এক জ্যোৎস্না রাতে, হাত পেতে
যেঁচে নিয়েছিল সে-বেলী
বলেছিল, সকালে ফেরৎ দেবে ফুল
সেদিন রাতে পুকুর ঘাটে
একটিও ঝরেনি বকুল ।
আরো কত কথা বলেছিল সাথী
কালো ফিতায় গলায় চশমা ঝুলিয়ে
উদাসী চোখের মেয়ে
বলেছিল, তিতাস দেখাতে নিয়ে যাবে একদিন
তীর ধরে হেঁটে হেঁটে চলে যাব অনেক দুর
জানবেনা কেউ
যে মাটিতে অনুক্ষন চুমু খায় তিতাসের ঢেউ
জল ছোঁয়া সেই নরম মাটি এনে সিঁথিতে পড়ার সিঁদুর ।
নল খাগড়ার বন পেরিয়ে
বাবুইদের বাসা এড়িয়ে
আরো কিছু দুর গেলেই যেখানে সেগুন বন
বিশাল পাতার ছায়ায় শন্ শন্
বায়ু বুনোফুলের সাথে করে  খেলা
সারাবেলা ।
পাতার ফাঁকে ফাঁকে চমকে উঠার মতো
ভাগ্যবান এক চিলতে রোদ
ছুঁয়ে যাবে কপোল ও উরুত ।
হয়ত কোন ইষ্টিকুটুম পাখি
ডেকে ডেকে বলবে-
আমিই রইনু স্বাক্ষী এই বিহার, তিতাস ভালবাসার ।
কথা ছিল, শরতের পূর্ণিমা রাতে
শিউলি তলায়, শিশির যখন ছোঁবে কামিনীর ফুল
এলোচুলে খোঁপা বেঁধে দাঁড়াবে এসে
জ্যোৎস্নার রূপালী পুতুল !
শিউলির  সাথে কামিনী মিশিয়ে
মালা গেঁথে পড়াব গলায়
তিতাস আছে, পূর্ণিমা আছে
সাথী, তুমি আজ কোথায় ?


উল্টে যাওয়া আরশোলা
আর ঝুলে থাকা বাদুর
এ ছাড়া কোথাও তো ভয় ছিল না তোমার ?
ছাতিম গাছের তলায় চাক্ চাক্ অন্ধকার
যতদুর হোক রাত, চলে আসতে তুমি
চিবুক ছুঁয়ে শরীরের ঘ্রান আর
চুল ছুঁয়ে শ্যাম্পুর গন্ধ নিতে ।
জানতে
আমার কোমরের নীচে খুব ঋজু এক রক্ষাকবচ
সর্বদাই পাহারায় আছে বিশ্বস্ত দেহরক্ষীর মতো
তারপরও
বৈশাখী মেলায় এলে না,
বিক্রি হল না হরিদার সযত্নে বানানো শুভ্র শঙ্খ শাঁখা
বোকা হরিদা হয়ত এখনো করে আমাদের প্রতীক্ষা !
( বোকা না হলে কি কেউ বিশ্বাসী হয় ? )
হরিদা তো জানেনা-
ফাল্গুনেই বদলে গেছে পৃথিবী
আরশোলা উল্টে রেখে হাওয়ায় ভেসে চলে গেছ সুদূর সিডনী ।
দুই বৎসর পর
দেশে ফিরে দেখি, কোথাও বৈশাখ নেই
চারদিকে কেবল চৈত্তর, নিদারুন খরা !
ভালই হয়েছে তুমি দেশে আসো না
আমাকে দেখলে, উল্টানো আরশোলা ভেবে
হয়ত শুরু হয়ে যাবে তোমার কান্না !