কবি হবার বাসনা জেগেছিলো তাঁর;
অভিধান খুলে তাই শব্দ খুঁজে যায়,
চৈত্রের মাসে হারানো হালের বলদ
যেমন খুঁজে বেড়ায় কৃষকের ছেলে।
শব্দগুলো প্রজাপতি, উড়ে উড়ে যায়,
দূরে যায়, এলোমেলোভাবে। যতবার
বলে, 'ফিরে আয়। ওরে, ছন্দের পুষ্পকে
সাজিয়েছি উপমার রঙিন ডালিতে।
কারুময় চিত্রকল্প এঁকেছি নিপুণে,
রঙ-তুলির আঁচড়ে, বিবিধ কৌশলে'।
অকরুণ শব্দরাজি উড়ে যায় দূরে;
হতাশায় ভেঙ্গেছে সে। কবির সাধনা-
কবিতার বটবৃক্ষ ছায়ার রচনা।
ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়, অমাবস্যা নামে,
চারিদিকে অন্ধকার, উত্তরে দক্ষিণে;
কবি হওয়ার বাসনা লুপ্ত হয় তাঁর।


বহুকাল পরে এক গোধূলি সন্ধ্যায়,
রূপবতী নারী এক গোধূলি রঙের
শাড়ির আঁচলখানি বাতাসে উড়িয়ে
নেমেছিল ধরণীতে, কুয়াশার ভিড়ে;
হাতে তার জ্বলজ্বলে আশার প্রদীপ,
ধ্রুবতারকার আলো উঠেছিলো জ্বলে
দিকহারা নাবিকের চোখে। আশা জাগে,
তীরের সন্ধান পাবে। লক্ষ্য স্থির করে
আবার ওড়ায় পাল, মনোমুগ্ধকর;
দৃঢ় হাতে ধরে ফের তরণীর হাল।
কবিতা-সাম্রাজ্যের পরিব্রাজক হয়ে
প্রেমের নিশান তুলে দাড় বেয়ে যায়।


জীবনের দোলাচলে এক ঝঞ্ঝাবাতে
ছিঁড়ে যায় জোড়াপাল, ভেঙ্গে যায় হাল;
বেসামাল হয়ে পড়ে চাওয়া-পাওয়া ঘিরে।
সেই রমণীয় নারী চলে যায় দূরে,
কবির ভাবনা থেকে, অজানার পথে।
তার সমস্ত সৌন্দর্য কবির মননে
বেদনার ঢেউ আনে তুমুল প্রতাপে।
দুঃখের স্রোতের টানে চলে বহুদূরে,
ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন তোয়াক্কা না করে
ছোটে অনন্তের পথে তরণী তাহার।
জরাগ্রস্ত, মৃতপ্রায় সে সব শব্দেরা,
ফিনিক্স পাখির ন্যায় জেগে উঠে ফের।
মরালির বেশে কবিতারা নেমে আসে
উজানজল কেটে, মানস সরোবরে।
হায়, অমর কবিতা! তোমাদের সৃষ্টি
আনন্দ-জঠরে নয়; দুঃখের বিবরে।
দুঃখবহ কথাগুলো কবিতার ন্যায়
ছুটে চলে দ্রুতবেগে অনন্তের পথে।


১০/১২/২০২১
মিরপুর, ঢাকা।