[কবি মাত্রই প্রেমিক। প্রেমের কবিতা প্রেমের সমানই পুরোনো। কবিরা আবেগী, বিরক্তিকর, আত্মকেন্দ্রিক, অনন্য, বইপোকা, ক্ষেপাটে এবং প্রায়ই অস্থির। প্রেমের কবিতা লেখে নি; এমন কবি পাওয়া দুর্লভ। একজন কবি যদি অন্য আরেকজন কবির প্রেমের পড়ে; তখন দু'জনেরই কবিতায় প্রেমের ফল্গুধারা ঝরে পড়ে। আমার এ কবিতার নায়িকা একজন অ-কবি ।]
-------------------------------------------------------------------------
পকেটের শেষ টাকাটি দিয়ে 'প্রজন্ম চত্বর' থেকে এক তোড়া ফুল কিনি,
তোমার হাতে তুলে দেবো গভীর অনুরাগে- আজ তোমার জন্মদিন;
হাঁটছি 'কাঁটাবনের' ফুটপাত দিয়ে- 'ভুতের গলি' যাবো;
শেষ পয়সায় ফুল কেনা বড়োই আনন্দের, তুমি কি জানো?
হাঁটছি, হাঁটছি, হাঁটছি, উন্মন মনে ভাবছি-
এই কাল-সন্ধ্যার পর তোমার বাড়ির দরোজায় কড়া নাড়লেই-
হয়তো তুমি দরোজা খুলে দাঁড়াবে মোহিনী ভঙ্গিমায়।
- 'ও তুমি!'
আকাশ হতে ছিটকে পড়া উল্কার মতোন বিস্ফারিত চোখে
তাকাবে আমার দিকে; তারপর, সরে দাঁড়াবে দরোজার এক পাশে;
আমি প্রবেশ না করা পর্যন্ত নিরবে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি।
কী আশ্চার্য তোমার সে-ই অধর কাঁপুনি, আমি মুগ্ধ হয়ে ভাবি।


হয়তো বা তোমার ছোট বোন রুম্পাও দরোজা খুলতে পারে-
যেন বাড়িতে আগুন লেগেছে, সে-ই বিহ্বলতা নিয়ে,
স্বরগ্রাম সপ্তম স্তরে উঠিয়ে চিৎকার করে বলবে-
- 'ভাইয়া! খুব ভালো সময়ে এসেছো, আজ অনেক মজা হবে!
আমি দিদির সাথে বাজি ধরেছি, তিন প্যাকেট মিমি চকলেট;
আমি জিতে গেছি, অনেক গল্প আছে তোমার জন্য।'
আমি সামনের দিকে না এগুনো পর্যন্ত সে পাল্লা ছাড়বে না।


এমনও হতে পারে, তোমার মা দরোজা খুলে দিবেন, খুবই দরদী গলায় বলবেন-
- 'কেমন আছো, বাবা? বড্ডো শুকিয়ে গেছো। এতোদিন কোথায় ছিলে?
তোমার মায়ের শরীর ভালো? এসো, ভেতরে এসো।'
এই বলে তিনি ধীর পদে হেঁটে যাবেন চির পরিচিত হেঁসেলের দিকে।


আবার, তোমার বাবাও দরোজা খুলে দিতে পারেন, কদাচিত যেমন করেন;
তাঁর স্বভাবসুলভ অট্টহাসির ধারা চোখে মুখে ফুটিয়ে বলবে-
- 'আরে, তুমি! খুব ভালো হয়েছে। এসো, এসো, ভেতরে এসো,
কতোদিন তোমাকে খুঁজেছি মনে মনে।'
আমি ঢুকলে, তিনি দরোজা বন্ধ করে ডাক দিবেন রুম্পাকে,
দাবার ছক, ঘুঁটি আর চা-বিস্কুট আনার জন্য।


ভাবছি,  আজ এই সন্ধায় তোমার বাড়ির দরোজাটা খুলবে কে?
রুম্পা খোলাই ভালো, অনেক তথ্য আগের থেকেই পাওয়া যাবে।
এমনই সময়, বার তের বছরের আধ-ময়লা জামা পড়া একটি বালিকা,
যার ডান হাতের কনুই পর্যন্ত কাটা অদ্ভুত সুন্দর মায়াবি চেহারা,
আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, করুণ তার চোখের চাহনি।
পাঁচটি আঙ্গুল ছড়িয়ে বাম হাতখানা প্রসারিত করে আমার সামনে।


পয়সা দিলে আঙ্গুলের ফাঁক গলে পড়ে যাবে বৃষ্টি ভেজা নোংরা রাস্তায়;
কাগজের টাকা দিলে বাতাসে উড়ে যাবে নীলিমার নীলে;
কিছুই দেবার ছিলো না আমার পকেটে; অথচ, দিতে হবে কিছু তাকে।
ফুলের তোড়াটি তুলে দিলেম তার হাতে-
- 'যা, 'বাটার মোড়ের' সিগনালে বেঁচে দিস।'
উল্টোপথে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি 'হাকিম চত্বর'।
এক কাপ চা কটকটে চিনি দেয়া, আজকের বৈকালিক নাস্তা!
বসে থাকি অনেকক্ষণ একা একা বিষন্ন মনে, রোকেয়া হলের ফুটপাতে
সারি সারি যুবক যুবতি; তোমার বাড়ির কড়াখানি নাড়া হলো না আর।