অপহৃত সময়
---রুবি বিনতে মনোয়ার


এ শহরের প্রতিটি ধূলিকণা জানে আমাদের ইতিবৃত্ত,
আমরা হেঁটেছি যুগলবন্দী একটানা বহুদূর,
বহুদিন, যেন সহস্র শতাব্দী কেটেছে বেলা একসাথে।
প্রতিটি কৃষ্ণচূড়া হেসেছে আমাদের সাথে,
প্রতিটি রক্তজবা আরও রক্তিম হয়েছে
শুধু আমাদের উচ্ছ্বসিত কলরোলে।
এ শহরের প্রতিটি অলিগলি আমরা চষে বেড়িয়েছি
কী এক বিমুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে,
কথার বুননে পরিপাটি করেছি শহরের প্রতিটি বাঁক।
রৌদ্র যখন ছড়াতো উত্তাপ আমরা তখন
এই নিরিবিলি শহরের প্রকাণ্ড বটের তলে
নিয়েছি আশ্রয় একদম ভয়হীন, নিশ্চিত আশ্রয়।
আমরা চড়েছি নাগরদোলা, আমরা কেটেছি সাঁতার একসাথে,
কখনও টঙঘরে বসে চায়ের পেয়ালায় তুলেছি ঝড়।
আমাদের কথাগুলো ছিলো কখনও সরল
কখনও অকারণ বাক্যবাণে করেছি জর্জর পরস্পরে,
না দেখায় হয়েছি উতল, চক্ষু হয়েছে সজল।
আমরা কত অকারণ প্রহর কাটিয়েছি রিকশার হুড তোলে,
আবার বৃষ্টিতে ভিজেছি কেতকীর মতো।
সেই তুমি আমার হৃদয়বৃন্তে নিয়েছো দখল,
কখন কিভাবে জানি না হয়েছিলো পরিচয়,
কী নামে ডেকেছিলে, কী ছিলো প্রথম সম্বোধন!
আমি ছেড়ে যাচ্ছি তোমাকে, সময় আমাকে
তাড়িয়ে দেয়, কাছ থেকে তোমার,
আমি এখন অচেনা শহরের যাত্রী।
আমার গুছানো শেষ সবকিছু, তুমি তাকিয়ে থেকো
আমি তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি চিরতরে।
নয়ন মেলে দেখো ফুলসব কেমন ঝরে যায়,
পাতাগুলো ঝরে যায়, সময় সব কেড়ে নিয়ে যায়।
আমাদের যাপিত সময় বড় মধুর ছিলো,
ছিলো গানে আনন্দে, কথাকলিতে মুখর।
এখন নির্বাক তুমি, নির্বাক আমি
কিছুটা কাল হয়তো আমরা বাকহীন কাটাবো কঠিন প্রহর,
বিচ্ছিন্ন দুই মন কাঁদবে কিছুদিন, বিক্ষুব্ধ বেদনায়।
অতঃপর আবার ফুটবে ফুল,
শাখায় শাখায় সবুজের গান উৎসবে হবে আত্মহারা।
নদী বয়ে যাবে, পাখি গেয়ে যাবে
আরও অজস্র পথিক হেঁটে যাবে এ শহরের প্রতিটি গলিতে।
তুমি ভুলে যাবে, আমি ভুলে যাবো
ভুলে যাবে এ শহরের প্রতিটি ধূলিকণা, আমাদের পদচিহ্ন
মুছে দেবে নতুন পথিকের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
এভাবে আমাদের যাপিত সময় বিলীন হবে,
মুছে যাবে একেবারে, মুহূর্তরা মহাকালে মিশে যাবে,
আমরা যে কালের পথিক, এভাবেই হয় রচিত প্রস্থানের কাব্য।
১৮/১১/২০১৮