মানবতা হবে কালসাপ
কাশফিয়া আঁখি


এরপর যদি অমানিশা গ্রাস করে তার গোলাপি ঠোঁট;
সিঁদুর রাঙা কপাল,
ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সুঘ্রাণ ভুলে
যদি মাঝদুপুরে তরবারির ঝনঝনানিতে মুখর হয়ে উঠে আবাসিক হলের করিডোর।
চলে রক্তের হলি উৎসব।
এরপর যদি আর বাড়ির আঙিনায় এসে হাঁক না দেয় দুধওয়ালা,
যদি তার বালতি ভর্তি রয় মাদকে।
থালাবাসনের সেলফে অনাদরে উঁবু হয়ে থাকা খোকার দুধের বাটি
ঈশ্বরের কাছে যাপিত অনাচারের ফর্দ তুলে ধরে
ন্যায় বিচারের আশায়।
অত:পর,যদি বোকা মুখে ফিরে আসে নিশ্চুপ ঈশ্বরের পায়ের কাছ হতে।
এরপর যদি আর বাড়ির সমুখের রাস্তায় পিয়ন চাচার র্জীণ সাইকেল ক্রিং ক্রিং…
শব্দে আগমন জানান না দেয়।
ঝোলা থেকে বের করে হাতে তুলে না দেয় লক্ষকোটি শব্দ সেলাইয়ের মিহি কারুকাজ।
এরপর যদি নামধামহীন উড়ো চিঠি ঠাঁই নেয় করিডোরে। যার গা ভর্তি আতংক আর মৃত্যুর পরোয়ানা উৎসব নৃত্য করে।
এরপর যদি
মাঠ ভুলে সন্তানেরা চার দেয়ালের ভেতর কাটায় শৈশব-কৈশর
অত:পর যৌবনের দিনগুলো।
আর মেয়েগুলো বিবহিতা হবার আগেই পোয়াতী হয়।
ধর্ষণ উৎসব থেকে গা বাঁচাতে
পিঞ্জিরার পাখির মতো ইট কাঠের খাঁচায় মায়া মায়া চোখ করে জানালা দিয়ে চেয়ে রয় সমুখের বড় রাস্তার দিকে।
এরপর যদি বিচার বিভাগের টুটি চেপে ধরে কোন নাবালক!
এরপর  যদি যোনিপথ  মনেই লজ্জা আর অভিশাপ হয়ে উঠে সকল নারীর চোখে।
এরপর যদি
স্বামি-স্ত্রী সংসারের যাপিত যৌবন ভাইরাল হয়ে উঠে লাল নীল দুনিয়ায়।
এরপর যদি
চাল,নুন,চিনি,সবজির দাম হয় আকাশ ছোঁয়া, বিষন্ন মুখের গৃহিনীমা পেট ভর্তি ক্ষুধা নিয়ে চেয়ে রয় দুয়ারের ঐ পাশে ঝিমুতে থাকা লাল মোরগের দিকে।
অথচ…এখন তার দাপিয়ে বেড়ানোর কথা ছিলো পালংয়ের মাচা,খড়ের গাদা,পুরো গ্রাম।
এরপর যদি পুকুরের জল কমতে কমতে শুকিয়ে যায় এক ভাদ্রের খরায়।
এঁদো মাটির কঙ্কালসার হৃদয় জেগে নিষ্পলক চেয়ে রয়।
এরপর যদি
বিরান হতে হতে বিলীন হয় সব সবুজ।
ফসলি মাঠে বিষাদের কান্না লেপ্টে রয়।
এরপর যদি
লুটেরারা তোমার সম্ভ্রম কেড়ে নেয় ভরা হাটে,
রক্তের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে দেয় মহামারি,HIV অথবা এমন অনেক কিছু।
তুমি দোষ দিও না মা আর কারো !
এরপর পতাকা খুবলে  খাবে নিরামিষভোজীরা।
আমিষভোজীদের মুন্ডু পরে রবে খোলা মাঠে,পথে-ঘাটে যত্র-তত্র।
এরপর ….
মানবতা হবে কালসাপ!
ছোবলে ছোবলে ছিঁড়ে খাবে শ্বাসনালী।
এরপর..এরপর….এবং এরপর….
এমন অনেক কিছুর জন্য তুমি তৈরি থেকো মা!