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে আসবো। রাস্তা এদিকে হওয়াতে লোক জন যতটা পারে নদী পথটা এড়িয়ে চলে। মোহন গঞ্জে যাবে ভ্যান নিয়ে আসছে ওরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। ওদের দেখে কিরে কি? সমস্যা বলে চাচীকে হাসপাতালে নিতে হবে। চল উঠে বস ভাই দ্রুত চলো হাসপাতালে মোহন সব সময় আমাদের বিপদে এসে হাজির হবে। ওর কি তৃতীয় চক্ষু আছে সেটা দিয়ে আগে থেকে দেখে ফেলে সব কিছু। সব দেখে শুনে ঔষধ পত্র দিয়ে দিলেন বেশি চিন্তা ভাবনা করতে নিষেধ করছেন। ডাক্তার দেখিয়ে বের হয়েছে তখন অনীক তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিরে তুই  হুম শুনলাম তোরা সমস্যায় আছিস তাই চলে আসলাম। মোহনকে ধন্যবাদ তুই কাজে যা বাকিটা আমরা দেখছি। বাসায় ফিরে সকলে অদিতিকে বলে কেমন চলছে হুম ভালো। শোন তোরা বিকেলে বাসায় ফিরবি বাড়তি কথা হবে না। সেটা কি করে হয় সকলে চিন্তা করবে সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও আমি নিয়ে যাব তোদের। অনিতা চাচির বাসায় গিয়ে রান্না বাড়া। করে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে সকলে। দরজায় কে নক করে হাসিনা বলে তুমি থাক আমি দেখছি। মিন্টু কিরে এত সময় কি করিস তুই। আচমকা অনিতাকে দেখে সে অবাক! তুই এখানে আসতে নিষেধ আছে নাকি। না নেই তখন নাছিমা সব কথা খুলে বলে। অদিতিকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে আমেনা বেগম। বলে সবিতা কোথায় তুমি জলদি আস দেখ কে আসছে বাসায়। শেফালী ও সবিতা বেড়িয়ে আসে বলে মা ও হচ্ছো অদিতি আমরা এক সাথেই পড়ি। ওকেতো কার বিয়েতে দেখে ছিলাম হুম আইন উদ্দিন চাচার মেয়ে। যাক ভালো করেছিস আস মা তুমি ভিতরে আস। বিকেলে তাদের কাছে হতে বিদায় নিয়েছে অনিতা এসে গেছে কিরে তুইও আছিস কেন বাড়ন নাকি। ভ্যানে করে ওদের বাড়িতে পৌছে দেয় দরজার সামনে হতেই চলে আসতে চেয়েছিলো। রাশিদা বলে মেহমান বাহির হতে চলে গেলে গেরস্হের অমঙ্গল হয়। অগত্যা কথা না বাড়িয়ে ভিতরে আসে স্বল্প সময় থেকে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। হেদায়েত সকালে ব্যাপারির বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছে জমির উঠানে বসা তাকে দেখে ডাকে কি বিষয় তাইতো আমাকে ডাকার কথা না। দিদা দন্দো নিয়ে ভিতরে যায় সালাম দিয়ে সমাচার জানতে চায়। সকল খবর ভালো। অনেক দিনের পুরানো কথা তুলে জানতে চায় তোমার বাবার খুনের কোন রহস্য জানতে পারলে। বলে চাচা জান সব জানতে পারিনি তবে ধারণা করতে পারছি কারা এর সঙ্গে জড়িত। থাকো কোথায় বাবার ভিটায় বন্ধুর জন্য মনটা সব সময় কাঁদে চেষ্টা করছি দেখি কি হয়। সখিনা কই গেলা মেহমান আসছে নাস্তা দাও তুমি এদিকে আইস না। পকেট হতে কি যেন বেড় করতে যায় তার আইডি কার্ডটি পরে যায়। শরিফা নাস্তা হাতে বারান্দায় আসে বলে বাজান আপনিও নাস্তা সেরে নেন। শরিফা বলে তুমি তাহলে সিআইডির লোক এত দিন আমাকে মিথ্যা বলছো কেন। দেখ তুমি ছোট মানুষ আমাদের পরিচয় সব সময় দিতে নেই এতে সমস্যা বাড়ে। কোন রকমে সেখান হতে বেড় হয়ে আসে বলে পরে কথা বলবে এখন জরুরী কাজ আছে। জমীর ব্যাপারীকে বলে একটু সাবধানে চলা ফেরা করবেন লোকজন বেশি দোকানে ভিড়তে দিবেন না। সময়টা বেশ খারাপ সাবধানে থাকবেন সব সময়। বেশি রাতে বাড়িতে ফিরবেন না আমি যাই। তাহের শহর হতে বাড়ি ফিরছে কিছুটা সময় বেশি হয়েছে। চারি দিকে ঘন অন্ধকার কিছু লোককে তার সন্দেহ হয় প্রথম হতে। ভয় ভয় করছে। বাহাদুর পুর এসে থামেন এখানে অনেকে আছে পরিচিত তাদের কাউকে পেলে ভালো হবে। তালেব মাঝি ও লালুকে দেখতে পায় সাথে ছিদাম ওরা হুজুরের বাড়িতে উরশে আসে। ছিদাম ভাই কে ডাকে এত রাতে লালু দেখতো কে। পরে দেখে তাহেরকে বলে দাদা তুমি কোথা হতে এলে শহর হতে উঠো ভ্যানে বাড়ি যাব। পিছনের ভ্যানে থাকা লোক গুলি চলে যায়। মিন্টু পড়ছে এত রাতে লালু কেন ডাকছে দরজা খুলে লাইট মারে। বলে কি হলো লালু দেখ তোমার বাবা এসেছে তাকে ভিতরে নাও। মিন্টু মাকে ডাকে তাকে ভিতরে নিয়ে যায় পরে সব কথা খুলে বলে। লিয়কত দোকান হতে ফিরছে কি মনে করে ভিন্ন রাস্তা ধরেছে তার সাথে কলিম ছিলো অনেকটা পথ আসে দুজনে। মীরের চরে একটা দোকান দেখছে সব দিক হতে ভাল হয় টাকা লাগবে বেশ সেটাই ভাবতে থাকে। এইটা কোথায় আসলাম কখনো দেখেনি কাদের কথা শুনতে পায় ফিস ফিস করছে। সন্দেহ তার মনেও দানা বাঁধে একটা ঘর দেখে জঙ্গলের ভিতরে। এরা কি করছে কত লোক এখানে। ঘরের পিছনে কান পাতে শুনতে পায় কার যেন বলছে। দুটি তিনটি গ্রামে এক সাথে যেতে হবে লোক বল বাড়াতে। এবারের অপারেশন দায়িত্বে থাকবে হাফিজের তার কথা মত আমরা আমাদের পরিকল্পনা করবো। আকবর বলে কিরে হাফিজ সব ঠিক আছে সর্দার একটা ঝামেলা আছে। সেটা আবার কি প্রতি গ্রামে চেয়ারম্যান রাতে পাহারাদার বসিয়েছে। চর দখলের কি হলো অনেকের জমিন জাগছে তারা কাগজ পত্র নিয়ে তহসিল অফিসে আসা যাওয়া করছে। নারে এভাবে চলছে না লোক জন চালাক হয়ে গেছে বড় দান মারতে হবে। ঠিক আছে বাবনা তলা হয়ে নলগোড়া কালকের মিশন। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে দেখে অনেকে বরে হয়ে যায় বাড়িটা হতে। হাফিজ ও আকবর চারি দিক দেখে রাস্তায় উঠে। ওর হাত পা যেন ঠাণ্ডা হিম হয়ে গেছে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এরা কি মানুষ। বাড়িতে আসার পথে দেখা হয় রুস্তম ডালির সাথে। কিরে বেটা শুনলাম দোকান নিবা কোন দিকে যাবে। চাচা নিবত এখনও মন মত পাই নাই মীরের চরের দিকে দেখ।সস্তা ওদিকে নতুন চর জাগছে লোক জনের সমাগম বেশি হবে। তোর মুখটা বেশ ভাড় কেরে বেটা চাচাগো দুনিয়াতে মানুষ আর মানুষ নাই। সব অমানুষ পশু হয়ে গেছে এখন। বন্ধুরা মিলে অনেক দিনে পরে বন্ধন দ্বীপে এসেছে কিন্তু এখন যেন কেমন কেমন লাগছে। প্রকৃতির নীলা ভূমিতে অপরূপ সৌন্দর্য ঘেরা ছিলো কিছুটা কমেছে। অনেকের অনাগুনা হয়ে এখানে বিভিন্ন জনের পাদুকার চিহ্ন পরে আছে। অদিতি অনীককে কত কথা বলতে চেয়েছে কাছে পেয়ে কেমন শান্ত কেন আজ। কিছু বলছো না আমার প্রতিটি শিরা উপশিরায় রক্ত কণিকায় তোমাকে চায়। এক মুহূর্ত ভাবতে পারি না তুমি ছাড়া শয়নে স্বপনে। তোমায় নিয়ে ভাবি কবে আপন করে নিবে। সবি বুঝি শোন আমাদের জীবনে আবেগের সাথে। বিবেক টাকে কাজে লাগাতে হবে। তোমাকে ছেড়ে আমার কি দূরে থাকতে মন চায় না তবুও থাকি। নিজেদের পড়া লেখা শেষ করি ততো দিনে। আমি অন্যের ঘরে চলে যাই তুমি সুখী হবে তাহলে না। বলে অভিমান করে চলে আসে অনিতা বলে কিরে কি হলো তোদের। ধুর বলিস না অপদার্থ ওকে কেন ভালোবাসতে গেলাম সেটাই বুজছি না। তুই বেশ ভালো আছিস সে তোকে বুঝে সব সময়। মন মত থাকার চেষ্টা করে ওর পরিবারে তোকে নিয়ে আলাপ হয়। মোহনিয়ার চরে এসে অনীকটা আমূল পরিবর্তিত। মিন্টু বলে কিরে তোমার কোন সমস্যা। বলিস না মেয়ে মানুষ এতটা অবুঝ হলে চলে কি করে। বলতো এখনি বাবাকে সব কিছু বলা যায়। ব্যবসা আগের মত নেই জায়গা জমিনের ঝামেলা। প্রতিনিয়ত লোক জন আসা যাওয়া করে ঠিক মত সময় দিতে পারছে না। মানিক অনেক কিছু দেখে রাখে দোকানপাট নিজের করতে পেরেছে এতে কিছুটা রক্ষা। দিন দিন আমার পড়ার চাপ বাড়ছে বয়স বাড়ছে সব দিক সামলে নিতে হবে। সময় লাগবে সেটা না বুঝলে কেমন করে হবে। সব জিনিস নিয়ে পাগলামি করলে চলে। নিজের অবস্থাটা শক্ত করতে হবে তার পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে। তালেব অনেক দিন পরে নদীতে নেমেছে এখন নদী আর অগরে মত নেই। মানুষের জীবন যাত্রা অনেকটা সহজ হয়েছে। ভরা বর্ষা মৌসুম ছাড়া আগের ময়নাকে সহজে দেখতে পায় না কেউ। শামীমকে কানাই বেশ করে ধরেছে তার ছেলের জন্য একটা মেয়ে দেখে দিতে। বয়সটা দিন দিন বেড়াই চলেছে তার কর্ম ক্ষমতা হারাচ্ছে। অকিল কিরনীকে নিয়ে বাজার হতে ফিরছে পথে কানায়ের সাথে দেখা কি বিষয়। কোথা হতে ফিরলে দাদা বলো না অনেক দিন হয় গঞ্জের কাজটা সারা হয় না।  সাথে কে আমার ছোট মেয়ে মাস আল্লাহ বেড়িয়ে যাও বাড়িতে। অন্য সময় আসবো এখন কাজ আছে। তুমি আস একবার ছেলেদের নিয়ে ঠিক আছে শুক্রবার যাব বাড়িতে থেকে দরকারী কথা আছে। হালিমাকে নিয়ে রতন আজ হাসপাতালে আসছে শরীর বেশ খারাপ হয়েছে। কহের বাজারের কাজ শেষে ফিরছে ভ্যানে ওদের দেখে নেমে যায়। কাছে গিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে। কেন তাকে নিয়ে একা বের হয়েছে। ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে বলেন তেমন কোন সমস্যা নেই চিন্তা করছে কোন কারণে। তাদের ভ্যান ঠিক করে দেয় বাড়ির পথে চলে জানতে চায়। ভাবতে ভাবতে কখন যে নদীর ঘাটে এসে গেছে।মনে নেই জরিনার ডাকে ফিরে তাকায়। কি হলো কহের বেশ উদাসীন মনে হচ্ছে হু।ম আমারে বলতে পারো যদি বিশ্বাস করো। হালিমার সব কথা খুলে বলে তার দুকুল রক্ষা করা লাগবে কোন  উপায় পাচ্ছে না। এই সামান্য বিষয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। আসামী ধরব কেমনে বুদ্ধি খাটাও তার জন্য। সব সময় মনডা পুড়ায় বুঝলে তুমি। শোন জরুরী কথা কই খবর পাইয়াছি আজ রাতে। নাকি শিমুল তলীর ঘাটে কারা ডাকাতি করতে যাবে। আমরাও যাব তাদের যাদি কাউকে চিনতে পারি। কি করতে চাও মাঝির ছদ্ম বেশে। কাম শেষে একবার তারে দেখতে যামু তুমি যাবে। আমার সাথে ঠিক আছে সময় মত চলে এসো ঘাটে। কানাই দুই ছেলেকে নিয়ে অকিলের বাড়তে আসে দেখে তারা বসেছে। অকিলদা বাড়ি আছো কে আমি কানাই আস খাইতে বসছি। তোমরা ভিতরে যাও আমি দেখছি। মারিয়া শ্বাশুরিকে নিয়ে আসে কি করো। তোমরা এখনও খওয়ান শেষ হয় নাই। কানাইকে দেখে রিতা চিনতে পারে কেডা কানাই না। হয় ভাউজ কেমন আছেন মেলা দিন পরে দেখা। ভালো আছি কি মনের  করে আসলা এদিকে। সে মরার পর তেমন আসা যাওয়া নাই  কি কমু। দুখের কথা তোমাগো বউটা মইরা গেলো। মানসে কইছে আবার সাদি করতে। বুকের ধন গোর মুখের দিকে চাইয়া সেটা হয় নাই। কাজের কথায় আসি শোন তোমার ছোট মেয়েকে আমার ছেলের পুত্র বধূ করে ঘরে নিতে চাই। সবি জান আমরা তিন জন মানুষ বাড়িতে কোন মেয়ে মানুষ নাই। আরিফা কই গেলা বাড়িতে কুটুম আইছে খাইতে দাও। মারিয়া কিছু খাবার হাতে নিয়ে আসে বৈঠক খানায় সবাই এই এখানে আসেন। কিছু মুখে দিবেন কথা কইবেন। খেতে খেতে কথা শেষ হয় দেখ ভাই তুমি কথাটা বলেছো ভালো।  আমরা একটু চিন্তা ভাবনা করি মেয়ের মতামত নিয়ে পরে জানাবো। তোরাব হাসিনাকে নিয়ে বাজরে এসেছে। ডাক্তার দেখিয়ে পরাণের দোকোনে বসা। মানিক এসে খবর দেয় মাহাজারুলকে। শেফালির শ্বশুর শ্বাশুরি বাজারে এসেছে। থাক এখন ঝামেলায় আছি পরে কথা বলে নিব। বিভিন্ন দিক হতে কারা কারা বিভিন্ন গ্রামে চুরি ও ডাকাতি করে বেড়ায় সব খবর আসতে থাকে। পাহারা বসানো পর কিছুটা কমেছে অনেকে বলেছে। এখন নাকি নদী পথ ও অপরিচিত লোক জন বেছে নিয়েছে তারা। লালু  কাজের জন্য বাবনা তলায় জায়  সেখানে গিয়ে  যে কথা বার্তা শুনতে পায়।  অশ্রু শিক্ত নয়নে ভেবে বলেে এখানে জেলে ও লোকদের নাকি বেঁধে নিয়ে যায়। সকল মাল পত্র নিয়ে ওদের ফেলে দেয় নদীতে। রাত গোঠা এগারো হবে কারা যেন এক জন। মাঝ বয়সী মহিলাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওদিকের লোক জন চিৎকার করছে ডাকাত পরছে গ্রামে। ডাকাত সাবধান হও সকলে। হনুফকে নিয়ে যাচ্ছে  ওদের হাতে ভারী অস্র্র। থাকায় তেমন কেউ সামনে আসার সাহস করছে না। লুকিয়ে সব দেখে হাফিজকে বলে ওকে নিয়ে নৌকায় তুল। সব মালামাল ভালো করে দেখে নিবে। তুহিন এখানে ছিলো এটা নিশ্চিত হতে পারে লালু। গতি পথ পরিবর্তন করে। জরিনাকে দেখে বলে আর কেউ আছে হুম কয় জন দুই। এতে হবে না ওরা সংখ্যায় বেশি অপারেশন করা লাগবে। হেদায়েত ও কহের তাদের সাথে যোগ গেদয়। লালু তাদের সব খুলে বলে। পরিবেশ বুঝে ওদের সাথে এখন কিছু করতে যাওয়া বোকামি ছাড়া অন্য কিছুই না। কৌশল করে ওরা দুজনে ওদের পিছু নেয় বাকিরা মীরের চরে যায়। দেখে ওরা দিক পরিবর্তন করে অন্য দিকে চলে। নদীতে বিভিন্ন লোক চলা ফল করছে। থানার বড় বাবু কিছু লোক পাঠায়। সকলের যৌথ অভিজানে এবার ডাকাত দল হনুফা ও তাদের কিছু সাথীদের ফেলে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায়। হনুফাকে উদ্ধার করে ক্লাবের কাছে নিয়ে আসে দুজন ধরা পরে। তবে তাদের কেউ কখনও গ্রামে দেখেনি। জহেরর পরিবার হটাৎকরেই হালিমাদের বাড়িতে আসে। দবির তার ভাইকে ডেকে সব কথা বলে রাখে। প্রয়োজনীয় কেনা কাটা সেরে নেয়। কহেরকে তালেব মাঝি নিয়ে আসার অপেক্ষা করছে সকলে। হেদায়েত ও কহের বন্দর খোলা হতে ফিরছে। রতন রাস্তায় ছিলো দেখে বলে চলো একটা খবর নিয়ে যাই। রতনের কাছে কিছু জানতে চাইবে তখন জহের বলে। ওনাকে নিয়ে ভিতরে আস সকলে তোমার জন্য বসে আছে। কি কও কিছুতেই বুঝতে পারছি না সেটা গেলেই বুঝবে। সকলকে দেখে কহের অবাক!হয়ে জানতে চায়। কারো কোন বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে নাকি। তোমরা আমাকে কেউ কিছু বলছে না কেন?জোসনা এসে তাকে ভিতরে নিয়ে যায়। স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজী চলে আসে দুপরে তাদের শাদির কাজ সেরে বিকেলে বাড়িতে আসতে চায় সকলে। মেহের আলী বলে ভাই সাহেব আজ আপনাদের কারো যাওয়া হবে না সকলে থাকবেন। হনুফা খাতুন বলে ভাই সাব সেটা কি করে হয়। বাড়ি ফাঁকা কেউ নেই চোর ডাকাতের উৎপাত বেড়েছে। পরে সিদ্ধন্ত হয় জহের জোসনার সাথে সকালে ওদের বাড়িতে নিয়ে আসবে বাকিরা বিকেলে বাড়ি ফিরবে। হনুফার কাছে অনেক কিছু  জানতে চায় তাদের আগে কখনও দেখেছে নাকি। তার কি কি জিনিস পত্র নিছে কত জন ছিলো ওরা। গ্রামে একটা গরম হাওয়া বইছে। আজ তিন দিন হয়ে গেলো তুহিনের খবর নাই। বিষয়টি সকলের কাছে দৃষ্টি কটু লাগছে একে অন্যের সাথে কানা কানী করছে তুহিন জড়িত নয়তো। নদীর চর নিয়ে দখল দারিত্ব হর দম চলে ।অনেকে মনে করছে এতো ভালো করতে গিয়ে খারাপ হলো বেশ। ওদিকে  অকিল কানাইকে বলেছে শ্রাবণ মাসের দশ তারিখ। কিরনীর সাথে রামুর বিয়ের দিন ঠিক করতে। হাতে সময় বেশি নাই সব মিলিয়ে দুই মাস সময় পাবে এর মধ্যে সব করতে হবে। হেদায়েতকে আজ ডেকেছে থানার বড় বাবু কেন কি কারণ কেউ জানে না। কথা শেষ করে থানা হতে বের হয়ে আসে পথে অনীকের সাথে দেখা। কোথায় ছিলে তুমি কেন?কোন সমস্যা নাকি। শোন বিকেলে আসবে হরিনার বিলে সাথে জরিনাকে নিবে জরুরী কথা আছ। ওরা অনেকগুলি জায়গা ঘুরে ওর চোখে যে সকল জায়গা পরে সন্দেহ হয় সব দেখায়। ভালো কাজ করেছিস রাতেই সকলে বসবো চিন্তা করিস না। জহের হালিমোদের নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। অদিতির পরিবার বিকেলে আসে তাদের বাড়িতে। সকলে মিলে সুন্দর ভাবে পরিবারটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে বলে। নদীর পারে তাদের কিছু জায়গা জেগেছে সেটা নিয়েও কথা হয়েছে। কাগজ পত্র গুছিয়ে নিতে বলেছে সকলকে। সকলে জানতে পেরেছে কহের গ্রামের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছে অনেকে আছে তদের সাথে। তারা সকল কাজ গুছিয়ে নিয়েছে খুব শিগ্রই। গ্রামের মধ্যে বিরাজ মান অশান্তি দূর হবে। তালেব মাঝিকে কারা যেন গাছের সাথে বেধে রেখেছে রাতে। জহেরদের বাড়িতে ডাকাতি করতে লোক আসে। কিন্তু সকলে জেগে থাকায় সেটা পারেনি। সকালে লাউ মাচার সামনে তালেবকে দেখতে পেয়ে সবাই আসে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ সেখানে গিয়ে। ওর কাছে কিছু কথা জানতে চায় সে তুহিনকে চিনতে পারে। আরো অনেকে ছিলো তারা এর পরে হিজল দীঘির দিকে যাবে বলেছে। হনুফার স্বামীকে খুন করা হয়েছে লালু হনুফার কাছ হতে তাদের বিয়ের ছবি দেখে। চিনতে পারে যে তুহিন ছিলো তার আগের স্বামী। লালুর হাতে একটা কাটা দাগ দেখে হনুফা বলে তোমা বাবার নাম কি। বলে জানিনো ছোট বেলায় তুহিনকে দেখিয়ে বলে সে আমাকে। তার কাছে লালন পালনে করেছে তার সাথেই থাকি আমি। লালুকে নিয়ে তুহিনের বাড়িতে যায় সেখানে লালু তার নিজের পরিচয় পায়। এই হনুফাই তার মা সেটাও জানতে পারে। মা ছেলের মিলনের মুহূর্তটায় সুখের হওয়ার কথা সেটা না হয়ে বেদনার্ত অশ্রুসিক্ত নয়নে হয়। হনুফাকে তার নিজের বাড়িতে রেখে আসে। তুহিন সহ অন্যদের খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে যায় লালু। হেদায়েত সহ ফিরে রাতে দেখা করে চেয়াম্যানের সাথে কহের সেখানে ছিলো। জরিনা সহ থানার বড় বাবু বুঝতে পারে। এখানে দুটি দল আছে যারা যোগ সাজসে অপকর্ম গুলি করে থাকে। বিভিন্ন জন জড়িত তাদের সাথে। তহসিল অফিসে গিয়ে দেখতে তাদের তিন বিঘা জমি জেগেছে। সপ্তাহ খানেক পরে তুহিন ফিরে আসে গ্রামে তার পায়ে সমস্যা হয়েছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। হেদায়েতরা গোপন বৈঠক করেছে থানার লোক আছে তাদের দল। সহ আরো কিছু নতুন লোককে নিয়ে গল গঠন কারা হয়েছে। শরিফা দোকান হতে বাড়ির পথে আসে কি মনে করে সে অন্য পথে পথ চলে। বেশ কিছুটা পথ আসার পরে দেখে কিছু লোক কি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে। জায়গাটা বেশ নির্জন লোকদের আগে দেখেছে বলে মনে হয় না। সামনে না গিয়ে বাড়িতে চলে আসে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। রাজন গোবিন্দ মিন্টু অনীক সকল বন্ধু মিলে বসেছে কদম তলীর হাটের কাছে। বেশ দূরে সকলের একটা প্রশ্ন কারা কেন আমাদের বিভিন্ন গ্রামে। অশান্তি করছে সেটা জানতে হবে আগে। সকলে খুব সাবধানে কাজ করবে নদীর পূর্ব দিকে। নতুন করে ভাঙ্গন ধরেছে কি সব বের হয়ে আসছে। এই খবরটা কতটা সত্য মিথ্যা যাচাই করতে হবে। সেটা কেউ যেন বুঝতে না পারে। আমরা সকলে মিলে কালকে সেখানে মাছ ধরতে যাব। শুনেছি ওপার হতে নাকি নৌকা বোঝাই করে কারা আসে। মাছ ধরতে সেটাও দেখা হবে। লালুটা এখন মায়ের কাছেই থাকে ওকে একটু কম দেখতে পায় সকলে। আকবর তার বাহিনীর এক অংশের লোকদের সাথে বসেছে। কি ভাবে তাদের সামনের দিন চলবে সব এলাকার। লোকজন রাতে পাহারা দেয় কাজ করা খুব কঠিন। কিছু দিন আমরা দুরের এলাকার সাথে কাজ করি পরে দেখি কি করা যায়। অনেক দিন পরে জহুরা ও ময়না বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। হারুন ও ইয়াছিন দুজনে বাজারে গিয়ে বেশ কিছু কেনা কাটা করে। ভ্যান ভেরে পাঁচ্চর আসে। দুজনে কত কথা বলে নদীর কত অজানা গল্প কত কথা। আজ বড় অসহায় লাগছে তাদের কাছে। নয়ন ভরে যে ভাবে নদীকে দেখেছে এখনও দেখছে। দুটির মাঝে বিস্তার ব্যবধান বৃদ্ধমান। অনেকটা অভিমান করে অদিতি অনীকের সাথে কথা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সামনে তাদের পরীক্ষা সেই সময়ে কি করবে সেটা নিয়ে। ওরা আলোচনা করছে। অনিতার পরিবার এরই মধ্যে লিয়কতের জন্য পাত্রী দেখছে। তাদের পরিবার এখন আগের থেকে ভালো হয়েছে। নজরুল সহ দোকান করে বড় দোকান নিয়েছে বড় রাস্তার পাশে। কিছু ফসলি জমি বিক্রি করে সকলের সুখের জন্য এটা করেছে। অনিতার বিয়ের জন্য সুন্দর একটা পরিকল্পনা করেছে পরিবারের সকলে। মানুষের অভাব থাকলে বুদ্ধি হারিয়ে যায়। মিন্টু বাবাকে এবার খুব করে ধরেছে্। তোমাকে আর শহরে পরে থাকতে হবে না। অনেকটা সময় পার করেছো এখন গ্রামে আস গঞ্জে ব্যবসা করো। আমিও তোমার সাথে পরিশ্রম করবো। সব দিক থেকে ভালো হবে এটা নিয়ে মা ছেলের বেশ আবদার তার কাছে। তুমি ছাড়া আমাদের কেউ নাই অত বেশি টাকা লাগবে না আমাদের সাথে থাক। অনীকের বেশ মন খারাপ নিজের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত। যাকে মনে প্রাণে জীবনে পাশে চায় সেই বুজতে পারে না। নিজের দিকে অটল থেকে সামনের দিন গুলি কি ভাবে। অতিবাহিত করবে সেই কথা ভাবে। বন্ধুদের সাথেও কিছুটা  দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নিজেরে গুছিয়ে নিতে হবে এর মধ্যে। কানাই নতুন বউকে সব কিছু বুঝিয়ে দেয় বাড়ির দায়িত্ব। বলে মারে তোমার শ্বাশুরী যখন ছিলো তখন এসব নিয়ে ভাবতে হয়নি। ছেলেরা বড় হয়েছে আমার বয়স দিন দিন বাড়ছে। তোমার সংসার তুমি সকলকে নিয়ে। সুন্দর ভাবে থাকবে সেটাই আমি চাই। কিরনী বলে বাবা আমার জন্য দোয়া করবেন মা থাকলে ভালো হতো। রিপনটা একা একা থাকে তোমার কোন কিছু দরকার হলে ওকে বলো। শোন ভাই আমার এত দিন লেখা পড়া বন্ধ ছিলো সব শুনেছি। বাবার মুখে তুমি আবার কাল হতে স্কুলে যাবে। রামু বলে খাবার কিছু আছে বেশ খুদা পেয়েছে। যাও সবার জন্য খাবার দিচ্ছি সকলে হাত মুখ ধুয়ে আস। হায়রে জীবনে কখন যে মানুষকে কোথায় দার করিয়ে দেয় কেউ বলতে পারে না। ছোট একটা মেয়ে কিরনী বিয়ে হয়ে অন্যের বাড়িতে এসেই পুরো সংসারের দায়িত্ব ভার নিজে নিয়েছে। নদীর কুলে ভাসতে ভাসতে কোথায় যাচ্ছে অনীক নিজেও জানেনা। পরিবারের কাছে কি করে বলি কোন আয় রোজগার নেই, লেখা পড়াও শেষ হয়নি। না কিছু ভাবতে পারছি না। বাতাসের সাথে অনেক দূরে চলে আসে ঘুরে তাকায়। জেলেদের জাল টানার ও কথা বলার শব্দে। কোথায় চলে আসলাম নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করছে নিজে। চারি দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা নতুন কোন স্থান। এবার শক্ত করে হাল ধরে দেখে লোক জন বলছে সামনে আড়িআঁল খাঁর হাট। আজ হাটে লোকের অভাব নেই। হায়রে কপাল এত দূরে আমি কেমনে যাব বাড়িতে। কিছুটা সামনে আসতেই শুনতে পায় সামনে সিকিমপুর। ধীরে ধীরে সামনে চলে। রুস্তম ডালী বলে কিরে বাবা তুই কেন এদিকে কোথায় গেয়েছিলি। মুখটা ভার কি হয়েছে তোর তেমন কিছু না কাকা। বুঝতে পারছি তোর মনের কথা আর মুখের কথার সাথে মিল নেই। আমি বাহাদুর পুর যাবো তুই বস দেখি। সামনে চলে নৌকা দুপুর গড়িয়ে বিকেলে আসে বাহাদুর পুর। অনিতা ও মিন্টু নদীর ধারে বসে ভাবছে আমাদের বিষয়টা নয় একটা সমাধান হলো। অদিতির কি হবে একবার ভেবেছ হুম অনীকের কথায় যুক্তি আছে ওর উপর অনেক দায়িত্ব। অদিতির কথাটাও ভেবে দেখা দরকার ওর ছোট বোন আছে সেও বড় হয়েছে। প্রতিটা বাবা মার কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে সঠিক সময়ে। সুযোগ্য পাত্রের কাছে কন্যা দের সমর্পণ করা। যাই হবার হবে ওদের আলাদা হতে দিব না। একটু সামনে আসতেই দেখে অনীক এদিকে আসছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে পুরো আকাশটা মাথার উপর ভেঙ্গে পরেছে। এই বদন কখনও দৃষ্টি গোচর হয়নি। ওকে অবাক করে দিয়ে অনিতা এসে সামনে দাঁড়ায়। কিরে তুই কোথা হতে এলি। সেটা পরে বলছি তোর এমন বাংলার পাঁচের মত চেহারা হয়েছে কেন। সারা দিন মুখে কিছু দিসনি তোর কিছু হলে। তোর পরিবারের অবস্থাটা কি হবে ভেবে দেখেছিস।  তোকে অবলম্বন করে অন্যরা বেঁচে আছে তোর ভিতরে কি চলছে। সবি বুঝতে পারছি একটু ধৈর্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে। চল বাড়ি চল পরে সব কথা হবে পরান মাঝি বলে। তোমরা কোথায় যাবে আরে পরাণ দা। একটা কাজ করে দাও কি করতে হবে। তুমি বাড়িতে যাবে হুম যাব নৌকার জন্য বসে আছি। তোমাকে আমার ডিঙ্গি দিচ্ছি এটা নিয়ে যাও আমি পরে আসবো। বাড়িতে বলো আমি এখানে আছি। পকেট হতে এক টাকা বের করে দেয় তার হাতে। অনিতাদের বাসায় গিয়ে বসে খাবার খায় পরিকল্পনা করে। ভবিষ্যতের দিনগুলি সুন্দর করে অতিবাহিত করবে। চল বাড়ি ফিরি ভালো থাকিস অনিতা তোর ভাবি পেলি না এখনও পাইনি। তোকে এই দায়দায়িত্ব দিতে চাই নারে সবাই কি সব কাজ পারে। যে নিজের দায়িত্ব নিতে পারে না। ফেরার পথে দুজনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে। দেখ অদিতিকে বুঝানোর চেষ্টা কর। নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মাঝে কোন বীরত্ব নেই বুঝলি আর কখনও যেন এমন মুখ না দেখি বলে দিলাম। অনীক বুঝতে পারে বন্ধুর উপর অধিকার হতে কথাটি বলেছে। মাজাহারুল গোকুলকে পাঠিয়ে ছিলো ভূমি অফিসে। সে খবর নিয়ে দেখেছে যে সকল চর জাগছে। তার মধ্যে কিছু জমিন তাদের আছে। দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগেই থাকে চারি দিকে চর জেগে। কেউ হয়েছে সর্ব শান্ত আর কেউ দখল করে হচ্ছে ভূমি দস্যু। প্রকৃত মালিকের অনেকেই ভূমি দস্যুদের কারণে জায়গার কাছে আসতে পারছে না। হালিমা সকলের সাথে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। যে মাতবর তাকে ছেলের বধূ করে ঘরে তুলতে চায়নি নিজে গিয়ে তাকে নিয়ে এসছে। তাকে পেয়ে নিজের স্ত্রীর কথা ভুলেই গেছে। হনুফা খাতুন ঠেকিতে ধান বানছে বধুরা তার সাথে কাজ করছে। কাজের ফাঁকে জানতে চায় তার শ্বশুর কি কি পছন্দ করে। কেমন ছিলো তাদের এত দিনের সংসার জীবনের বিভিন্ন দিক। নদীতে নতুন করে আবার কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে ।মাঝে সমস্যায় পড়ে চলমান লোকজন ও যান বাহন। সিরাজ পাগলা ঠাকুর নগেন যতিন গোকুল নরেশ সকলে মিলে। বড় করে একটা মন্দিরের জন্য চেয়ারম্যানকে ধরেছে। সকলের সাথে কথা বলে পরে জানাবে বলেছে হেদায়েত ও জরিনা এ দিকে আসছে। শরিফা জানতে পেরেছে হেদায়েতের বাবাকে কে খুন করেছে। সেই খবরটা দিতে দুদিন হতে তাকে খুঁজে বেড়ায় শরিফা। সখিনা বেশ কিছু দিন হতে শরিফাকে লক্ষ করছে। জানে হেদায়েতের সাথে ছোট বেলায় ওদের বন্ধুত্ব ছিলো সেটা এখনও আছে নাকি। এক মাত্র মেয়েকে দূরে রেখে তারাও সুখে থাকতে পারবে না। দু,বন্ধুর মধ্যে কথা হয়ে ছিলো ওরা বড় হলে ওদের চার হাত এক করে দিয়ে। তাদের সম্পর্কটা আরো মজবুত করবে। জমির ব্যাপারি বাসায় ফিরলে তাকে সব কথা খুলে বলে সেও কোন আপত্তি তুলেনি। লালু সপ্তাহ খানেক নিরুদ্দেশ হয়ে আছে মায়ের কাছেও যায়নি। হনুফার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী ছাড়া তেমন কেউ নেই কিছু সম্পত্তি আছে সেটা বিক্রি করে দিবে ভাবছে। অমার জন্য কোন ভাবনা নেই ছেলেটার জীবনের একটা স্থায়ী ঠিকানা দরকার। তুহিনের কাছ হতে ওর জন্য কিছু আদায় করে দিতে হবে সেটা নিয়ে ভাবছে। করিমন কোথায় হারিয়ে গেছে কেউ কোন খবর জানে না। পনেরো বছর পেরিয়ে গেছে তার কোন খবর নেই। সকলে মনে করেছে সে মারা গেছে। ছেলেকে হারিয়ে সেই যে বাড়ি ছাড়া ফিরে দেখেনি পাঁচ্চর। লালু অনেক কাজ করে ফেলেছে এরি মাঝে। ডাকাত সর্দার আকবরের সব খবর জানে তাকে চিনতে পেরেছে। ভূমি দস্যুর সাথে তার বাহিনী জড়িত গ্রামে ডাকাতি কমেছে। আজকে একটা দল যাবে জমীর ব্যাপারীর বাড়িতে সেই খবর পেয়ে। হন্যে হয়ে কদমতলীর হাট হতে নলগোড়া ফিরেছে। সংগঠনের অফিসে গিয়ে যুবকদের দেখতে পায়। বিমল ও রাজন তাকে দেখে ইশারা করে পরে বাকি দের সাথে মিলিত হয়ে। আজ রাতেই ওদের ধরার একটা বড় সর পরি কল্পনা করে ফেলে। কহের ও জরিনা সাথে রুস্তম ডালীকে নিয়ে থানায় যায় লালু। সোবাহান সাহেব তার কিছু লোক দেন সাথে সকলের দায়িত্ব বন্টন করা শেষে ওরা আসে মাঝির হাটে। হেদায়েত কিছু লোক নিয়ে শরিফাদের বাড়ির পাশেই বাগানে তাস খেলে। ওদের দেখে কেউ যেন সন্দেহ না করে। মধ্যরাতে ডাকাত দলের আগমন ঘটে সেটা টের পেয়ে ওড়াও প্রস্তুত হয়ে যায়। তুহিন সহ দুজনে দরজায় আঘাত করতেই অন্যরা আশে পাশে দেখতে থাকে। শরিফা প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে উঠে শুনতে পায় দরজায় কারা আওয়াজ করছে। পরে মা বাবাকে ডাকে ও জানতে চায় কে তত খনে ওরা দরজা ভেঙ্গে ফেলেছে। শরিফা চিৎকার দিলে হেদায়েতরা ওদের পিছনে ঘরে ঢুকে ওদের আটক করে। সাত আট জনের ডাকাত দলটি ধরা পরে যায় ওদের হাতে। সকলে মিলে কিছু উত্তম মাধ্যম দেয়। সবাইকে নিয়ে থানায় আসা হয় সাথে জমির ব্যাপারী আসে। তিনি তার বাসায় ডাকাতির মামলা রুজু করেন। সকালে অনেকে আসে খবর পেয়ে কি ভাবে কি করেছে থানায় ভীড় জমে গেছে। আকবর তার বাকি সদস্যদের নিয়ে অন্য জায়গায় থাকাতে এ যাত্রায় রক্ষা পায়। সকালে হনুফা নলগোড়া উদ্দেশ্যে রহমত গঞ্জ হতে এসেছে। মনির খাঁর সাথে অনেক লোক জন সে কিছু কথা বলার জন্য বসে আসে। লালু বাহির হতে এসে দেখে তার মা বসে আছে জানতে চায় আসার কারণ। হাফিজের কাছে জানতে চায় তুহিন কোথায় বলে সেতো বাহিরে গেছে কালকে বলেছে ফিরতে দেরি হবে। বাতেন আসে বাজারে মাজাহারুলের কাছে গোকুল খবর দিয়েছে আসার জন্য। পরাণ এক হাড়ি মিষ্টি নিয়ে মাজাহারুলের দোকানে এসে হাজির। সালাম দিয়ে বলে ভাই জান ভালো আছেন। বাতনে ভাই কেমন আছেন অনেক দিন পরে দেখা। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। মানিককে বলে গোকুল ও বাতেনকে নিয়ে সমিতির ঘরে বসতে আমি আসছি। পরাণকে বিদায় দিয়ে বাতেন ও গোকুলের সাথে কাজ শেষে বাজার করে বাড়ি ফিরছে। শামীম বেশ ভালো আছে আগের থেকে ছেলের জন্য মেয়ে দেখছে। ব্যাবসা ভালো চলছে সুখেই আছে। সামনেই পরীক্ষা সকলের মাঝে ব্যস্ততা আছে অদিতি ভেবেছে অনীক অন্তত একবার দেখা করবে সেটা করেনি। পরীক্ষার পরেও দেখো হয়নি চার দিন পার হয়েছে কি হলো বুঝতে পারছে না। শরিফা হেদায়েত কে নিজের বাসায় দুপুরে খাবারের জন্য বলেছে। সখিনা তাকে বেশ পছন্দ করে দুপুরে সকলে মিলে খেতে বসে। দুজনে তাকে তাদের ও মেয়ের খুশির কথা চিন্তা করে প্রস্তাব রাখে। হেদায়েত বলে দেখন আমার মা বাবা নেই তার সাথে ওয়াদা বদ্ধ। শরিফার একটা মতামত আছে বাবার খুনিকে না পেলে বিয়ে করতে পারছি না। শরিফা বলে আমিতো ভুলেই গেছি মেম্বর তুহিন ও আকবর ডাকাত সর্দার। তারাই খুন করেছে তোমার বাবাকে। আরো একটা খবর আছে ওদের একটা গোপন আস্তানার খবর দিতেছি ওখানে কাউকে পাবে। ঠিক আছে তোমার সাথে কিন্তু পাকা কথা হয়ে গেলো বাবা। পরে আর কোন কথা চলবে না। হেদায়েত উঠতে যাবে বলে একটু বসো। সখিনা মেয়ের হাতে একটা চেন দিয়ে বলে এটা ওকে পরিয়ে দাও। হেদায়েত কেমন যেন হয়ে যায় তার নয়ন হতে জ্বল গড়িয়ে পরে। মা বাবার মুখটা বেশ মনে পরছে। নিজেকে সংযত করে তাদের সালাম করে চলে আসে। দোকানে বসা ছিলো আইন উদ্দিন হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ বোধ করায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় ডাক্তার বলেছে। শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ পরিবারের লোক লাগবে। মানিক কাজে গিয়েছে ফেরার পথে খবরটা শুনতে পায়। তার মনে পরে যায় পুরনো দিনের কথা। বিপদে সাহায্য করা দরকার। তাকে দেখতে যায় কর্মচারী রাশু বলে। আমি বাড়ি চিনি না কি করে খবর দেই। মাজাহারুলের কাছেও খবর চলে আসে। অনীক পরীক্ষা শেষে দোকানের দিকে আসছে তখন মানিক তাকে সব বলে। বলে চলো আমিও যাব ওদের বাড়ি বাড়িতে এসে খবর দেয় ও একটা ভ্যান ঠিক করে। দ্রুত সকলে মিলে হাসপাতালে আসে। তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তাকে ঢাকায় নিতে বলেছে। অদিতি ও রাশিদা কান্না করছে অনীক ওদের শান্তনা দেয়। হালিমা বেগম এর সাথে কথা বলে তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। একজন পুরুষ মানুষ সাথে দরকার। তখন বলে ভাবি সাহেব আমাদের আমার সাথে লাগলে বলেন। ভাইরে মহা বিপদ মেয়েরা একা বাড়িতে থাকবে তার সাথেও লোক লাগবে। জহের খবর শুনতে পেয়ে স্বপরিবারে আসে। কোন চিন্তার কারণ নেই আমি চাচার সাথে ঢাকা যাব আমার বোনেরা আমাদের বাড়িতে থকেবে। রাশুকে আপতত বাড়িতে থাক দোকান বন্ধ থাকবে। হেদায়েত ও শরিফা বিকেলে ঘুরতে বেড়িয়েছে নৌকায় করে সোনাতলীর বিলে আসে। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য মন প্রাণ ভরে যায়। তুমি সব মনে করে রাখলে কেন ভুলে যেতে পারতে। তোমার কি ধারণা আমার ভালোবাসা এতোটাই ডুঙ্ক। সেটা না আরো ভালো পরিবার পেতে। যাকে নিয়ে সারা জীবন পথ চলার স্বপ্ন দেখেছি তাকে ছেড়ে বেঁচে থাকা কষ্টের। ছোট বেলার কত কথা কত স্মৃতি আমাদের তুমি সব ভুলে থাকতে চাও। নাগো কি করে থাকি বলো মন প্রাণ জুড়ে তোমার অস্তিত্ব। সেখানে অন্য জনার বসবাস হবে না। তবে কেন বললে এ কথা সব কেমন স্বপ্নেরমত ঘটে গেলো বুঝতেই পারিনি। তোমাকে একটা কথা বলতে চাই তুমি আমাদের বাড়িতে এসে থাক। ঘর জামাই থাকতে বলছো ওভাবে কেন দেখছ। বাবা মা দুজনেই চায় তুমি আমি ছাড়া তাদের কেউ নেই। কথাটা অন্য ভাবে নিয়ো না তুমি।এটা নিয়ে পরে কথা হবে চলো ফেরা যাক। ঠাকুরেরা পাগল শিরাজের আস্তানার খোঁজ পায় সেখানে অনেক ভক্ত বৃন্দ আছে। সকল তার কাছে আসে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। তার ইচ্ছে হলে মানুষের উপকার করে নয়তো না কারো ক্ষতি করে না। লালুর মায়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আজ বসা হয়েছে। সকলে এটা জানতে পারে তুহিন ডাকাত দলের সাথে জড়িত বলেই ফিরছে না। লালু ও হনুফা সে না আসা পর্যন্ত তারা তুহিনের বাড়িতে থাকবে। তার স্বামীর খুনের দায় তাদের উপরে বর্তায় এর ক্ষতিপূরণ করতে হবে। পনেরো দিন হাসপাতালে থাকার পরে আইন উদ্দিন বাড়িতে ফিরে আসে। খবর পেয়ে সকলে তাকে দেখতে আসে। অনেক দিন পরে অনিতাদের পরিবার বেড়াতে আসে মিন্টুদের বাড়িতে। মিন্টু আগেই বলেছে তারা আসবে। দরজা খুলে দেখে অনিতা হাসিনা বলে। মা দেখ মোমেনা চাচির পরিবার এসেছে। নাছিমা বের হয়ে এসে বলে আস বুবু। কত দিন পরে আসলে বলতে পারো। তাহের আলী ও মিন্টিু বাজারে গিয়েছিলো। ব্যবসার জন্য দোকান দেখে বাজার নিয়ে ফিরে আসে। ওরা কথা বলছে আবার কে আসলো গেট খুলে দেয় হাসিনা। শোন তোমার জন্য একটা খবর আছে কি? তোমার বউ এসেছে বাড়িতে। কি বলিস আমিতো জানি না সেকি। তোদের সাথে যুক্তি করে একাই চলে এলো। ধর এগুলি ভিতরে যাই। অনিতাকে বাসায় দেখে সেতো অবাক সকলের সামনে কিছু বলেনি। ইশারায় তার রুমে যেতে বলেছে। তাহের ভিতরে এসে মোমেনাকে দেখতে পেয়ে সালাম দিয়ে পারিবারিক খবর জানতে চায়। অনেক কথা গল্প হয় দুপুরে খাবারের পর সকলে বসে। তখন সকলে মিলে তাহেরকে ধরে বলে। ভাইরে অনেক দিনতো বাহিরে ছিলে এবার দেশেই কিছু করো। সকলের আবদারের কাছে সে বলে ঠিক আছে। হাসিনা তার মাকেমনে করিয়ে দেয় অনিতাকে বাড়ির বউ করে আনার কথা। পরে জানতে চায় কেন বলে ওরা দুজনে দুজনকে ভালোবাসে। তুমি কি মা হয়ে বুঝতে পারো না ছেলে মেয়ের খুশি কোথায়। কেন তোমার অসুস্থতার মাঝে এসে অনিতা আপু তোমার সেবা যত্ন করে কিছু বুঝ না। এটা নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো এখন বেশি কথা বলা ঠিক হবে না। অনীক তার পরিবার সহ অদিতি দের বাসায় যায় আইন উদ্দিন মাতবরকে দেখতে। তাদের পেয়ে তারা বেশ খুশি হয়ে যায়। ডাক্তার কি পরামর্শ দিয়েছে সব কিছু শুনে রাশিদা তাদের মাঝে কিছু খাবার বিতরণ করে। অদিতির রুমে যায় অনীক বই খাতা দেখে কিছু লেখা পড়ে। সব কিছুতে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তাকে। সময় মত ঔষধ পত্র খেতে বলেছে কোন বিষয়ে চিন্তা করা বরণ। সব শুনে বলে চিন্তার কোন কারণ নেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ওদের বিদায় দিতে এসে অদিতির চোখের কোণে পানি দেখতে পায় সবিতা বেগম। ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে ওকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়াতে সেটা বুঝেছেন। যাক এটা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে কথা বললেই ভালো হবে।ওকে শান্তনা দিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয় অনীকরা। থানায় আজকে আবার জমির ব্যাপরীকে ডেকেছে হেদায়েত ও লালু সাথে আছে। ডাকাত দের কাছ হতে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে তারা তুহিন তাদের সাথে জড়িত সেটাও বলেছে। এদেরকে কোটে চালান করা হবে বাকি দের ধরার নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। হেদায়েতের মনে পরে শরিফার বলা কথা গুলি। বলে সব দেখছি আমি আমাদের সাথে আপনারা থাকবেন। জরিনা কহের সহ সকলে আসে সাজনার বিলে। সেখান হতে লিয়াকত ও নজরুলের কাছে অনেক কথা জানতে পারে ওরা। সব দিক হতে খবর নিয়ে জেনেছে ডাকাতরা দল বল সহ আমিন খাঁ ও মমিন খাঁ দের সাথে আছে। বাবনা তলা ও নতুন একটা আশ্রয় স্থল করেছে। রাতে তাহেরের সাথে নাছিমা কথা বলে শোন তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো ভাবছি। বলে ফেল তাহলেই হয়। অনিতাকে তোমার কেমন লাগে মানে মেয়ে হিসাবে। কেন বলতো হঠাৎ এই কথা। তুমি বাহিরে ছিলে মিন্টু লেখা পড়া করেছে আমার অসুখ বিসুখ হলে ওইতো দেখা শুনা করেছে। আমাদের রান্না বাড়া সহ সবি করেছে ওরা এক সাথে লেখা পড়া করে। এটা বুঝতে পারছি ওদের মনে হয় দুজনকে দুজনার পছন্দ। তোমার ছেলে কিছু বলেছে নাতা বলেনি। তোমার কাছে জানতে চাইলাম মেয়েকে দেখেছো তুমি। সকালে হাসিনা বাবা মার সাথে খেতে বসে বলছে না এই বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ও বাবা আমাকে একটা ভাবি এনে দাও না। মেয়ের কথায় দুজনে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।তাহের বলে কেনরে মা তোর কি আমাদের পছন্দ হয় না। আমি সেটা বলিনি ভাইয়ের বিয়ের কথা বলেছি সেতো বুঝলাম কাকে পছন্দ করা আছে। শোন আমার ভাবি হিসাবে অনিতা আপুকে পছন্দ বুঝলা। আচ্ছা দেখি চিন্তা করে কি করা যায়। একটু পরেই মিন্টু ও অনীক আসে বলে মা এই তোমার গুণধর ছেলে। তোমাদের দেখতে আসছে কি কথাও বলবে। আন্টি কেমন আছেন জি ভালো বলো কি কারণে আগমন।একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই সে অনিতা ও মিন্টিুর বিষয়ে সব খুলে বলে। নাছিমা বলে যা বলে সত্যি হুম তোমার  কাছে মিথ্যা বলবো না ওকে আমার পছন্দ। সপ্তাহ খানেক পরে মিন্টিুর পরিবার আসে অনিতাদের বাড়িতে। মোমেনা খাতুন বসে আছেন অনিতা টেবিলে বসে বসে কি যেন ভাবছে। দরজায় নক করে বলে আসতে পারি কে দরজা মেলে দেখে বলে চাচিমা তোমরা। ওমা কোথায় গেলা দেখ কে আসছে কিছু ফল ও মিষ্টি এগুলো ভিতরে নিয়ে যাও। এসবের কি দরকার ছিলো। লিয়াকত বাজার নিয়ে ফিরছে তাদের সালাম দিয়ে প্রবেশ করে। অনেক কথা হয় নাস্তা করে পুনরায় বাজারে গিয়ে মাছ মাংস আনে। দুপুরে খাবার শেষ করে আর দোকানে যায়নি ওরা। হাসিনাকে বার বার বলে কেন আসছে কিছু জানিস তুই না বলবো না। নজরুলকে বলে ভাই সাহেব আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে। সংকোচ না করে বলে ফেলেন কোন সমস্যা নেই নিজেরাই সবাই। নাছিমা তখন মিন্টুর সাথে তাদের বিয়ের কথা বলে। হাসিনা উঠে গিয়ে তাদের চুপিসারে কথাটি বলে আসে। কিছু সময় পরে ওদের ডাকা হয় তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। দুজনে বলে তোমরা আমাদের মুরব্বি তোমরা তোমাদের সন্তানের মঙ্গল চাইবে। তোমরা যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করবে। তোমাদের কথার উপর কথা বলার শিক্ষাতো দাওনি আমাদের। দুজনে এ কথা বলে চলে যায়। বাজার হতে একটা আংটি কিনে আনে মিন্টু সেটা অনিতার হাতে পরিয়ে দেয়। অনিতার গলার চেইন ছিলো সেটা যাবার সময় ওকে পরিয়ে দেয়। ওদের পরীক্ষার ফলা ফল হলে তখন শুভ দিন দেখে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিন দিন পরে বাবনা তলা হতে শামীম ও গ্রামবাসির সহযোগিতায়। আমিন খাঁ  মমিন খাঁ ও তুহিন সহ একটা দলকে আটক করে কহের লালু ও পুলিশ মিলে। তাদের কথার ভিত্তিতে আরো দুদিন পরে হেদায়েত জরিনা ও পুলিশ গিয়ে। আকবর ও ভূমি দস্যুর কাজে ভারা টিয়া হিসাবে যারা কাজ করতো তাদের ধরে নিয়ে আসে। এই খবর ছড়িয়ে গেলে হাজারো লোকের ভিড় জমে জায় তাদের বিচারের জন্য রাতেই শহরে নিয়ে আসা হয়। আসার পথে তুহিন ও আকবর নদীতে ঝাপ দেয় ওরা গুলি করে সেই হতে ওদেরকে গ্রামবাসী কখনও দেখেনি চির পলাতক থাকে। বন্ধুরা সকলে পাশ করেছে সেই আনন্দে তারা নদীতে ঘুরতে যায়। হালকা বৃষ্টি সাথে বাতাস বইছে বন্ধন দ্বীপ সেখান হতে মোহনিয়ার চর হয়ে সোনাই মুড়ির বিলে। সারা দিন ঘুরা ফিরা করে বিকেলে বাড়ি ফিরে। জরিনা একাকী ফিরছে মীরের চর হতে কিছু লোক তার পিছু নেয়। লিয়াকত বেশ সময় ধরে দেখছে বিষয়টি কিছু বলেনি। জরিনা যখনি এদিকে কাজে আসে তখনি এই দোকানে আসে। কেনা কাটা করে ওদের একটা বন্ধুত্ব হয়। নজরুল দোকানে আসলে তাকে সব কথা বলে সে ওদের পিছু নেয়। ওরা ওকে তুলে নিতে চাইলে ওকে উদ্ধার করে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। সব কথা শুনে তার পরিবারে কে কে আছ জানতে চায়। বলে  ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি মা মারা যাবার সময় এই কবজটা দেয়। এটাতেই নাকি আমার পরিচয় মিলবে। মোমেনা কবজটা দেখে পুরানো ট্রাঙ্ক হতে তার কবজটি বের করে। তখন দেখে এটা তার বোনের কবজ তারা দুই জন জমজ ছিলো।উতরাইল তাদের বাড়ি ছিলো নদীতে ভেঙ্গে নেয়। রাতে নজরুল আসলে সব কথা খুলে বলে ঠিক আছে সকালে সব ব্যবস্থা করবো। পরিবার সহ হুজুরের বাড়িতে যায় সেখানেই তাদের বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়। অনীক সব কথা শুনে বেশ খুশি হয় যাক তোদের একটা সমাধান হয়েছে। আমেনা বেগম অনীকের ঘরে গিয়ে কাগজ পত্র সব দেখতে থাকে। বইয়ের মধ্যে অদিতির লেখা একটা চিঠি পায় জানতে পারে ওদের ভালোবাসার কথা। মানিক ও অনীক দুজনে দোকানের মালামাল কিনতে শহরে যায়। ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। আইন উদ্দিন দোকানের কাজ শেষে গিয়ে ছিলো সদর পুর। সেখান হতে ফেরার পথে কিছু লোক তার পিছু নেয়। সে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ঠাকুর বাজারে আসে। তখনি আরো দুটি লোক ওদের সাথে মিলে তাকে আক্রমণ করে বসে। মাটিতে পরে যায় মানিক ও অনীক বলে ওখানে কিসের চিৎকার। শুনতে পেলাম চলতো দেখে আসি। ওদের আসতে দেখে লোক গুলি পালিয়ে যায়। মানিককে বলে ভাই তুমি ওনার বাড়িতে একটা খবর দাও। আমি ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই বেশি দেরি করা যাবে না। তাকে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার বলে প্রচুর রক্ত ঝরছে। এখনি রক্ত দিতে হবে নয়তো তাকে বাঁচান কঠিন হবে। অনীক বলে এখন কি করি পরে বলে আমার রক্ত পরীক্ষা করে দেখেন মিলে গেলে খুব ভালো হবে। তারা হাসপাতালে আসে ওদিকে কহেরও সাথে আসে। অদিতি ও রাশিদা এসে দেখে অনীক রক্ত দিচ্ছে। হালিমা বেগম বলে বাবা আল্লাহ তোমার ভালো করুন। ডাক্তার বলে এখন ভয়ের কোন কারণ নেই। এক জন থেকে বাকিরা বাড়িতে চলে যান। অনীক কিছু খাবার ও ফল কিনে দিয়ে আসে। বলে রাত্রে একা বাড়িতে যাওয়ার দর কার নেই। আন্টি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ওদের আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই। সেটা কেমন করে হয় বাবা লোকে খারাপ বলবে ওরা এখানেই থাক। পরাণ মাঝি ভ্যানে আসার সময় শুনতে পায় অনীক কাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। সে বাড়িতে গিয়ে বলে চাচা বাড়ি আছেন। মাজাহারুল বলে কে? আমি পরাণ কি হয়েছে পরাণ। একটু বাহিরে আসেন কথা আছে। বলে অনীক কাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে দেখেন জলদি করে যান। মাজাহারুলকে আমেনা বেগম বলে আমার ভাই কই বাপরে জলদি চল। দুজনে পরাণ কে বলে আমাদের একটু হাসপাতালে নিয়ে চল বাপ। এমন করে কেন কন চাচা আপনারোইতো আমাগো আপদে বিপদে পাশে ছিলেন। চলেন জলদি চলেন তোমরা শুয়ে পরো আমরা আসছি। গিয়ে দেখে আইন উদ্দিন সাহেব শুয়ে আছে। বাবা দাদী তোমরা কার কাছে খবর পেলে। কথা বলে দুই বোনকে সহ অনীক মানিক বাড়িতে ফিরে। এখন ঘুমাবে সকালে জ্ঞান ফিরবে। সকলে বাড়িতে এসে শুয়ে পরে দাদীর কাছে অদিতি শুতে যায় রাশিদা আসে সবিতার কাছে। মানিক ও অনীক আজকে ফুফুর ঘরে গেছে। সারা রাত দাদী অদিতির সাথে গল্প করে বলে। তাইতো বলি ছোট সাহেব আমাকে দুরে রাখে কেন। তুমি সব কি করে যান দাদী তখন তার চিঠির কথা শুনায়। বলে চিন্তা করিসা বোন আমি সব ব্যবস্থা করে দিব এবার ঘুমিয়ে পর। আবার হাসপাতালে যায়। হালিমা সব কথা খুলে বলে দুদিন পরে বাসায় ফিরলে দাদী মাজাহারুল ও সবিতাকে ওদের বিষয়ে সব বলে। তারা অনীককে বলে তোমার দাদী মা যেটা বলেছে এটা সত্যি। অনীক চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে বলে হুম সত্যি বলেই সেখান হতে চলে যায়।  অনীক ও অদিতি নৌকা নিয়ে চলে যায় হরিনার বিলে। না এটা নিরাপদ নয় চলো হিজল দিঘীর গাঁ কইলার টেক। অনীকের বুকে মাথা রেখে অনেক কান্না করে অদিতি বলে মা বাবা সব জেনে গেছে এখন কি হবে কিছু বুঝতে পারছি না। বলে জীবনে মরণে তোমার থাকবো বিশ্বাস রাখো তুমি।দেখ সুন্দর ফুল ফুটেছে পাখিরা গান করছে পানকৌড়ি বালি হাস উড়ে যায়। সুন্দর প্রকৃতির সাথে নদীর ঢেউয়ে হারিয়ে যাই অজানায়। যেতে হবে চলো এবার। অনীকরা স্বপরিবারে আসে অদিতিদের বাড়িতে তাকে দেখতে। পরে দুজনে ও দাদী বলে দেখ বাবা ওরা ছোট মানুষ। ওদের পক্ষ হয়ে তোমাদের দুজনের কাছে। আমি একটা প্রস্তাব রাখছি তোমরা ওদের চার হাত এক করে দাও। ভাই সাহেবের পরিবারের কাছে আমি বিভিন্ন ভাবে ঋণী। আমিও বিষয়টি ভেবেছি এখন ছেলে মেয়ে দুই জনই আপনার যেটা ভালো হয় করেন। মাজাহারুল বলে সন্তানের খুশি আমাদের খুশি। পরাণ এসে খবর দেয় অদিতি এক্সসিডেন্ট করেছে সকলে দ্রুত হাসপাতালে আসে। দেখে অনীক অঝরে কাঁদছে ডাক্তার বলেছে রক্ত লাগবে রক্ত দেওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর হতে শুধু অনীক অনীক করছে। ডাক্তার বলে উনাকে নিয়ে আসুন তানা হলে বিপদ হতে পারে। আমেনা বেগম অনীককে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে। অনীক বলে অদি চোখ মলে তাকাও দেখ আমি আসছি । তাকাও একবার অদিতি তাকিয়ে তার বুকে নিজের ঠিকানা খুঁজে নেয়। সকল বন্ধুদের মাঝে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। অগ্রাহায়ন মাসের ১০ তারিখে অদিতি ও অনিতার বিবাহ অনুষ্ঠান। এক সাথে নলগোড়ায় হবে গ্রামবাসী সহ সকলেকে নিমন্ত্রণ করে। শরিফাদের বাড়িতেই হেদায়েত থাকে তারা ওকে নিজের ছেলের মত ভালোবাসে। তারা ছাড়া জগতে কেউ রইলো না। মনির খাঁর ছেলের জন্য শামীমের শালির কথা হয়েছিলো। দুজনের মধ্যে আগে হতে জানা শুনা ছিলো। বিভিন্ন ঝামেলায় তাদের কিছু জানানো হয়নি। লিলিমাকে নিয়ে শামীম বাজারে এসে ছিলেন একটা কাজে। মনির খাঁ ও সানি দোকানে বসে লোক জন নিয়ে কথা বলছে। হাফিজ ও আরে দুজন মিলে মনির খাঁকে গুলি করতে যায়। নীলিমা সেটা দেখে সামনে এসে পরে তার হাতে গুলি লাগে। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সানি সহ আরো অনেকে ওদের ধরার  চেষ্ট করে ব্যার্থ হয়। সুস্হ হলে সানির পরিবার আসে নীলিমাদের বাড়িতে সেদিনি তাকে পুত্র বধূ করে নল গোড়াতে নিয়ে আসে। তাদের আর্শিরবাদে বলে আমার হারানো মাকে ফিরে পেলাম। মায়ের মত  করেই ও আমার জীবন বাঁচিয়েছে। মানিক অনেক দিন পরে আসে রাশিদাদের বাড়িতে সকলে বসা। বলে চাচা জান আমার কিছু জিনিস ছিলো নিতে এসেছি। বাগান বাড়িতে একটা মাটির গর্ত হতে কিছু কাগজ ও একটা আংটি ও চেইন বের করে। এটা আমার বোনের চেইন আংটি ওর জামাইয়ের তুমি কে। রাশিদার ছোট বেলার একটি ছবি বলেছে তোর পুত্র বধূ হবে আমার পছন্দ। চিঠি পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি সকালে তাকে ধরে ভিতরে নিয়ে আসেন। তার মায়ের কারণে এখনও তিনি বেঁচে আছেন। আয় বাবা বুকে আয় এত কাছে থেকেও বলিসনি কেন তুই আনা বিয়ার ছেলে। সেদিন বিকালেই রাশিদা ও মানিকের বিবাহ সম্পন্ন হয়।তার কাছেই রাখে মানিক ও রাশিদাকে। ঠাকুর লোক জন সাথে করে নদীর ঘাটে বসে আছে। বিভিন্ন গ্রামের ভিতর দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। এতে অনেক সময় কম লাগে। শিরাজ দল বল নিয়ে আস্তনা ছেড়ে আজই প্রথম এভাবে সমানে আসে। নদীর উত্তর পারে আগের মত করে সমস্যা হচ্ছে সেটা খুব কম। শুধু ঠাকুর ও পাগল নরেশের সাথে কথা বলে। পাগল ওর শরীরে কি পরে একটা রশি দিয়ে বেড়ি দিয়ে দেয়। ঠাকুর কানে কানে কি সব পরে কথা বলে। ওরা তিন জনে উত্তর পাশে যায়। নরেশ পানিতে নামে তার সাথে সাথে বেশ কিছু ছোট বড় জিনিস যা সমস্যা করছে। তারাও চলে যেতে যেতে একটা সময় সকলে হারিয়ে যায়। ঠাকুর ও পাগলা নদীতে নামে তারাও হাঁটছে নদীর মাঝে। তাদের মত করে কোথায় গেলো। আর কখনও তাদের কেউ কোন গ্রামে দেখতে পায়নি। নদীর চারি ধার শুকিয়ে যায় ধীরে ধীরে। হুজুর বলে হারুন দেখতো গ্রাম বাসির কি অবস্থা। নদীতে কোন সমস্যা নেই তবে দিন দিন নদীর মধ্যে চর পরে যাচ্ছে চারি দিক শুকিয়ে আসছে। নদীর সাথে সাথে মানুষের জীবনেও পরিবর্তনের জোয়ার বইছে। সব এলাকাতেই রাস্তা ঘাট হচ্ছে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা মসজিদ মন্দির বেশি হচ্ছে। বাজার ঘাট ফসলি জমি বাড়ছে। জীবিকার প্রয়োজনে বাঁচার তাগিদে অনেকে পেশা বদল করছে। মাঝে মাঝে নিজের কাছে এই ময়নাকে বড় অচেনা লাগে আমার। এত শান্ত তাকে কখনও দেখেনি বন্ধুরা বলছে। বলতে গেলে তারি নিজের অস্তিত্বের বলিদান দিয়েছে। গ্রাম বাসির মঙ্গল ও সুখের জন্য। উপকার হয়েছে সকলের চাষের জমি বেড়েছে সোনা ফসল পেয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা ও মৃত্যুর আতঙ্ক হতে পেয়েছে মুক্তি। পেয়েছে গ্রামের সকলের মুখে সুখের হাসি ফুটে উঠেছে। সকলের সুখের জন্য নদী তাকে বিসর্জন দিয়েছে। তার চারি ধারে গড়ে উঠেছে নতুন কত শত বসতি। নেই অপরূপ সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে সকল বিল মাঝি দের আনা গুনা। নেই চর দখলদার রাজত্ব দস্যুতা গড়ে উঠেছে দালান কোঠা ময়না হয়েছে খাল। ভূমি দখল দারিত্ব ছিলো আছে থাকবে চির কাল। নদী ভরাট চলছে চলবে চলমান প্রকৃয়া এর শেষ কোথায়? কবে হবে জানিনা সবটাই অজানা। আগামী প্রজন্ম হয়তো কখনও তাদের চোখে নদী দেখবে কিনা সন্দিহান। ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হচ্ছি আমরা বেসামাল। যে অপূরনীয় ক্ষতি দিন দিন সাধিত হচ্ছে তাকি কখনও পূরণ হবে না হবে না। হারিয়ে যাবে ময়নার মত কালের গর্ভে অসংখ্য নদী। আর জানা অজানা কত ইতিহাসা ঐতিহ্য সময়ের পরিক্রমায়।


।।হায়রে আমার প্রিয় নদী ময়না কাটা
মরে গেছে চারি ধার উঠিল বুকে চর
পাবো কি ফিরে হারানো সোনা বাসর
মনে জমা ব্যথার পাহাড় কাঁদে অন্তর
কত স্মৃতি কত কথা নিদারুণ বুকের ব্যথা
তোর বিরহে কান্দের পরাণ সারা জনম ভর
খেলছি কত নাও দৌড়ানিরে কেটেছি সাঁতার
মাছ ধরি তোমার কুলে ঘুরছি কত বন বাদারে
মধুর মায়ায় রাখছ বুকে দিয়ে পরম মমতা
কেমন করে ভুলে যাব সেই দিন গুলির কথা
মনে হলে পরাণ পুড়ে সকল স্মৃতি হৃদয় জুড়ে
বারে বারে আসবো ফিরে এই না জীবন ভর
ঝিকি মিকি রৌদ্র পরে তোমার সোনার গায়
লাল আভাতে শাড়ী পরে কত সুন্দর দেখ যায়
পানকৌড়ি বালি হাসে বকের দল নিত্য হাসে
ছুটে বেড়ায় মনের সুখে হেথা নেইকো কোন ভয়
সোনা ফসল রাশি রাশি দুকূলে দাঁড়িয়ে আছে ঠায়
কৃষকের মুখে মধুর হাসি চোখে দেখতে পাওয়া যায়
সুখের রাজ্য বিলিয়ে দিলে নিজেকে দিয়ে বলি দান
আমার সবাই গেয়ে যাই ঐতিহ্যে ভরা তার গুন গান।।