কেউ কেউ বলে, আধুনিক মানে এলোমেলো পথ চলা!
তাললয়হীন ছন্দবিহীন কবিতায় কথা বলা।
গ্রীবা উঁচু করে তাই ওরা বলে, 'মানি না ছন্দ কথা,
কবিতা যে হলো, হৃদয়ের কথা বলে যাওয়া যথাতথা'।


শান্ত নদীকে দেখেছো কি তুমি? ঢেউয়ের তালে তালে
তরণী দোলায়ে সম্মুখে ধায় বিবিধ রঙের পালে।
সুদূরের পানে ধীরে ধীরে চলে সুরের ব্যঞ্জনায়,
সেইখানে এসে ছন্দকলারা দোল খেয়ে বয়ে যায়।
ছইয়ের 'পরে তরণীর মাঝি মোহন বাঁশির সুরে
ভাটিয়ালী গায়, পল্লীগীতির বাণী ঝরে ঝুরে ঝুরে।
সেইখানে ঝরে ছন্দকলার অপরূপ সুধাধারা,
সেইখানে এসে কবির লেখনী হয় যে আত্মহারা।
সেইখানে এসে কবির দুচোখে আনন্দধারারাশি
নবীন পুলকে ছলকিয়া উঠে গহন মনের হাসি।


সোনায় সোহাগা মিলেমিশে যদি কঠিন সোনার প্রাণ
বিগলিত হয়ে জড়োয়ার রূপ করে যায় দোঁহে দান।
সেই জড়োয়ার পরশে কিশোরী আনন্দে উচাটন,
কবিতা সে রূপ পাঠকের কাছে এমনই রূপের ধন।
যে রূপের বাণী দোলায় দুলে না পাঠকের মনে প্রাণে,
যে রূপের সুর রহিয়া রহিয়া বাজে না তাঁদের কানে;
সে রূপ কখনো অমর হয় কি সময়ের দোলাচলে?
সুর ও ছন্দবিহীন কথাকে কেইবা কবিতা বলে!
তুমি কি শুনেছো পাখির কাকলি প্রভাতে কিংবা সাঁঝে?
তুমি কি শুনেছো ঝিঁঝিঁদের ডাক গ্রাম্য পথের মাঝে?
তুমি কি দেখেছো হলুদ সন্ধ্যা দূরদিগন্ত ভালে?
দেখেছো নিকষ কালো সুন্দরী গহীন রাতের কালে?
দেখেছো কি তুমি প্রজাপতিদের আল্পনা আঁকা ডানা?
কিছুই দেখোনি! কবিদের কাছে সবকিছু তার জানা।


মেঘ দুলালীর চোখের মাধুরী কবি দেখে খালি চোখে,
ঝর্ণার গান তোলপাড় করে কবির নিটোল বুকে।
কবিরা সহসা উড়ে চলে যায় দেশ কাল যুগ ছেড়ে,
কবির ভেতরে মহাপ্রাণখানি ধীরে ধীরে উঠে বেড়ে।
কবি যেন পাখি আপন খেয়ালে উড়ে যায় সবখানে,
কাঁটাতার বেড়া তুচ্ছ সকল, কখনোই নাহি মানে।
রাজনীতিকের হিংসা-বিদ্বেষ, জটিল-কুটিল নীতি,
কবি ছিঁড়ে ফেলে তছনছ করে হৃদয়ে জাগে না ভীতি।
সারা পৃথিবীর কবি মন এক, একই তাঁদের মত,
ভালোবাসা আর সৌহার্দ্যতা কবিদের হিম্মৎ।
পৃথিবীর প্রেম মুছে যাবে জেনো অত্যাচারীর ঘায়ে,
তখন কবিরা জাগাবে আবার ছন্দ দোলায়ে বায়ে।
বলে যাবে তারা, মানুষের কথা মানুষের প্রাণে প্রাণে,
মানুষ সত্য, সৃষ্টির সেরা, বলে যাবে গানে গানে।


ভালোবাসো তুমি এই মানুষেরে সহজ সরল মনে,
ধর্ম সৃষ্টি মানুষের তরে, মানুষের প্রয়োজনে।
ধর্মের নামে দ্বন্দ্ব বাড়ায় পৃথিবীতে যেই জন,
ধ্বংস হউক পৃথিবীর পথে-প্রান্তরে সেই জন।
কবিতা লিখতে পারি নাতো ভাই, পদ্য লিখছি তাই,
শব্দের পরে শব্দকে এনে আপন মনেতে গাই।
তাইতো, তোমরা বলছো আমায়, মান্ধাতারই কবি!
চেতনে আমার খেলা করে নাকি নজরুল আর রবি।
তারা যে আমার কবিতার দেশে চন্দ্র-সূর্য-তারা,
তারা যে আমার ভালোবাসা প্রেম, বহতা নদীর ধারা।
বলো, তুমি বলো, কিভাবে ছাড়বো? কোন সে প্রাণের টানে
শত শত কবি ছড়া-কবিতায় মজেছে যাঁদের গানে।


আধুনিক মানে ছেড়ে দেয়া নয় ঐতিহ্যের রশি,
অতীতেরা অতি  গোপনে রহে যে বর্তমানেতে বসি।
ভবিষ্যতের সুর বেজে যায় বর্তমানের গানে,
এ সব সত্য এই পৃথিবীর সর্বলোকেই জানে।
তাইতো রে আমি এক সাথে বাঁচি অতীতে, বর্তমানে,
ভবিষ্যতের বাঁশরী বাজাই সত্যের আহ্বানে।
সত্য বলছি, ভাই!
মানুষ সত্য, ছন্দ সত্য তার যে তুলনা নাই।


০৪/০৩/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।