নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?—
      এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?
যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে
      কেবলি কি নর জনম লয়?—
কাঁদাইতে শুধু বিশ্বরচয়িতা
      সৃজেন কি নরে এমন করে’?
মায়ার ছলনে উঠিতে পড়িতে
      মানবজীবন অবনী ‘পরে?
বল্ ছিন্ন বীণে, বল উচ্চৈঃস্বরে,—
      না,—না,—না,—মানবের তরে
আছে উচ্চ লক্ষ্য, সুখ উচ্চতর,
      না সৃজিলা বিধি কাঁদাতে নরে।
কার্যক্ষেত্র ওই প্রশস্ত পড়িয়া,
      সমর-অঙ্গন সংসার এই,
যাও বীরবেশে কর গিয়ে রণ ;
      যে জিনিবে সুখ লভিবে সেই।
পরের কারণে স্বার্থে দিয়া বলি
      এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
      আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণের সুখ ;
      “সুখ” “সুখ” করি কেঁদনা আর,
যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে,
      ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
গেছে যাক ভেঙ্গে সুখের স্বপন
      স্বপন অমন ভেঙ্গেই থাকে,
গেছে যাক্ নিবে আলেয়ার আলো
      গৃহে এস আর ঘুর’না পাকে।
যাতনা যাতনা কিসেরি যাতনা?
      বিষাদ এতই কিসের তরে?
যদিই বা থাকে, যখন তখন
      কি কাজ জানায়ে জগৎ ভ’রে?
লুকান বিষাদ আঁধার আমায়
      মৃদুভাতি স্নিগ্ধ তারার মত,
সারাটি রজনী নীরবে নীরবে
      ঢালে সুমধুর আলোক কত!
লুকান বিষাদ মানব-হৃদয়ে
      গম্ভীর নৈশীথ শান্তির প্রায়,
দুরাশার ভেরী, নৈরাশ চীত্কার,
      আকাঙ্ক্ষার রব ভাঙ্গে না তায়।
বিষাদ—বিষাদ—বিষাদ বলিয়ে
      কেনই কাঁদিবে জীবন ভরে’?
মানবের মন এত কি অসার?
      এতই সহজে নুইয়া পড়ে?
সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে
      পারনা মুছিতে নয়ন-ধার?
পরহিত-ব্রতে পারনা রাখিতে
      চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার?
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
      আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
      প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।


[“আলো ও ছায়া” থেকে নেওয়া ]