আমি স্বর্গ হ'তে এসেছি ভুবনে সূর্য অগ্নিকণা!
আলোকিত করি আঁধারের রাত,
দুই হাতে পিশি অভিসম্পাৎ,
অন্যায় যতো সুন্দরহীন,
সবকিছু তার করে দেই লীন;
মানুষের তরে প্রতি ঘরে ঘরে জ্বালাই আলোর শিখা;
এ আমার প্রেম, এ আমার অহমিকা।
আকাশে মাটিতে যত বিষ জমে
একুশ শতকে শহরে ও গ্রামে;
একটি চুমুকে শুষে নিই তা';
আমি এমনই ভূজঙ্গনা!
স্বর্গ হতে এসেছি ভুবনে, আলোর সূর্য-কণা।
বিশাল গিরির নিম্নপ্রদেশে, যতো উপত্যকায়
ঝাপসা কুয়াশা অবিরত নাচে হেলায় অবহেলায়,
এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে তা,
ফড়িং-এর মতো লাফাই সতত, অবিরাম ভুলে ক্ষুদ্রতা;
শেষ বিকেলের আলোকের রোশনাই
জ্বেলে দিয়ে এই ধরণীর বুকে, জীবনের গান গাই।
অর্ধমৃত প্রাণেতে আনি বাঁচিবার প্রণোদনা;
স্বর্গ হতে এসেছি ভুবনে মর্ত্য অদিতি-কণা;
আমি সূর্য অগ্নিকণা।


সাগর-ভূধর-মরুতে অথবা লক্ষ পাহাড় মাঝে,
মৃত্যু-ক্রুশের করুণ রাগিণী যখন যেখানে বাজে,
অমিত বারুদে আগুন জ্বালায়ে, জ্বালাই যে দাবানল;
আবার কখনো শান্তি ও প্রেমে ফোটাই রে শতদল।
অর্ফিয়াসের বাঁশরীর তানে
এই জীবনের মর্মর সুর, করুণ রাগিণী প্রকৃতিতে হেনে,
দুহাতে টেনে, তখন জাগাই বিশ্ব চরাচর;
অমর্ত্যলোক নতজানু হয় সভয়ে নিরন্তর।
পাথরের 'পরে পাথর ঘসিয়া,
আগুন জ্বালাই আঁধার শুষিয়া,
ঊষর ভূমিকে সজীব করিতে, করি শক্তির বন্দনা।
যুগে যুগে আসি তরুণ-তপন অমিত সূর্য-কণা।


অনেক বক্র পথে হেঁটে গেছি গহীন বনের মাঝে;
কখনো বা পথ হারায়েছি আমি,
দিশাহীন হয়ে দিবস কি যামী, কালি-আন্ধার সাঁঝে।
পুরুষেরা যেথা রহে ম্রিয়মান;
তখন, অমিত-শক্তি রমণীরা করে বীরের বীর্য দান।
নদীর প্রবাহ নদী জলে মিশে,
খুঁজে নেয় তারা সাগরের দিশে,
আঁকাবাঁকা পথে প্রাণ-স্পন্দনে
পাহাড়ি ঢলের নবধারা আনে;
উপাড়িয়ে ফেলে ধরণীর যত অশুচির বঞ্চনা;
ভাবের জগতে ভাবটি মিলায়ে,
চেতন জগতে চেতন বিলায়ে,
বাজিয়ে মনের প্রেমের প্রতিভূ অনন্য সুরবীণা।


আমি পাল তোলা নাও, উজানের পথে,
লক্ষ্যমূখী চলি হিম্মতে;
চেতনা-বায়ুকে পালেতে ভরিয়া.
তেজী বোররাক চলি যে উড়িয়া;
ছুটে চলি একা সম্মুখ পানে জীবনের গান গেয়ে;
পথ-ধূসরতা, সব মলিনতা,
দুহাতে সরায়ে যাই শুধু বেয়ে।
গলুইয়ের ঘায়ে জলের বুকেতে তুলে আনে সাদা ফেনা;
স্বর্গমর্ত্য অবহেলে আমি ধরাতে এসেছি,
অমিত ভাস্বর, আঁধার ঘুচানো স্বর্গসূর্য-কণা।
জলরোধী যতো বিপত্তি বাঁধা,
ঘোরালো জীবনের যাদুময় ধাঁধাঁ;
নৃত্যের তালে পিছনেতে ফেলে
ছুটে চলি আমি ধিন তা,
চলি ছুটে এই সুবর্ণ কব্জির জোরে;
তাই, আমার নেই কোন চিন্তা;
শুভাশিষ মাখি ভরে দুই আঁখি,
মানুষে মানুষে বাঁধি প্রেম রাখী;
রূপালী বাসনা ছড়াই ভুবনে সুখী প্রেমীদের তরে,
দিক থেকে দিগন্তরে।
নব দিগন্ত করি উন্মুক্ত; করি এই জীবনের শুভ-সূচনা;
জগত ব্যপিয়া ছুটে চলি আমি,
আমি স্বর্গসূর্য কণা।


আমি চাঁদ, জোছনা ছড়ানো,
তারায় তারায় স্নিগ্ধ আলোয় দূর নীলাকাশ ভরানো।
আমি অস্থির সাগর মর্ত্যলোকে,
ক্রন্দন করি বিরহীর শোকে;
চির চঞ্চল, জরা-ক্রোধহীন,
চন্দ্রের ডাকে পুলকে পুলকে হয়ে যাই আমি লীন।
অগভীর তীরে জঞ্জাল মিলে
জমে যতো কাদা স্বচ্ছ সলিলে,
তরঙ্গ ঘায়ে সরিয়ে দিয়ে তা', আনি সেথা বালুকণা;
তোমরা বলো, সৈকত তটরেখা,
আমি জানি তা, সে ব্যথারই অণুলেখা;
জলের সোপানে জীবনের গানে,
নবীনেব নব সলিল আহ্বানে একা একা ছুটে চলি-
আহূত হোমের অগ্নিতে দেই জীবন জলাঞ্জলি।
শীতে-বর্ষায়, ফাগুণে-শ্রাবণে,
গ্রীষ্মের তাপে, সুরুজের সনে
মিতালী করেছি একসাথে চলি আমরন গলাগলি।


স্বর্গ-তপতী আমি, আলোকিত করে তুলি
জীবনের সব দুঃখ বেদনা ভুলি'
সাজিয়ে রাখি মানুষের বসুমতি; আমি সূর্য অগ্নিকণা।
আমি সূর্য অগ্নিকণা।


০৬/০৫/২০১৯
মিরপুর, ঢাকা।