গতকাল কি যেন হল
সন্ধ্যার তিমিরে পথ চলেছি আগের মত, আমি ছাপোষা জীব -
বৌয়ের অপমানেও তেল আর বেগুন খুঁজে পাই না
প্রতিবাদী গণিকার চোখের জলে সমুদ্র খুঁজি না
শ্মশানের রাস্তায় ভুলেও যাই না ।
অথচ গতকাল একটা হলুদ প্রজাপতিকে
আমার মনে হল এক টুকরো প্লাস্টিক,
বৌয়ের জন্য কিনেছিলাম এক জোড়া কাঁকড়া
চোখের সামনে শক্ত-মোমের শরীর গুলো উড়ে গেল -
উন্মাদ পাখনায় দেখলাম হাজার হাজার প্রজাপতি রঙ ।
শুক্র ডুবে গেছে তখন, পা দুটো অবশ -
পোষ মানা সরীসৃপ জড়িয়ে যাচ্ছে আমার শরীর;
কানের কাছে শুনলাম গভীর কণ্ঠস্বর
কথা বলছে কিশোর অন্ধকার -
চাঁদ ডুবে গেলে বুড়িয়ে যাবে এই কিশোর
অহেতুক বয়স বাড়ছে আমাদের সবার ...
অনেক আগে জ্বরথুস্র বেঁচে ছিলেন এই পৃথিবীতে
আছে কি আদৌ কোন তফাৎ তার সাথে আমার
জামার পকেটে আধা-উলঙ্গ যাত্রার নায়িকা, দশ টাকা দাম তার;
আমি স্পষ্ট শুনছি মেয়েটা বলছে
তার নাম রাহেলা, আলোর মঞ্চ আর আঁধারের বিছানায় সে কমলা -
দেহের সওদা চলে জনে জনে প্রতিদিন
অথচ মনের মধ্যে জমা আছে নিবিড় প্রেম ।
আমার মেরুদন্ড একটা কালসাপ ঠাণ্ডা বিষধর
কামিনীর ক্রোধে চাপা ফোঁস ফোঁস
সাপটা নামছে শরীর বেয়ে - আমি পড়ে যাচ্ছি না তবু,
অচেনা সরীসৃপ আমাকে ধরে রাখছে ।
রাহেলা আর তরুণ অন্ধকার গল্প করছে
কাঁকড়া দুটো চোখের সামনেই উড়ছে এদিক-ওদিক
কথা বলছি না শুধু আমি, মনে হয়
চলন্ত ট্রাকের নিচে থেতলে গেছে শরীর - টের পাইনি বোধয়
আবার মনে হয় এই রাত বুড়ো হয়ে যাবে এক সময় ।
অথচ রাহেলার খোলা বুকে নেই দুধের ঘ্রাণ
প্রাণ পেলে কাঁকড়ার শিশুরাও কি প্রজাপতি হবে ?
গতকাল কি যেন হল
বৌয়ের জন্য দুটো কাঁকড়া কিনেছিলাম
সামাজিক মেরুদণ্ডকে মনে হল জীবন্ত সাপ -
মনে হল দুধের বান ডেকেছে রাহেলার বুকে
ফুটফুটে শিশু কোলে সে কারো ঘরের লক্ষ্মী ।
জ্বরথুস্র তাই চাইলেন, আমিও কি সত্যিই তাই চাই
নাকি দশ টাকার কমলাতেই আমার অধিকার ?
গতকাল কি যেন হল
মনে হল শূন্যের ফুতকারে উড়ে গেছে প্রেতের শহর,
মনে হল বৌয়ের জন্যে পোড়াতে পারি সাতটা মহাদেশ,
মনে হল বৌয়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়াই শ্মশানে -
শ্মশানে অপমান নেই, নেই পতিতা
শ্মশানে যুদ্ধের পরে সবাই আত্মীয়
শ্মশানে রাত নির্জরা...
গতকাল কি যেন হল
বৌয়ের জন্যে দুটো কাঁকড়া কিনেছি
কি যেন হল গতকাল
মনে হল বৌকে নিয়ে বেড়াতে যাই শ্মশানে ।