অন্তর মাঝে নিত্য বিরাজে অরূপ সুরের ধারা,
জননী আমার জ্যোতির্ময়িনী উজ্জ্বল এক তারা।
জগতের সব সুধাময় প্রেম মায়ের নামেতে ঝরে,
কে আছে এমন অমল চেতন বসুন্ধরার ’পরে!
আপন সুখের বিনিময়ে চায় সন্তানদের সুখ,
যন্ত্রণা সহে সন্তান তরে ভুলে গিয়ে সব দুখ।


প্রকৃতির এক মনোরম দান ধরণীর মাঝে তিনি,
কষ্টের পরে কষ্ট লভিয়া দুঃখকে যায় জিনি’।
সুমনা জননী বেহেস্ত-কণা মর্তলোকের মাঝে,
ভালোবাসা দিয়ে ভরে রেখো তাঁরে সকাল-দুপুর-সাঁঝে।
তাঁর পদতলে বেহেস্ত! বলে, রাব্বুল আ’লামিন,
ভক্তি-শ্রদ্ধা নিত্য বিলাও তাঁর প্রতি প্রতিদিন।


জীবনের সব চেতনা লুটাক মায়ের সুখের তরে,
আমাদের কাজে, বলনে চলনে 'উঁহু' যেন নাহি করে।
জগতের সব নির্মল প্রেম মায়ের জন্যে রাখি',
একটু আদরে, একটু সোহাগে দুখগুলো তাঁর ঢাকি।
জীবন ধারায় চেয়ে যাই শুধু প্রেমের ফল্গুধারা,
প্রেম কি রে? হায়! বুঝিনি তো আমি জীবন হলো যে সারা।


মনের আকুতি নির্মোহ-প্রেম সংঘাতে কেড়ে নেয়,
হৃদয়ের মাঝে শুদ্ধতা আনে অরূপের রূপ দেয়।
জীবন প্রভাতে ভালোবেসে তিনি দুঃখ করেছে ক্রয়,
এখনো মূল্য দিয়ে যায় মাতা জীবনকে করে ক্ষয়।
মাতৃ-ক্রোড়ের ভালোবাসা পেয়ে ভুলেছি জগতদুখ,
স্বার্থপর এ বুকের ভেতরে এনেছি কতোই সুখ।


রুক্ষ-দিনের ক্লান্ত দেহের অবসাদ যতো ছিলো,
প্রেম-মহিমার আঁচল-ছোঁয়ায় সকল হরিয়া নিলো।
জীবনে যখন কত শত দুখ হৃদয়ে আঘাত দেয়,
কী এক অরূপ পরশ বোলায়ে জননী শুষিয়া নেয়।
জননী আমার কোথায় আজিকে চারিধারে মরি খুঁজে;
স্বার্থের টানে সব ভুলে যাই, চলছি কি চোখ বুজে?


বার্তা পাঠায়- 'আয় খোকা আয় পরানের ধন, সোনা!
জটিল সময় পার করে যাই সময় যে হাতে গোনা'।
যাবো যাবো করে হয়নিকো যাওয়া অভিমান করে, হায়!
জননী আমার নীরবে গিয়াছে দূরপথে অজানায়।
বুকের ভেতরে পাথর বান্ধি' কেঁদে ওঠে এই মন,
হে অভিশপ্ত! সারাটি জীবন করে যাবি ক্রন্দন।


মাগো, ক্ষমা করো অধম বালকে দয়াময়ী, হে জননী!
কুপূত্র হয় যথায় তথায়, কুমাতা হয় না শুনি।