আমার সেই মা


ছুটির দিন,বাবা ঝুল ঝাড়ু হাতে বাড়ীর আনাচ কানাচ থেকে আবর্জনা আর আবর্জনার মতো যা কিছু নির্দিধায় ছুঁড়ে ফেলছিলেন.
হঠাতই বিছানার কোল থেকে একটা লাল মলাটের খাতা বেরোল
বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন,
আমি মালিকানা অস্বীকার করায় অগত্যা মা র ডাক পড়লো.
আমার মা,আমার সেই শাখা পলা আর সোনার চুড়িতে সুর তোলা মা,
আমার আটপৌরে শাড়ির আঁচল মাখা মা
এসে বাবার সামনে দাঁড়াল.
বাবা ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন " খুন্তি নাড়তে ভালো পারো জানি,কলম নাড়তে কবে শিখলে ? "
মা বাবার চোখে চোখ রেখে কি জবাব দিয়েছিল জানিনা,কিন্তু বাবার বেঁকা ঠোঁট এক পলকে সোজা হয়ে গেছিলো,বোধহয় শিরদাঁড়া টাও
পরদিন দেখলাম আমার গত শ্রেণীর বই খাতা আর পূজা বার্ষিকীর সাথে ওই লাল খাতাটাও দাঁড়িপাল্লায় চড়লো
বিক্রি হলো কিলো দরে
বাটখারা র সাথে ওজন মিলিয়ে বিক্রি হলো মা র স্বপ্ন,মা র হাসি কান্না,আবেগ,প্রতিবাদ,মা র না বলা কথারা..
কিনে নিয়ে গেল এক নাম না জানা ফেরিওয়ালা,
সে তো মা র স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নয় !


আমার মা,আমার সেই ঘুমপাড়ানি গান,সেই জোছনা রাতের রূপকথা বলা মা,সেদিনও নিজের রূপকথা কে চুপকথায় ঢেকে রান্না করলো মাংস,পোলাও
আমরা আয়েস করে খেলাম
সেদিন বুঝিনি,আজ বুঝি খুন্তি নাড়তে ভালো পারা মা র রান্না গুলো সেদিন এতো বিবর্ণ কেন ছিলো !