মূল রচনা:- খলিল জিব্রান, ভাষান্তর:- খছরুজ্জামান্


সন্তানে জড়িয়ে বুকে, জননী কহিল উৎসুকে
     'হে মোস্তাফা, ওগো গুনী, মন চাহে আজ শুনি ---
         যে সন্তানে ধরেছি বুকে তাহারে রাখিতে সুখে
              কি করিতে পারি বলুন তো আমায়'।
              এ কথাটি শুনি, ঈষৎ হাসিয়া তখনই
                  উত্তরে কহিলা মোস্তাফায়, ----
          মোহময় এ সংসারে, সন্তান সম স্নেহভারে
        যাদের পালিছ ঘরে, তারা তোমার সন্তান নয়!
      জীবনের আপন প্রবাহ টানে, প্রানের স্পন্দন গানে
              ছুটিয়াছে নিজ লক্ষ্যে দূরন্ত গতিময়
      পুত্র কন্যা কায়, তোমার বাহনে যদিও এসেছে ধরায়
             তবুও তোমার সৃজিত তারা কিছুতেই নয়!
      একসাথে করিছে বাস, জীবনের অফুরন্ত নির্যাস
              স্রষ্টার করুণা ধারা, তোমার দখল হারা
              জীবনের নিজস্ব স্বাধীন স্বতন্ত্র প্রকাশ।


               ভালবাসা দিতে পারো, দাও প্রান ভরে
    তোমার ভাবনাটুকু যেওনা দিতে তাদের ভাবনা 'পরে
           মায়ার বাঁধনে ভুলি, সন্তান-সম কায়া গুলি
                 গৃহবেষ্টনে যতনে রাখিছ ধরিয়া,
       তবু দেখ, বন্ধন নাহি মানে সতত আগামীর পানে
               অন্তরাত্মা তাদের ছুটিছে ধাহিয়া।
     সীমিত জীবন রথে, স্বপ্নেও তুমি পারো না বেড়াতে  
             যেথায় রয়েছে সাজানো তাহাদের  ঘর,
       অনাগত সময়ের গর্ভতলে অস্ফুট স্বপ্নিল শতদলে
                   রয়েছে সুস্থির, তব দৃষ্টি অগোচর
          হতে পারো তাদের মতো চেষ্টা করো অবিরত
                       কিছু নাহি আসে যায় তাতে।
       তব কাঙ্ক্ষিত পথ ধরি চলে না তাদের জীবন তরী
                ভুলেও করো না তাই সে নিষ্ফল প্রয়াস
      জীবন ধায় না পিছন পানে, এ কথাটি কে না জানে
           আগামীর হাত ধরেই জীবনের বিচিত্র প্রকাশ।


     তোমাকে বানিয়ে ধনু অসীমের পানে লক্ষ্য রাখি স্থির
        ছুঁড়িতেছে ধনুর্ধর তোমার সন্তান সম প্রানবন্ত তীর।
         শর যোজনে টানিতেছে ছিলা আপন মুষ্টিতে পুরে
         যতই বাঁকিবে ধনু ক্ষিপ্রগতি তীর তত যাবে দূরে,
           যে জন ছুঁড়িছে তীর সে জনেই ধরিছে কার্মুক
         তাঁর হাতে বেঁকে যাওয়া, মহানন্দে মেনে নেওয়া
             এটাই তো জীবন, এতেই রয়েছে পরম সুখ!
                যাঁর প্রেমে সিক্ত তীর ক্ষিপ্র গতি হয়
               তাঁরই প্রেমে ধনু বাঁকে হাতের মুঠোয়।
                                      
                                          ----- খছরুজ্জামান্