আমাদের সেই খালটি
-


আমাদের খালের পাড়ে সেই সাঁকোটি
মনে আছে তোমার!
খালের জলে শোল মাছ লুকিয়ে থাকতো
কচুরীপানার আড়ালে,
বোয়াল হঠাৎ লাফিয়ে উঠতো,
আর আমরা নিশ্চিন্তে দোল খেতাম
সাঁকোর বাঁশটি ধরে।
গ্রামের লোকজন কদাচিৎ আসতো এদিকে,
যখন বর্ষা হত, সবদিকে উপচে উঠতো জল,
তখনি কেবল সাঁকোটার দরকার হতো।
আর আমাদের ছিল খেলনার মত,
সাঁকো থেকে লাফ দিয়ে জলে,সাঁতরে কে কার আগে সেই খেলাই চলত।
এক ডুবে মাটি,হাতের মুঠোয় তাতে পৃথিবী জয়ের আনন্দ,
ছোট ছোট মাছ অনায়াসে বন্দী হত হাতে,
আর আমরা দেখতাম খালের দু'পাড়ে কেমন গা ছমছম অন্ধকার।
আমাদের সময়গুলো ছিল আমাদের মনের মতন,
শাসন বারণ- ও কি ছাই মনে থাকতো!
খালের জলে জল মিশে তিরতির তিরতির করে বয়ে যাওয়া,
দূরন্ত বাতাসে ভেসে আসা বিয়ের গান,
নায়ের ডগায় রুমাল মুখে বর,
কাগজের কারুকার্যে রঙিন কলাগাছ।
আমাদের গল্পগুলো তেমনই ছিল-
বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দের মতন,
ঝরা পাতার কান্নার শব্দের মতন,
তারপর আলপথ ধরে আমাদের ফিরে আসা।
বহুদিন পর ওপথে যাবার বেলায় আমি খালটিকে খুঁজেছি,
বাঁশের দোলনায় দোল খেতে থাকা নেই কোনও কিশোর কিংবা কিশোরী,
কেবল ঝরা পাতার কান্নার শব্দটা আগের
চেয়ে আরও করুণ সুরে বাজে,
নিঃসঙ্গতা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়
পুরনো হিজলের ভাঙা ডালটিকে,
খালের উপর এখন মেলা বসে,
বৈশাখি মেলা-
আরও কত কিছুর মেলা বসে,
লোকজন আসে যায়,
কেবল কিছু কৌতুহলী চোখ ওখানে
তাদের নতুন চোখে পুরনো পৃথিবীর নতুন কিছু খুঁজে না আর।
খালটি শুকিয়ে গেছে কিংবা ভরাট করা হয়েছে,
একটি বয়ে চলা জলের ধারা এমনি লোপাট হয়।
৮/০৪/২০