মজিদ নামের একটি ছেলে বন্ধু ছিলো আমার,
আঙুলে সে পড়তো আংটি ঝকঝকা ঝক তামার।
প্রাথমিকে আমরা ছিলাম পরস্পরের কাছের,
লেখাপড়া ছাড়াও তার নেশা ছিলো মাছের।
সারা দিনমান টই টই টই ঘুরতো বন-জঙ্গলে,
ভালো বুঝতো বাংলা-অংক- ইংরেজীটা হলে।
ভূগোলটা তার হাতের মুঠোয়, পাকা ইতিহাসে,
এমন তুখোড় ভালো ছাত্র, সবাই ভালোবাসে।
মাখা ভরা ভোমরা কালো মিহিন কোঁকড়া চুল,
আমার কাছে মজিদ ছিলো  জংলী-রঙিন ফুল।
ফুটবলে তার দখল ছিলো খেলতো সারা মাঠে,
হাতের লেখা মুক্তো-দানা, ভালো ছিলো পাঠে।
টিকালো নাক, ছিপছিপে সে, ভদ্র-সুবোধ ছেলে,
দেখলে তারে মনে হতো কালামানিক পেলে।


আমি ছিলাম তার চোখেতে ভিনদেশী রাজকন্যা,
শ্লেটের পিঠে লিখতো শুধু- 'তুমি যে অনন্যা'।
হলুদ রঙা পাকা পাকা রসালো গাব এনে,
আমার কোছড় ভরে দিতো ওড়নাখানি টেনে।
বেতস ফলের থোকা নিয়ে থাকতো অপেক্ষাতে,
ছুটির পরে চুপিসারে তুলে দিতো হাতে।
এমনি করেই মজিদ মিয়া প্রাণের বন্ধু হলো,
অজান্তেই সে ধীরে ধীরে আপন হয়ে গেলো।
মজিদ মিয়া সব বিষয়ে বলতো হাজার রকম,
কিন্তু আমার সামনে এলেই কথা বলতো কম।
লাজে রাঙা গালদুটো তার আপেল রাঙা হতো,
চোখের তারায় অন্যলোকের বিভা খেলে যেতো।


আমি যখন হাই স্কুলে, সে-ও এলো সাথে,
আমরা দুজন হেঁটে যেতাম হাতটি ধরে হাতে।
এসএসসিতে মজিদ মিয়ায় ভালোই দিলাম পাশ,
হঠাৎ যে তার বাবা মরলো, ঘটলো সর্বনাশ।
মজিদ মিয়ার পড়া-লেখা হলো নাতো আর,
সংসার-হাল ধরতে মজিদ এখন দোকানদার।
কলেজেতে ভর্তি হলাম, এলাম শহর ঢাকা,
মজিদ মিয়ার জন্য বুকে লাগতো ভীষণ ফাঁকা।


তারপরেতে অনেকটা দিন কাটলো এ শহরে,
মজিদ মিয়া নেইকো মনে আগের মতো করে।
মাঝে মাঝে মনটা যখন বিষন্নতায় ভাসে,
ছোট্টকালের বন্ধু মজিদ চুপি চুপি আসে।
অভিনয়ের সংসারেতে কাটছে আমার কাল,
জাত্যাভিমান অহংবোধে তুলেছে দেয়াল।
খবর পেলাম এখনো সে পাতেনি সংসার,
ব্যবসা এবং কাব্য নিয়ে জীবন কাটে তার।
মজিদ আজো গোপনে রয় অন্তরে অন্তরে,
আমিও যে দুঃখে আছি বুঝাই কেমন করে।
হায়রে, মজিদ মিয়া!
এই সমাজের উঁচু দেয়াল ভাঙবো রে কি দিয়া?


২৬/১২/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।