আমার মা
--
আমার ছেঁড়া লাল পাম্প স্যুটা বহুদিন আমার সঙ্গী ছিল,
কে যেন পুরনো ভেবে ফেলে দিচ্ছিল,
মা আমার, ওটা চেয়ে আনেন আমার জন্য।
জুতোটা আসলে প্রায় নতুনই ছিল,
লাল পাম্প স্যু, সত্যি বলতে ওরকম জুতো আমি এর আগে কখনই পাইনি
আমার আনন্দে মায়ের চোখে জল দেখেছি,
না, না, দুঃখের নয়, আনন্দের;
আমি তখন বড় হচ্ছিলাম ---একটু একটু করে।


জুতোটা যদিও একটু ছোট ছিল, তবু আমি কোনও মতে পরে নিতাম,
অনেক সময় পা ছিলে যেত, আমি ব্যথা পেতাম,
তবে ওটা একটি লাল পাম্প স্যু পরার আনন্দের চেয়ে অনেকটাই কম ছিল।
আমি যখন স্কুলে বা বাইরে যেতাম, সবাই আমার জুতো দেখত,
আমি জুতো খোলার ভয়ে খেলায় নামতাম না, আবার জুতো পরে খেলাও তো যাবে না!
আমি তখন একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম।
ছোট জুতোটা পরতে গিয়ে একদিন পিছন দিকটায় ছিঁড়ে গেল,
মা আমার জুতো জোড়ার পিছন দিকটা সমান করে কেটে লাল সুতো দিয়ে সেলাই করে দিলেন।
এবার জুতো পরার কষ্টটা অনেকটাই কমে গেল,
কারণ, আমার মা ছিলেন, পৃথিবীর সেরা কারিগর।


আমি তখন একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম,
মা বলত, দেখ মেয়ে আকাশ দেখ-
ওখানে তোমার বাবা আছেন, তোমাকে দেখছেন,
একদিন আমিও হয়ত ওখানেই চলে যাব,
আর দুঃখ কষ্ট চিরদিন থাকে না,
একদিন সময় তোমার হয়ে কথা বলবে।
আমি তখন একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম,
আমার জামাটা বেশ লম্বা ছিল, হাটু অবধি ঝুলতো,
ওটা একজন মাকে দিয়েছিল,
মা আমাকেই দিয়ে দেয়, কারণ ওই জামাটা খুব সুন্দর ছিল।
মা কেটে ছোট করে দিয়েছিল।
আমি যখন জামাটা পরে স্কুলে যেতাম, নিজেকে খুব সুখী মনে হত।


আমি তখন একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম,
আমার জামাটা সামান্য এখানে ওখানে ফেঁসে গেছে,
মা আমার যত্ন করে টুকরো কাপড় দিয়ে তালি লাগিয়ে দিলেন।
পুরনো জামাটা রঙের ছোঁয়ায় নতুন হয়ে উঠল,
পৃথিবীর সেরা জামাটা পরে আমি যখন স্কুলে যেতাম, তখন কে হাসল, কে কী বলল---
আমি খেয়ালই করতাম না!
কারণ আমি জানতাম আমি পৃথিবীর সেরা জামা পরে আছি।


এভাবে পুরনো জুতো, পুরনো বই, পুরনো তালি মারা জামার সাথে কেটেছে আমার শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের কিছুটা সময়,
আর আমার সাথে মায়ের ভালবাসা ছিল।
এখন আমি বড় হয়ে গেছি,
ইচ্ছে মত সব কিনতে পারি, ইচ্ছে হলে আমিও কাউকে কিছু দিতে পারি।
মা আমার আকাশের তারা হয়ে গেছেন,
আমি তারা খুঁজি, তারাদের মাঝে মাকে খুঁজি,
আমার ইচ্ছে হলেও মায়ের ভালবাসা আমি কিনতে পারি না,
পৃথিবীর সবকিছু দিয়েও যদি মাকে পেতাম!
মা নেই, তাই অভাবশূন্য হয়েও আমি অভাবী বড়,
দাম দিয়ে কেনা নয়, তবু পৃথিবীর সবচেয়ে অমূল্য সম্পদটাই যে আজ আমার নেই,
এ অভাব কোনও কিছু দিয়েই
প্রতিস্থাপন করা যায় না।
২৪/০৭/২০