জননী আমার কখনোই কোনো অংক বোঝে না!
একখানা রুটি চাই যদি আমি প্লেটে তুলে দেন
দুই-দুইখানা। কতো অদ্ভুত! হিসাব জানে না!
এক আর দুই একাকার হয় মমতার কাছে।
জননী আমার দুনিয়াতে কোন অংক জানে না।
প্রয়োজনে যদি চাই কুড়ি টাকা, পঞ্চাশ টাকা
তুলে দেন হাতে। কী বেহিসেবী তাঁর স্বভাবখানা।
জননী আমার লাভ ও ক্ষতির অংক বোঝে না।


জননী আমার এতোটাই এক ডাঁহা মিথ্যাবাদী!
নিজের উদরে খিদে রেখে বলে, 'আমিতো খেয়েছি,
ওরে, চুপচাপ করে খেয়ে নে তুই চট-জলদি'।
জননী আমার এমনই চরম মিথ্যাবাদী।


জননী আমার সাতজনমের হাঁদারাম বোকা!
কলুর বলদ যেন, রাতদিন ঘুরেফিরে শুধু,
খেটে যান তিনি দিবসে-রাত্রে নিরলসভাবে।
সারাদিন কাটে রান্নার ঘরে, হাঁড়ি-পাতিলের
কালিঝুলি মেখে। যেন চিরজীবি এক তেলাপোকা।
জননী আমার বড়োই বেকুব হাঁদারাম বোকা।


জননী আমার লজ্জা-শরমহীনা এক নারী!
যতো বলি তারে, 'আমার জিনিষে হাত দিও নাকো,
আমার ঘরেতে আসবে না তুমি, কভু কোন কাজে,
কোন উছিলায়। ততোই, আমার ঘরে এসে তিনি ,
এলোমেলো সব যতো কিছু আছে- কাপড়-চোপড়
জুতা-মোজা-সার্ট, বই-খাতা-'পেন' ভাঁজ করে রাখে,
সযতনভরে করে পরিপাটি। জ্বালাতন ভারি!
মা আমার কথা শুনে না এমন একজন নারী।


আমার মায়ের এতোটুকু শরমের লেশ নাই!
অনেক বেহায়া একজন নারী! রাত্রি-বেলায়
দরজার ফাঁকে উঁকি মেরে দেখে, ঘুমিয়েছি কি না,
নাকি জেগে আছি? জগতের মাঝে এমন বেহায়া
বেশরম কোন, কখনো কোথাও দেখিতে না-পাই।
আমার মায়ের লজ্জা-শরম একটুও নাই।


জননী আমার সাধারণ জ্ঞানহীন এক নারী!
খেতে গেলে কভু আমার থালায় কমলে খাবার,
আরো তুলে দেন। আমি যেন এক না-খাওয়া বালক!
যদি কম খাই, তৃপ্তি মেটে না তাঁর; হা-হুতাসে
কথা বলে, টলমল করে তাঁর নয়নের বারি।
মা আমার 'কমনসেন্স'হীন অদ্ভুত নারী!


জননী আমার উদ্বেগছাড়া অনেক সাহসী!
নিজের পিঠের-কোমরের ব্যথা বলে না কখনো,
তা নিয়ে হয় না কথা একটুও; ধুঁকে ধুঁকে মরে।
তবুও যে তিনি অষুধের কথা আনেও না মুখে,
হাসি ধরে রাখে চোখে-মুখে, অদ্ভুত কৌশলে।
অথচ, আমার একটু সর্দি-জ্বর এলে গায়ে,
তোলপাড় করে তুলে সারা পাড়া। বদ্যি-হাকিম,
কতো কবিরাজ, ডাক্তার আসে। অষুধ-বড়ির
কমতি হয় না, হয় যদি কভু খুশখুশে কাশি।
আমার জননী নিজের প্রতি 'কেয়ারলেস' বেশি।


জননী আমার এক আনস্মার্ট নারী, রঙহীন!
সাদাকালো জীবন, অন্যসব নারীদের মতো
শাড়ি-বাড়ি-গাড়ি, তামাশার রঙ, চায় না সে অতো।
স্মার্টফোনের স্ক্রীনের আলোয় রাখে না যে চোখ।
সিরিয়ালে থাকে না মগ্ন কর্ম সকল ফেলে।
আমাদের সব ভালো-মন্দের চিন্তায় থাকে
মশগুল। সাংসারিক কর্মে কাটে তাঁর দিন।
আমার জননী আনস্মার্ট বড়ো; বড়ো রঙহীন।


জননী আমার একটুও ঝোঝে না যে ইংরাজি।
কখনোও যদি রাগ করে বলি তাঁরে উঁচুস্বরে-
'আই হ্যাট ইউ' তখনও রাগ করে না যে মা'জ্বি;
অতুল হাসিতে বুকে টেনে নিয়ে আদরে সোহাগে
হৃদয় ভরিয়ে বলে, 'তুই বড়ো দুষ্টু ও পাজি'!
আমার জননী বুঝতে চায় না কোন ইংরাজি।


জননী আমার এমনি এক বড় স্বার্থপর!
নিজের স্বামী ও সন্তান-তরে, সকল কিছুকে
তুচ্ছজ্ঞান করে, এক নিমেষে ঠেলেঠুলে দিয়ে,
অবহেলা করে, ত্যাগ করে দিতে পারে সহসাই;
নিষ্ঠাবানের এমন কঠিন তাঁর অন্তর।
আমার জননী পৃথিবীতে বড়োই স্বার্থপর।


সবশেষে বলি, পৃথিবীর সব মায়েরা থাকুক
অটুট স্বাস্থ্যবতী, সুন্দর। সন্তান হোক
মায়েদের তরে আলোময় প্রাণ। প্রাণখোলা মনে
বলে যাক তারা, 'মাগো, তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
এই জীবনকে বাজি রাখি মা-গো জীবনের তরে;
সকল কর্মে, কথা-আরচণে, পারি যেন মা-গো
দেখতে তোমার অতুল মুখের অপরূপ হাসি।
মাগো, ভালোবাসি তোমাকে অনেক, আমি ভালোবাসি'।


০৩/০৮/২০২২
মিরপুর, ঢাকা।