নিঝুম নিশুতি রাত্রি, চারিদিকে নিথর, নিস্তব্ধ;
এই গহন বনের গাছেদের ভিড়ে জলের মিহিন গান,
বেজে যায় নিরন্তর একটানা সুর, বড়ো সুমধুর-
টিপ... টিপ... টিপ... ক্রমাগতভাবে
পাতায় পাতায় পড়ে ধ্যানময় এ নিশির শিশিরের জল;
সে সকল জলে ছন্দিত শব্দের সুরময় গান শুনি।
ধূসর আকাশে দূরে কোজাগরী চাঁদ ছড়িয়ে দিয়েছে
জ্যোৎস্নার সফেদ চাদর কার্তিকের মরা পূর্ণিমায়।


বিশীর্ণ নদীর তীরে একা শুয়ে আছি,
নদীটি একদা ছিলো যৌবনবতী নারীর সুডৌল স্তনের মতো,
শ্রাবণের ভরা জল, কানায় কানায় পূর্ণ। দোলাচলে জল
করে কোলাহল ভাসিয়ে দিতো সহসাই
নগর-বন্দর, কৃষকের গ্রাম, নিকানো উঠোনের বাড়িঘর।
চিরদিন কাহারো একদশা থাকে না!
এই কথা বলে যায় কার্তিকের নদী অবিরল।
কান পেতে শুনি ঝিঁঝিঁদের সুর- বিষন্ন করুণ
তাহাদের মহামারী জীবনের আহাজারি,
অনন্ত দুঃখের, বেদনার, পাওয়া ও না পাওয়ার
কতো কথা, অনুকথা, বিরহকরুণ গাঁথা।
কুয়াশার জাল ছিঁড়ে দ্রুতলয়ে উড়ে যায়
রাতের পাখিরা অন্য কোথাও, তাদের সাথীদের সাথে।
সেখানে কি জমা আছে প্রদীপ্ত সুখের বীজ?
সূক্ষ্মকানে আরো দূরে শুনি, কষ্টের শিয়রে ঘুমে অচেতন
মানুষের গাঁও গেরামের কাছাকাছি কালো কালো ঝোপঝাড়ে,
পুকুর পাড়ের ঝাঁকালো গাছের আড়ালে আবডালে
কোন এক লক্ষ্মীপ্যাঁচা গেয়ে উঠে রক্ত হীম করা অদ্ভুত সুরে-
নিম... নিম... নিম... নিরন্তর।


এ অনন্ত অপার্থিব ক্ষণে,
মানুষের ধূসর জীবন রঙময় বর্ণীল হয়ে উঠে,
সাধারণ মানুষেরা কী অবলীলায় কবি হয়ে যায়!
শিশিরের অমোঘ সুরের গান বেজে উঠে প্রাণে,
সবুজ ঘাসের ঘ্রাণে আন্দোলিত হয় তার বিহ্বল হৃদয়,
নৈঃশব্দের অপার মহিমা বয়ে যায় অনন্ত সুখের স্রোতে,
তখন সকল কথাই যেন কবিতা ,
সকল শব্দই সুর হয়ে বেজে উঠে,
সে সকল সুর যেন প্রাণকাড়া বিদগ্ধ গান।
পৃথিবীতে সকল কবিতা হলো আমাদের জীবনের চারুপাঠ,
রূপ-রস-গন্ধ জলময় শব্দের আকরে নেচে নেচে
দৃশ্যমান হয় কবিদের চেতনায়।
সমুদ্রের অতলান্ত থেকে যেন বের হয়ে আসে
মণি-কাঞ্চনের ধারা, হীরা-জহরত,
নিপুণ করে সাজাতে ধরণীর সমুদয় রমণীয় রমণীকে।
তেমনি করেই অপার্থিব গহীন রাতের স্পর্শে
আন্দোলিত হয়, তারা সকলেই কবি হয়ে যায়,
তখনই বলতে পারি-
কেউ কেউ কবি নয়; সকলেই কবি।


২৬/১০/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।