নারী-
সাধুর চরিত্রসম, মর্ত্যের অমিয়;
হে আমার কবি! তুমি আজন্মের প্রিয়।
ভুলক্রমে চলে যাই ভিন্নতর পথে,
ছুটে চলি নিরন্তর জীবনের রথে।
খুঁজেছি জগতব্যাপী সরল, সুন্দর;
যার কাছে রাখা যায় বিষাদী অন্তর।
জগত ভ্রমিয়া শেষে পাইলাম তোমায়;
বহুদিন ঘুরিয়াছি যাহার নেশায়।
থাকো বন্ধু বুক-মাঝে রাখিবো যতনে;
কেহ যেন নাহি জানে অতি সঙ্গোপনে।
বাসনা কামনা মোর সব পরিহরি,
বাড়িয়েছি দুটি হাত, ধরো দয়া করি'।


পুরুষ-
আমারও একই দশা, কাহার লাগিয়া
এসেছি বেহেস্ত ছেড়ে? ওগো বিধুপ্রিয়া!
জনম কাটিলো দুখে; সুখের নেশায়
পরাস্ত হৃদয়-মন ঘুরিয়া বেড়ায়।
হেথায় হোথায়, বন-জঙ্গলের মাঝে
পড়ে থাকি মৃতবৎ, ভোর থেকে সাঁঝে।
সুখের লাগিয়া ঘুরি বিশ্ব চরাচর,
কি সে সুখ পাবো? কেউ নিলো না খবর।
বানের পানার মতো ঘুরি দিবাযামী,
দেখেছি জীবনে কতো অসীম ধার্ষ্টামি।
সত্য-সুন্দরের পথে করেছি কামনা,
পাই শুধু ছলনার শতেক যাতনা!


নারী-
দুঃখের সমূহ কথা বলো নাকো কবি,
তুমি যে আঁধার-কাটা প্রভাতের রবি।
উঠিয়াছো হাস্যমুখে জীবনে আমার,
পেয়েছি তোমারে; তাই, ভয় হারাবার।
তুমি এই মর্ত্যভূমে অনিন্দ্য সুন্দর!
আমার হৃদয়ে তুমি থেকো নিরন্তর।


পুরুষ-
সুখের আশ্বাস দিয়ে, নরকুলে কতো
দুঃখের বসতবাড়ি গড়ে অবিরত।
সুখের পরশ আর চাই না ভুবনে;
শান্তি লভিবারে চাই শাশ্বত মরণে।
মরণের রূপ যেন মেঘের বরণ,
অতুলন সুকোমল তাহার চরণ।
বিরহের দাপদাহ মরণে ঘুচায়;
তাই, তারই অভিসার শুধু মনে চায়।
ত্বরিত চকিতে এসে আঁখি ঢেকে দিলে,
পরম সুখের শান্তি পাবো এই দীলে।


নারী-
বালাইষাট! কবি, তুমি বলো না এমন
মরণের কথা; শুনে ভীত হয় মন।
কালের প্রবাহে সবে চলে যাবো দূরে,
কেউতো রবে না আর এই ভবপুরে।
আমি, তুমি, সকলের হবেতো বিদায়,
জীবন-মরণে কারো নেই কোন দায়।
প্রকৃতির মহাখেলা আশা-যাওয়া রীতি,
তারই মাঝে থাকে শুধু ভালোবাসা-প্রীতি।


পুরুষ-
জীবন বিষন্ন হলে মৃত্যুচিন্তা বাড়ে;
তবুও, বাঁচিতে চাই ভুবন সংসারে।
সন্ধ্যার আকাশে চাই আলোকের দ্যুতি,
নিরাশার মাঝে চাই আশাভরা জ্যোতি।
সাগরে পতিত হলে, বাঁচিবার তরে
খড়কুটা যাহা পায়, ধরে শক্ত করে।


নারী-
এই হলো জীবনের চিরসত্য কথা,
পরিহার করো তাই সর্ব ব্যাকুলতা।
সার কথা, জীবনের যতক্ষণ প্রাণ
দেহ মাঝে থাকে প্রিয়; ততক্ষণ গান
গেয়ে যাবো; আনন্দের, সুখের পরশে
কথা ক'বো সর্বদাই, মনের হরষে।
অতীতের ব্যথাগুলো ভুলে যাবো সব,
ভবিষ্যত নিয়ে কোন নহে কলরব।
সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা সবই বর্তমান,
শ্রদ্ধা-প্রেমে পরস্পরে করিবো সম্মান।


পুরুষ-
তুমি হলে গৃহী-নারী! গৃহের বাসিন্দা,
গৃহবাসী এ খবরে করে যাবে নিন্দা।
থাকো তুমি গৃহমাঝে নিজের সংসারে,
কষ্ট আর বাড়াইও না; বলি যে তোমারে।
নিন্দা অতি কষ্ট আনে পরিচিত জনে,
কর্মের আগে এ কথা রাখিও স্মরণে।


নারী-
চাঁদের কলঙ্ক আছে জানে সর্বজন,
সর্ব ত্যাগ করতে পারি তুমি যে আপন।
প্রেমের কারণে নিন্দা পেলো কতো নারী,
ইতিবৃত্ত খুলে দেখো, ওহে বে-সংসারী!
রাধিকায় ঘর ছাড়ে কৃষ্ণের লাগিয়া,
সকলে বলিছে তারে সাধ্বী বিষ্ণুপ্রিয়া।
ঘর ছাড়ে রজকিনী চণ্ডিদাস-তরে,
কায়েসের লাগি' লায়লা কতো কষ্ট করে।
আমি না হয় সেই মতো গৃহত্যাগী হবো,
সুখের পরশ পেতে তব বুকে রবো।


পুরুষ-
এমন করিয়া তুমি বলো নাকো আর,
এ বিবাগী মন হয় ভেঙ্গে চুরমার।
আশার লতিকা বাড়ে তরতর করে,
তবুও যে মন-মাঝে নিরাশা সন্তরে।
ভবের বাজারে তুমি রাজকন্যা সম
বিরাজ করিছো সদা; ওগো প্রিয়তম।
তোমারে দেখিলে মনে পাই বড় সুখ,
ভুলে যাই জীবনের অতীতের দুখ।
আশার প্রদীপ জ্বলে মিটিমিটি করে,
তুমি যেন আশালতা মানুষ-ভূধরে।
ছুঁয়ে যদি দাও তুমি কোমল পরশে,
মৃতপ্রাণ হেসে ওঠে অতীব হরষে।


নারী-
তোমার মুখের কথা মধুর বচন,
যত শুনি ভালো লাগে; ওগো প্রিয়জন!
শরীরে শরীর পেতে চাই না তোমারে,
তুমি রবে চিরদিন আমারই অন্তরে।
যেমন, চন্দ্রের প্রভা হলে আলোকিত,
ভুবনের মানুষেরা হয় পুলকিত।
ধরিতে পারে না তারে, তবু চায় সবে;
তেমন করিয়া তুমি বুক-মাঝে রবে।
প্রভাতের রবি যথা আলোক ছড়ায়,
পুলকিত পাখিকুল তাহার ছোঁয়ায়।
তেমনই পুলক আনো আমার অন্তরে,
তোমার পরশে মম অন্ধকার সরে।
চিরদিন বেঁচে রও অন্তরে আমার,
সুখী হবো ভুবনেতে পরশে তোমার।


পুরুষ-
এমন করিয়া আর বলো না প্রিয়তি,
দুঃখের সাগরে ভেসে, ভুলে যাই রীতি।
আজ থেকে বন্ধু হলে মাটির সংসারে,
বন্ধু হয়ে রবে তুমি অন্তর মাঝারে।
ভীত নই আমি, আর নহি সঙ্কোচিত
জীবনের প্রতিপদে; সুখের সঙ্গীত
হয়ে বেঁচে রবে তুমি আজীবনকাল;
পবিত্র প্রেম-ধারায় হবো উন্মাতাল।


উভয়ে-
স্বর্গের সম্পর্ক রয় বন্ধুত্বের মাঝে;
যেথা, পূতঃপবিত্রতা সর্বদা বিরাজে।
আমরা দু'জন হবো স্বর্গের বাসিন্দা,
নিন্দুকেরা অহেতুক করে যাক নিন্দা।
স্বর্গ হতে আসে প্রেম, স্বর্গে যায় চলে;
সাধু-সাধ্বী গুণিজন এই কথা বলে।


০৫/১০/২০২৩
ঢাকা।