ষোলশ এগার সালের পঁচিশ মে-এর দিবসের পর,
সম্রাট জাহাঙ্গীর মেশক আর আম্বরের জলে
দীর্ঘতর কাল স্নান শেষে, অতপরঃ নওশা বেশে
কুড়িতম বাসরে করেন গমন;
ফতেপুর সিক্রির দেওয়ানী খাসের দক্ষিন ঘরে।


হাজার মোমের উজ্জ্বল ঝাড়বাতি,
মৃগনাভী আর কস্তুরীর সুবাসের সাথে
গলাগলি ধরে মিশিয়াছে হিন্দুস্তানি পুষ্প-সৌরভ;
বাহিরে দাঁড়ানো আরবীয় তেজী ঘোড়া, শুভ্র উষ্ট্র,
সাজানো গোছানো শাহী পিল।
দূরে কোথাও মৃদুস্বরে বাজছে নহবত,
নারী পুরুষের কামনা উদ্রেককর বিমূর্ত সানাই।
ইরানি গালিচার উপর বাহারী পর্দার ভেতরে
অপরূপা সাজে সজ্জিতা- মেহেরুন নিছা- মির্জা গিয়াসের কন্যা।


এই আনন্দময় রাতে মনে পড়ে তার সেই অতীতের
প্রথম বাসরের করুণ গাঁথা বেদনা বিঁধুরে-
আলীকুলি খাঁ- শের আফগান বলিষ্ঠ সৈনিক;
কী দুর্ধর্ষতায় করেছিলো হুকুম ভনিতাহীন-
‘বস্ত্র খোল, পরিহার করো অলঙ্কার, উঠাও শরীর তোমার’
পেশীবহুল দীর্ঘদেহী বিবসন সিংহ পুরুষ
তীব্র আলোকের মাঝে কোলে তুলে নেয় দেহবল্লরী।
সতেরোর কুমারী লাজে, ভয়ে সংকোচিত;
শরীর বেয়ে ঘাম ঝরে অজস্র, যেন ঝর্ণাধারা।
মিলনের স্পর্শে , রক্তপাতে অচেতন ছিলো সারারাত।


আজ শঙ্কাহীন, অকুতোভয়া নূরজাহান,
প্রেমাতুর মাধুরী মিশিয়ে বসে আছে বাসর ঘরে,
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী, মেধাবী, চৌকষ রমনী
দুর্বার যৌনাকাঙ্খা নিয়ে তরল অন্তরে;
আবেগ, কৃতজ্ঞতা ও আনন্দে দেহমন পুলকিত তাঁর।


অমাবশ্যার ঘোর রজনীতে যেন অলৌকিক সাধনায়
উদয় হয় তীব্র জোছনা মথিত চন্দ্রকণা-
সম্রাট নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
অবনতা দৃপ্ত পদভারে, ঋদ্ধ গ্রীবা তুলে তাকায়,
কৃতজ্ঞতার অশ্রু ঝরে পড়ে বহতা নদীর মতো।
নওশার ক্ষাণিক ইশারায কোমল তনু তুলে দেয়
প্রচন্ড আলিঙ্গনের সুদৃঢ় বন্ধনের ভেতর।
উত্তপ্ত বালুকাময় পাহাড়ী-পাথুরে পথ চলার ক্লান্তিকে
শুষে নেয় বিদূষী মেহেরুন নিছা নুরজাহান-
সালতানাতে মোঘলের শ্রেষ্ঠ সম্রাজ্ঞীর প্রেমী-প্রাণ।