আজকে কেন হঠাৎ করেই মনে হলো তার
ঘরখানিরে করতে হবে পয়-পরিস্কার-
তকতকে, ঝকঝকে, ফকফকে।
ইদানিং সময়ের বন্ধূরা যখন তখন আসে
এ ঘরেতে বসে, আড্ডা মারে, গল্প করে।
এলোমেলো ঘর-বাড়ি, দরজা-জানালা
ধুলোমাখা বইগুলো সব ছড়ানো ছিটানো
আসবাব আছে যত
ঝেড়ে মুছে নিতে হবে নিজের মনের মত।
অনেকদিন গত হলো
বুকশেলফের বইগুলো হয়ে গেছে এলোমেলো
ধুলোবালি জমে জমে একসার একাকার।
তাই, প্রথমেই বই নিয়ে সে মাতে
সবার আগেই এইগুলোকেই হবে যে সাজাতে।
বুকশেলফের তাক থেকে একটি দু'টি করে
কম্পিত হাতে নামাচ্ছে, কাঁপিতেছে থরথরে।
গাদাগাদা বই- রাখে বিছানায়
বড়ো মমতায়
কবিতার বই- বিখ্যাত-অখ্যাত কবিদের লেখা
ইতিহাস, উপন্যাস, নামাজ শিক্ষা, রামায়ণ, মহাভারত
কোরআনের তফসির, রগরগে চটি বই...
বয়সের ভারে কাঁপে থরথরে
আঙুলের ছোঁয়ায় দু'একটি বই নিচে পড়ে যায়
আবার তুলে রাখে বইয়েদের সাথে বিছানায়।


কেন যে কেমন করে একখানা বই হাত ফস্‌কে পড়ে
শিরোনাম তার 'দেবদাস'!
আলতো করে তুলতে গিয়ে চমকিয়া উঠে সে
মলাটের তলে যতনে লুকানো ছিলো
জন্মদিনের শুভ কামনার একখানা আটপৌরে কার্ড।
রঙিন আকাশ ভেদ করে নেমে এলো পৃথিবীর বুকে-
আদমের বুকে হাওয়া
হাওয়ার হাতে নিষেধের গন্ধম
তুচ্ছ হয়ে যায় স্বর্গের বনেদী সুখ এক লহমায়
খুলে ফেলে সে
দেখে অবশেষে
অপটু হাতের অক্ষরে
লেখা আছে গোটা গোটা করে-
''শুভ জন্মদিন, চিরদিন থেকো অমলিন।''


বুকের ভেতরে বেজে উঠে বেদনার সুর
নয়নের কোণে নামে ঝর্ণাধারা
নদী হয়ে ছুঁয়ে দিতে অতল সমুদ্দুর
ঝাপসা হয়ে আসে পৃথিবীর সব আলো
গোধূলির অস্পষ্টতা নেমে আসে
চারিদিকে- ভীষণ রকম কালো
বিছানা উপরে বসে দেখে যায় অনিমেষে
পুরোনো সে-ই ধূসর কার্ডখানিরে।
স্মৃতির পাণ্ডুলিপি খুলে যায় ধীরে ধীরে
হাজার কথার গল্পগাথা
আনন্দের বেদনার
হায়!
সে এখন কোথায়?


আসল নামটি তার রয়েছে যে অবিকার
তবুও, ডাকেনি তারে
পৈত্রিক নাম ধরে
'পার্বতী' বলে হৃদয়ের তলে দিয়েছিলো যারে ঠাঁই।
সে এখন কোথায়?
ছবি ভেসে উঠে মনের মুকুরে অজস্র চিত্রপটে-
পুকুরের পাড়ে আমের বাগানে
শাপলার বিলে শালুক তোলার ছলে
কতো কথা, কতো গান
কতো হাসি অফুরান
আত্মহারার আনন্দদিন
ছিলো অনন্ত রঙিন
ধুলোবালি মাখা বই সব
আজকে হঠাৎ টেনে নিয়ে এলো
হারিয়ে যাওয়া সে-ই শৈশব।


স্মৃতিরা কি আনন্দময়?
বেজে উঠে হৃদয়ের মাঝে বেদনার গীতি
ঝিম ধরে বসে বসে আজ করছে সে চিন্তার বিস্তার
ঘর ঘুচানো হলো না তার।


০৮/০১/২০১৯
মিরপুর, ঢাকা।