ওরা যে আমায় রূপজীবি বলে, আড়চোড়ে ফিরে চায়,
কামনা বাসনা টুটে গেলে সবে চুপিসারে চলে যায়।
অন্ধগলির চার দেয়ালের বন্দী জীবনে চাই-
মানবিক সুখ, ভালোবাসা আর মুক্তির রোশনাই।
আমাদের রাত আলো-আঁধারের, দিবস অন্ধকার!
মেখেছি শরীরে মরণ-জহর, পথ চলি অবিকার।
রূপজীবিদের জীবনে কতো যে না বলা হাজার ব্যথা,
মনের ভেতরে তোলপাড় করে যেন এক রূপকথা।


রাত্রির শেষে গান গেয়ে উঠে ভোরের হাজার পাখি,
প্রভাত আলোর উজ্জ্বলতায় ভুবনে মেলে সে আঁখি।
মুছে যায় সব রাতের আঁধার, সকল দুখের কাল,
রূপজীবিদের একই জীবন, যাহা ছিলো গতকাল।
এরই মাঝে আসে কিছু হাসি-গান, আনন্দ সুধারাশি,
যার ছোঁয়া পেয়ে ধীরে ধীরে জাগে ক্ষণিকের তরে হাসি।
তেমনি একটি গল্প শোনাবো, কান পেতে তুমি শোনো,
হাজার বছর বয়ে চলা নদী, অন্যথা নয় কোনো।


ধীর পদলয়ে এসেছিলো তিনি, জানিয়ে অভিবাদন!
অবজ্ঞাতে হেসে উঠেছিলেম. দেখে তাঁর আচরণ।
ক্লান্ত দুচোখ, শান্ত-সুধীর পুরুষ-সুঠাম দেহ,
অন্ধগলিতে এমন মানুষ কখনো দেখেনি কেহ।
ইচ্ছে করেই ফেলে দিয়েছিলেম শাড়ির আঁচলখানি।
অচপল হাতে কাঁধের উপরে সযতনে দিলো টানি।
চোখের উপরে চোখ দুটো রেখে তাকালো কিছুক্ষণ,
গালিবের মতো কবিতার শের করে সে উচ্চারণ-


'পিয়ে যাও মন গোলাবি সরাব, পতিত বেশ্যালয়ে,
দীল খোলা রেখে মাথা নত করো, আল্লাও সেথা রহে।
কেউতো ভুবনে জানে না, কোথায় ঈশ্বরহীন গেহ?
নামাজের স্থান হয়ে যাবে আজ, রাতপরীরই দেহ'।


মদ আর নারী কবিতার সুর বেজে উঠে রিনিঝিনি,
মনে হয়, যেন হাজার বছর ধরে, তারে আমি চিনি।
প্রথম পরশে শরীরের মাঝে জাগে এক শিহরণ,
থরথর করে কেঁপে উঠে যেনো সলাজ নারীর মন।
জীবনে প্রথম অনুভূত হলো, আমিও একটি নারী,
নারীসত্ত্বার ভেতরে জাগলো শাশ্বত আহাজারি!
আমার ভেতরে লজ্জারা এসে লতিয়ে উঠেছে আজ,
ক্ষুধার আগুনে দাউ দাউ জ্বলে জীবনের কারুকাজ।
ভালোবাসা পেতে, ভালোবাসা দিতে আকাঙ্ক্ষা জাগে মনে,
পরম সত্যি এ কথাটি কেউ বোঝে নাই কোন ক্ষণে।
রূপজীবিদের সমস্ত সাধ অন্ধগলিতে মরে,
কষ্টের নদী বহে নিরবধি, অনন্তকাল ধরে।


১৫/০৬/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।