১।
কবিতা কি শরতের কাশফুল?
পাখির পালকের মতো
শুভ্র কোমল কিছু পাপড়ি?
ছুইয়ে দিলে পড়ে যায়
নাড়া দিলে ঝরে যায়- এমন কিছু?


যদি তাই হয় কবিতা
আমি ছুঁইতে চাই না,
নাড়তে চাই না,
বাতাসে তোমার
দোল খাওয়া বিকেলে
দূর হতে শুধু দেখতে চাই
তোমার কোমল শুভ্রতা।


২।
আমি শরত এলেই
খোঁজতে বেরুবো
একটি নদীর কূল,


আমি নদীর কূলেই
হারিয়ে যাবো-
না পাই যদি
তোমায় হে কাশফুল!


৩।
এই শরতে আমার বাগে ফুটেছে জুঁইফুল,
আমার কাছে নেই নদী,
নেই নদীর কোনো কূল,
তাই ফুটেনি কাশফুল...


৪।
ও শরতের কাশফুল আমার,
ও কবিতা ওই,
তোর দেহ-মন আমার নাকি
এই আমিটাই তুই?


৫।
বসন্তে ফুটা ফুল ঝরবার পরে
জীবনে গ্রীষ্ম গেল
বর্ষার পরে তুমি শরতে ফুটলে এ হৃদয়ে
সূর্য থেমে থাকুক
আমি আর ঋতুর পরিবর্তন চাই নে
চাঁদ থেমে থাকুক
চক্ষু হোক জোয়ার-ভাটাহীন মৃত নদী
হে শরতরাণী, আবহাওয়া পাল্টাবে জানি
কাশবন উজার করে তুমি লুকুবে সত্য
তব স্মৃতি কাশবীজ হতে নিয়ে
আমি আরেকটি শরতের অপেক্ষায় থাকবো...


৬।
আসন্ন কোনো শরতে
হয়তো তুমি ফুটবে
কোনো নদী-তীরের বালুচরে,
চোখের অশ্রু হয়ে
নদীর উষ্ণ শ্রোতে ভেসে
আমি আসবো,
তুমি হাসি মুখে বিদায় জানিও।


৭।
শরতের শেষে
কোনো অলস বিকেলে
যদি আমার কবিতা
তব মনে পড়ে,
পাপড়ি ঝরা
কোনো কাশফুলে
সেই কবিতারে
তুমি খোঁজে নিও।


৮।
কাশফুলকে জিজ্ঞেস করলাম,
জুঁই, চামেলী, শিউলি
ও বকুলের মতো
তুমি যদি ফুলই হয়ে থাকো
তবে তোমার নামে
ফুল শব্দ থাকবে কেন?


কাশফুল বললো,
ইরান, ভুটান, তুর্ক
ও জাপানের মতো
বাংলাদেশ যদি
দেশই হয়ে থাকে...।


কথার মোড় ঘুরিয়ে দিতে
আমি বললাম-
জানো কাশফুল, আমি তোমাকে
অ-নে-ক ভালোবাসি।
বলল- আমিও।
কারণ তুমি যে বাংলাদেশী।


প্রকৃতির রাণী এই দেশে আমি
প্রতি শরতেই আসি।
দুঃখি ও সুখি সবাকে হাসাই
এবং নিজেও হাসি।


শুভ্র কোমল পাপড়িগুলোকে
বৃন্ত হতে ছাড়িয়ে উড়িয়ে
আকাশে বাতাসে ভাসি।
আমি সবারেই ভালোবাসি।
আমি সারাক্ষণ শুধু হাসি।


৯।
আমার হৃদের কাশবনে ফের
ফুটলো গো ফুল কাশরানী
আমার হৃদয় আবার হলো
ভালোবাসার রাজধানী।


১০।
পৃথিবীর প্রতি শরতের ফুটা
কে তুমি হে কাশফুল,
তব নেই  কোনো তুল!


১১।
শরৎ এলেই ফুটো না কো তুমি
তব আগমনে আসে শরৎ,
তুমি সাজনি গো স্বর্গীয় রঙে
তব রঙে সাজে স্বর্গরত।


১২।
কবিতার পাগলীনি তুমি অভিমানী গো,
জানি তো তোমাকে খুব জানি;
তুমি শরতের কাশরানী,
পাগলীনি।


১৩।
শরতের পরে যদি কাশফুল না ফুটে,
তবে এ জীবন হোক শারদীয়;
শরতের ওহে কাশরানী,
জানি, তুমি অভিমানী- শরতের পরে কখনো ফোটনি।


তাই নাতিশীতোষ্ণ শরতে তোমায়
তুলে এনে আমি সাজাবো হৃদয় ফুলদানি;
শরতের পরে শীত-গ্রীষ্মেও
যেন দেখি তব মুখখানি।