এবারের বই মেলায় যাওয়া হবে ভাবতেও পারিনি। গত একমাস আব্বুর অসুস্থতার দরুন তাঁকে হাসপাতালে আনা নেয়া করা আর গত ১১ ফেব্রুয়ারি আমাদের শূন্য করে আব্বুর অকস্মাৎ না ফেরার দেশে চলে যাওয়া সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে অনেক বিধ্বস্ত ছিলাম। তাই গত জানুয়ারিতে বাণিজ্য মেলা তো যাওয়া হয়ই নি। যেটা কখনো মিস করি না অর্থাৎ বই মেলা সেটায় যেতে পারবো এবার ভাবতেও পারিনি।


গতকাল বিকেলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে বিকেলে বই মেলায় ঘুরতে গেলাম। ভাললাগত আসরের কবিরা কিছুদিন আগে গেট টুগেদারের মতো করলো সেখানে থাকতে পারলে। যাহোক, জাগ্রিতি প্রকাশনী তে গেলাম শত রূপে ভালোবাসা বইটি কেনার জন্য। বইটি কিনে একটু উল্টে পাল্টে দেখে হুট করে ৬৭ পৃষ্ঠা দেখে থমকে গেলাম। বেশ চমকে উঠলাম নিজের কবিতা দেখে। ঠিক কতটা ভালো লেগেছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।


হ্যাঁ, লেখা আহ্বানের পর আমি লেখা জমা দিয়েছিলাম সত্যি তবে ভাবিনি আমার কবিতা ছাপা হবে । এমন কি বেশ কিছুদিন আসরে অনিয়মিত থাকার কারণে আপডেট ও জানতাম না। তাই এমন সমৃদ্ধ একটি সৃষ্টিতে আমার স্থান পাওয়া আমার কাছে অনেক গৌরবের বলে মনে হয়েছে। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা বাংলা কবিতা ডট কম কে।


মেলা থেকে বের হবার ঠিক আগে আরেকটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীতে গিয়ে ছোট বোনের জন্য শ্রদ্ধেয় হুমায়ন আহমেদের  "নির্বাচিত হিমু" বইটি কিনলাম। তখন ওই স্টলে এলেন প্রখ্যাত নাট্য অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম ও তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী। শহিদুজ্জামান সেলিম আমার খুবই প্রিয় একজন অভিনেতা। আমার স্ত্রীকে নিয়ে এগিয়ে গেলাম তাদের কাছে। নিজের পরিচয় দিলাম। আমি ও আমার স্ত্রী উভয়ই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুনে উনি ও রোজী ম্যাডাম অনেক উচ্ছ্বাসিত হয়ে গেলেন। শহিদুজ্জামান সেলিম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। যদিও আমাদের মাঝে ব্যাচ ব্যবধান প্রায় ২৫ বছরের (আমি ৩৪ তম ব্যাচ ও উনি ৯ম ব্যাচ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর আজো তীব্র টান আমাকে মুগ্ধ করলো। উনি বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় বই মেলা বা অন্য কোন আয়োজনে আসলে উনি নাকি সব সময়ই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের খোঁজেন, পেলে ভালোলাগা কাজ করে। আমার কবি পরিচয়ে উনি আমাকে অভিনন্দিত করলেন। অনেক ভালো মুহূর্ত কাটিয়ে প্রায় ১০ মিনিট  পর আমরা বিদায় নিলাম।


সর্বোপরি বইমেলার একদিন অনন্য একটি দিন। সেই সাথে শতরূপে ভালোবাসার সিন্ধুতে আমার মতো নগণ্য কবির অবগাহন সত্যিই আমাকে অনেক বেশী আলোড়িত করেছে।