ধূর্ত পশুদের দল অতর্কিত হামলা চালায়,
ধার্ষ্ট্যামী করে তারা জাতির পিতার ঘরে।
হায়!
বাঙালি জাতির পিতা,
কতোই করেছো অহমিকা, এ বাঙালিকে নিয়ে।


পূবের আকাশ লাল, চারিদিকে রক্ত-আভা জাগে,
মৃদু-মন্দ নির্মল বাতাস ঝিরঝির বয়ে যায়।
আবিলতাহীন অনন্ত সুখের ধারা
পবিত্র জলের ফল্গু বহিছে গোপনে,
অন্তরে অন্তরে,
পদ্মা-মেঘনা-মধুমতি গলে বঙ্গোপসাগরে।
ফজরের সালাতের শেষে
বিশ্বপিতার দরবারে অপার্থিব করুণা কামনা করে
ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরছি।
হঠাৎ, নীলসিয়ায় ঢেকেছে আকাশ,
জলপাই রঙের ট্যাঙ্কগুলো ঘড়র ঘড়র শব্দে
ঢাকার শান্ত রাস্তার এদিক ওদিকে হেঁটে যায়।
পাখিরা কি ভুলে গেছে কলতান? তাদের আনন্দ গান
স্তব্ধ হয়েছে সহসা।
তারাও কি বুঝেছিলো সে দুঃখবোধের মানে?
মৃত রাজপুরী সমস্ত শহর, নিথর নিস্তব্ধ সময়ের ঘড়ি,
সেই ক্ষণে ভেসে উঠে বেতারে,
অবশ্য সে বেতার-তরঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো 'রেডিও বাংলাদেশ'!
অবিশ্বাস্য বাণী- 'আমি মেজর ডালিম বলছি...'


আকাশ ভেঙ্গে পড়ার, করুণ সে বার্তা শুনে
তুমি কি হয়েছো কিংকর্তব্যবিমূঢ়? হে গল্পের অমিত বালিকা!
কেউ ছিলো না তখন শান্তনা দেবার স্বার্থান্বেষী এ ভুবনে।
দুইবোনে কেঁদেছিলে অঝোর ধারায়,
শ্রাবণ-মেঘের মতো।
অতঃপর, এলে দ্বাপর যুগের প্রবঞ্চক মৃত্যুকে ঠেলে।
সেই প্রলংকরী দিনে তুমি কি পেলে দৈববাণী?
পরাজিত পর্যুদস্ত বাঙালির শৃঙ্খল ভাঙার মুক্তির বারতা দিতে
অনন্তকালের কষ্টময় পথে হেঁটে যাচ্ছো তাই
কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথে।
পিতার হত্যাকারীরা সর্বত্র তোমাকে খুঁজে বেড়ায় ,
খুঁজে বেড়ায় জাতির জনকের রক্তবিন্দু কণা,
হায়!
পনেরো আগস্ট, বাঙালির কলঙ্কের দিন,
চিরন্তরন বেদনাময় আগস্ট!


ব্রাসেলস থেকে বনে, অতঃপর, দয়ালু ভারতে,
স্বর্ণময়ী মহীয়সী ইন্দিরার দেশে।
জীবন যুদ্ধের সিঁড়ি ভাঙ্গা শুরু হলো
আলোহীন অন্ধকারে
পেছনের দিকে ক্রমাগত টেনে যাচ্ছে অরি দল,
অবিরল, অবিরল... ।


বিপ্লবী জনতা যারে সোহাগে আদরে ভালোবেসে বুকে নেয়,
সে কি জনতার থেকে দূরে থাকতে পারে?
পর্যুদস্ত বাংলাদেশে তুমি ফিরে এলে  
মাতৃমুক্তি পণে তুমুল রণাঙ্গনে, 'জান দার্ক'-এর মতো।
শ্যামল বাংলার বুকে, সাহসী প্রেমের অগ্নি জ্বেলে।
তারা করেছে আঘাত বারে বার ভেতরে বাহিরে,
তারা করেছে সন্ধান কত শত পথে জিঘাংসায়
অসুরের প্রাণ, উচ্ছৃঙ্খল, উৎকণ্ঠায়।


অতঃপর, অয়োময় সিঁড়ি ভাঙ্গা মানুষের তরে,
অজানা আর নিকষ অন্ধকার পথে;
শিকড়-সন্ধানে তুমি চলিয়াছো আলোকবর্তিকা নিয়ে,
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া;
সে-ই যে তোমার শুরু, আজও হয়নি শেষ।


তুমি আজ শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যা নও,
নও একজন সাধারণ রাষ্ট্রনায়ক পৃথিবীর বুকে,
তুমি আজ জিগীষার প্রাণবন্ত আগামীর বাংলাদেশ।
এ বাংলাদেশের অমিততেজী অসুরবিনাশী মেয়ে,
যাকে ওরা ভয়ে এবং সম্ভ্রমে দেখে।
তুমি আজ গণতন্ত্রের মানসকন্যা- গল্লের অমিত বালিকা।


তোমার কণ্ঠের সুর লালনের অরূপ সঙ্গীত-
প্রাণের চেতনে দোল খেলে যায়।
তোমার নয়নে জ্বলে ভোরের সূর্যের আলো,
সাজাতে সুন্দর করে আগামীর বাংলাদেশ।
বেঁচে থাকো চিরকাল, গল্পের বালিকা! দীপ্রতায়,
বেঁচে থাকো বাংলাদেশে নির্বিরোধী মানুষের আঙিনায়,
বেঁচে থাকো তুমি আমাদের মননের চেতনায়।
বাঙালির বিমুগ্ধ ভালোবাসায়, শ্রদ্ধার মণিকোঠায়।
তুমি এ সবুজ বাংলার নবতর ইতিহাস,
শ্যামল বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল সময়ের রাজকন্যা,
অনন্ত আনন্দালোকে ভেসে উঠা বিমূর্ত কবিতা!


১৭/১১/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।