আমি কখনো বোঝাতে পারিনি তোমায়, আমার সঠিক অবস্থান। তাই, বিষন্ন মননে একা একা কেঁদে যাই শুধু। শেষ বিকেলের চঞ্চল আলোর মতো, ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনশীল তোমার মন। কখনো হলুদ হও, কখনোবা লাল, আবার কখনো নীল; মাঝে মাঝে একই সঙ্গে সাত রঙ ধরো। অতঃপর, হয়ে যাও কালো-  ঘনিভূত অন্ধকারের নিকষ কালো! অপেক্ষায় থাকি, প্রভাতের আলো হয়ে রাঙিয়ে তোলবে এ পৃথিবী। আলোকের মোলায়েম স্পর্শে হেলেদুলে ছুটে যাবে শত শত নদী; গলা ছেড়ে গান গা'বে পাখিদের দল; মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে নৃত্য করবে বৃক্ষ-লতা-পাতা; অপার বিমুগ্ধ হবো তাতে।


তোমাকে যখন বলি- চলো, কোথাও বেড়াতে যাই। রমনার পার্কে কিংবা জাতীয় উদ্যানে। ছায়াময় বৃক্ষতলে বসে বাদামের দানা চিবুতে চিবুতে, স্বপ্নময় জীবনের ছবিগুলো আঁকি। সুন্দর নাসিকাটিকে অদ্ভুত বিকৃত করে বলো- যত্তোসব আদিখ্যেতা! বনানী-পাহাড়-নদী ছাড়া, আর কিছু কি চেনো না?


তারাখচা হোটেলের বদ্ধঘরে দামী বিছানায় মত্ত হয়ে শারিরীক সুখ পাওয়া যায়; তাতে, আত্মাদের অপমৃত্যু হয়। তাই, শ্যাম বনানীর বৃক্ষের কোমল স্পর্শে; উজ্জীবিত মৃত্তিকার সোঁদাসোঁদা ঘ্রাণে; জাগ্রত পাখির তীব্র কলকাকলিতে; নীরব পথের পাতার মর্মর শব্দে; জাফরিকাটা আলো ও ছায়ার খেলায়; প্রত্যহ সজীব হই, সবুজ হই, প্রদীপ্ত হই; এ কথা কখনো বোঝাতে পারিনি আমি।


এই আসে এই যায়, ডেসকোর বিদ্যুতের আলোময় ঘরে, কিছুই দেখতে পাই না। বনবন শব্দে ঘূর্ণায়মান পাখার তলে বসে, অবিশ্রন্তভাবে ঘেমে যাই। দুঃখের পাটিসাপটা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে ভাজি, ভেতরে সুখের ক্ষীর, শুধু গন্ধ শুঁকি; ছুইতে পারি না আমি দীর্ঘকাল ধরে ঘিরে আছে অন্ধকার এই জীবনের চারিধার।


পাহাড়ের মতো বড়োই নিঃসঙ্গ আমি; বাতুল আবর্জনায় ঠাঁসা নদীর মতোন স্রোতহীন, পুঁতিগন্ধময় । ঘুরিফিরি বৃক্ষহীন উদোম চাতালে, ছায়াহীনতায়; প্রখর রৌদ্রের নিচে একাকী; নিঃসঙ্গ নিস্তরঙ্গ জীবনের রূঢ় পথে।


২১/০৭/২০২৩
মিরপুর, ঢাকা।