এই সমুদ্রসীমায় রাত্রি নামে অতি সন্তর্পণে
সন্ধ্যাতারা জেগে উঠে ঝিকিমিকি আলোর প্রভায়
মৃদুমন্দ বাতাসের দোলনায় চড়ে রাত্রি নামে
নীলজল সমুদ্রের অতল গভীরে
জেগে উঠে বিন্দু বিন্দু আলোর ফোয়ারা
কুয়াশার মিহিন অবগুণ্ঠন খুলে
সাগরের জলরাশি অনর্গল কথা বলে
ঢেউয়ের ছল করে বালুকার সনে।
সাগরের তীরে বন, সবুজ গাছের সমারোহ-
তাল, নারিকেল, শাল, ঝাউ, ছইলা,  
গেওয়া আর কেওড়া;
গুল্মলতার প্রাসাদে জোনাকিরা প্রদীপ জ্বালায়
ঝিঁঝিঁ পোকাদের ঠুংরি-গীতিকব্যে সুর ওঠে
ঘুমপাড়ানি সুরের মাদক নেশায়
মহিমান্বিত জ্যোতির্বলয়ে পাখিরা ঘুমায়;
নিদ্রাদেবীর আদরে তারা শান্তি লভে
পোকা-মাকড়, সাপ-খোপ-ব্যাঙ, জন্তু জানোয়ার;
ঘুমের ধূসর রাজ্যে সকলেই অচেতন হয়।
শুধু, জেগে রয় কবিমন
তার জীবন সত্তার দু'নয়ন খুলে অন্তর-নয়নে দেখে
সমুদ্র-রাত্রির এই অপরূপ রূপের সৌন্দর্য।
কুয়াকাটা-গঙ্গামতি সৈকতের বুকে
রাত্রি নামে শ্যামল লেবুর বনে
লাল কাঁকড়ার দেশে
সুদীপ্ত নীরব পায়ে ধীরে ধীরে ধীরে...


কবি জেগে থাকে সাগরের জলের সহিত
সমুদ্র-গভীরে নেমে যাওয়া বালুকার সনে
মিটিমিট জ্বলে থাকা তারার বাগানে
জলে ভেজা সমুদ্রের বাতাসের গানে
গুল্মলতার প্রাসাদে ঘুমে অচেতন প্রাণীদের সাথে
মিহিন তরল অন্ধকারে
আর তরুণী ঢেউয়ের মনোরমতার সাহচর্যে।
অন্ধকারের অরূপ রূপের ভেতরে দেখে
আসন্ন নবীন ভোরের প্রাচীন সূর্যোদয়।


কুয়াশাবৃত অবগুণ্ঠন খুলে উঠে আসবে
আগামীর সূর্যোদয়
তার প্রতীক্ষায় মুক্তিকামী মানুষের মতো
কবি জেগে থাকে সমুদ্রবেলায়
দিগন্তজোড়া উদার আলোর আহ্বানে
মহিমাময় সৃষ্টির পাখ-পাখালির কোরাসের সুরে
অন্ধকার ভেদ করে পূর্বাকাশে জেগে উঠবেই
ডিমের হলুদ কুসুমের মতো স্নিগ্ধ বর্ণময় আভা।


রাত্রি নামে যন্ত্রণার নির্জনতা নিয়ে
রাত্রি নামে ভয় ও কান্নার বাস্তবতা নিয়ে।
অলৌকিক ঐক্যবোধে প্রজ্ঞার আলোকে
যদি, দৃপ্তপদে হেঁটে যাই সূর্যকে নামাতে
মহাত্ম এবং ঔদার্যের মহিমায়;
অন্ধকার বিদূরিত হয়ে আলো ফুটবেই।
রাত্রি নামে ধীরে ধীরে
রাত্রি চলে যায় তেজী বাতাসের তোড়ে;
রাত্রিরা হারায় দিবসের আলোর প্রভায়।


১৫/১১/২০২১
চর বাউশিয়া, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ।