সুন্দর করমজল,
বন্যপ্রাণীদের প্রজননস্থল।
বিসারিত বনভূমি!
আকাশ, মৃত্তিকা, বৃক্ষ একাকার হয়ে
পরস্পর পরস্পরের শরীর যাচ্ছে চুমি।
ভিজেমাটি, সোঁদাগন্ধ অদ্ভুত শিহরণ জাগায়
প্রকৃতিপ্রেমিকের মননে, উদ্বেলিত চেতনায়।
পাখির কলকাকলি নেই, নীরব নিস্তব্ধ বনাঞ্চল;
শুধুই ভ্রমণোৎসুক মানুষের অবান্তর শব্দে মুখরিত।
চিত্রল হরিণ ছুটে আসে,
পর্যটকদের গা ঘেসে দাঁড়ায়; হাতের নাগালের কাছে,
এক চিমটি ঘাসের আশায়।
আহা, কত ভালোবাসা মানুষে-পশুতে!
কৌতুহলি বানরেরা, তারা দলে দলে
আশ্চর্য বিহ্বল চোখে চেয়ে থাকে অনিমিখে।
খুব নিকটে গেলেও লাফিয়ে সরে যায় না তারা,
তা দেখে, আমাদের শিশুরা আনন্দে আত্মহারা।
হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে চায়,
অনাবিল সুখের আনন্দতায়।
অতঃপর, কাঠের ফুট ট্রেইলার বেয়ে বেয়ে,
বনের গহীনে ঢুকে যাই চুপচাপ,
যেন আমাদের শব্দে
সুন্দরবনের বাসিন্দারা বিরক্ত না হয়।
অপার্থিব আনন্দতা জেগে ওঠে শহর-হৃদয়ে।
আস্বাদন নেই ধুলোবালিহীন, সিসামুক্ত
নির্মল সতেজ বাতাসের ঘ্রাণ।
কলকল করে বয়ে চলে পশুর নদীর ঘোলাজল।
উজানের স্রোত ঠেলে আমাদের জাহাজ- ভেসপার,
জল কেটে ধীরে ধীরে চলে হাড়বাড়িয়ার দিকে।
শান্ত, স্নিগ্ধ শীতের নদীতে
অনন্য সৌন্দর্যে হেসে ওঠে
একরাশ বিস্ময়কর আনন্দ নিয়ে।
একপাশে বিস্তৃত চলমান নদী,
অন্যপাশে স্থির সবুজ বনানী।
যখন এগিয়ে যায় 'ভেসপার' সামনের দিকে
জানালার কাচ খুলে অপার বিস্ময়ে দেখি-
যেন, জাহাজখানি দাঁড়িয়ে আছে,
আর, বৃক্ষগুলো পিছনের দিকে ধীরে ধীরে হেঁটে যায়।
করমজল, অতঃপর,
হাড়বাড়িয়ার পথে আমাদের সুন্দর জাহাজ,
রাজহাঁসের মতো ছুটে চলছে দ্রুতবেগে
করমজলের তীর ছেড়ে সামনের দিকে আজ।


২১/০১/২০২২
জাহাজ ভেসপার
করমজল থেকে হাড়বাড়িয়া-এর পথে...