হাজার বছর পরে এলে তুমি, শ্রেষ্ঠ বাঙালি হে!
এই কাদামাটিজলে, প্রকৃতির মহাদান!
শেখ মুজিবুর রহমান।
তোমার বুকের মাঝে রক্ষিত ছিলো যে
অসুর-বিনাশী সুর, অদম্যের বিপুল সাহস
পীড়িতজনের জন্যে।
ঝঞ্ঝা-অশনি তাণ্ডবে তুমি কাঁপালে বসুন্ধরা,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে এনেছো ঘুর্ণিঝড়,
অমিত প্রবল শক্তিবলে, ভালোবাসা নিয়ে প্রাণে,
মানুষের প্রয়োজনে।
মজলুম যতো পৃথিবীর বুকে,
অমিত সাহসে জাগিয়ে দিয়েছো তুমি,
দগ্ধপ্রাণে মুক্তির আস্বাদ;
মিছিলে মিছিলে, অগ্নিঝরা শ্লোগানে শ্লোগানে,
ভুলে গেছে তারা জীবনের অবসাদ।
তোমার আহ্বানে রক্তে রক্তে ভরে গেছে
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ধলেশ্বরী-কর্ণফুলি,
এ বাংলার সব নদী;
শহিদের রক্তের শপথ করেছিলো তারা,
মুক্তির নেশায় তারা গিয়েছিলো যুদ্ধের ময়দানে,
মোহন আলোর অন্বেষণে।
তারা হেঁটে গেছে নিরন্তর, নিরবধি,
অলৌকিক আহ্বানে রক্তগঙ্গায় করে পুতঃস্নান;
শেখ মুজিবুর রহমান।


তুমি অমর কাব্যের কবি!
অসীম ক্ষমতাবলে, কোন ঐশ্বরিক গুণে,
এ বাঙালির বুকের যন্ত্রণা তুমি বুঝেছিলে?
শুনেছিলে পরাভূত জীবনের করুণ সুরের গান,
তোমার মরমী, সমব্যাথী কানে?
মানুষের প্রতি অবহেলা আর অত্যাচার দেখে
ক্ষেপে গিয়েছিলে তুমি,
তরঙ্গময় সিন্ধুর বারি, দুলে উঠেছিলো ঐ বুকে!
তুচ্ছ করে কারা-শৃঙ্খল ভয়, হেঁটে গেছো দৃপ্ত পদক্ষেপে,
অত্যাচারী শাসকের ক্রুরদৃষ্টি অবহেলা করে,
মুক্তির আলোয় বিকশিত করতে পৃথিবীর অন্ধকার।


তোমার মাহাত্ম্য নিয়ে ওই অগ্নিঝরা একাত্তরে
এগিয়ে গিয়েছে যুদ্ধের মাঠে কত মুক্তির সেনানি,
তাঁরা আমাদের ভাই,
তাঁরা আমাদের বোন,
তাঁরা আমাদের সুহৃদ-স্বজন,
পরোয়া করেনি শহিদী মৃত্যুর তুমুল রণাঙ্গনে।
পাশব শত্রুর বুকে হেনেছিলো কঠিন আঘাত,
বীরের মতোন মৃত্যুসুধা করে গেছে তারা পান;
আঘাত লভেছে বুকে,
মৃত্যুরে তাঁরা তুচ্ছ করে ছুঁটে গেছে সম্মুখে।
বাঙালি মানেনি পাকিস্তানির অন্যায় ফরমান,
তারা যে তোমার আদেশ শুনেছে ।
সশস্ত্রের বেশে শত্রুর সাথে করেছে আলিঙ্গন ,
জীবন করেছে দান।
মুকুটবিহীন রাখালরাজা তুমি,
তাঁরা রেখেছে তোমার সম্মান।


চিরদুঃখী, হে যুগান্তরের কবি!
তুমিই এনেছো আমাদের বুকের ভেতরে
অমিত-সাহস তেজ,
দেখায়েছো তুমি পৃথিবীর অত্যাচারিতকে
শিকল ভাঙার দুঃসাহসের অদম্য ছায়াছবি।
জীবন দানের প্রতিজ্ঞাতে লড়ে যেতে,
মানুষের ভালোবাসা নিয়ে সত্যের পথে,
মুক্তির পথে, এগিয়ে যেতে নিরন্তর।
কী আশ্চর্য! তুমিও নিহত হলে কাপুরুষের হাতে!
নির্মমভাবে রাতের অন্ধকারে।
যেন আরেক সিরাজ পলাশীর কুটিল ষড়যন্ত্রের
করুণ ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসে
মির জাফরের নির্দেশে
মোহাম্মদী বেগের ছুরির ফলায় ছিন্নভিন্ন হয়!
হত্যা করেছে তোমারে যারা,
এ জগতের পাপিষ্ঠ, জঘন্য বর্বর তারা।


১৫/০৩/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।