শুভদৃষ্টীর সময় চোখে সচ্ছতা ও আস্থার
হৃদয়-পদ্ম তুলে এনে আমার হৃদয়ে
স্থাপন করে প্রতিজ্ঞা রেখেছিল প্রমিতা,
এবং এক-বস্ত্রে আমার এক ঘরের সংসারে
নব-বঁধূর গৃহ প্রবেশ।


প্রেক্ষাপটে,
বেসরকারী অফিসে নিচু পদে স্বল্প আয়
      পাস ফিরলে পয়সা ফুরায়,
              প্রমিতার মেনে নেওয়ার
                       হিসাব মেলে না;
তার সম্ভ্রান্ত-শ্রী সাচ্ছন্দে এড়িয়ে গিয়ে
ভালোবাসার সঙ্গাহীন আভিজাত্যে
নিরলস থেকে গেছে।


এরপর দিন-রাত দুজনের অবগাহন শরীরে,
তার সুচারু কারুকার্যময় অবয়বে, স্পন্দনে
আবদ্ধ হলে দিন রাতের হিসাব যায় থেমে
তন্দ্রালু ভোরে প্রমিতাকে আর একটু পেতে
সকালের আকার হয় ছোট; কেরানীর অফিসে
দেরী হয় প্রতি দিন, বসের আঁটুনি আলগা হলেও
সহকর্মীদের কৌতুক বাড়ে ।


প্রতিবেশী বৃদ্ধদের প্রাতভ্রমণও উঠে পড়ে
শোবার ঘরের একমাত্র জানালার পাশের ছাদে।
তাদের দৃষ্টী এড়াতে পর্দা টেনে-টুনে কোনক্রমে
লজ্জ্বা ও পয়সার সংকুলান।
এভাবেই চলছিল দাম্পত্যের প্রথম অধ্যায়
বহু-টানার দিন গুজরাণ।


এখন আমি শিল্প-পতি, বিদেশে আমার কুঠি।
দেশ ছেড়েছি প্রমিতার সাথে ছাড়া-ছাড়ির পর।
দ্বিতীয় বার শুভদৃষ্টীর সাহস হয়নি
কলকাতার আশ্রয় এখন হোটেল, এলে সেখানেই উঠি।

আজ হঠাৎ করে প্রমিতার সাথে দেখা দমদম
বিমান বন্দরে, ও বের-হচ্ছিল আমি ঢুকছিলাম  
আমাকে দেখে এগিয়ে এলো,
হঠাৎ নিচু হলো প্রনাম করবে বলে,
আমি ওর হাত ধরলাম আর বললাম,
সবাইকে প্রনাম করতে নেই।
তারপর আমি দাঁড়াতে পারিনি, পালিয়ে বাঁচি
পেছন ফিরে দেখার সাহস কই?


স্মৃতি পিছু ছাড়ল, ছিল ফ্লাইট ধরার তাড়া!
কিন্তু সিটে গা ছাড়ার পরে আবার ধরল এসে
ঘটনা-পরম্পরা সব-টুকু অবার মনে পড়ে;
প্রমিতার একটা একজিবিশনে দিল্লী যাবার ছিল
আমার সাথে।
অফিসের বড়বাবু আমাকে বিত্ত-বাসনার ইঙ্গিতে
বলেছিল, পেতে গেলে কিছু ছাড়ুন!
আমি ছেড়েছিলাম, বাঁকি সব বড়বাবুই করেন;
আমাকে রাচি যেতে হয় অফিসের কাজে
আসতে পারলাম না যাওয়ার দিনেও
আর আমার বসের ও যাবার ছিল দিল্লী,
তার সাথেই যাবার ব্যবস্থা হয় প্রমিতার।


মনে পড়ে, দিল্লী থেকে ফিরে প্রমিতা
কেঁদেছিল ফোনে দীর্ঘক্ষন।
তারপর প্রমিতার সাথে তার বিয়ে স্থির হলে
আমার কাছে বিচ্ছেদ চাইলো,
আমি বাধা দিইনি।


*** প্রিয় লেখক শ্রদ্ধেয় শংকর মহাশয়ের
'বিত্ত বাসনা' উপন্যাসের পটভূমিকায়। ***