অনিন্দ্যসুন্দর হয়ে, এ মর্ত্যভূমিতে
এসেছিলো সে; নিশ্চুপে, কৃষকের ঘরে,
প্রতিমার রূপ ধরে। সৌন্দর্যের সাথে
গুণ সমাহার তার হয়েছে অর্জন।
অপরূপ রূপে এলো, যেন পৃথিবীতে
নেমে এসেছে, স্বর্গের লাল সিঁড়ি বেয়ে।


কোন এক কুক্ষণে সে, ভালবেসেছিল
মিহি ঝাঁকড়া চুলের, বিস্তৃত বুকের,
জলের মতোন কালো চাষা-ছেলেটিকে;
সকলের অগোচরে দিয়েছিলো মন।
চলনে বলনে যার কোমল নম্রতা,
ঊর্মির গর্জন উঠে ভারী কণ্ঠস্বরে,
প্রাণখোলা মধুময় অপার হাসিতে।
চোখের জ্যোতিতে ভাসে আকাশের চাঁদ
পূর্ণিমার রাতে রূপালি জ্যোৎস্না নিয়ে
ধূলি-ধূসরিত মাটির ধরাতে নামে।
অর্ফিয়াসের বাঁশরী পেয়েছিলো বুঝি
প্রবল সাধনা বলে। কৃষক মেয়েটি
ইউরিডিস হয়ে যায়, সম্মোহিত গানে;
পরস্পর ভালোবাসে অমোঘ নিয়মে।


স্বপ্ন দেখে কুঁড়ে-ঘরে চাঁদের ঝলক
সুখের ঝর্ণাধারার ঝলমল করে,
ইচ্ছে-খুশি ঝরে যেন শিশিরের জলে।
পরম যতনে তারা লালন করিছে
আনন্দ-বেদনাগুলো গোপন অন্তরে।
সুখ-জল ঝমঝম করে ঝরে পড়ে
শাওন রাতের অঝর বৃষ্টির মতোন;
পাড়াগাঁর আঁকাবাঁকা পথে, নদীঘাটে,
খোলামাঠে, খালে, বিলে, ঝিলে, বাগানের
শান্ত শীতল ছায়ায়, পুকুরের জলে।


কিশোরীর বুকে যৌবনের তাপ জাগে,
তীব্র অসহ্য যন্ত্রণা, পলাশে শিমুলে
ফাগুনের রঙ ধরে, দাবদাহ জ্বলে।
ফুলের গহীনে জমে অপার্থিব মধু,
মৌমাছির আগাগোনা বাড়ে নিত্যদিন;
ধনাঢ্য ছেলেটি সেও মধু-গন্ধ পায়!
মেয়েটির অঙ্গ জুড়ে খেলা করে যায়
তরঙ্গভঙ্গের  জ্যোতি, কিরীট শিখায়
জ্বলে উঠে যেন লক্ষ বরষের মায়া;
মনে তার আশা জাগে, ঘটক পাঠায়।


আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আগ্রহে
মেয়েটির পিতা তাতে সম্মতি জানায়;
যথাসময়ে সানাইয়ের সুর বাজে।
নাইওরীদের গমগমে আওয়াজে,
আনন্দ হুল্লোড় শব্দে, ক্ষোভে ধ্রিয়মাণ
মেয়েটির হুহু কান্না স্তব্ধ হয়ে যায়।


মহানন্দে শেষ হয় সব আয়োজন!
গানে, হাসিতে-খুশিতে, আনন্দ-হিল্লোলে,
জেগে উঠে চরাচরে মধুর আবহ।
রাতের তিমিরে জাগে আকাশের তারা,
নদীর জলেতে উঠে তরঙ্গের খেলা,
শিশিরের শব্দে কাঁদে বিশ্ব চরাচর,
ভোরের আলোতে ভাসে পাখিদের গান।
রাত্রিশেষে বিকশিত ঝলমল ভোরে
সকলের ঘুম ভাঙে স্বাভাবিকভাবে;
সেই মেয়েটির ঘুম ভাঙে নাতো আর।


০২/০৭/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।
(কাহিনী কাব্য)